Imperialism and Islam

ইসলাম ও সাম্রাজ্যবাদ মূল: সাইয়্যেদ কুতুব তরজমা: শাহাদাৎ তৈয়ব জাযীরাতুল আরবে আরবী ভাষা ও দ্বীনের শিা প্রদানকে এমনি এক অপরাধ হিশেবে গণ্য করা হচ্ছে, যে অপরাধের অপরাধীকে চোর ডাকাতের মতো ধরে নিয়ে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে চোর-ডাকাতদের সাথে একই বন্দীশালায় ভরে রাখা হয়। আমাদের উদারতাবাদী লেখকরা বলেন- ফ্রান্সই স্বাধীনতার জননী। ফ্রান্সই আর সমস্ত বিশ্বকে স্বাধীনতা ও সাম্য-ভ্রাতৃত্বের নীতিকথা শিখিয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসা হলেও দণি সুদানে একজনমাত্র মুসলমানের অস্তিত্বকেও বিবেচনা করা হয় এমন মহা সংকট ও হুমকি হিশেবে, শুধু ওই জন্যই বৃটেন তার সেনাশক্তি মোতায়েনে তৎপর হয়ে যায়। আর সুদানে প্রশাসন যথাসম্ভব পাহারা ও টহল জোরদার করে ফেলে, কোনো মুসলমানকে ধরতে পারলে উত্তর সুদানে ফেরত পাঠায় যাতে শান্তিবাদী গোষ্ঠীগুলো আবার ইসলামের শিকার না হয়। সাথে সাথে প্রশাসনের শক্তিগুলো ধর্মীয় মিশন ও মিশনারীদের রার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তাদেরকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দেয়। একইভাবে ইংল্যান্ড সম্পর্কেও আমাদের বিশ্বাসঘাতক লেখকরা বলেন - ইংল্যান্ড এমন এক রাষ্ট্র যা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তপে করে না। আর অন্যদিকে আমেরিকা তো ইঙ্গ-ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ডলার, বিমান ও পারমানবিক বোমা নিয়ে। আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিটি েেত্রই রা করে যাচ্ছে। ফিরিয়ে আনছে তার হারানো বিনষ্ট প্রায় স্বভাব ও প্রভাবকে। হত্যা করছে মাতৃভূমি রায় ব্রত স্বাধীনতাকামী নাগরিকদেরকে। অবমাননা করছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদের স্বাধীনতা সনদের। এই রসদপুষ্ট লেখকরা আরো বলেন- আমেরিকাই তাদের স্বঘোষিত “মুক্ত বিশ্বে” স্বাধীনতার রক’। অথচ স্বয়ং পৃথিবীই জানে না তার এরকম মুক্ত বিশ্বের অস্তিত্বের কথা। যারা সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত শক্তির মধ্যেই নিজেদের স্বাধীনতা-মুক্তি সন্ধান করে সাম্রাজ্যবাদ সেসব জাতিরই তত্ত্বাবধান করে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে বহুকাল ধরে এক বিশেষ নজরে দেখে আসছে। অবশ্য মুসলিম জাতিগুলোর লুন্ঠিত স্বাধীনতার দাবী ওঠার আগেই ইসলাম সাম্রাজ্যবাদের বিশেষ নজরের মধ্যেই ছিলো। কারণ ইসলামের আকীদা ও আদর্শের শক্তি এবং পৃথিবীর যে কোনো সাম্রাজ্যবাদের উপর সেই শক্তির প্রচন্ডতা সর্ম্পকে এই সাম্রাজ্যবাদ এক মুহূর্তের জন্যও গাফেল নয়। ইসলাম ব্যাপক ও প্রচন্ড স্বাধীনতাকামী এক শক্তির নামÑ এই ভাষা ও প্রত্যয় থেকেই সাম্রাজ্যবাদের উপর ইসলামী আকীদার অন্তর্নিহিত শক্তির হুমকি ও তীব্রতার প্রথম উৎসারণ। ইসলামের মূল স্পিরিট বা প্রাণশক্তি স্বাধীনতাবিরুদ্ধ সমস্ত বিদ্বেষ ও শত্র“-শক্তিকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এই শত্র“তাকে-জুলুমকে ইসলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে সরাসরি প্রতিহত করে। যে প্রতিরোধের পথে অসংখ্য জীবন এবং সেই জীবনের ত্যাগ ও কুরবানীকে খুবই সামান্য মনে করা হয়। সেকারণে যখনই ইসলামের এ প্রাণশক্তি উম্মাহর মধ্যে জেগে ওঠে তখন উম্মাহর মুক্তির পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অসম্ভব হয়ে যায় সত্যিকার লড়াই থেকে চুপ করে বসে থাকা। যে লড়াই সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত ত্রেকেই ধ্বংস করে দেয়। ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। তেমনি ইসলাম উন্নয়ন, বিকাশ, উল্লম্ফন, শক্তি, মর্যাদা ও এক অহংকারের নাম- এ প্রত্যয় থেকেও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী আদর্শের প্রচন্ডতা প্রকাশিত হয়। ইসলাম পালনকারীর মধ্যে যখন ইসলামের এ প্রাণশক্তি উস্কে উঠবে তখন তার উপরে কর্তৃত্ব করার, লাঞ্চনা চাপিয়ে দেবার শক্তি পাবেনা কেউই। এদিক থেকে সাম্রাজ্যবাদকে দেখলে দৃষ্টি পড়বে তার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম বস্তুটির দিকে যার অপসারন অনিবার্য। ইসলামের মাহাত্ম প্রতিষ্ঠা, মুসলমানদের মর্যাদা রা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার বিরুদ্ধে লড়াই করা অপরিহার্যভাবে জরুরী। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে হুমকির তৃতীয় উৎসটিও ইসলামের আকীদা থেকে। কারণ এ বিশ্বাসই সকল ইসলামী ভূখন্ডকে একটি ভূখন্ডে পরিণত করে। তাই যারাই এর এক বিঘত ভূমিরও বিরোধীতা করলো তারা যেনো পুরো ভূখন্ডের বিরোধীতা করলো। সেজন্য তখন পৃথিবীর সকল অঞ্চলের মুসলমানের উপর অপরিহার্য হয়ে যায় ইসলামের পুরা ভূখন্ড থেকে এই এক বিঘত ভূমির বিরুদ্ধে হুমকি খন্ডন করার জিহাদ ঘোষণা করা। আসলে পৃথিবীব্যাপী কোনো একজন মুসলমানও নেইÑ সত্যিকার কোনো মুসলমানই নেই, যে মন দিয়ে শুনবে, জানবে, বুঝবে যে, ইসলামের ভূখন্ড থেকে এক বিঘত ভূমি একজন শত্র“ দলিত মথিত করে যাচ্ছে অথচ মুসলমান তার ভূমি থেকে, সম্মান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরও তার কোনো দুঃখ নেই, সামান্যতম শোকতাপও নেই; অথচ এখানে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভয়ানক হুমকির সম্ভাবনা। ত্যাগ আর কুরবানীর প্রাণশক্তিতে মহিমান্বিত লড়াই ও প্রতিরোধের এক পতাকার নিচে সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ হবার ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টির ব্যাপক সম্ভাবনা। সাম্রাজ্যবাদ মুসলিম বিশ্বকে সার্বণিক বিশেষ নজরদারিতে দেখছে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীনতা আন্দোলন প্রতিহত করতে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো শক্তি ও সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। এরপর মুসলিম অঞ্চলের বিষয়টি যখনই একটি গুরুত্বপূর্র্ণ ইস্যু হয়ে উঠলো তখন রাশিয়া তার সংঘ শক্তিসহ পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে যায় উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট শত্র“তা ও বিভেদ থাকা সত্ত্বেও। সোভিয়েত রাশিয়াও তার কমিউনিস্ট শক্তি তুর্কিস্তান, কোরাম, যুগোস্লাাভিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলোতে লুন্ঠনযজ্ঞ চালায়। পশ্চিম আফ্রিকা ও নীল উপত্যকায় পশ্চিমা শক্তি যে কাজ করছে তারাও একই কাজ করছে। চোরদের এইসব সুযোগ-সুবিধা তৈরী হয় মূলত যখন মুসলিম ব্যাপারটি ব্যাপার হয়ে ওঠেছিলো। পরবর্তীতে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ঠান্ডা কিংবা প্রয়োজনভেদে গরম যুদ্ধে উপনীত হয়। কমিউনিস্ট শক্তি মুসলমানকে শত্র“ নির্ধারণ করা সত্ত্বেও তাদের বিষয়টিও পশ্চিমা শক্তির মতো একইরকম। তবে মুসলিম দেশগুলো ইসলাম অন্তর্নিহিত স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রাণশক্তি সম্পন্ন। সেকারণে ইসলাম যে কোনো মুক্তি ও স্বাধীনতা আন্দোলনকেই ভালোবাসে সমর্থন কওে, যদিও সে আন্দোলন ঘুমিয়ে পড়া কমিউনিস্ট আন্দোলন আর কোরিয়ার আন্দোলন হোক। ইসলাম চায় সেসব আন্দোলন পশ্চিমের ঘৃণ্য সাম্রাজ্যবাদের উপর জয়লাভ করুক। পৃথিবী থেকে কুঞ্চিত হয়ে পড়–ক সাম্রাজ্যবাদের কালো ছায়া। ইসলামের এটা চাওয়ার কারণ হলো, তার মূল বৈশিষ্ট্যের সাথেই জড়িয়ে আছে এক বৃহত্তর মুক্তির জাগরণ। পৃথিবীতে ইসলামের সামগ্রিক উদ্দেশ্যই হলো মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা বহাল রাখা। তাতে হস্তপে না করা, সেটা তার আকীদা-বিশ্বাস বা আদর্শের স্বাধীনতা হোক। কিংবা তার দাওয়াত প্রচারের স্বাধীনতা হোক। সেকারণে ইসলামের তর্ক ও লড়াই বিবদমান কায়েমী কমিউনিস্ট ব্যবস্থার সাথেও যা মানুষকে তার চিন্তা, বিশ্বাস ও আদর্শ প্রচারের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে। কমিউনিজমের এ বঞ্চিতকরণের মানেই হলো মানুষকে তার এক প্রধান ও শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য থেকে বঞ্চিত করা। অথচ এ বৈশিষ্ট্যের বাস্তবায়নেই ইসলামের সমূহ আকুলতা। যে কোনো অবস্থায়ই আমরা সাম্রাজ্যবাদের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদ আমাদের আদি ও বাস্তব শত্র“। আমাদের যাবতীয় পবিত্র ঘৃণা-বিদ্বেষ নিয়ে তার মুখোমুখি হওয়া, কোনোরকম করুণা ছাড়াই তাকে প্রতিরোধ করা ফরজÑকারণÑসেও কোনো নমনীয়তা ছাড়াই আমাদের প্রতিহত করে চলছে। কমিউনিজম তার প্রকাশ্য শত্র“ হওয়া সত্ত্বেও কমিউনিজমের উদ্দেশ্যে সে ততটুকু শক্তি প্রয়োগ করে না যত বেশি শক্তি দিয়ে সে আমাদেরকে তার নজরে রাখে। সে শুধু আমাদের জন্য লোহা আর আগুনের শক্তিই সংরণ করেনা Ñ বরং অতীতের মতোই ভয়াবহ বাণিজ্যচুক্তির এই সময়ে যে প্রয়াস চালাচ্ছে আমেরিকাÑ আজকে ফিরে এসে নতুন করে যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তার উপর দাঁড়িয়েই সাম্রাজ্যবাদ আমাদের জন্য তৈরি করে যাচ্ছে অর্থনীতির ফাঁদ। আমেরিকার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য লালনকারী যে কোনো দেশ থেকে আমদানীকৃত দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এসব চুক্তি। অর্থাৎ ইসরাইলের মার্কিন শিল্প-প্রযুক্তি একেবারে আমাদের ঘরে ঢুকেই আমাদের সাথে যুদ্ধ করছে অথচ তা ঠেকিয়ে দেয়ারও কোনো অধিকার আমাদের নেই। অনুরূপভাবে যে মুদ্রা দিয়ে আমরা রা পেতে চাই সেই মুদ্রা দিয়েই সাম্রাজ্যবাদ আমাদের প্রতিরার হাত বেঁধে ফেলছে। কারণ সে মিশরে মার্কিন কোম্পানী ও তার নাগরিকদের জন্য জায়েজ করে দিয়েছে তাদের ইচ্ছা মাপিক যে কোনো মুদ্রা দিয়ে নগদ টাকা খাটানো। অথচ একই অধিকার আমাদের মিশরীদের জন্য আমেরিকার মাটিতে পুরোপুরি বিপরীত। আমেরিকায় আমাদের জন্য কোম্পানী, শিল্প-কারখানা, অফিসার-কর্মকর্তা, ধন-সম্পদ থাকাটা বিপরীত। অথচ একইভাবে আমাদের জন্য বিপরীতÑ সেই স্বাধীনতা নিরাপত্তা ভোগ করা যা আমাদের দেশগুলোতে মার্কিন নাগরিকরা পুরোপুরি ভোগ করছে। তেমনি আমাদের জন্য সম্পূর্ণ বিপরীতÑ কোনো এক সময়ের স্বাধীনতা ও মর্যাদা বিষয়ক চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যাণ্ডের অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দর, বিমান বন্দর ও যোগাযোগের বাস্তব ব্যবহার করা। যদিনা কোনো দুর্ভাগ্য কারণে আমরা এই চুক্তি ভঙ্গ করতাম। তবে সেদিন থেকেই ইউরোপের সমুদ্রে, আকাশে আমাদের নৌ ও বিমান বহর কোনো নোঙ্গরই পেতনা। কারণ ইতোমধ্যে আমরা হারিয়েই ফেলেছি বৃটিশ বিমান ও নৌ-বন্দর ব্যবহারের অধিকার। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসÑনতুন যুগটি আমেরিকার ভয়াবহ এই ফাঁদকে মেনে নিবে না। কারণ সমগ্র দূষণ আর কলঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে পুরনো যুগটির সম্ভব হবেনা এই বিশাল দায়িত্ব বহন করা। কিন্তু এই বিশ্বাস এমন ভয়াবহ সংকটের দিকে সতর্ক করা থেকে আমাদের বসিয়ে দেয়াটাকেও ঠিক মনে করে না। বিশেষতই আমরা জানি সাম্রাজ্যবাদ সার্বণিক সহযোগিতা নিচ্ছে অভ্যন্তরীণ উপায় উপাদানগুলোর মাধ্যমে যা বহু সংগঠন-সংস্থা ও কর্তাসত্তার সমন্বয়ে সংগঠিত এবং যা প্রায়ই মুক্তভাবে একটি টিকিটই বহন করে বেড়ায়। আমরা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে জামায়াতু ইখওয়ান আল হুররিয়্যাহ, আল জামইয়াতুল মিছরিয়্যা আল ইনযিলীজিয়্যাহ, জামইয়াতু নাদিইল আলামীন, জামইয়াতু নাদিইল জাজিরার মতো সংগঠনগুলোকে চিনেছি বুঝেছি। তাহলে আমাদের কর্তব্য হলো একথাও বোঝা যেÑ এ মুক্তিকামী সংগঠনগুলো থেকে একটিই কেবল সাফল্যের সংগঠন হবে।


নিজের সম্পর্কে লেখক

student



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।