চিন্তা পাঠচক্রের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস’ উদযাপন

আজ ১০ এপ্রিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস’। এই তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করা হয় এবং ১৭ এপ্রিলে মেহেরপুরের  বৈদ্যনাথতলায়  তা পাট করা হয়।

এই দিবস উপলক্ষ্যে চিন্তা পাঠচক্র মোহাম্মদপুরে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় ‘স্বাধীনতার ঘোষণাঃ অঙ্গীকার ও গঠনের রাজনীতি’ শীর্ষক দিনব্যাপী আলোচনা সভার আয়োজন করে।  আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক গৌতম দাস, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ এবং কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। গৌতম দাস তার আলোচনায় স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশের পুরো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈয়ার করার পেছনে আসলে যার মূল অবদান তিনি তাজউদ্দিন আহমেদ। মূলধারা’৭১ বইতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। মার্চের শেষ দিকে তাজুদ্দিন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেন এবং ভারতের ভূমিতে রেখে তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে যে প্রবাসী সরকার গঠিত হয় তারা বুঝতে পারলেন, মুক্তিযুদ্ধকে ন্যায্য প্রমাণ করা এবং তাকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য  প্রথমেই একটি  স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দরকার। অতঃপর অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী স্বাক্ষরিত এই ঘোষণাপত্রে স্বাধীনতার মূলনীতি ঠিক করা হল সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক সুবিচার বা ইনসাফ।

ইকতেদার আহমেদ সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ষষ্ঠ আর সপ্তম তফসিলে কি কি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে তার বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেন।তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্বাধীনতার ঘোষণায় ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ’ বিষয়ের পরবর্তীতে বিভিন্ন তফসিল অন্তর্ভুক্ত করে স্বাধীনতার ঘোষণার বয়ানকে কিভাবে সাংঘর্ষিক করে ফেলা হয়েছে তার ব্যাখ্যা করেন।

chintaa

মূল আলোচক হিসেবে ফরহাদ মজহার তার আলোচনায় স্বাধীনতার ঘোষণার দার্শনিক ও রাজনৈতিক বয়ান পেশ করে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সমাজে যে বিভাজন আর নির্মূলের রাজনীতি চলছে, হয় আমরা এটাকে এভাবেই চলতে দিতে পারি অথবা পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটা ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পারি। ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে  তিনি আরম্ভ বিন্দু হিসেবে অভিহিত করেন স্বাধীনতার ঘোষণার তিন মৌলিক নীতিকে। এসব নীতি কেন , কিভাবে আমাদের সামনে হাজির এবং কিভাবে আমাদের সকল দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এই নীতিগুলো একতা ঐক্যের জায়গায় নিয়ে যেতে পারে তার ব্যাখ্যা হাজির করেন। এছাড়াও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিক্লারেশন অফ ইনপিডেন্সের বা স্বাধীনতার ঘোষণার রাজনৈতিক ও দার্শনিক গুরুত্ব এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার মিল-অমিল নিয়ে আলোচনা করেন।

এই আলোচনা সভা আরও বৃহত্তর পরিসরে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গঠনতন্ত্র নতুন ভাবে প্রণয়ন ও নতুন ভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা প্রচারের প্রাথমিক পদক্ষেপ।

শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে আলোচনাসভার সমাপ্তি ঘটে।


নিজের সম্পর্কে লেখক

উন্নয়ন কর্মী। চিন্তা পাঠচক্রের সঙ্গে যুক্ত।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।