বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্তিতি,প্রতিক্রিয়া চীনের জড়িয়ে যাবার আশংকা- ১

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এক ধরনের ঘোলাটে পরিস্তিতি উদ্ভব ঘটেছে। তবে সামনের দিনে তা আরো ঘনীভুত হবার সম্ভাবনাকে আন্তঃর্জাতিক পরিস্তিতির আলোকে দেখবার জন্যই এই লেখায় কিছু বিষয়ের দিকে আলোকপাত করব। যা আমাদের জাতীয় স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব নিয়ে বর্তমানে সংশয় দেখা দিয়েছে। তার কারনগুলোর একটি হল মিয়ানমার আর ভারত বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে তাদের যে অংশ নির্ধারন করেছে তাতে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মালিকানা থাকে কিনা তা অনেকটাই প্রশ্নের সম্মুখীন। যে জাতি তার পাঠ্যপুস্তকে সমুদ্রসীমা বাদ রেখে স্হল সীমানা কতদূর আর কতবড় সে সবক শেখায় তার কপাল যে এভাবেই পুঁড়বে তা বলাই বাহুল্য, তা সে বাঙালী জাতিই হোক অথবা বাংলাদেশী। এখন ব্যাপারগুলো আরো যে রকম জটিল হয়েছে এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছে পৃথিবীব্যাপী শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর কর্তৃত্ব বজায় রাখবার জোর প্রচেষ্টা। মিয়ানমার-চীন এর সুসর্ম্পক কারোরই অজানা থাকবার কথা নয়। বর্তমানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা নামে যারা পরিচিত, তাদের টিকে থাকবার পিছনে একক রাষ্ট্র হিসেবে চীনের যে ভূমিকা তা অনেকাংশে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাঈলের টিকে থাকবার পেছনে মার্কিন ভূমিকার পদাঙ্ক অনুসরন করে। কথাটা বেখাপ্পা মনে হলেও তার ভিত্তি খুঁজতে হবে, আমাদের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ethnic minority বিরুদ্ধে মিয়ানমার জান্তার দমন পীড়নের মাএা এবং সে অনুসারে রাষ্ট্রকে weaponize করবার প্রয়াসের মধ্যে। ১৯৮৮ সালে যখন এই সামরিক জান্তারা ক্ষমতা দখল করে, তার এক বছর পর ১৯৮৯ সালে চীনের উচ্চপদস্হ সামরিক কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সাথে 1.4 বিলিয়ন ডলারের weapon চুক্তি হয়। যার মধ্যে প্রাধান্যকারী আইটেম ছিল জেট ফাইটার, ট্যাংক ও নাভাল সীপ ইত্যাদি। ১৯৯৪ সালে আবারো এই সামরিক জান্তারা চীনের কাছ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে আবারো weapon চুক্তি করে । এছাড়া এই বছরেই জাপানীজরা দাবি করে যে, মিয়ানমারের কোকো দ্বীপে যা ইন্ডিয়া অধিকৃত আন্দামান দ্বীপ থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্হিত,সেখানে চীন radar ও electronic surveillance system তৈরী করেছে। এছাড়াও মিয়ানমারের দক্ষিনান্ঞলে zadetkyi island এ সামরিক স্হাপনা তৈরী করেছে যা ইন্দোনেশীয়ার সাবাং দ্বীপ এর কাছে। যদিও মিয়ানমার তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। কৌশলগত দিক থেকে মিয়ানমারের ভূ রাজনৈতিক অবস্হান bay of bengal এ চীনের পৌছানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পথ। যার কারণে "southwest silk road" ব্যবহার উপযোগী করে তুলবার পরিকল্পনা চীনের বহুদিনকার। চীনের নৌবাহিনীকে bay of bengal এ পৌছাতে মালাক্কা প্রণালী অতিক্রম করতে হয় এবং সেখানে পৌছাতে তার সময় ৫দিন লাগে। কিন্তু মিয়ানমারের কারণে people's liberation army navy (PLAN) প্যাসেফিক ও ইন্ডিয়ান সাগরে এ পৌছতে ৩০০০কিলোমটার পথ কমিয়ে আনতে পারবে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও মিয়ানমারের অবস্হান চীনের জন্য গুরুত্ববহন করে। কারণ দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় চীনের মার্কেট বিস্তার করতে চাচ্ছে চীন। এই মার্কেটাও প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষের বাজার। তাছাড়া থাইল্যান্ড, লাউস, ক্যাম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের সাথে অর্থনৈতিক সর্ম্পক তৈরীতে মিয়ানমারের কৌশলগত অবস্হান চীনের বাজার বিস্তারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। তাই কোনভাবেই মিয়ানমারের ভূ রাজনৈতিক অবস্হান অন্য পরাশক্তির কতৃর্ত্বে ছাড়তে নারাজ চীন। (চলবে)


নিজের সম্পর্কে লেখক

student



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।