এবছর হজ্বের দুর্ঘটনায় চুপ থাকার কারন- একটি বিশ্লেষণ

আমি এই পর্যন্ত কোন বছর হজ্ব করে ফেরার পর হাজিদের এমন মলিন মুখ দেখিনি বা এমন প্রতিক্রিয়া দেখিনি। তারা জানায় সউদি সরকারের অব্যবস্থাপনার কথা। একজন মহিলা কেঁদে কেঁদে বলছিলো, “দুর্ঘটনার সময় পাশেই ছিলাম, সারা পৃথিবি থেকে লক্ষ মানুষ আল্লাহের মেহমান গেছেন সেখানে পায়ে হেঁটে আর রাজার পুত্রের গাড়ি বহরের জন্য একটি রাস্তা বন্ধ করে দিলো তখন মানুষ হুরোহুরির মধ্যে পড়ে যায়। এবং......।। প্রচণ্ড গরম পড়েছিলো কিন্তু আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি ছিল না। আমাদের সাথে কথাও বলছিলো বাজে ভাষায়”। 

এর আগে ক্রেন ঘটনা। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো, তাদের ইঞ্জিনিয়ার-রা কি জানতো না ক্রেন আছে এবং এভাবে বৃষ্টি হলে তা ভেঙ্গে পড়তে পারে? এটা ইঞ্জিনিয়ার না একটা সাধারন সেন্স থাকা প্রাইমারি স্কুল ফেল করা মানুষেরও আছে। 

এতকিছুর পরও দেশের ইসলামি ব্যক্তি বা দল গুলো মুখে কুলুপ মেরে বসে আছে, কিছুতো বলছেই না উল্টা ইরান/ইন্দোনেশিয়া এর প্রতিবাদ করেছে বলে তাদের নানান রকম বিশেষণে বিশেষায়িত করছে। এবং সউদি রাজারা কেন এবং কিভাবে মহান তার বর্ণনা করছে। মাথায় ঘুরছিলো, কেন তারা চুপ? কেন তারা কিছু বলছে না? উওর খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম। তা অসাধারন- 

আমি একবার আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সিটিউটে আরবি ভাষার উপর একটি কোর্স করেছিলাম। আরবি বিভাগের একজন সিনিয়র এবং বিখ্যাত অধ্যাপক আমাদের ক্লাস নিতেন। তিনি সউদি রাজার আমন্ত্রনে হজ্ব করতে গিয়েছিলেন সেই বছর। একদিন ক্লাসে আমাদেরকে তার সউদি রাজার আমন্ত্রনে হজ্ব করার গল্প শোনালেন। ...... প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১০০ জন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যাক্তিত্ব বা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে রাজা দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান হজ্ব করতে (প্রতিটি মুসলিম দেশ থেকেই এভাবে দাওয়াত দেন) । আমাকে রেখেছিলো সেই দলের প্রধান। বিমানের টিকেট সহ যাবতিয় খরচ বহন করেছে সউদি সরকার। জেদ্দা নেমেই দেখি মার্সিডিজ গাড়ি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের নিয়ে গেল একটি ৫ তারকা হোটেলে, হারমাইন শরিফ থেকে একদম কাছে। হজ্ব পালনে আমাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছিলো। মিনাতে আমাদের জন্য আলাদা আলাদা তাবু ছিল। তাবুগুলোও ছিল ৫ তরকা তাবু। এসি, ফ্রিজ, টিভি সবই ছিল তাবুতে। মক্কা থেকে যখন মদিনাতে যাই সাবাই যায় গাড়িতে আমাদের জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা ছিল। মদিনায় নিয়ে আমাদের অনেক কিছু ঘুরে দেখালো। সর্বশেষ ক্রাউন প্রিন্স আমাদের সম্মানে ডিনারের আয়োজন করলেন। দেখা করেলন। সব টিম লিডারের সাথে ২-১ মিনিট কথা বলেন। এর পর খাবার পালা। সেটা ছিল এলাহি কাণ্ড কারখানা। আমাদের প্রত্যেকের সামনে বুফে ছিল। দুনিয়ায় এমন কোন মাছ মাংস নেই যা ছিল না। আস্ত দুম্বাও ছিল। কমপক্ষে ৩০-৪০ জন খেতে পারবে এত্ত খাবার। খেলাম। হজ্ব পালন শেষে মক্কায় আমাদের ঘোরালো। সউদি বাদশা আমাদের জন্য কিছু উপহার দিলেন। তারপর আমারও সউদি আরবের প্লেনেই দেশে ফেরত আসলাম”। 

এবার আরও কিছু যোগ করি। বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্য আরও নির্দিষ্ট করে বললে সউদি রাজপরিবারের প্রভাবিত কয়েক ডজন এনজিও রয়েছে যেমন রাবেতা, রিভাইরাল অব ইসলামিক হেরিটেজ, ওয়ামি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব এনজিওর উপদেষ্টা/পরিচালক হিসেবে থাকেন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিগন এবং ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতারা। এদের মাসেহারা নেহাত কম নয়। এছাড়া ইসলামি দল গুলোর যে সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আছে যেমন ইবনে সিনা, ইসলামি ব্যাংক, সংগ্রাম এসব প্রতিষ্ঠানে মধ্যপ্রাচ্যই সহজ শর্তে প্রচুর লগ্নি করেছে। এদের জন্ম হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের টাকায়। এসব প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টার পদগুলোও অলংকিত করে আছেন তারাই। [যেমন ইসলামি ব্যাংকের শরিয়া বোর্ড] আমার সব কথা ইতি টানছি এভাবে, যদি দেখেন ইসলামি ব্যক্তিত্ব গন বা দল সমূহ যদি সউদি রাজ রাজাদের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন তাহলে বুঝবেন তারা সউদি রাজার ওই দাওয়াত খেয়ে আসা মানুষ বা তাদের রিয়াল ভোগি বা তাহা পাওয়ার আশায় নিবিষ্ট মনে তাদের প্রভু সউদি রাজ রাজাদের প্রশংসায় মগ্ন। 

 পুনশ্চঃ 

* এটা আমার মত। দাবি করছি না এটাই একামাত্র সঠিক মত। 

* যেকোন যোক্তিক এবং তথ্যভিওিক সমালোচনা স্বাগতম।


নিজের সম্পর্কে লেখক

তোমারা মানুষ, আমরা মানুষ তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।