প্রপাগাণ্ডা মোকাবিলা

অক্টোবর বিপ্লবের একশ বছর উপলক্ষে চিন্তার ওয়েব পাতায় আমরা বেশ কয়েকটি লেখা পেশ করেছি। আধুনিক কালপর্বে পাশ্চাত্যের অক্টোবর বিপ্লব মানবেতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ চিনের বিপ্লব এবং ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লব। মানবেতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উত্থানপতন এবং বিপ্লবোত্তর সমাজগুলোর পর্যালোচনা একালে আমাদের কর্তব্য নির্ণয়ের জন্য জরুরী। যাঁরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে অক্টোবর বিপ্লবের ১০০ বছর পালন করেছেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই।

বাংলাদেশে চিন্তা ও তৎপরতার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ঐক্যের শর্ত তৈরি ও প্রশস্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্ষেত্রে কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক বা মতাদর্শিক তর্কের মীমাংসা জরুরী। ধর্ম, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম ইত্যাদি সম্পর্কে বিবিধ কানকথা, গুজব ও ভুল অনুমানগুলো পরিহার করা দরকার। সে কারণে ধর্ম, বিশেষত ইসলাম সম্পর্কে বিদ্বেষী প্রচার প্রপাগাণ্ডার বিরোধিতা যেমন জরুরী তেমনি কমিউনিজমের বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগাণ্ডার মোকাবিলাও সমান জরুরী। ইসলাম ও কমিউনিজম এক নয়, বলাই বাহুল্য। কমিউনিজম কোন ধর্ম বা বিশ্বাস নয়, কিন্তু কমিউনিজম মানেই নাস্তিক্যবাদ -- স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের এই প্রপাগাণ্ডাও বিভ্রান্তিকর। এই বিভ্রান্তি থেকে আমাদের মুক্ত হওয়া খুবই দরকার। যারা নিজেদের কমিউনিস্ট গণ্য করেন তাদের খেয়ে না খেয়ে ধর্মের বিরোধিতা বিশেষত ইসলাম বিদ্বেষের ব্যারাম থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা দরকার।


অক্টোবর বিপ্লবের একশ বছর উপলক্ষে চিন্তার কয়েকটি লেখা

'বুর্জোয়া'
'বিপ্লব'
লেনিনের স্বাস্থ্যভাবনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের ফিল্ড হাসপাতাল
রুশ বিপ্লবে নারী


পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র ইত্যাদি পড়বার ক্ষেত্রে ধর্ম বা বিশ্বাস যদি বাধা না হয়, তাহলে একজন মোমিন বা তরুণ মাদ্রাসার ছেলে সমাজ, অর্থনীতি ও ইতিহাস ভালভাবে বোঝার জন্য কার্ল মার্কস বা লেনিন পড়তেই পারেন। পারবে না কেন? একই ভাবে যাঁরা আসলেই ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ও পরিচ্ছন্ন জ্ঞান গড়ে তোলা তাঁদের অতিশয় প্রাথমিক এবং আবশ্যিক কাজ। মার্কস, লেনিন, কিম্বা মাওজে দং-এর চিন্তা এবং তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানা ও পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের কালপর্বে তাদের নতুন ভাবে পর্যালোচনাও এখন, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর -- অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ।

পার্থক্য সত্ত্বেও ইসলাম ও কমিউনিজমের আন্তরিক মিলের জায়গা হচ্ছে উভয়েই জালিম ও জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াকু; উভয়েই ভাষা, ভূগোল, জাতি, রাষ্ট্রের উর্ধে একটি মানবসমাজ কায়েমের স্বপ্ন দেখে এবং কোন প্রকার গোত্রবাদ, গোষ্ঠিবাদ, জাতিবাদ ইত্যাদির প্রশ্রয় দেয় না, কারণ তা বিশ্বসমাজ কায়েমের প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। যে কোন ধর্ম বা দর্শের ঐতিহাসিক বিকার ঘটতে পারে, কিন্তু সেটা ভিন্ন বিতর্ক।

জ্ঞানচর্চার অর্থ সব কিছু নির্বিচারে মেনে নেওয়া নয় বরং পর্যালোচনার শক্তি বাড়ানো এবং নতুন ভাবে চিন্তা করবার সামর্থ অর্জন। ঈমান হারিয়ে যাবার ভয়ে কেউ যদি জ্ঞানচর্চায় বিরতি দেয়, তাহলে বোঝা যায় সেটা আর যাই হোক ইসলামী ঈমান নয়, কারণ ইসলাম জ্ঞানচর্চাকে ঈমানের অন্তরায় মনে করে না। যদি কেউ পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন না করে তাহলে ইসলামপন্থা কেন, কোন পন্থাই -- এমন কি কমিউনিস্টরাও -- বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে  বিকল্প সমাজ গঠন করতে পারবে না। পুঁজিবাদ বা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা বুঝতে হলে কার্ল মার্কসের কোন বিকল্প নাই।

অতএব অনেক বিচক্ষণ হতে হবে।  জ্ঞান ও বিশ্বাসের সম্পর্ক পরস্পরের বিরোধী ভাবা প্রাচীন আহাম্মকি ছাড়া কিছু নয়।

চিন্তা পাঠচক্র বিশ্বাস ও জ্ঞানের দূরতিক্রম্য ক্ষেত্রের ওপর সব সময়ই আলো ফেলবার চেষ্টা করে।


নিজের সম্পর্কে লেখক



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।