বাংলাদেশের সুবিধাবাদী প্রগতিশীল দল এবং একটি হরতাল

গেলবছর, ১৮ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বামপন্থী দল কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ-সিপিবি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, তাদের পূর্ব ঘোষিত সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে গতি দেয়ার জন্যে সকাল থেকেই খণ্ডিত আকারে মিটিং-সমাবেশ শুরু করে। ইতিহাস তলব করলে দেখা যায়, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে তাদের, মানে বামদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রসঙ্গত এই হরতাল বিশেষ আলোচনার দাবী রাখে, কেননা তাদের এই হরতাল দেয়ার কারণগুলোর মধ্যে স্পষ্ট এবং অন্যতম কারণ হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সহ ধর্মভিত্তিক দল জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। যদিও হরতাল দেয়ার পেছনে অন্য কারণ ও ছিল তবে জামাত-শিবির রাজনীতি বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার’ই ছিল তাদের মূল সুর। ৭৩ এ মুজিব রাজনীতির সাথে বামদল-সিপিবি’র সহমতের বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখতে পাই একটি সরল সুবিধাবাদ, যে সুবিদাবাদ মূলত ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই না। এবং ৭৫ এর পরবর্তি বামদের আভ্যন্তরীণ অসহনীয় তাত্বীক গোলযোগ সাধারণ জনগণকে বামদের প্রতি অনাস্থার ভীত তৈরি করতে মসলা যোগায়। ফলে আজকের এই বিকশিত শোষণমুখী পুঁজিবাদের মাঝে যাদের কে শ্রমিক প্রতিনিধি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের কাণ্ডারি হিসেবে পাবার কথা তা না হয়ে এমন এক শ্রেণির রাজনৈতিক দলকে আমরা পাচ্ছি যারা কিনা সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যদিয়ে মূলত ভোটের রাজনীতি করেতে চায়। এবং ৮০ দশকের পর জন্ম নেয়া যে কোন বাম সংগঠন সিপিবি’র রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করবে না এমনটি বলা যায় না, যেহেতু ক্ষয়িষ্ণু সামন্তীয় পুঁজি এবং উদীয়মান পশ্চিমা-পাশ্চাত্য পুঁজির লড়াইয়ের ফাঁকফোকরে কিছু সুবিধাবাদ মতাদর্শ গজাবে এটা একটি চলমান সত্য। সে বিবেচনায় সিপিবি’র নয়া সফর সঙ্গী বাসদ বামমোর্চা ছেড়ে সংসদীয় ভোট-রাজনীতি যেমন অবাক করে নি তেমনই আমারা অবাক হইনি ৭৩ এ মুজিবের সাথে সিপিবির সন্ধি। সুতরাং এই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীর মত পাবলিক সেন্টিমেন্ট ইস্যুটি পুঁজি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে জনগণের কাছে নিজেদের (বামদের) রাজনৈতিক প্রচারনা হিসেবে এই হরতাল একটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং এর ফলে যা দাড়ায় তা যথারীতি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটবাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে এবং এতে করে দেশের সচেতন মানুষরা যদি এই সিদ্ধান্তে আসে যে, ১৮ তারিখের এই হরতাল মূলত শোষকশ্রেণীর প্রতিনিধি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে সিপিবি-বাসদের সহমত পোষণ ছাড়া আর কি হতে পারে। যদিও এই মুহূর্তে বামদল এবং সমমনারা মনে করে দেশের তৃতীয় শক্তির উত্তান খুব জরুরী কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জনগণ রাষ্ট্রের ক্ষমতায় সেই শক্তিকে আদৌ চায় কিনা বা চেনে কিনা। দেখুন বাংলাদেশে বামদলদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বাকি দল গুলুর সাথে মিলে না, এমনকি সমাজতন্ত্রীরা তাদের কে বরজুয়া দল বলে গালি দেয় এবং চূড়ান্ত সমাজতন্ত্র কায়েম করার পর এই সব বরজুয়া দলকে হয় নিষিদ্ধ করবে নতুবা বামদলদের দালাল বানাবে। কিন্তু জামাতের ইসলামী রাজনীতি বামদলের সরাসরি শত্রু এবং এটা শুরু থেকেই নিষিদ্ধ হলে বরং বামদলেরই লাভ। তাহলে বিনপি-লীগ-জাপা’র মত এত দল থাকতে শুধু জামাত রাজনীতি বন্ধ করার দাবীটা সুবিধাবাদী আচরণ ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। ভাল কথা, রাষ্ট্রের জনগণ/নাগরিক হিসেবে এ দাবী তারা করতেই পারে, কিন্তু যে বামদলরা দেশের ৭১ এর চেতনা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করে সেখানে কিসের ভিত্তিতে তারা যুদ্ধাপরাধ খুঁজে। যে দল ৭১ এর মুক্তি যুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই মনে করে তাদের আবার স্বাধীনতার চেতনা কি? আমরা কি কখনো দেখেছি এই সব বাম দলেরা ২৬ শে মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর এ শহিদ বেদিতে ফুল দিতে বা নুন্যতম সম্মান জানাতে? (যদিও এখন তারা বেদিতে যায়, কেন যায় এটাও জানা কথা) যে দল দেশের জাতীয়তাবাদ (হোক না সে বাঙালি বা বাংলাদেশী) কে অস্বীকার করে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সর্বোপরি যে রাজনৈতিক দল একটি দেশের জাতীয়তাবাদ মানে না তাদের কোন সার্বভৌমত্বের চেতনা নাই এটাই যদি মোটকথা হয় তাহলে তাদের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়াজ ঠিক মানায় না। ৭১ এর যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথাও যদি তারা বলতে চায় তাহলেও কিছু বলার থাকে আর সবচেয়ে বড় ব্যপার হল সংসদীয় ভোটের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা দখল এবং সমাজতন্ত্র কায়েম সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তা রাষ্ট্রের সাথে দ্রোহিতা। দেখুন, যে কোন যুদ্ধের (হোক না সে গৃহ যুদ্ধ) উদ্দেশ্যই হচ্ছে যে কোন একটি দলের বা রাষ্ট্রের তার ক্ষমতা বা তত্বের প্রতিষ্ঠা এবং এখানে প্রথম বলি মানবতাবাদ, যেমন হিটলার-সেতং-স্তালিন খুন-গুম এর মধ্য দিয়ে যেটা করেছে তেমনি করেছে পাকিস্তানীরা। ঐতিহাসিক ভাবেই এটা প্রতিষ্ঠত, যেমন বাম দল ক্ষমতায় আসলে রক্তপাতের মধ্যদিয়ে যা হবে। বিনা রক্তপাতে বিপ্লব, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল তো আর হয় না যেমন হয়নি নেপালে। সেখানে নিশ্চিয় মানবতাবাদ ইস্যু থাকবে না এবং নিশ্চয় কাঠ-কয়লা-পাথরে বিপ্লব ফলে না! যাই হোক, ঢাকায় মূলত পল্টন আর শাহবাগ এলাকায় হরতাল বেশ ভালই পালিত হল, সফল বলা যেতে পারে তবে সারাদেশে কি পরিমাণ সফল হল তার খবর অবশ্য আমি ঠিক জানি না, যদিও সন্ধ্যায় সিপিবি-বাসদ এর সম্মিলিত হরতাল পরবর্তী আলোচনা পর্যালোচনায় শুনলাম সারাদেশে তাদের ডাকা হরতাল ব্যপক ভাবে নাকি সফল। সিপিবি-বাসদ নেতাদের দাবী, দেশের সর্বস্তরের জনগণ হাত নেড়ে, রাস্তার সমস্ত কুকুর লেজ নেড়ে, মাছেরা ফুলকা নেড়ে এবং আকাশের সমস্ত পাখি কিছির মিছির করে আর আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসের দেয়ালে টিকটিকিটা ঠিক ঠিক করে নাকি হরতালের সম্মতি জানায়। আর অন্য দিকে দেশের সমালোচকরা দাবী করেন, আওয়ামীলীগ রাজত্বে আওয়ামীলীগের দালালদের দেয়া হরতাল সফল না হয়ে কি বিনপি-জামাতের টা হবে? আওয়ামীলীগ সরকার এই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যেমন চাপে আছে, তেমনি দেশীয় শক্তিদের হাতেও তাই, যেহেতু এই বিচার কে রাজনৈতিক কু-উদ্দেশ্য হাসিলের চরম উপায় বলে বিএনপি-জামাত সহ অনেক রাজনৈতিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মতামত দেন। যখন জামাত-শিবির রাজপথে কঠোর আন্দোলনে নামে এই বিচারের বিরুদ্ধে, যখন সাম্প্রতিক প্রভাবশালী ব্রিটিশ উইকলি ‘দি ইকনমিষ্ট’ কেলেঙ্কারি বিচার প্রক্রিয়াকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ঠিক সেই মুহূর্তে আওয়ামীলীগের বিকল্প রাজনৈতিক শিবির নির্মাণ করাটা খুব বেশী অবাক করে না এবং বামদলগুলু আওয়ামীলীগের চাটুকার হিসেবে অন্য মঞ্চ থেকে ঘেউ ঘেউ করবে এটাও জানা কথা। এবং সে হিসেবে হরতালটি সফল। কিন্তু বাম- রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিবেচনা করলে এই হরতাল শোষিত মানুষের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয় এবং সর্বহারা জনগণের সাথে বেয়াদবি। সুতরাং এই মুহূর্তে জাতীয় মতামত জোগাড় করার জন্যে আওয়ামীলীগ সরকার আধা জল খেয়ে প্রচার প্রচারনা চালাবে এটাই সরল কথা। আর ফাকতালে সুবিধাবাদী বামদলেরা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে, জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করণের নামে মাঠে নেমে সংসদে কয়েকটা আসন এবং কয়েকটা মন্ত্রীপদ আওয়ামীলীগের কাছ থেকে যদি ভিক্ষা হিসেবে পাওয়া যায় তাতে মন্দ কিসের? জনমানুষের জন্যে কাজ করে নির্বাচনে জয়ী হয়টা তাদের জন্যে যে বেশ কঠিন তা তারা ভাল করেই জানে। অবশ্য এ ধরনের রাজনৈতিক সহমতে যেমন লাভ আছে ঠিক তার বিপরীত ও হয়, যেমন, যদি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয়ী না হয় তাহলে তো এই সব বামদলের নেতাদের খালি হাতে ফেরা ছাড়া আর কোন গতি নাই। এই সরল অঙ্কটি ঐ বামদলগুলুর ভালই তো জানার কথা। বাংলাদেশের বামদলের (মূলত যে সমশ্ত দলের রাজনৈতিক ডেরা গনভবন আর সংসদের মাজখানে) উপর বিশ্বাস রাখা বেশ ঝুঁকির বিষয় কেননা সে সব বামদলেরা দেশের সংবিধান কে বরজুয়া সংবিধান বলে গালি দেয় এবং এই বরজুয়া সংবিধান জনকল্যাণ বিমূখ বলে যখন গালি দেয় তখন স্পষ্টতই বুঝা যায় এই দল গুলোর সাথে জামাত-শিবির রাজনীতির মধ্যে কোন অমিল নেই। পার্থক্য হল মূলত রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল পক্রিয়ার শব্দ চয়নে, যেমন বামদের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর জামাত-শিবিরের ইসলামী জিহাদ, সুতরাং এখানেই মূল সঙ্কট। যদিও বামদলেরা ইসলামী রাজনীতিকে ধর্মান্ধ এবং অবৈজ্ঞানিক সহ অনেক কিছু মনে করে আর অন্যদিকে মানুষের মন থেকে আল্লাহ-রাসুল বাদ দিয়ে সমান বণ্টনের কথা বলে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চায় বলে ইসলামী রাজনীতির অভিমত। যদিও এসব খুবই সাদামাটা আলোচনা, কেননা এখানে রাজনীতির খেল টা অন্যখানে। এখন কথা হচ্ছে জামাত শিবিরের ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের একটা চরিত্র পাওয়া যায়, সে ভাল হোক আর মন্দ হোক পরের বিষয়। কিন্তু বামদলগুলুর রাজনৈতিক চরিত্র জনগণের কাছে এতটাই অস্পষ্ট যে জনগণ জানেই না আসলে সমাজতন্ত্র টা কি। গণতন্ত্র যদি জনগণের সমান অধিকারের কথা বলে তাহলে সমাজতন্ত্র কি করে একই কথা বলে যদি তারা দাবী করে যে সমাজতন্ত্র ভিন্ন উন্নতর কিছু! নয়াগণতন্ত্রের কথা বললে না হয় জনগণ বুজত এটা আসলে উন্নত গণতান্ত্রিক কিছু। আসল কথা হল, যে কোন তন্ত্র যদি রাষ্ট্রের সর্বস্তরের জনগণের মঙ্গল হয়- সে যদি রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র এমনকি স্বৈরতন্ত্র ও হয়-তাতে ভিন্ন কোন তন্ত্রের দরকার পড়ে না। কিন্তু অবাক হবার বিষয় হল, এদের রাজনীতি বৈজ্ঞানিক সুর তোলে জনমানুষের কাছে এতটাই অস্পষ্ট করেছে যে তার কাঠামোগত ভীত এখনো জনমানুষের সমর্থন টানতে পারে নি। সুতরাং সমর্থনের জন্যে রাজনৈতিক লেজুড় হয়ে ক্ষমতায় আসাটা বাংলাদেশের বামদলগুলুর এখন একটি প্রচেষ্টা। যদি প্রচেষ্টার পদ্ধতি লেজুড়ে হয়, জনগণের কাছে তাদের রাজনৈতিক ইশ্তেহার যদি অপরিচিত হয় এবং সর্বপরি বামশক্তির নামে জনগণের সাথে তামাশা করা হয়, তাহলে এই শক্তি জনকল্যাণমুখী তো নয়ই বরং ক্ষতিকর। কম্যুনিস্ট ইশ্তেহার বলে, সমাজতন্ত্র মানেই শ্রমিক শ্রেণির আদর্শ, এখন প্রশ্ন হল, এই সব সমাজতন্ত্রীরা শ্রমিক শ্রেণির আদর্শ কতটুকু ধারণ করে এবং এসব বাম নেতারা নিজে এবং তাদের পূর্ব পুরুষরা আদৌ শ্রমিক ছিল কিনা কেননা, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শহুরে, জোতদার, অল্পজমির মালিক আদর্শকে ভেঙ্গে এখনও শ্রমিক আদর্শের চেতনায় মিচ্চিরি জমেনি। সুতরাং এগুলু যেমন আলোচনার বিষয় ঠিক তেমনি গোলামি ব্যবস্থার পরিবর্তনের দায়িত্ব ঐতিহাসিকভাবে অর্পিত হয়েছে শ্রমিক শ্রেণির উপর এবং সেটা একা নয় বিশেষ করে কৃষকদের সাঙ্গে জোট বেঁধে। সে হিসেবে পার্টি হবে শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা এবং কোনভাবেই বরজুয়া বা পেটি বরজুয়া পার্টির লেজুড় হলে সমাজতন্ত্র কায়েম অসম্ভব। সুতরাং নিজেরা যেমন শ্রমিক নয় তেমনি যাদের কে তারা শ্রমিক বলছে-যেমন গার্মেন্টস কর্মী, রিকশাওয়ালা এবং দিনমজুর-তারা শ্রমিক মানদণ্ডে কত নম্বর পায় বা তাদেরকে আদৌ শ্রমিক বলা যায় কিনা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আর তাছাড়া এসব শ্রমিকরা গতর খেটে কিছু পুঁজি বানাতে পারলেই তার মতন খেটে খাওয়া অন্যদশজন গতর খাটা মানুষদের যে সে শোষণের উদ্দেশ্যে দাস বানাবে না তারও বা নিশ্চয়তা কি। এবং তাই যদি হয় তাহলে বাংলাদেশে শ্রমিক রাজনীতি এবং শ্রমিক আদর্শ আর রইলো কোথায়? সুতরাং দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই কর এইসব রাজনৈতিক শ্লোগান দেহমন চঙ্গা করে কিন্তু রাজনৈতিক ভীত তৈরি হয়না। সুরতাং ১৮ তারিখের হরতাল মূলত একটি সরল সুবিধাবাদ।


নিজের সম্পর্কে লেখক

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ভবগুরে জীবন, মুখে মাছির মতন ভঁন ভঁন করত পুঁজিবাদ পতন হোক, শোষিত মানুষ মুক্তিপাক, ইত্যাদি। এসবের কারণে বিপক্ষ রাজনৈতিক শিবিরেরে হুমকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন ছিল তিক্তাতায় ভরা। এরপর, দুটি কর্পোরেট ডিগ্রী হাতে আর অন্যদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের মগজে বেনিয়াদের ফেলে যাওয়া সেই ‘স্বেচ্ছা-শোষিত’ হবার স্বপ্ন গোঁজা নিয়ে ঢাকায় চাকরীর খুঁজে এসেই স্বেচ্ছায় মজদুর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া, যদিও মজদুর রাজনীতির হাতেকড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই এমন এক ছাত্রের হাত ধরে যে কিনা প্রথম বর্ষেই পুলিশের বন্দুক কেড়ে নেয়ার অপরাধে জেল-জরিমানা হয়। ডিগ্রীগুলো আমাকে কর্পোরেট চাকরী সহজেই পাইয়ে দিল বটে কিন্তু ক্ষুধিত মন চায় না এ জীবন এবং অবশেষে ইস্তফা। এদিকে মার্কস-এঙ্গেলস অন্যদিকে সেতং-লেলিন-স্তালিন এর দেখিয়ে দেয়া পথ আর ফিদেল-গুয়েভরার অসাধ্য সাধনের কয়েক গাছী গল্প বুক পকেটে নিয়ে আজীবন রাজনীতি করার প্রতিজ্ঞা এবং কলেজ শিক্ষতা সহ ঢাকায় ভালই কাটছিল। কিন্তু বছর ফিরতেই বাণিজ্যিক শিক্ষালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিজের কাছেই যখন অপমানিত তখন শুরু করে দিলাম ঢাকা’র নামকরা একটি প্রভাবশালী জাতীয় ইংরেজি পত্রিকার ল্যাজ ধরে সাংবাদিকতা। সবে সাংবাদিকতার অ-আ গিলছি মাত্র কিন্তু পরিশ্রম ছিল অমানবিক তবে কজে ছিল নুন্যতম স্বাধীনতা যেন ভালই লাগছিল, আবার, আগে শিক্ষক হিসেবে যা পেতাম এখন তারও চেয়ে অনেক কম মাইনে নিয়ে যখন সারাদিন দিনে আনি দিনে খাই এমন, তখন পকেট আর পেট থেকে আবার পেশা পাল্টানোর তাড়না। কিন্তু হয়ে উঠেনি, কেনেনা ঠিক একবছর পরে কিন্তু একদিন ২০-২২ শে অগাস্ট ২০০৭ অন্তরবর্তী সেনাপুষ্ট তিনউদ্দিন সরকারের দেশজুড়ে জরুরীঅবস্থা জারি এবং আবুল বাশারের ‘অগ্নি বলাকা’ পাল্টে দেয় আমার মত, এবং আজঅব্ধি সাংবাদিক (সাংঘাতিক!)। প্রমোশন পেয়েছি, তবে এখনো দিনে আনি দিনে খাই এমনটি রয়েছে আগেরমত। তবে জীবন আমার শরৎ-উপন্যাসের নায়কদের মতনই ছিল, এখনো তায়, কেনান জীবনের চরম সময়গুলোতে এক আঁজলা জল খাওয়ানোর মত নায়িকার আবির্ভাব আমাকে টিকিয়ে দিয়েছে। সে নায়িকা দিদি,খালা অথবা সুন্দরিতমা। আমি ‘অগ্নি বলাকা’র রাহুল নই আবার লাল বই ও আমার ব্যাগে নেই তবে মাওবাদী বলে আমাকে অনেকে গালি দেয় আর বলে রাহুলের বড় দাদা ‘বুলুবনের’ ভাষায় প্রতিক্রিয়াশীল। তাতে আমার কিছুই যায় আসে না কিন্তু রাহুলের বিপ্লবী বন্ধু এবং সহযোদ্ধা ‘কবি’র প্রতি সংগঠনের অন্যায় সিদ্ধান্ত আমাকে বিষণ ভাবায় কেনান কবি’র মৃত্যুটি সুন্দর ছিল না। এবং আমার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় সেই সর্বহারা সংগঠন কীভাবে নিজের দলের কর্মিকে হত্যা করতে পারে যেমন করেছিলো আমার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের বন্দুক কেড়ে নেয়া বন্ধুটির বেলায়।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।