পাক্ষিক চিন্তা ১৫ অক্টোবর ২০১০ সংখ্যা


একটা নির্বাচিত সংসদও সামরিক আইন প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমিকা নিতে পারে -- নির্বাচিত সংসদ থেকেও সামরিক ফরমান জারি হতে পারে।সম্প্রতি সেই নজির দেখল বাংলাদেশ।-- ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ সংসদে কণ্ঠভোটে পাস করেছে ক্ষমতাসীন দল। এই সংসদীয় ফরমান চরিত্রের দিক থেকে সামরিক ফরমানের মত...। আরো পড়ুন...

  • একীভূত সীমান্ত বা যোথ টহলের আত্মঘাতী বন্দোবস্ত
  • বিএসএফ কতৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার দায় নিতে রাজি হোল বাংলাদেশ
  • সরেজমিন জৈন্তাপুর
  • প্রধান বিচারপতির 'হারানো ক্রেডিবিলিটি'
  • আদিবাসী হওয়ার তদবিরে ব্যস্ত পার্বত্য সংগঠনগুলা
  • ঢাকার তিনটি সরকারী হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার হালচাল
  • ক্ষুধা ও পুষ্টি দূর করতে এমডিজি ব্যর্থ
  • সুশীল সমাজের 'অভ্যুত্থান ক্ষেত্র তৈরী করছে আওয়ামী লীগ
  • কার্তিকে সাঁইজীর ধামে
  • দুনিয়ার সব সম্পর্কের মধ্যে আখিরাতকে জীবন্ত করবার জিহাদ।।

জ্বালানি খাত বিষয়ে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে অসীম ও বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে সম্প্রতি একখানা আইন -- ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ সংসদে কণ্ঠভোটে পাস করেছে ক্ষমতাসীন দল। সব অর্থেই আইনটা অসীম ও বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী; বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্য কোন আইনের সাথে যদি এই আইনের কোন বিধান সাংঘর্ষিক হয় তবে এই আইনটির কর্তৃত্বই প্রাধান্য পাবে। সরকার ‘যেকোনও সিদ্ধান্ত’ নিয়ে সে অনুসারে কাজ করে তা এই আওতায় নিয়েছে বলে ঘোষণা দিতে পারবেন --এবং কোন আদালতেই ওই কাজের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এইসীমাহীন ও বিশেষ আওতা, অন্য সব আইনের ওপর প্রাধান্য, আদালতের সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে থাকা; এসবই শুধু একটা সামরিক ফরমানের বৈশিষ্ট্য হতে পারে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জ্বালানি খাতের -- বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি দূরের কথা, স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে পারে নাই সরকার। উৎপাদন বাড়ে নাই তুলনামূলকভাবে। এমন অবস্থার পরও রাষ্ট্রীয় খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনও উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। বরং তড়িঘড়ি করে একদমই অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ বেশ কিছু বেসরকারি কোম্পানিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর অনুমোদন দিয়েছে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরপত্র ছাড়াই। ওসব কোম্পানির কাছ থেকে যে দরে সরকার কিনে নেবে বলে চুক্তি করেছে তা রাষ্ট্রীয় খাতের উৎপাদন খরচের চেয়ে কমপক্ষে দুইগুণ,কোন কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে পাঁচগুণ দামে কেনার চুক্তিও করেছে। ভাড়াবিদ্যুৎ নামের এই উদ্যোগ যে ব্যর্থ হতে চলেছে তার আভাস ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। উৎপাদন শুরু করার মেয়াদের মধ্যে একটা কোম্পানিও উৎপাদনে যেতে পারে নাই। এবং কোম্পানিগুলা সরকারকে জানিয়েছে যে, তারা খুব শিগগিরই উৎপাদনে যেতে পারবে না।

সবচেয়ে বড় কথা হল, সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির ওপর ভরসা করে কোন বেসরকারি কোম্পানির পক্ষে নিরবচ্ছিনড়বভাবে উৎপাদন চালু রাখা অসম্ভব, যা দক্ষিণএশিয়ার অনেক দেশে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। এখন এই ভাড়াবিদ্যুতে যদি কোন লাভ হয় তবে সে লাভ কেবল পুরা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টদের, জ্বালানি খাতের কোনও লাভ আছে বলে সম্ভাবনা নাই। এই ভাড়াবিদ্যুৎ উদ্যোগে সরকার জ্বালানি খাতের কয়েকটি নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। এখন এই সংসদীয় সামরিক ফরমান দিয়ে আগের অবৈধ উদ্যোগের দায় থেকে সুরক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হল।

তাছাড়া আইনে এমন বিধান রাখা হয়েছে যে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ চাইলে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রয় করতে পারবে নিজেদের বিবেচনায়। যার ফলে আসলেসম্প্রতি গৃহীত সরকারি নীতিমালাও জ্বালানি খাতের ক্ষেত্রে কার্যত বাতিল হল। জ্বালানি খাতের মত একটি জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ওদুর্নীতির সুরক্ষাদানকারী এই আইনটি এমন এক সময়ে পাস করা হল যখন সমুদ্রবক্ষের গ্যাস উত্তোলনে নানা বিদেশী কোম্পানির সাথে চুক্তি ও সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে সরকার। এই আইন গ্রহণ করার ফলে এখন রাষ্ট্রস্বার্থ বিরোধী কাজের জন্যও আইন-আদালত সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

নির্বাচিত সংসদ কর্তৃক এমন সামরিক ফরমান জারি করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করল যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আসলে তাদের কোনও আগ্রহ নাই, বরং সংসদীয় গণতন্ত্রের মোড়কে সামরকি কায়দায় সরকার চালাতে আগ্রহী তারা।

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।