রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নতুন সাংগঠনিক রূপ


প্রথমে একটি কথা স্পষ্ট ভাবে বলা দরকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে, অনেক বাড়ি জ্বালিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। যারা এই হামলার স্বীকার হয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই গরিব ও নিপীড়িত শ্রেণির মানুষ। তাঁদের অপরাধ তারা হিন্দু। মনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের পালটা ক্ষমতা যদি কেউ তৈরী করতে চায় তাহলে তার প্রথম কাজ হচ্ছে মাঠে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। এটা স্রেফ বিএনপি বা জামাতের একটি কি দুটি বিবৃতি দিয়ে দায় সারার ব্যাপার নয়। মাঠে করে দেখানোর বিষয়।

রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা এই ধরণের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পরেও এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। বিএনপি বা জামাত-শিবির যদি এর দায় দায়িত্ব ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করে তাহলে তা হবে আরও নিন্দনীয়। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এই সকল ঘটনা বাংলাদেশের যারা মওলানা মাশায়েখ রয়েছেন তাদেরও সম্মান ক্ষুণ্ণ করবে। ক্ষমতাসীনরা এর দায়দায়িত্ব বলা বাহুল্য বিরোধী দলের ওপর চাপাবে, কিন্তু আন্দোলনের দিক থেকে যদি আমরা দেখি তাহলে বিরোধীপক্ষকেই প্রমাণ করতে হবে যে এই ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়। যাদের নিয়ে তারা আন্দোলন করছে তাদের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে। এই কেচ্ছা শুনে আমাদের লাভ নাই যে এই ধরণের পরিস্থিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, আমরা তো চেষ্টা করেছি। যদি চেষ্টা থাকে তাহলে ঘটল কিভাবে সেটা ব্যাখ্যা করবার দায় প্রত্যকেরই রয়েছে। বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বা যে সকল জনপদ এই ধরনের হামলার মুখে পড়তে পারে অবিলম্বে তাদের রক্ষা ও পূর্ণ সামাজিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এই কাজে সমর্থ না হলে বিরোধী পক্ষের আন্দোলন অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে। এই ধরণের ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের চরিত্র ধরা পড়ে। এই ক্ষেত্রে কোন প্রকার আপোষের সুযোগ জনগণের দিক থেকে নাই। একে নিন্দা করবার ভাষাও আমার জানা নাই।


ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের পালটা ক্ষমতা যদি কেউ তৈরী করতে চায় তাহলে তার প্রথম কাজ হচ্ছে মাঠে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। এটা স্রেফ বিএনপি বা জামাতের একটি কি দুটি বিবৃতি দিয়ে দায় সারার ব্যাপার নয়। মাঠে করে দেখানোর বিষয়।


প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ( ৬ মার্চ ২০১৩) জাতীয় সংসদে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সারা দেশে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার নির্দেশ সারা দেশের প্রতিটি পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ এখন গঠন করা হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার যে-পদ্ধতি প্রধানমন্ত্রী অনুসরণ করছেন ও করবেন তার মধ্যে একটির প্রয়োগ তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু করেছেন। সেটা হোল তার বিরুদ্ধে যে কোন বিক্ষোভ ও প্রতিবাদকে কঠোর ভাবে দমন ও পীড়ন। আস্তে আস্তে সেটা এখন গুলি চালানোতে এসে ঠেকেছে। নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। আমরা দেখলাম। গণহত্যার বিরুদ্ধে কোন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভও জানানো যাবে না। গুলি চলবে। আর এখন যেটা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা হোল, পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় যদি কেউ তার প্রতিবাদ করে, গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে, তবে তিনি তাদের ‘প্রতিরোধ’ করবেন। তার জন্য পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় ‘কমিটি’ বানাবেন। এতে পরিস্কার হয়ে গেল শেখ হাসিনা কোন রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাচ্ছেন না, পরিস্থিতিকে আরও রক্তাক্ত ও ভয়াবহ করে তোলারই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অতএব তার ‘প্রতিরোধ’ কমিটির তাৎপর্য কি আমাদের বুঝতে হবে।


শেখ হাসিনা কোন রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাচ্ছেন না, পরিস্থিতিকে আরও রক্তাক্ত ও ভয়াবহ করে তোলারই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।


কিন্তু সেটা বুঝতে হলে ফ্যাসিবাদ কী জিনিস সেটাও আমাদের একই সঙ্গে বোঝা দরকার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক লড়াইটা আসলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের নাগরিক ও মানবিক অধিকার এবং সমাজে ন্যয় প্রতিষ্ঠা বা ইনসাফ কায়েমের সংগ্রাম। ঠিক এই কারণের নাগরিকদের বাড়িঘর যদি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, তাদের মন্দির যদি ভেঙ্গে দেওয়া হয়, এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে এই আন্দোলন তার ন্যায্যতা গোড়াতেই হারাবে। যদি আমরা এটা না বুঝি তাহলে জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম পথ হারিয়ে ফেলবে। বাংলাদেশের জনগণের দেশী ও বিদেশী দুষমণরা প্রচার করতে শুরু করেছে বাংলাদেশে ইসলামি কায়দায় সাম্প্রদায়িক শক্তি গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। তারা তালেবানি রাষ্ট্র চায়, তারা শরিয়া কায়েম করবে, মেয়েদের হিজাব পরতে বাধ্য করবে, ইস্কুল, কলেজ বন্ধ করে দিয়ে সব মাদ্রাসায় পরিণত করবে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি কত ভয়ংকর সেটা প্রমান করবার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। সেটা ঘটছেও। এটা জানা কথা, কিন্তু এর অর্থ নিজের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নয়। এই দায় পালনের কঠিন দিক সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আমাদের এটা ভাববার কোন কারন নাই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নাই, অবশ্যই রয়েছে। ফলে ষোল কোটির এই দেশে কাউকে না কেউ এই ধরণের হীন ও ঘৃণ্য অপরাধে প্ররোচিত করা যাবে। কিম্বা কেউ না কেউ নিজেও প্ররোচিত হবে। তাহলে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা এই উপমহাদেশে বিষের মত আছে। কোথাও কম কোথাও বেশি। ফলে এই ধরণের ঘটনা যখন ঘটে যায় তখন পরস্পরকে দোষারোপ করবার ছেঁদো যুক্তি না দিয়ে কারা এই ভয়ানক অপরাধ ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করা এবং কঠোর শাস্তি বিধান করাই একমাত্র কাজ।

আজ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের যে লড়াই আমরা দেখছি তার লক্ষ্য জালিম শাসক ও জালিম রাষ্ট্র ব্যবস্থার উৎখাত। কিন্তু সেটা যতক্ষণ জনগণ নিজেদের কথায় ও কাজে এবং লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করে তুলতে না পারবে, ততক্ষণ বাংলাদেশ বিপজ্জনক পুলসেরাত পেরুবার চেষ্টা করছে গণ্য করতে হবে। অসতর্ক ও অসাবধানী হলে যে কোন মুহূর্তে পতন ও ধ্বংস ঘটে যেতে পারে। সে সম্ভাবনা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা এটা খুবই ভাল বোঝেন। সেই পতনের দিকেই সারা দেশকে ঠেলে দিতে তারা এক মুহূর্তও দ্বিধা করবে না। সেটা জনগণকে বোঝানো এবং কি করে ক্ষমতাসীনদের পাতা ফাঁদ তারা এড়িয়ে চলতে পারেন সেটা বারবার ব্যাখা করতে হবে।


আজ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের যে লড়াই আমরা দেখছি তার লক্ষ্য জালিম শাসক ও জালিম রাষ্ট্র ব্যবস্থার উৎখাত। কিন্তু সেটা যতক্ষণ জনগণ নিজেদের কথায় ও কাজে এবং লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করে তুলতে না পারবে, ততক্ষণ বাংলাদেশ বিপজ্জনক পুলসেরাত পেরুবার চেষ্টা করছে গণ্য করতে হবে। অসতর্ক ও অসাবধানী হলে যে কোন মুহূর্তে পতন ও ধ্বংস ঘটে যেতে পারে।


বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিবাদ কি এটা তারা তত্ত্ব দিয়ে বোঝে না। অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝে। তারা এটা বুঝে গিয়েছে ফ্যাসিবাদ আমাদের প্রাণের জিনিস, আমাদের প্রেমের, ভক্তির, শ্রদ্ধার, জিনিসকে অপমান করতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা ফ্যাসিবাদকে তাদের ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে বুঝেছে। ফ্যাসিবাদ রসুলে পাকের জীবন নিয়ে কুৎসিত ও কদর্য কথা বার্তা বলবার দুঃসাহস দেখায়। প্রতিবাদ করলেও সরকার ও রাষ্ট্র তা আমল করে না। শুধু তাই নয়, যারা করে তাদেরকে সম্মানিত করে। মহিমান্বিত করে। দাবি করে এরাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম। তারা ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানে আঘাত করে। মানুষ গভীর ভাবে আহত হলেও ফ্যাসিবাদী সরকার গা করে না। ভাবে গুলি করে প্রতিবাদীদের হত্যা করে  প্রতিবাদ নিশ্চিহ্ন করে দেবে।

ফ্যাসিবাদ ভয়ংকর। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় সরকারের দুর্নীতি দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যায় না। লেখক, সাংবাদিক, সম্পাদক যারাই সরকারের কুকীর্তি প্রকাশ করে কিম্বা সরকারকে সমালোচনা করে সরকার তাদের ধরে নিয়ে যায়, জেলে পাঠায়, অত্যাচার নির্যাতন করে, মেরে ফেলার চেষ্টা করে। সরকার কোন বিক্ষোভ মিছিল করতে দেয় না, পুলিশ দিয়ে পেটায়, টিয়ার গ্যাস মারে। আর এখন দেখা যাচ্ছে হত্যা করবার জন্য মানুষের বুকে তাক করে গুলি ছুঁড়ে। বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করবার চেষ্টা করলেও তাদের পিটিয়ে তাদের অফিসের মধ্যে বন্দী করে রাখা হয়। জনগণ অবাক হয়। যাকে তারা তাদের জাতীয় সংসদে ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছে তাদেরও পুলিশ রাস্তায় পেটায়। গুলি করে আহত করে। রাজনৈতিক নেতারা গুম হয়ে যায়। পুলিশ ও র‍্যাব কাউকে ‘সন্ত্রাসী’ অভিযোগে ধরলে তাদের কোন বিচার না করে গুলি করে মেরে ফেলে। একে বলে ক্রস ফায়ার।

হতে পারে যাকে হত্যা করা হোল সে আসলেই সন্ত্রাসী, অপরাধী কিন্তু সাধারণ মানুষ ভাবে দেশে কি তাহলে আইন আদালত নাই? অপরাধীকে বিচার কর, শাস্তি দাও। মানবতার বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়া দেখে তারা বুঝেছে বিচার নয়, যে কোন ভাবে অভিযুক্তদের ফাঁসি দিতে চায় সরকার। ফ্যাসিবাদ তাহলে সেই অবস্থা যখন সমস্ত বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং ক্ষমতাসীনদের নির্দেশের অধীনে চলে যায়।

মানুষ দেখে, মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি ছোঁড়া হয়। তারা টেলিভিশানে দেখেছে বিশ্বজিৎ নামে একটি তরতাজা তরুনকে কিভাবে চাপাতীর কোপ মেরে ও রড দিয়ে পিটিয়ে ছাত্র লীগের ছেলেরা মেরেছে। হরতাল ছিল তখন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীদের বলেছেন হরতাল ‘প্রতিরোধ’ কর। তারা প্রতিরোধ করেছে। তাহলে ‘প্রতিরোধ’ করা কথাটার অর্থ আসলে কি জনগণ কিন্তু সেটা বুঝে ফেলেছে। একজন নিরস্ত্র তরুণকে নিষ্ঠুর ভাবে কুপিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে বীভৎস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, সেটা বারবার দেখেছে মানুষ। হত্যার সেই নির্দয় হিংস্রতা দেখে জনগণ বুঝে গিয়েছে শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষকে ‘প্রতিরোধ’ বলতে কি বুঝিয়েছেন। জনগণ বুঝেছে, সরকার যখন কোন কিছু ‘প্রতিরোধ’ করবার কথা বলে তখন তার মানে বিশ্বজিতের মতো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে জ্যান্ত নিরপরাধ মানুষ মেরে ফেলা। সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমটি মূলত আরও ব্যাপক ভাবে দাঙ্গার আগাম ঘোষণা।


জনগণ বুঝেছে, সরকার যখন কোন কিছু ‘প্রতিরোধ’ করবার কথা বলে তখন তার মানে বিশ্বজিতের মতো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে জ্যান্ত নিরপরাধ মানুষ মেরে ফেলা। সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমটি মূলত আরও ব্যাপক ভাবে দাঙ্গার আগাম ঘোষণা।


পুরা ঘটনাই ঘটেছে পুলিশের সামনে। জনগণ দেখছে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র লীগ যুবলীগের কর্মীরা বন্দুক, বিশাল বিশাল রাম দা, ছুরি ও নানান প্রকার ধারালো অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে নামে। পুলিশ কিছু বলে না। কিন্তু এরা তো সন্ত্রাসী। জনগণ অবাক ভাবে দেখে পুলিশ আর এই সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে কোন ফারাক নাই। তখন তারা পুলিশকে আর পুলিশ বলে গণ্য করে না। তাকে ছাত্র লীগ বা যুব লীগেরই একজন সদস্য মনে করে। তফাত যে পুলিশ একটা পুলিশী পোশাক পরে। ব্যস। অভিজ্ঞতা থেকেই তারা বোঝে ফ্যাসিবাদ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যখন পুলিশ ক্ষমতাসীনদের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীতে পরিণত হয়। আইন-শৃংখলা বাহিনীর যখন এই অবক্ষয় ঘটে তখন তার ওপর যে কেউই হামলা করুক তার মধ্যে জনগণ কোন আইনী বা নৈতিক সমস্যা দেখে না।

এর ফলেই আইনী সীমার মধ্যে থেকে এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষে বিক্ষোভ দমন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অভাব পূরণ করবার জন্য ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমটি’ গঠন করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। ইতোমধ্যে পুলিশও সিটিজেন সেইফটি সেন্টার ( নাগরিক নিরাপত্তা কেন্দ্র) নামে আরেকটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছে বিভিন্ন ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে নিরাপত্তাহীন করার চেষ্টা চলছে। একটি অগণতান্ত্রিক দেশে এই ধরণের ‘অরাজকতা’ চলতে দেওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে নির্মূল করা হবে। নাগরিকরা যেন অপরাধ ও অপরাধীদের চিনিয়ে দিতে পুলিশে ফোন করতে পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা। যারা পুলিশে তথ্য জানাবেন তাদের নাম পরিচয় গোপন করা হবে। গত ৫ তারিখে এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। কারো সম্পর্কে অভিযোগ থাকলে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ একথা জানিয়েছেন।

সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে ফ্যসিস্ট মুসোলিনির গেস্টাপো বাহিনীর মতো কিছু একটা দাঁড় করাবার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন শেখ হাসিনা। ফ্যাসিস্ট কায়দাতেই তিনি তার প্রতিপক্ষকে দমন করবেন। রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান তিনি চান না। সন্ত্রাসের এই নতুন সাংগঠনিক রূপের কারণে সংঘাত ও রক্তপাত আরও বাড়বে। আমরা যারা শান্তির আশা করছি সেই আশা পূরণ হবে না।

৭ মার্চ ২০১৩। ২৩ ফাল্গুন ১৪১৯। শ্যামলী।

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।