তুরস্ক ও রাশিয়ার বিবাদ


আজকের দুনিয়ার আইএস বা ইসলামী স্টেট ইস্যুটি দিনকে দিন বিশ্বরাজনীতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে। ব্যাপারটি অনেকটা ‘কুইনাইন সারাবে কে’ অবস্থার মতো। ম্যালেরিয়া তাড়ানোর জন্য রোগীকে কুইনাইন খাওয়ানো হয়েছিল। এতে কুইনাইন ম্যালেরিয়া তাড়ানো গিয়েছিল কিনা, সেকথা চাপা পড়ে গিয়ে এর চেয়েও বড় ঘটনা হয়ে গিয়েছিল নতুন রোগ সৃষ্টি। কুইনাইন এ নতুন রোগ ডেকে এনেছে। তা থেকে আবার আরও অনেক নতুন নতুন রোগের বিস্তার ঘটেছে।

একই ভাবে সর্বশেষ জটিল ঘটনাটি হলো, তুরস্কের বোমারু বিমান এক রাশিয়ান বোমারু বিমানকে গোলা মেরে ভূপাতিত করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও কমিউনিস্ট প্রগতিশীলদের চোখে রাশিয়া এখন নতুন সহানুভূতির রাষ্ট্র হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। সিরিয়াতে রাশিয়ার বিমান হামলা শুরু হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রথম এক সপ্তাহ টানা বোমাবাজি করে এরপর থেকে থেমে থেমে যেন গড়ে দিনে একটা করে এবং বেছে বেছে জায়গায় বোমা ফেলা, যেখানে ফেললে তা আসাদের রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধকৌশলের দিক থেকে সুবিধা হয় -- এভাবেই বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল রাশিয়া। কিন্তু নতুন ঘটনাটা ২৪ নভেম্বরের। ওই দিন তুরস্কের বোমারু বিমান রাশিয়ান এক বোমারু বিমান গোলা মেরে ভূপাতীত করার ঘটনাটা ঘটে। এ ঘটনাটি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া কার কী ধরনের, কে কী বলেছে এর একটা সঙ্কলন রিপোর্ট তৈরি করেছে আল জাজিরা। সেই রিপোর্ট অনুসরণ করে এখানে কথা এগোব।

দুই

তবে এর আগে কেন তুরস্ক রাশিয়ান বোমারু বিমান ভূপাতিত করল সেদিকে কিছু আলোকপাত করা যাক। বিষয়টা নিয়ে এর সপক্ষে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থাকলেও সিরিয়া-তুরস্কের সীমান্তে হামলা হওয়া ওই অঞ্চলের কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্যের দিকে মনোযোগ দেব। যে অঞ্চলে তুরস্ক রাশিয়ান বোমারু বিমানে হামলা করেছে, অথবা বলা যায়, সিরিয়ার যে অঞ্চলে রাশিয়া বিমান হামলা করতে গিয়েছিল-- সেটা সিরিয়া-তুরস্কের সীমান্ত অঞ্চল। সিরিয়ার দিক থেকে তা লাটকিয়া প্রদেশ আর তুরস্কের দিক থেকে সেটা হাতায়ে প্রদেশ। এ হলো দুই প্রাদেশিক সীমান্ত। শুধু তাই না, লাটকয়া অঞ্চলে বসবাসকারীরা আধুনিক রাষ্ট্রের সীমানা টানার বহু ঐতিহাসিক যুগ আগে থেকেই ‘সিরিয়ান টার্কম্যান’ বা টার্কি বংশোদ্ভূত সিরিয়ান হিসাবেই পরিচিত।।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আজকের সিরিয়া বলে কোনো আলাদা রাষ্ট্র ছিল না; বরং আজকের সিরিয়া, ইরাক বা পুরো মধ্যপ্রাচ্যই তুরস্কের শাসনাধীন একই অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ অঞ্চল ছিল। ফলে আজকের সিরিয়ান তুর্কিরা তুরস্কের মূল তুর্কি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার একই অংশ ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অটোমান সুলতানের পরাজয়ের পর ওই সাম্রাজ্য ব্রিটিশ-ফরাসি গোপন চুক্তির কারণে ভাগাভাগিতে সিরিয়া বলে আলাদা রাষ্ট্র সীমানা টানার সময় লাটকিয়া অঞ্চল নতুন রাষ্ট্র সিরিয়ার ভাগে চলে যায়। এ হলো পুরনো ঐতিহাসিক দিক।

আর গুরুত্বপূর্ণ আরও দুই তথ্য হলো এক. সিরিয়ান আরব স্প্রিং বা সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের শুরু থেকেই সিরিয়ান টার্কম্যানরা আসাদ সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে লিপ্ত হয়েছিল এবং এখনও আছে। আর রক্ত এবং আত্মীয়তা সূত্রে তুরস্ক থেকে সব ধরনের সাহায্যপ্রাপ্তিও সেই থেকে তারা পেয়ে আসছে। তুরস্কের সরকারের দিক থেকে সরকারও নিজ টার্ক-জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক সূত্রে সিরিয়ান টার্কম্যানদের সাহায্য-সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তথ্য দুই. এ অঞ্চল সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের শুরু থেকেই আইএস অথবা পরবর্তীতে যারা আইএস হয়ে হাজির হচ্ছে তাদের কোনো তৎপরতা বা প্রভাব এখানে নেই, তাদের অনাগ্রহের এলাকা বা মুক্ত এলাকা। এটা দিকটি আমাদের প্রসঙ্গের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

কিন্তু রাশিয়ান বিমান ধ্বংস হওয়ার পর রাশিয়ান বয়ানে সুনির্দিষ্ট করে কেন তারা লাটকিয়ায় গিয়েছিল, তা উল্লেখ করতে চায় না। শুধু সামগ্রিকভাবে দাবি করে চলছে যে, পুরো সিরিয়াতে তারা আইএসের ওপর বোমাবাজি করতেই গিয়েছিল। অথচ মাঠের তথ্য হলো, লাটকিয়া প্রদেশ টার্কি বংশোদ্ভূত সিরিয়ানদের সশস্ত্র প্রতিরোধ তৎপরতা সিরিয়া-তুরস্কের এক ধরনের ঘরোয়া মামলা, যার মধ্যে আইএস নেই, অতএব রাশীয়ার স্বার্থসংশ্লিষ্টতারও কিছু নেই। অতএব রাশিয়া লাটকিয়াতে আইএস মারতে গিয়েছিল এ বয়ান অচল। নিঃসন্দেহে রাশিয়া ওখানে আইএস মারার উসিলায় আসাদ সরকারকে সামরিক সুবিধা দিতে আর সিরিয়ান স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ হাসিলে সিরিয়ান টার্কম্যানদের আসাদের পক্ষ হয়ে উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল। এ কাজ করতে যাওয়ার আগে রাশিয়া স্পষ্টত যেদিকটা আমলে নেয়নি তা হলো, লাটকিয়ার বাসিন্দাদের রক্ষা করার স্বার্থ তুরস্ক সরকারেরও আছে। রক্ত ও আত্মীয়তা সূত্রে সিরিয়ায় থেকে যাওয়া টার্কদের রক্ষা করতে নিজ জনগণের কাছে তুরস্ক সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তাহলে সার কথা দাঁড়াচ্ছে, লাটকিয়া আসলে সিরিয়া ও তুরস্কের পারস্পরিক স্বার্থে সরাসরি সংঘাতের ইস্যু। সিরিয়ায় সশস্ত্র গৃহযুদ্ধ সংঘাতের শুরু থেকেই লাটকিয়ার বাসিন্দাদের তুরস্ক সব সময় সিরিয়ান বিমান হামলা থেকে সুরক্ষা করে গেছে। একালে রাশিয়া আইএস মারার উসিলায় তুরস্ক-সিরিয়ার স্বার্থ সংঘাতের ইস্যুতে নিজের হাত ঢুকালে তুরস্ক একইভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবে এবং তা-ই দাঁড়িয়েছে। ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছিল আল জাজিরা টিভি। তুরস্কের এ স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণকেই ওখানে তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন। তবে স্বভাবতই তুরস্কের এ স্বার্থের কথা তিনি পটভূমি হিসেবে বলছিলেন। রাশিয়ান বিমান ফেলে দেয়ার পক্ষে আইনি বা কূটনৈতিক যুক্তি হিসেবে নয়। হামলার পক্ষে তুরস্কের আইনি যুক্তি হলো রাশিয়ান বিমান তুরস্কের আকাশসীমা ভঙ্গ করে তুরস্কের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং তুরস্ক বিমান বাহিনীর পাঁচ মিনিটে ১০ বার ওয়ার্নিং রেডিও মেসেজ দেয়ার পরও রাশিয়ানরা তা উপেক্ষা করেছে। তুরস্ক ওই মেসেজের অডিও মিডিয়ায় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আল জাজিরায় প্রচারিত মেসেজে শোনা যাচ্ছে ওই সাবধান বাণী। সেই সঙ্গে রাশিয়ান ওই বিমানের দুই পাইলটের বেঁচে যাওয়া একজন পাইলটের দাবিও আল জাজিরা আমাদের দেখিয়েছে। ওখানে তিনি দাবি করছেন, তুরস্ক থেকে কোনো ওয়ার্নিং দেয়া হয়নি।

অবস্থাদৃষ্টে সবমিলিয়ে বললে, বয়ানের ন্যায্যতার দিক থেকে রাশিয়া পেছনে পড়েছে। রাশিয়া নিজ বয়ানের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, পিছিয়ে আছে।

তিন

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতিক্রিয়া যেটা রয়টার্স থেকে আল জাজিরা টুকে এনেছে ওখানে দেখা যাচ্ছে, পুতিনের ভাষ্যটা যেন হার স্বীকার করা হারু পার্টির ভাষ্য। যেমন, পুতিন দাবি করছেন, বিমানটা বোমার গোলা খাওয়ার পর ওর ভাঙাবশেষ সীমান্তে সিরিয়ার দিকে চার কিলো ভেতরে পড়েছে, যেহেতু আমরা সিরিয়ান সীমার ভেতরেই ছিলাম, তুরস্কের সীমানায় ঢুকিনি। এগুলো খুবই হাস্যকর যুক্তি। অন্যদিকে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থের দিকটা আড়াল করা মাত্র। মীমাংসায় আসা যায় না। তবে মুখ রক্ষায় কাজে লাগে কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন।

সাধারণত যে কোনো বোমারু বিমান এক মিনিটে কমপক্ষে ১০-১৫ কিলোমিটার পার হয়ে যায়, এছাড়া টার্কিশ আকাশ সীমায় গুলি খেয়েও কোনো বিমানের পড়ার মাটি সিরিয়া হতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে এক্ষেত্রে তুরস্কও দাবি করছে, রাশিয়ান বিমান তুরস্কের আকাশে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল এবং ১৭ সেকেন্ড ধরে ছিল। কাজেই সিরিয়া-তুরস্কের এসব সেকেন্ড-মিনিট দিয়ে মিডিয়া বয়ান কারও নিজের পক্ষে আসবে না। বরং যে প্রশ্নে রাশিয়ানরা চুপচাপ তা হলো, লাটকিয়া আইএসবিহীন অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ান বিমান ওখানে কেন গিয়েছিল! সেখানেই খুঁজতে হবে। গোলা খাওয়ার পরে পুতিন অভিমানের ভাষায় বলছেন, ‘বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পিঠে ছুরি মারা হয়েছে।’ এছাড়াও বলছেন, ‘তারা কি ন্যাটোকে আইএসের পক্ষে খেদমতে লাগাতে চায়?’ পুতিনের এ দুই বয়ানের পিঠে আগাম ধরে নেয়া আছে যে, রাশিয়ান পাইলটরা যেন আইএস মারতে ওখানে গিয়েছিল আর সেই যোদ্ধা রাশিয়ার সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। অথচ রাশিয়ান পাইলটরা ওখানে কোনো আইএস মারতে গিয়েছিল, সেটাইতো তো প্রতিষ্ঠিত নয়।

পুতিন আমাদের ধরে নিতে বলছেন, সিরিয়ার যে কোনো জায়গায় রাশিয়ান বিমানের যাওয়া মানেই তা শুধু আইএসের ওপর বোমা মারতে যাওয়া। অথচ রাশিয়ার ভালোভাবেই জানা থাকার কথা যে, লাটকিয়ায় সিরিয়া রাষ্ট্রের স্বার্থ আর তুরস্ক রাষ্ট্রের স্বার্থ সরাসরি সংঘাতপূর্ণ। এই মুখোমুখি সঙ্ঘাতকে উপেক্ষাএ কোন সুযোগ নাই। ফলে আইএসবিহীন ওই অঞ্চলে রাশিয়া যাওয়ার অর্থই হলো আসাদের পক্ষে ভারসাম্য আনতে সরাসরি তুরস্কের পক্ষে সামরিকভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া। অতএব তুরস্কের গুলি খেয়ে বিমান হারানোর রিস্ক রাশিয়া তো আগে থেকে নিজেই নিয়েছে। এছাড়া যেদিন রাশিয়ান বিমান ভূপাতিত হয় সেদিনই রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তুরস্ক সফরের কথা ছিল। ফলে কোনো বিশেষ কারণে রাশিয়াকে যদি লাটকিয়ায় বোমারু বিমান নিতেই হয়, তবে তা নিয়ে ওই সম্ভাব্য সভায় মুখোমুখি বসার আগেই রাশিয়ার সিদ্ধান্ত সমন্বয় করে নেয়া যেত। রাশিয়া যেন ধরেই নিয়েছিল, আইএস মারার নাম করে রাশিয়া আসাদের পক্ষে মাঠের পরিস্থিতি এনে দেবে আর কেউ কিছু বুঝতে পারবে না!

এ বিষয়ে ওবামার বক্তব্যের ভেতর একটা বাক্য আছে। ওবামা বলছেন, লাটকিয়ায় রাশিয়ানরা ‘মডারেটবিরোধী’ (মানে আইএস বাদে অন্য আসাদবিরোধী মধ্যপন্থীদের) বিরুদ্ধে অ্যাকশনে চলে গেছে। অর্থাৎ ওবামাও তার বক্তব্যে পুতিনকে বকা দিয়ে কথা বলেছেন।

সেকালের কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী আমেরিকা ও ইউরোপের মিলিত যুদ্ধজোট ন্যাটো বা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের জন্ম ১৯৪৯ সালে। আর তুরস্ক ওর সদস্যপদ পায় বা নেয় ১৯৫২ সালে।

সব ন্যাটো সদস্যই রাশিয়ান বিমানের ভূপাতিত হওয়ার পর এ ইস্যুতে তুরস্কের পক্ষে দাঁড়াতে ন্যাটোর ম্যান্ডেটের কারণে বাধ্য। এটাই হবার কথা। তাই দেখা যায়, হামলার পরের বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমবাক্যেই তুরস্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু পরের বাক্যে তুরস্ক ও রাশিয়ার দুই রাষ্ট্রের প্রতি টেনশন আর না বাড়ানোর ব্যাপারে আবেদন রেখেছেন। অর্থাৎ ইঙ্গিতটা হলো, তুরস্কের পক্ষে দাঁড়ালেও ন্যাটোর কোনো সদস্য বিষয়টা নিয়ে আরও কোনো উত্তেজনা, কোনো সামরিক সংঘাতের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছে না। তারা বরং মূল শত্রু আইএসের ব্যাপারে সবাই একজোট হয়ে অ্যাক্ট করতেই চাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিরিয়ান সরকারের বিবৃতি স্বভাবতই রাশিয়ার পক্ষে। তবে রাশিয়ার পক্ষে এক আইনি যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেছে সিরিয়া। রাশিয়ার বিমান ভূপাতিত করায় তুরস্কের এ কাজকে ‘অ্যাক্ট অব এগ্রেশন’ বলে চিহ্নিত করেছে সিরিয়া। এটা জাতিসংঘের আইনি ভাষা। অর্থ ‘আইন লঙ্ঘন করে হামলা করা।’

তাই তুরস্ক সরকারের বিবৃতিতে সিরিয়ান অভিযোগের পাল্টা জবাব দেয়া হয়েছে। বলেছে, ‘তুরস্কের তৎপরতা (বিমান ভূপাতিত করা) অন্যের ভূমিতে বেআইনি প্রবেশ করে হামলাকারী হওয়ার মতো কাজ নয়।’ এ হলো, তোলা অভিযোগ আর তার বিরুদ্ধে কাটান দেওয়ার কেচাল। এসবের বাইরে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এসব পাল্টাপাল্টির বাইরে যাওয়ার চেষ্টা। কারণ তার আইএসবিরোধী জোটে রাশিয়ান অন্তর্ভূক্তি দেখতে চাওয়ার তাগিদ আছে। তিনি বলছেন, (রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে) সামরিক উত্তেজনা আর যেন না ঘটে, সেদিকে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য আইএস দমনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতিক্রিয়া এবং ওবামার প্রতিক্রিয়ার প্রথম অংশ ইত্যাদি সবারই প্রতিক্রিয়ার সাধারণ দিক হলো, সবাই জোর দিচ্ছেন রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আর না বাড়ানো এবং আইএসবিরোধী জোটে সবাই সামিল হওয়া।

সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, নিট ক্ষতিটা হলো রাশিয়ার। রাশিয়ান এসইউ ৩০ যুদ্ধবিমান একেবারেই নতুন হাইটেক বিমান। এমন একটি যুদ্ধবিমান রাশিয়াকে খোয়াতে হলো। অথবা বলা যায়, আইএসবিরোধী পশ্চিমা জোটে অন্তর্ভুক্তি পেতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিমা অবরোধের মধ্যে থাকা রাশিয়াকে যে মূল্য দিতে হলো তা বোধহয় বেশ বেশি। তবু রাশিয়াকে পশ্চিমের ঘরে তুলে দেয়ার পক্ষে তা এক কদম আগাম পদক্ষেপ। রাশিয়ার কাছে এটা যথেষ্ট দামি। তবে মাঝখান থেকে রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য বিনিময় অচল হয়ে গেছে। কারণ যুদ্ধবিমান হারিয়ে রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। পুতিনের রাগ, ক্ষোভ তো কারও কারও ওপর পড়েই প্রশমিত হতে হবে! তবে লাটকিয়ায় পুতিনের বেকুবি থেকে তিনি কী কোনো শিক্ষা নেবেন? দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

২৮ নভেম্বর ২০১৫

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।