৪. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ


করোনাভাইরাস ভয়ংকর বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতি। সেনাবাহিনী, পুলিশ বা আইন দিয়ে মহামারী দমন করা যায় না। এটা 'জরুরি অবস্থা' ঘোষণার পরিস্থিতি নয়। দেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির কোন অবনতি ঘটেনি যাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। জনগনকে সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ করবার প্রশ্ন বাদ দিয়ে এই সময় 'জরুরী অবস্থা' ঘোষণার কথা একমাত্র গণশত্রুদের পক্ষেই তোলা সম্ভব। এই যুদ্ধে জয়ের একমাত্র উপায় নিজের সুবিধা বা অসুবিধার চেয়ে সবার জীবন রক্ষাকে সবকিছুর উর্ধে স্থান দেওয়া। চাই দায়িত্ববোধ, যাতে আমি নিজে মহামারী বিস্তারের কারন না হয়ে উঠি। এবং নিজেকেও রক্ষা করতে পারি। এই বোধ বলপ্রয়োগ করে কিম্বা আইন জারি করে হয় না। মানুষকে বোঝানোর ও সচেতন করবার কোন বিকল্প নাই। কোন শর্টকাট নাই।

টেলিভিশন টক শো'তে একটি প্রস্তাব শুনে আশংকিত হয়েছি। বাংলাদেশে একব্যাক্তিকেন্দ্রিক ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থাকে আরও কঠোর ও গণবিরোধী করবার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে চিনের মতো বাংলাদেশেও 'রেজিমেন্টাল' নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হোক। প্রথমত চিনের সাফল্যের প্রধান কারণ 'রেজিমেন্টেড' ব্যবস্থা নয়, জনগণের সচেতনতা, শিক্ষা, সরকারের সময়চিত ব্যবস্থা এবং দায়িত্ববোধ। বিশেষ ভাবে ভূমিকা রয়েছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। অথচ চিনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে বলা হচ্ছে একজন ব্যক্তির একক নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরে! 'রেজিমেন্টেড' ব্যবস্থাই তো বাংলাদেশ চালু রয়েছে। তারপরও আরও রেজিমেন্টেড ব্যবস্থা চাই? আশ্চর্য! এই 'রেজিমেন্টেড' -- অর্থাৎ বিদ্যমান সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র এবং ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থায় এরা সন্তুষ্ট নয়। এক ব্যক্তির হাতে নিরংকুশ ক্ষমতা দিয়ে তারা দমন-পীড়ন ব্যবস্থাকে আরও অসহনীয় করতে চায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আছে কি নাই সেটাও কি রেজিমেন্টাল সিদ্ধান্তে হয় নি? তাতে একটি দলের ইচ্ছার বাইরে কেউ করোনার উপস্থিতি সম্পর্কে জানতেও পারেনি। যারা কোভিড-১৯ শনাক্তকরন কিট কিম্বা ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য টাকা খরচ না করে কোটি কোটি টাকা আতশবাজিতে উড়ায়, এদের দিয়ে আপনি ১৭ কোটি মানুষ রক্ষা করবেন? তারপরও ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত করবার জন্য প্রচার প্রপাগান্ডার কমতি নাই। গণমাধ্যমেরও অভাব নাই। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।

বাংলাদেশের জনগণকে বুঝতে হবে এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা একা। একদিকে ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা আর অন্যদিকে কোভিড-১৯। নিজেরা ছাড়া তাদের সাহায্যের জন্য কেউ নাই।

কোভিড-১৯ মহামারি শুধু ডাক্তারি বিদ্যা বা কারিগরি দিয়ে মোকাবিলা করার ব্যাপার মোটেও নয়। রোগ (disease) আর মহামারী (epidemic বা pandemic) এক জিনিস নয়, সমার্থকও নয়। দরকার জনগণের সচেতনতা বাড়ানো, নিজ নিজ ভূমিকার ভালমন্দ ফলের জন্য দায় বোধের শিক্ষা দেওয়া। নিজের জীবন ছাড়াও অন্যের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব উপলব্ধি, নিজেদের মধ্যে ঐক্য এবং সর্বোপরী অদৃশ্য ভাইরাস যেন আমাদের নিজেদের কারনে ছড়াতে না পারে তার জন্য নিজেকে নিজে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন করা এবং করতে শেখা। দরকার অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা যাতে করোনা কোন ভাবেই না ছড়ায়। যেন আমরা নিজেরা মহামারির কারন না হই।

নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন। যাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনে হয় তাদের বোঝাতে চেষ্টা করুন। অসুখের উপসর্গ না থাকলেও যে কেউই করোনা ভাইরাসের বীজ বাহক হতে পারে। মহামারী তাদের মাধ্যমে ছড়ায়। একজন রোগী শনাক্ত হওয়ার মানে আরো দশজন শনাক্তহীন হয়ে কোন উপসর্গ ছাড়াই আপনার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আমাদের কেউ নাই। কিন্তু আমরা আছি পরস্পরের জন্য। এটাই আমাদের প্রবল শক্তির জায়গা। 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।