৭. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ


বাংলাদেশে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্বারা নির্বাচিত সরকার আছে কি ? যাদের কাছে আপনি মহা বিপর্যয়ের সময় ন্যূনতম দায়িত্ববোধ আশা করতে পারেন? কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ না হয় পরের কথা। না, নাই।

চিনের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে দেশকালপাত্র ভেদ বিচার বাদ দিয়ে 'রেজিমেন্টেড রেসপন্স'-এর কথা বলছেন। এতো কঠিন ভাষায় না বললেও অনেকে সরাসরি বলছেন শেখ হাসিনার হাত দৃঢ় করে, তার নিরংকুশ ক্ষমতা ও নেতৃত্বে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করা হোক। কিন্তু তাঁর নিংকুশ ক্ষমতা তো আছেই। নতুন কি ক্ষমতা দেওয়া যায় এখন তা গবেষণা করে বের করতে হবে। যারা 'জরুরি অবস্থা' ঘোষণার কথা বলেছিলেন, তাঁরা কি ভেবে বলেছেন জানি না। হয়তো একই কথা সাংবিধানিক ভাষায় বলতে চেয়েছেন। 'জরুরি অবস্থা' জারি মানে সংবিধান দিয়েই সংবিধান এখন যতোটুকু আছে তাকেও স্থগিত বা বাতিল করা।

মহামারী বা বিপদের সময় মানুষ সুস্থভাবে ভাবতে পারে না। যেমন ধরুন, ডাকাতের কাছ থেকে ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই কি আশা করা যায়? যায় না। মহা আহাম্মক না হলে ভিন্ন কিছু ভাবা অসম্ভব। যাদের ক্ষমতায় দেখছেন তাদের প্রধান কাজ ব্যাংক লুট করা। কলকারখানায় দাস ব্যবস্থা কায়েম রাখা, সস্তা শ্রম আন্তর্জাতিক বাজারে বেচা এবং শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফল রপ্তানি করে বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনের বড় অংশই নানান কায়দায় লুট করা। এরপর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা ঋণ করে আনে আরও লুট করার জন্য। এই টাকা আপনাকেই কিম্বা আপনার সন্তান নাতিপুতিদেরই শোধ করতে হবে। কোন জারিজুরি খাটবে না। বললে চলবে না, আমরা তো ঋণ করিনি। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা আপনার নামেই ঋণ নিয়েছে। মাফ নাই। ঋণ শোধ দূরের কথা। আপনি এখন খাবেন কি? কৃষি জমি বিষ, ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং জিএমও ও বিকৃত বীজ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষ যাবে কোথায়?

'রেজিমেন্টেড রেসপন্স' কথাটা বাংলা হতে পারে 'সুসংবদ্ধ মোকাবিলা'। ধারণাটা খারাপ না। এর অনুমান হচ্ছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় কোন একটি দল ক্ষমতায় আছে। যাদের 'সুসংবদ্ধ মোকাবিলা'র উপায়, সামর্থ ও দায় বোধ আছে। অনেকে বাকশালের ধারণা মাথায় রেখে এইসব গল্প করছে।

চিন বিশ্ব রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রমাণ করে দেখাতে চায় যে-ব্যবস্থা তারা গড়ে তুলেছে তা এ যাবত কালের ইতিহাসে গড়ে তোলা যে কোন ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেগবান, দক্ষ এবং লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়। চিন তা প্রমান করে দিয়েছে। তাদের সাফল্যের কারনে আগামি বিশ্ব ইতিহাসের ভরকেন্দ্র চিনের দিকে ঝুঁকে গিয়েছে। বাকিরা কি করে তার নমুনা আমরা ইতালিতে এখন দেখছি। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও দেখব। অর্থনৈতিক অরোধের মুখে ইরানি জনগণেরও সংগ্রাম আমরা দেখছি।

কিন্তু কোথায় হরিদ্বার, আর কোথায় ...।

বাস্তবে আসি। দেখুন, কোভিড-১৯ মহা বিপর্যয়ের সময় আমাদের দরকার জাতীয় ঐক্য -- নিদেন পক্ষে সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করবার একটা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র। মারামারি ঝগড়াঝাঁটি যাই থাকুক আগে মানুষ বাঁচানো ফরজ কাজ। কিন্তু ভাবুন, দেশের প্রধান বিরোধী দলকে হত্যা, গুম, দমন নিপীড়ন জেল জুলুম করে প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে জামিন না দিয়ে জেলে রাখা হয়েছে। তাঁকে সমালোচনা করুন, বিরোধিতা করুন ক্ষতি নাই। কিন্তু তিনি তো বৈচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মোকাবিলা করতে চাইছেন। জামিন পাওয়া তাঁর নাগরিক অধিকার। তাঁকে জামিন দেওয়া হয় নি। এমনকি তাঁর চিকিৎসা পাওয়ার মানবিক অধিকারও অস্বীকার করা হয়েছে। সরকার পক্ষীয় এক শ্রেণির ডাক্তার এই ক্ষেত্রে সরকারকে মদদ দিয়েছে। আপনি বিএনপির বিরোধী হতেই পারেন। কিন্তু মহা বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতীয় উদ্যোগের কথা যদি বলেন আপনাকে বিরোধী দলের কথা ভাবতেই হবে।

কোভিড-১৯ বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে্র বাস্তবতা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদি বিপর্যয় রোধের সম্ভাবনার কথা ভাবা যায় -- আপনার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্ষমতাসীন শক্তি। ফলে ইনিয়ে বিনিয়ে বকোয়াজি না করে সোজা কথা বলুন।

কথাটা তোলার দরকার ছিল না। তুলেছি, কারন এই পরিস্থিতিতে কোন প্রকার জাতীয় উদ্যোগ অসম্ভব। কেউ কেউ হয়তো 'জাতীয় সরকার' জাতীয় কিছু একটা ভাবছেন। এগুলো আকাশ কুসুম কল্পনা। আমাদের নিয়তি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্দিষ্ট করে রেখেছে। রাজনীতি বাদ দিয়ে আপনি কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে চান? আপনার কি মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে?

বাংলাদেশের জনগণ, নিজেদের যে গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে সেখান থেকে তাদের তুলে আনবার দায় দুনিয়ার কেউই নেবে না। আমাদের নিজেদেরকেই সমস্যার সুরাহা করতে হবে। দুনিয়াব্যাপী এই মহাবিপর্যয়ে প্রত্যকেই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আপনি মরেন কি বাঁচেন তাতে কারুরই কিছুই আসে যায় না।

তাই আল্লার ওয়াস্তে চিনের উদাহরণ দেবেন না। আপনি চিনা না।

( এই লেখাটি আগে লিখেছিলাম। কিন্তু কি এক আশ্চর্য কারনে আমার টাইমলাইন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। তাই আবার তুলে দিতে বাধ্য হয়েছি। )

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।