১৮. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ


ধরুন, আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করলেন যে আপনি আসলেই করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে চান। যদিও আমি তা একদমই বিশ্বাস করি না। ধরে নিন আমি গোঁয়ার টাইপের। তবে এইটুকু জানুন, বিশ্বাস না করার পক্ষে আমার বিস্তর কারন রয়েছে।

তবু ধরুন, তর্কের খাতিরে মানলাম যে আপনি আসলেই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে চান না, ইনফ্লুয়েঞ্জা সর্দি-কাশি-মাথাব্যথা ভাল লাগে না। তাছাড়া মরতে নিশ্চয়ই ভয় পান। ঠিক আছে মানলাম। তাহলে সবার আগে নিজের অতি সাধারণ কিছু কাণ্ডজ্ঞান আপনাকে ব্যবহার করতে শিখতে হবে।
সেটা কি রকম?

ধরুন, আপনি কি আসলেই বিশ্বাস করেন যে এই যে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধংদেহী ভাব, তুলকালাম কোভিড-১৯ যুদ্ধাবস্থা, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, লকডাউন -- আপনাকে ঘরবন্দী, এলাকাবন্দী করে রাখা -- আপনার দিন আনা দিন খাওয়া আয়ের উৎস গায়েব করে দেওয়া, আপানার রিজিকের বারোটা বাজানো -- আপনাকে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে গাদাগাদি করে বস্তির ছাপড়ায় ঢুকিয়ে রাখা -- ইত্যাদি সবই আপনার জীবন বাঁচাবার জন্য? খেটে খাওয়া মানুষ যখন প্লেকার্ড নিয়ে দাঁড়ায়, আর লেখা থাকে, 'না খাইয়া মরার চেয়ে করোনায় মরা ভাল' -- তখন আপনার পক্ষে কি বোঝা সম্ভব ক্ষুধা কি জিনিস? না, সেই কষ্ট বোঝার ক্ষমতা আপনার নাই। অসুখে মানুষ মারা যায় বোঝেন, কিন্তু না খেয়ে মানুষ মরে এই অতি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান আপনি কিন্তু হারিয়ে ফেলেছেন। ফারাক এখন আপনার আর জানা নাই। এখন ভাবছেন মাঝে মধ্যে কারো কারো বাড়িতে খাদ্য পোঁছিয়ে দিয়ে আপনি মহা মহৎ কিছু করছেন!

মানুষ কুকুর বেড়াল না। আপনার খাদ্য সাহায্যের ওপর তো কোন মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ চলতে চায় না। এটা বোঝেন কি? তার আয়-উপার্জনের যে অবশিষ্টটুকু ছিল তা বন্ধ করে দিয়ে কুকুর-বেড়ালদের এখন খাদ্য বিলাচ্ছেন!! অথচ মানুষ যখন তার জীবন ও জীবিকার অধিকার দাবি করে রাস্তায় নামে, বিক্ষোভ করে, পুলিশের পিটানি খায়, গুলি খেয়ে মরে -- তখন আপনি কি করেন? বব ডিলান কিম্বা রোজার ওয়াটার শোনেন, তাই না?

আচ্ছা, ধর্মের কথা বলি। রমজান মাস নিয়েই ভাবুন। জীবের হক ও মানুষের মর্যাদা -- এই অতি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানটুকু যেন আপনার হয় তার জন্য ইসলাম রোজা থাকার বিধান রেখেছে। রমজানে যতো কম খাবেন ততোই শরীরে ক্ষুধার যন্ত্রণা কিছুটা হয়তো বুঝবেন। বেহেশত আর দোজখ বাদ রেখে একটু ভাবেন ইসলাম ইহলোকে আপনাকে কি শেখাতে চায়? অন্তত 'না খাইয়া মরার চেয়ে করোনায় মরা ভাল -- প্লাকার্ডে লেখা এই কালামটুকুর তাফসির মোমিন যেন ঠিক ঠিক বোঝে। যেন তারপর ইউটিবে জ্বালাময়ী ওয়াজ করে জালিমের তখতে তাউস কাঁপিয়ে দিতে পারে। শ্রমিকদের পক্ষে কৃষকের পক্ষে কখনো কিছু ভেবেছেন? কিছু করেছেন? প্লাকার্দের কথাটির পেছনে জীবের চাহিদা যেমন আছে, তেমনি মর্যাদা বোধের আয়াতটুকুও খোদিত রয়েছে। এই তুচ্ছ প্লাকার্ডের তাফসির যদি না বোঝেন, তাহলে কোরানুল করিম পড়ে কি করবেন? কিছু কি বুঝবেন?

বাঁচতে হলে সবার আগে দরকার খাদ্য এবং পানি। পানি তাই ইসলামে পবিত্র, কারন কারবালা আমাদের বুকে খচিত রয়েছে। পানি দেখলেই মোমিনের বুকে রক্তপাত শুরু হয়। তাহলে যদি ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকেন তাহলে প্লাস্টিকের বোতলে আল্লার অপার দান ফ্রি পানি বেচার জায়নিস্ট ব্যবসা কি করে কবুল করলেন? কেন বললেন না, রাষ্ট্রের উচিত সর্বত্র সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। আপনি কি আসলেই নবীর উম্মত? নিজেকে প্রশ্ন করুন।

নদী মাতৃক দেশে মিষ্টি পানির নেয়ামত দিয়ে আপনার মাবুদ এই দেশকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। তিন তিনটি বিশাল নদী, হিমালয় থেকে ভেসে আসা পানি ও পলি, অফুরন্ত বৃষ্টি। আলহামদুলিল্লাহ! এতো সম্পদ দুনিয়ার আর কাউকে দেন নি। আরবদেরও না। কিন্তু আপনি তা নষ্ট করেছেন। এখনও করছেন। হ্যাঁ, এখনো হুঁশ নাই। যদি বিষমুক্ত নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করি তাহলে বেঁচে থাকার প্রাথমিক শর্তও আমরা নিশ্চিত করে ফেলি। রোগবালাই মহামারীও দূরে রাখতে পারি। বিজ্ঞানীরা একে বলেন 'ইমিউনিটি' -- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেটাও আল্লার দেওয়া শক্তি। যদি খাদ্য ব্যবস্থা দ্বারা কিভাবে 'ইমিউনিটি' শক্তিশালী রাখতে হয় আপনি জানেন তাহলে খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করলেন কেন? সেই খাদ্য ব্যবস্থাই আপনার প্রকৃতি ও পরিবেশ অনুযায়ী আপনাকে দেওয়া হয়েছে, যা মহামারীর বা অসুখের বিরুদ্ধে আপনার প্রতিরোধ হয়ে ওঠে। সেইসব ফসলের বীজ আপনি হারিয়ে ফেলেছেন, তার চাষাবাদ পদ্ধতি ভুলে গিয়েছেন। এখন মহামারীর ভয়ে কাঁপছেন। আপনি নিজে যখন নিজের প্রাণ রক্ষার নেয়ামতগুলো রক্ষা করেন নি আপনি কি আশা করেন আপনার দুষমনরা আপনার জন্য সেই সব করবে?

এখন ভাবুন, যারা আমাদের খাদ্য বিষাক্ত করেছে, জমিতে কৃষকদের বিষ দিতে শিখিয়েছে, ভয়ানক ক্ষতিকর আগাছা নাশক দিতে শিখিয়েছে, মাটির তলা থেকে পানি তোলা শিখিয়ে আর্সেনিকের বিষে মানুষ মেরেছে, মানুষকে অসুস্থ করেছে, তারা কি একবারও ভাবে নি যে এতে মানুষ অসুস্থ হবে, মানুষ মরবে? অবশ্যই তারা ভেবেছে। তারা জানতো। তাদের বৈজ্ঞানিক লেখালিখিতে সেইসব পাবেন। মানুষ অসুস্থ হয়েছে, হচ্ছে, মরেছে, মরবে। এইসবের বিরুদ্ধে আপত্তি-প্রতিবাদের পরেও তারা কথা শোনে নি। এখনও তারা আমাদের পরিবেশ ও কৃষি ব্যবস্থা বিষাক্ত করে যাচ্ছে। এখন ভাবুন, এরাই আপনার জীবন রক্ষা করবে। কোভিড-১৯ মহামারী থেকে আপনার প্রাণ বাঁচাবে? হা হা হা। হা হা হা হা। ঘোড়াও হাসবে।

আপনার জীবন বাঁচাতে তাদের কি এমন ঠেকা পড়েছে? তারা নিজেরা আপনার দ্বারা সংক্রমিত হতে চায় না। ব্যস। তারা মনে করে আপনি দূষিত, আপনি সংক্রমণের বীজ বহন করে বেড়ান। সম্ভব হলে তারা নিজেরাই মহামারী বিস্তার ঘটিয়ে আপনার সংখ্যা কমাবে।

পৃথিবীর নানান দেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিকৃত বেগুন (বিটি-বেগুন বা জেনেটিকাকালি মডিফাইড বেগুন) বাংলাদেশে প্রবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষক বেগুনের দাম পায় না, অথচ কৃষিতে টেকনলজি প্রবর্তনের নামে এইসব বিষাক্ত ও বিকৃত বীজের ফসল প্রবর্তনের কাণ্ড চলছে। এতে আমাদের প্রাণবৈচিত্র দূষিত হয়ে পুরা কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হবার বিপদ ঘটেছে। যারা করেছে তারা আপনার প্রাণ বাঁচাবে, তাই না?

যদি জনগণের দুষমণরা আমাদের প্রাণের চিন্তা করত, জনগণের স্বাস্থ্যের কথা ভাবতো তাহলে তারা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতো না। তারা সুন্দরবনে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতোনা। ভাইরাস মহামারীর খবর শোনার প্রথম দিনেই বন্ধ করে দিত। কারণ ভাইরাস সংক্রমণ মহামারীর রূপ নেবার একটি অন্যতম কারণ বন ধ্বংস করা। ভাইরাস প্রাকৃতিক ভাবেই জীব, বিভিন্ন প্রাণী ও পাখপাখালির মধ্যে থাকে; তাদের 'আবাস' ধ্বংস করলে তারা মারাত্মক মারমুখি সংক্রামক রূপ ধারণ করে। যারা এইসব করছে, তারা আপনার জীবন বাঁচাবে? তার জন্যই এই কোভিড-১৯ যুদ্ধাবস্থা? এখন এরাই বলছে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, বলছে যাও শালার পো শালা, গিয়া কোয়ারান্টাইন থাক! দারুন।

আমি ন্যানোটেকনলজি, জিও-ইঞ্জিনীয়ারিং এবং ৫জি টেকনলজির কথা আপাতত বললাম না। তবে প্রয়োজনে বলব নিশ্চয়ই। আমি আসলেই গোঁয়ার টাইপের মানুষ। পড়তে পারেন গোঁয়ারের কবিতার বই, 'তুমি ছাড়া আর কোন্‌ শালারে আমি কেয়ার করি'।

এখন উপায় কি? প্রথম কথা হচ্ছে হুঁশে আসা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে যথাসাধ্য সতর্ক হতে হবে। কেউই আমাদের বাঁচাবে না। সত্য হচ্ছে ইতোমধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছে। জনগণকেই নিজেদেরই বাঁচবার পথ নিজেদের বের করতে হবে। আল্লাহ কোন নবী-পয়গম্বর ফেরেশতা পাঠাবেন না। কিন্তু যারা নিজেদের সহায়তা করে, আল্লা তাদের সঙ্গেই যোগ দিয়ে থাকেন।

কিন্তু যারা কাণ্ডজ্ঞান হারায় তাদের দেখে করোনাভাইরাসও অট্টহাস্য করে। এবার যদি বেঁচে যান তাহলে আল্লার ওয়াস্তে খাদ্য, পানি, প্রাণ ও প্রকৃতির কথা মনে রাখবেন। এটাই করোনাকালের রাজনীতি।

2 May 2020

#Covid19_Capital_Surveillance


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।