ইরান বিষয়ে মার্কিন নীতি এখনো ঠিক করছে ইজরাইলী লবি


শরীফ হোসেন
Saturday 10 July 10

ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপে ইজরাইলের সফলতা

আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইপ্যাক এবং উইনেপ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুইটা প্রতিষ্ঠানই আসলে ইজরাইলি স্বার্থের তদারকি করে। আইপ্যাক হচ্ছে ‘আমেরিকীয় ইজরাইলি (The American Israel Public Affairs Committee) এবং উইনেপ হচ্ছে ‘নিকট প্রাচ্য নীতি বিষয়ক ওয়াশিংটনস্থ প্রতিষ্ঠান’ (Washington Institute for Near East Policy)। আইপ্যাকের হয়ে ইজরাইলি স্বার্থের জায়গায় দাঁড়িয়ে গবেষণা ইত্যাদি কাজ করে উইনেপ, আর উইনেপে’র এই ‘গবেষণা’ থেকে পাওয়া নীতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে তদবির-প্রচারণা-গণসংযোগের কাজটা করে আইপ্যাক।

মুরগীর খোয়াড় পাহারা দেয় শিয়াল

আইপ্যাক ও উইনেপের নীতি গবেষণার ধরন ধারন আসলে কেমন? উইনেপের একজন নীতিনির্ধারণী ব্যক্তি হচ্ছে ডেনিস রোজ। ইয়াহুদি বংশীয় এই পণ্ডিত একসময় সংস্থাটির পরিচালকও ছিলেন। এখনো তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ওই বলয়ে। তার গবেষণার ধরনা ধরন বিষয়ে বিশিষ্ট বিশ্লেষক সেইসান ফায়েজমানেস বলছেন ‘ডেনিস রোজের বিদেশনীতি সংক্রান্ত লেখাগুলো আমি কয়েকবার পড়েছিলাম এবং বুঝতে পারলাম তার কূটনীতি সাজানো কিছু প্রস্তাব ছাড়া আর কিছুই না। যার মাধ্যমে ইরানকে বিশ্বের সামনে দোষী সাব্যস্ত করে দেশটির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্বক নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা হবে। অর্থাৎ ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের আগের নাটক মঞ্চস্থ করাই হবে এ কূটনীতির মূল উদ্দেশ্য।’

ফায়েজমানেস মূলত আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিশ্লেষণ করেন, এবং তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রধান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষক। তার ওই লেখাটার শিরোনাম ছিল, ‘দ্যা ফক্স গার্ডিং দ্যা চিকেন কূপ: ডেনিস রোজ এন্ড ইরান’। বিশেষ করে আমেরিকার ইরান নীতি নিয়া এই পণ্ডিত একটা বইও লিখেছেন--‘দ্যা ইউনাইটেড স্টেটস এন্ড ইরান: স্যাংকশনস, ওয়ারস, এন্ড দ্যা পলিসি অফ ডুয়েল কন্টেইনমেন্ট’। বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, আইপ্যাক মহলের এই নেতা--ডেনিস রোজ এখন ওবামা সরকারের উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব পালন করছেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে ডেনিস রোজকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপদেষ্টা হিশাবে নিয়োগ দেন ওবামা। ডিপার্টমেন্টটির পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক সেক্রেটারির বিশেষ উপদেষ্টা হিশাবে রোজ কাজ করতে শুরু করেন। ওই বছরের জুনে রোজকে পদোন্নতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিশেষ সহকারী এবং ‘কেন্দ্রীয় ডেস্ক’ বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক হিশাবে নিয়োগ দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ডেস্কের আওতাধীন অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়া। সবমিলিয়ে এই অঞ্চলের ক্ষেত্রে আমেরিকার নীতি নির্ধারণে এখন আসলে আইপ্যাক মহলের নীতিই প্রাধান্য পাচ্ছে।

হয় আমাদের প্রস্তাব মেনে নাও, নয়তো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নাও

ইরান বিষয়ে এই মহলের নীতি সহজে ও ছোট্ট করে বর্ণনা করা যায় এভাবে; হয় আমাদের প্রস্তাব মেনে নাও, নয়তো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নাও। আমেরিকার বর্তমান প্রশাসনের উচ্চ পদে থেকে এই নীতির হয়ে আরো যারা কাজ করছেন তাদের একজন হলেন রিচার্ড হলব্রুক। তিনি আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান বিষয়ে আমেরিকার বিশেষ দূত। হলব্রুক এর আগে আরেকটি ইরান বিরোধী তদবিরকারি গোষ্ঠী--‘ইউনাইটেড অ্যাগেইন্সট নিউক্লিয়ার ইরান’ প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং এই গোষ্ঠীর কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন। এই গোষ্ঠীটিও ইজরাইলি স্বার্থের হয়ে মত গঠনের কাজ করে।

এই গোষ্ঠীর আরো একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি জেমস বি স্টেনবার্গ। তিনি ডেনিস রোজ এবং ইজরাইলে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডানিয়েল কার্টজারদের সাথে একসাথে সমর্থন যোগাচ্ছেন এই বেসরকারি গোষ্ঠীগুলোর নানা ফোরামে। একইভাবে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টেও ইজরাইলের স্বার্থের সাথে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তি আছেন, উচ্চপদে। তাদের একজন হলেন স্ট্রুয়াট লিবি, ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি। সাবেক বুশ সরকারের আমলে ইরাকে যুদ্ধে যাওয়ার পক্ষে যারা জোর ভূমিকায় ছিলেন তাদেরই একজন হচ্ছে এই লিবি। বর্তমান প্রশাসনে থেকে ওবামাকেও তারা একই পথে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ দেখিয়ে যেমনটি আগেই বলেছিলেন সেসান ফায়েজমানেস। ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিশাবে নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনি লিখেছিলেন যে, ‘বারাক ওবামা যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে ইরান বিষয়ক তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইজরাইলী লবির বিশ্বস্থ ব্যক্তি ডেনিস রোজ যিনি উইনেপের সাবেক পরিচালক, পূর্বের নীতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।” তার পর্যবেক্ষণ ছিল, “যদি বারাক ওবামা নির্বাচিত হয় এবং আমেরিকা-ইজরাইল দাবির কাছে ইরান আত্মসমর্পণ না করে তবে ইরান হামলা অবধারিত এবং তা শুরু হওয়ার আগে আমরা ইরান নিয়ে আমেরিকার এক চরমপন্থী’ কূটনীতি দেখতে পাব।” যেই ‘চরমপন্থী’ কূটনীতি’র আওতায় এযাবৎ সর্বশেষ উদ্যোগটি হচ্ছে, ইরানের ওপর ৯ই জুনের অবরোধ।

View: 5411 Posts: 0 Post comments

Home
EMAIL
PASSWORD