বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)


নাজমুস সাকিব নির্ঝর
Saturday 22 May 10

উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ‘প্রস্তুতি’তেই বছর শেষ!

  • বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা এখনো স্থির করতে পারে নাই সরকার
  • বাস্তবায়নের বর্তমান হার চৌচল্লিশ শতাংশ
  • বিদ্যুতখাতে গত বছরের চেয়ে শতকরা নয় ভাগ কম কাজ হয়েছে

 অর্থবছরের শেষের দিকে এসেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়নের হার শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও কম। এমনকি সংকটপূর্ণ বিদ্যুত খাতে এযাবত যে কাজ হয়েছে তা গত অর্থবছরের চেয়ে কম। উন্নয়ন কর্মসূচীর এমনতরো ধীরগতির প্রধান কারণ সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ একমত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই যে ঠিক কতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে আগামী বাজেটের পাঁচমাস আগেই কর্মসূচীতে কাটছাট করা হয়েছে যাতে বাস্তবায়নের হার বাড়িয়ে দেখানো যায়। বাজেটের এতো আগে এডিপি কাটছাট করার কোনো নজির সম্ভবত আর নাই। লিখেছেন নাজমুস সাকিব নির্ঝর

২০০৯-২০১০ অর্থবছরের এডিপি 

কাটছাটের আগে ও পরে 

বরাদ্দ কমলো 

প্রকল্প বাড়লো 

  দুইহাজার কোটি টাকা

    একশত আটাত্তরটি

 

ঘোষিত এডিপি 

 

বরাদ্দ টাকা 

ত্রিশ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা 

 

প্রকল্প সংখ্যা 

৮৮৬ টি 

সংশোধিত   এডিপি 

 

বরাদ্দ টাকা 

আটাশ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা 

 

প্রকল্প সংখ্যা 

১০৫৮টি 

 

 বে-নজির কাটছাট

জুলাই থেকে শুরু হয়ে জুনে শেষ হয় অর্থবছর— সাধারণত জুন মাসে বাজেট পেশের মাসখানেক আগে উন্নয়ন কর্মসূচীতে সংশোধনী আনা হয়। ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত কর্মসূচী এবং আগে থেকে নির্ধারিত বাস্তবায়ন-লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সমন্বয় করা হয়—সরকারের সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য। অর্থবছরের প্রায় শেষের দিকে এসে এমন সংশোধনীর সময় প্রায় এক বছরের অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজন অনুসারে ‍পুরা কর্মসূচীর মধ্যে বেশ কিছু বদল আনার কথা, যাতে করে বাদবাকি সময়ের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলা দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়। বরাদ্দকৃত অর্থ ও প্রকল্প কমানো কিম্বা বাড়ানো, অর্থ মঞ্জুরি ও প্রকল্পগুলার খাতওয়ারি পুর্নবিন্যাস করার কথা এমন সংশোধনীতে। এবারই প্রথম দেখা গেল অর্থবছরের সাত মাসের মাথায় এসেই এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ২ হাজার কোটি টাকা বাদ দিয়ে তা ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। মানে হচ্ছে, এবারের সংশোধনে মূলত উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিমাণ কমানো হয়েছে। দৈনিক সংবাদপত্রের ভাষায় ‘এডিপি কাটছাট’। আর দেশে প্রথমবারের মতো সেই কাটছাট করা হলো বাজেটের পাঁচ মাস আগেই।

সংশোধিত এডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ খাতওয়ারি বরাদ্দ

 

খাত 

বরাদ্দ 

শতভাগ হার 

১। শিক্ষা  

৪ হাজার ২৫৮ কোটি ৭৯ লাখ

১৫%

২। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান  

৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৬৫ লাখ

১৪%

৩। পরিবহন 

৩ হাজার ৮৭৮ কোটি ৪ লাখ

১৪%

৪। বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ 

৩ হাজার ৫৪৬ কোটি ২৫ লাখ

১২%

৫। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ 

২ হাজার ৯৮১ কোটি ১৮ লাখ

১০%

৬। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন 

২ হাজার ৯৭২ কোটি ৬০ লাখ

১০%

৭। এবং কৃষি ও পানিসম্পদ 

২ হাজার ৯৬৩ কোটি ২ লাখ

?????

কর্মসূচী কমিয়ে শতভাগ বাস্তবায়ন

অর্থবছরের অর্ধেক যেতে না যেতেই এডিপির এই বেনজির কাটছাট কেন? ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছিলেন, “সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ভালভাবে মনিটর করার অংশ হিসেবেই এবার আমরা অর্থবছরের সাতমাসের মাথায় এডিপি সংশোধন করলাম। আমরা  ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবার এডিপি সংশোধন করেছি, যাতে অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন হয়”। অর্থাৎ, কর্মসূচী বাস্তবায়নে সাতমাসের অগ্রগতি যাচাই করে সরকার নিজের সক্ষমতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, চলতি বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বাকী সময়ে সম্ভব হবে না। কাজেই সরকার নিজের স্থিরিকৃত সক্ষমতার আলোকে এডিপি এতটুকু কমিয়ে নিয়েছে যাতে করে পুরোটা বাস্তবায়ন করা যায়। কর্মসূচী কমিয়ে তারপর বাস্তবায়ন শতকরা হরে এগিয়ে থাকা! উন্নয়ন কর্মসূচী গত বাজেটে ঘোষিত মাত্রা অর্জন করতে না পারলেও এতে অবশ্য সরকারের একটা লাভ হবে। এডিপির বিশাল অংশ বাস্তবায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা থেকে সরকার বাঁচবে।

লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে সরকারের তিন ধরনের বক্তব্য

সংশোধনের পর কমানো এডিপির কতভাগ বাস্তবায়নযোগ্য বলে স্থির করেছে সরকার? এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন অংশের তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই কর্মসূচী বাস্তবায়নের সরকারের সক্ষমতা ও বিগত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিষয়ে কোনো পরিষ্কার চিত্র পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক করে বলা যাচ্ছে না যে, সরকার ঠিক কত অংশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে এডিপি সংশোধনের পর। সংশোধিত এডিপি ঘোষণার পর পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছিলেন সরকার শতভাগ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাসখানেক আগে জানিয়েছেন সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যেই শতকরা পঁচানব্বই ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে, অর্থাৎ আরো পাঁচ ভাগ ছেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় বলছে অন্যকথা- সংশোধিত এডিপি বাজেটের আগে বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়টি সরকারের অন্যান্য বিভাগকে যে নয় দফা নির্দেশনা দিয়েছে, সেখানে মাত্র ছিষট্টি ভাগ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে তারা। সবমিলিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলা কোনো ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছাড়াই নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের মতো করে রুটিন ওয়ার্কের বাইরে খুব কম কাজই করতে পারছে এডিপি বাস্তবায়নে । সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার মাত্রা চরমে পৌছেছে।

বছরের শেষ অর্ধেকের জন্য পড়ে ছিল একাত্তরভাগ কাজ

আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে সরকার গঠন করার পরে যেইখাতে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, সেটি হচ্ছে বিদ্যুত খাত। এই খাতে বিগত সরকারগুলোর ব্যর্থতার ধারাবহিকতা সঙ্গি করেই আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করে। চাহিদার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে সরকারের জন্য বড় কাজ ছিল দুইটা- একদিকে নাগরিক অসন্তোষ সামাল দেয়া, অন্যদিকে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াতে খুব তাড়াতাড়ি উন্নয়ন কর্মসূচী শুরু করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সরকার প্রথম কাজটিতে যতবেশি ব্যস্ত ছিল সেই তুলনায় দ্বিতীয়টাতে খুবকম কাজই করেছে। কথা বলেছে যতবেশি সম্ভব তত, কিন্তু কাজ হয়েছে খুব কম। বিদ্যুত খাতে এ বছরের বরাদ্দের মাত্রা একুশ ভাগ ব্যয় হয়েছে প্রথম সাত মাসে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে শতকরা নয় ভাগ কম।

সবমিলিয়ে মার্চ মাস নাগাদ গত বাজেটে ঘোষিত এডিপি’র বাস্তবায়নের হার ছিল শতকরা চৌচল্লিশ ভাগ। সংশোধনীর পরে বরাদ্দ কমানোর ফলে বাস্তবায়নের শতকরা হার বেড়ে দাড়িয়েছে আটচল্লিশ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ৪৯টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে ৪টিতে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল শূন্য! এগুলো হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মকমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রথম ৬ মাসে মাত্র ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছিল। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ২০ শতাংশের কম উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছিল। ঐ একই সময়ে অর্থ ছাড় হয়েছে মোট বরাদ্দের ৩০ শতাংশ। এডিপির মাত্র ২৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মানে দাড়াঁচ্ছে, অর্থবছরের শেষ অর্ধেকের- শেষ ৬ মাসের বাস্তবায়নের জন্য রয়ে গিয়েছিল ৭১ শতাংশ কর্মসূচী। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটে নাই। আর এমন ঘটতে থাকলে অবস্থা বেগতিক হতে বাধ্য। উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসন অকাযর্কর ও গতিশীল নেতৃত্বের অভাব হলেই কেবল কর্মসূচী বাস্তবায়নে এমন ধীরগতি হতে পারে ।

সরকারের প্রথম বছর এডিপি বাস্তবায়নের বছর না !

নাম 

ব্যয় (বিলিয়ন টাকা) 

বাস্তবায়ন হার 

গত অর্থবছরের চেয়ে ব্যয়ের কম/ বেশি +/- 

জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ

৫.০৬

৭২%

৬৫%

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় 

১৩.৬৮

৪৮%

১৫%

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় 

৩১.০৬

৪৬%

৫%

শিক্ষা মন্ত্রণালয় 

৪.৬৫

৪২%

২%

কৃষি মন্ত্রণালয় 

৩.৭৭

৪২%

১৪%

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় 

১১.০৩

৩৬%

-১%

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় 

২.০৪

২২%

-১%

বিদ্যুত মন্ত্রণালয় 

৭.৮৫

২১%

-৯%

সড়ক ও রেলপথ বিভাগ 

৬.১১

২০%

৫%

১০সেতু বিভাগ 

১.৩৩

১৭%

 

প্রথম সাত মাসে কয়েকটা মন্ত্রনালয়ের এডিপি’র বাস্তবায়নের অবস্থা পর্যন্ত ব্যয়ের হারঃ সূত্র : মন্ত্রণালয়গুলার ওয়েবসাইট

উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে এমনতরো নজিরবিহীন ধীরগতির কারণ তালাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবং নিজেদের পরর্যবেক্ষণসহ পরে মন্ত্রণালয়টি নয় দফা নির্দেশনা জারি করে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিহীনতার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় যেসব কারণ নিজেরা শনাক্ত করেছে তা হলো-- দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা, প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ যথাযথ না হওয়া, প্রকল্পের সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে না রাখা, যথাসময়ে প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ ছাড় না করা ইত্যাদি; নির্দেশনায় বলা হয়েছে- সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন মনিটর করার ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশন ও আইএইডি'কে সচল ও কার্যকর নাই। এসব সমস্যার বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়া কর্মসূচী বাস্তবায়নে গতি আনতে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে এডিপি বাস্তবায়নের এই দুরবস্থা প্রসঙ্গে সরকারের বাইরে তেমন কোনো বিশেষজ্ঞ সংস্থার কোনো আনুষ্ঠানিক পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য পাওয়া যায় নাই। যারা করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে একটা নেতৃত্বাস্থানীয় এনজিও। সংস্থাটি মন্তব্য করেছে যে, মেয়াদের প্রথম বছর হিশাবে এই অবস্থা অস্বাভাবিক না। দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিপিডি –এনজিও তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে কেবল প্রস্তুত করেছে মাত্র। এখন সময় এসেছে এসব প্রস্তুতির ভিত্তিতে কর্মকান্ড বাস্তবায়ন শুরু করা। গত ১৭ ই এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি’র অতিরিক্ত পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন। এই অর্থবছর নয়, আগামী অর্থবছর সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের বছর বলে মনে করছে সিপিডি। এনজিওটি এক্ষেত্রে সরকারের চেয়ে এককাঠি বাড়া। সরকার যেখানে নিজেদের অযথাযথ পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা, অদক্ষতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদারকি প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তাদের দায়ী করছে—এডিপির লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার কারণ হিশাবে। ঋণদাতা সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বক্তব্যকে বাংলাদেশে যারা পলিসি এডভোকেসি বলে ক্যাম্পেইন করে সেই সিভিল সোসাইটির নেতৃত্বস্থানীয় থিংক ট্যাংক সিপিডি এমনভাবে গায়েপড়ে সরকারের এই ব্যর্থতার ‘ন্যাযতা’ দিতে এগিয়ে আসলো এই ইস্যুতে- সরকার না চাইতেই সিপিডি সরকারের ব্যর্থতার সমর্থনে বক্তব্য দিল। এনজিওটি ‘প্রস্তুতির বছর’ নামে সরকারকে দায়মুক্তি দেয়ার এই দায় যে উদ্দেশ্যেই করুক না কেনো— তা উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকারের নিজস্ব ভূমিকা মূল্যায়ন করতে মোটেই সাহায্য করবে না। বরং গতিহীনতা ও আত্মপ্রসাধ লাভের বিপদজ্জনক পথে ঠেলে দিতে পারে।

এমনতরো প্রস্তুতিনেয়ার কাজ তো বিরোধী দলের

এডিপির সময়কাল এক বছর, আয়ু এক বছর, এর মধ্যেই এর শুরু ও শেষ—সেটাই নিয়ম। এটা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নয় যে প্রথম বছরকে প্রস্তুতির বছর বলে চালিয়ে দেবার সুযোগ আছে। কাজেই হয় উন্নয়ন বাজেট বিষয়ে সংস্থাটি বিভ্রান্তিতে ভুগছে, নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে নাগরিকদের বিভ্রান্ত করছে। এক বছরের কাজ শেষ করতে যদি প্রস্তুতিই এক বছর লাগে! তাহলে অর্থবছরের ধারণা কিম্বা এডিপি’র পরিকল্পনাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। সরকার গঠন করার পর জাতীয় সংসদ বাজেট গ্রহণ করেছে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য; এটা তো ‘পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী’ না যে পাঁচ বছরের বাস্তবায়ন-মেয়াদে সরকার চাইলে প্রথমে একবছর ‘প্রস্তুতি’ নেয়ার সময় পাবে। এটা এক অর্থবছরের বাজেট, সেই বাজেটে ঘোষিত ও অনুমোদিত যেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী— সেটা তো এই এক বছরেই বাস্তবায়ন করতে হবে। একবছরের বাজেট বাস্তবায়নে নিশ্চয়ই পাঁচ বছর সময় পাওয়া যাবে না। আরো চারটা বছরে তো আরো চারটা বাজেট তো বাকি রইলো। একটা অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে ‍পুরা একটা বছর প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ নাই। নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নে পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে তা ঘোষণা ও অনুমোদনই বাজেট। প্রশাসনের মাধ্যমে ওই বাজেট এক বছরেই বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার যদি যথাসময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়া প্রশাসনকে দক্ষতার সাথে ও সমন্বিতভাবে কাজে লাগাতে পারতো তবে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ ছিল না।

যদি কোনো প্রস্তুতিতে সরকারের এত দীর্ঘ সময় নেয়ার একান্তই দরকার হয়, তবে সেই প্রস্তুতি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রস্তুতি, যা তাঁর পাঁচবছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে হবে। যে প্রস্তুতির কথা সিপিডির মতো এনজিওর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— সেই বার্ষিক বাজেট বাস্তবায়নের প্রস্তুতি না। আর প্রত্যক্ষ নির্বাচনভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে এই প্রস্তুতি নেয়ার সময় সরকার গঠন করার পরে না, আগে— সরকারের বাইরে থাকার সময়। যদি অব্যাহতভাবে একের অধিক মেয়াদে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে সেক্ষেত্রে এ ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় হচ্ছে আগের মেয়াদে। রাজনৈতিক দলগুলো  নিজেদের দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচীর আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার সব বিভাগের-খাতের বিষয়ে সবসময় নিজেদের নীতি ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও ঘোষণা করবে— সেটা সেই দল সরকারে কিম্বা সরকারের বাইরে থাকুক। যাতে করে সরকারে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের দেরি করা ছাড়া যেকোনো বিষয়ে দ্রুত কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু করা যায়।

NBR target

সংশোধিত এডিপির অর্থায়নের উৎস

 

 বাজেটে ঘোষিত এডিপি

সংশোধিত এডিপি

নিজস্ব অর্থায়ন

১৭ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা

১৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা

বৈদেশিক ঋণ

১২ হাজার ৮৪৫ কোটি

১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা

View: 5675 Posts: 2 Post comments

ইংরেজির প্রসঙ্গ

প্রথম এবং শেষ দুটি বক্সে ইংরেজির ব্যবহার না করে বাংলা ব্যবহার করলে ভালো হতো। লেখার সৌন্দর্য আরো বেড়ে যেত। অসামঞ্জশ্য থাকত না।

যেটা যোগ করা যেত

চমতকার টু দি পয়েন্ট লেখা। এবারের এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে এমন বিষয়ভিত্তিক পর্যবেক্ষন আমার চোখে পড়ে নাই, কোনো দৈনিকেই না। কিন্তু, একটা বিষয় একদমই আসেনি। অর্ধেকের বেশি কাজ যে হলো না- তার পেছনে কারনগুলো কি কি হতে পারে- সে বিষয়ে কোনোই বিশ্লেষণ নেই।
Home
EMAIL
PASSWORD