চিন্তা


চিন্তা ও তৎপরতার পত্রিকা

বাঙালিত্ব ও হিন্দুত্ববাদ: ইতিহাসের ক্ষত ও তার মীমাংসা

[গত ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কবি রওশন আরা মুক্তা এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন। ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’-এর জন্য। 'বাঙালি জাতিবোধ ও চেতনার মধ্যে এখনো উচ্চবর্ণের হিন্দুর ধ্যানধারণাই রয়ে গিয়েছে' -- এই শিরোনামে সংক্ষেপে ছাপাও হয়েছিল। এখন পুরাটা অল্পকিছু সংশোধন ও পরিমার্জন করে সাক্ষাৎকারটি আবার এখানে পেশ করা হোল।]

কেমন আছেন? বছর ঘুরে আবার শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা, জাতীয় জীবনে এই মেলার তাৎপর্য কী বলে মনে হয় আপনার?

জাতি হিসেবে আমরা কোনো ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী নই, ফলে অমর একুশে বইম (আরো পড়ূন)

ঈসায়ী নববর্ষ ও বাংলাদেশ

আওয়ার ইয়ার অব দ্য লর্ড। প্রভুর বছর। ANNO DOMINI (AD) | AD বা আফটার ডেথ : যিশুর মৃত্যুর পরের বছর; BC বা Before Christ, বা যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগে ইত্যাদি। প্রভু যিশুর জন্মকে কেন্দ্র করে বছরের হিসাব রাখা এবং খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী বছর গণনার নিয়মে আরেকটি খ্রিষ্টীয় বছর শেষ হতে চলেছে। সবাইকে -- বিশেষত আমার খ্রিস্টান বন্ধুদের নববর্ষের শুভেচ্ছা।

নতুন খ্রিষ্টীয় বছরে নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য রোমানদের কাছ থেকে পাওয়া। রোমান ঈশ্বর জানুসকে (Janus) নিবেদন করা খাওয়া-দাওয়ার উৎসব থেকে এই চলের শুরু। জানুসকে রোমানরা কল্পনা করেছে দুই দিকে তাকিয়ে থাকা মুখ হিসেবে। এক মুখ তাকিয়ে আছে অতীতে, আরেক মুখ ভবিষ্যতের দিকে।

ধর্ম, ঐতিহ্য কিম্বা (আরো পড়ূন)

জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ

ঘটনা হচ্ছে ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের বিরোধ। এটা ঘটনার বাইরের দিক। হয়তো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা নিত্যদিনের একটি ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন সংঘাত হিসেবেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সেটা যখন আরও বড় সংঘর্ষের রূপ নিল, দেখা গেল তার মধ্যে শ্রেণীর প্রশ্ন আপনাতেই সামাজিক বাস্তবতার কারণেই এসে পড়েছে। বের হয়ে পড়ছে আগের বিরোধ ও সমাজের সুপ্ত আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বিশেষত ঘটনার কয়েকদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ধানতলা গ্রামের শাহজালাল (রহঃ) মসজিদ কমপ্লেক্স ও হযরত আবুবকর সিদ্দিকী (রাঃ) কওমী মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রশাসন মাদ্রাসার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, এই অভিযোগ রয়েছে।

একদিকে ব্যবসায়ী আর তাদের সমর্থক ছাত্রলীগ কর্মী; অন্য (আরো পড়ূন)

সহিংসতার পর্যালোচনাঃ প্রসঙ্গ ব্রাহ্মণবাড়িয়া

গত সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র হত্যার ঘটনার জের ধরে পরদিন ঐ শহরের বেশ কিছু জায়গায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ধরণকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন যাবত দেশজুড়ে কথাবার্তা চলছে। পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কথাবার্তার উপর নজর দিলে দেখা যাবে বেশ কয়েকটা বিশেষ বয়ান থেকে কথাবার্তা চলছে। এক ঘরানার দাবী হচ্ছে তারা মাদ্রাসার ছাত্র বলেই এমন সহিংসতা । অর্থাৎ এটা জঙ্গি কার্যক্রমেরই সমার্থক। আর এরূপ জঙ্গি কার্যক্রম মাদ্রাসা থেকেই উৎপন্ন হয়। আরেকপক্ষ মনে করছেন মাদ্রাসার ছাত্ররা এটা এ জন্যই করতে পেরেছে যে তারা সংস্কৃতমনা নন। ফলে আবার একটি পক্ষ এই ঘটনাকে ছাত্র হত্যার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিশেবেই দেখছেন।

লেখাটার শুরুতেই পত্রপত্রিকায় এখন পর্যন্ত এই ঘটনা (আরো পড়ূন)

৩. জাতীয়তাবাদী বিকারঃ ‘রাজনৈতিক পরিসর’ নির্মানের গুরুত্ব

‘রাজনৈতিক পরিসর’ কথাটা বেশ কিছুকাল ধরে আমি ব্যবহার করছি। সুবিধা হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানে গ্রিক ‘পলিস’ (polis) থেকে ‘পলিটিক্‌স’-এর যে ধারণা গড়ে উঠেছে তার সঙ্গে ‘রাজনৈতিক পরিসর’ কথাটার যোগসূত্র আছে। ফলে যারা গ্রিক-খ্রিস্টিয় চিন্তা বা পাশ্চাত্যের ইতিহাসকে নির্বিচারে গ্রহণ করে নিজেদের ‘আধুনিক’ ও ‘প্রগতিশীল’ মনে করেন তাদের সঙ্গে আমার কথা বলতে সুবিধা হতে পারে।

গ্রিক ‘পলিস’ কথাটার আক্ষরিক মানে হচ্ছে ‘নগর’। এর আরেক আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে নাগরিকতা কিম্বা নাগরিক সমাজ। যারা ‘পলিস’ বা ‘নগর’-এর অন্তর্গত তারা নাগরিক। আধুনি (আরো পড়ূন)

২. জাতীয়তাবাদী বিকার: খুনের রাজনীতিকরণ

ছেলে হত্যার বিচার চাননা কেন এই প্রশ্নের উত্তরে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, আমরা ‘শূন্যের মধ্যে ভালো জিনিস খুঁজছি’। শূন্যতা বোঝাতে তিনি রাজনৈতিক সমাধানের অনুপস্থিতি বুঝিয়েছেন। বলেছেন, ‘এদেশে রাজনৈতিক সমাধান যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ আইনগত কোনো সমাধান সম্ভব না’। এর নিহিতার্থ হচ্ছে সংবিধান, আইন, বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি কোন কিছুই শূন্যতার মধ্যে কাজ করে না রাজনীতি বা রাজনৈতিক পরিসরের মধ্যেই তারা কাজ করে। কিন্তু সমাধানের জন্য যদি কোন ‘পরিসর’ না থাকে তাহলে তার সমাধান কিভাবে সম্ভব? সেই পরিসর নাই বা শূন্য। আমি প্রাথমিক ভাবে এটাই বুঝেছি।  আবুল কাশেম ফজলুল হক ভবিষ্যতে আরও ব (আরো পড়ূন)

১. জাতীয়তাবাদী বিকারের বিপদ

স্বীকার করতে বাধা নাই, তরুণ বয়স  থেকে কবিতা লিখবার দোষ থাকবার কারণে ফকির লালন শাহের প্রতি আমার আগ্রহের কারণ ছিল তাঁর গান। তার জন্য আবদুল আলিমকে আমি আজ অবধি ‘দোষী’ করি। এই এক অনুযোগ যার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি অগাধ ভালবাসাটুকু আমি বাঁচিয়ে রাখি। তাঁর গান শিক্ষিত মধ্যবিত্তের পরিসরে বড় হওয়া আমাকে বিচলিত করতো, আমার চিন্তার খাঁচাটাকে ঝাঁকি দিত। ‘আধুনিক’ গান ও আধুনিকদের গানের  বাইরে ‘পল্লী’ নামক একটা ভিন্ন জগত আছে, সেখানে মানুষ বাস করে এবং বিস্ময় যে তারাও গভীর বিষয় নিয়ে ভাবতে সক্ষম -- এই বোধটুকু আবদুল আলীমের বেশ কিছু তথাকথিত ‘পল্লীগীতি’ শুনে কিশোর ও যৌবন কালের সন্ধিক্ষণে আমার মনে দৃঢ় ভাবে গেঁ (আরো পড়ূন)

'আমরাও শার্লি'? হায় ইউরোপ !

ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা ফরাসি নাগরিক দুই ভাই শরিফ কুয়াচি (Cherif Kouachi) ও সায়িদ কুয়াচি (Said Kouachi) অতর্কিতে শার্লি হেবদো পত্রিকায় হামলা চালিয়ে চারজন নামকরা কার্টুনিস্টসহ প্রায় বারোজন মানুষকে হত্যা করেছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে বিচার করলে এটা, বলাবাহুল্য একটি হত্যাকাণ্ড। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে পাশ্চাত্যের পত্রিকাগুলোর খবর হচ্ছে হামলাকারীদের মুখে ‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান শোনা গিয়েছে এবং এটাও শোনা গিয়েছে যে তারা বলেছে ‘নবীর অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি’। হত্যাকারীদের ধরবার জন্য ফ্রান্সে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনদিন ব্যাপী পরিচালিত এই অসম ও অস্বাভাবিক পুলিশি অপারেশানে শরিফ কুয়াচি ও সৈয়দ কুয়াচিকে প্রায় আশি হাজার ফরাসি পুলি (আরো পড়ূন)

'ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ': প্রাসঙ্গিক মন্তব্য

“শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে সংকট আমরা দেখছি তাতে এটা নিশ্চিত বলা যায় বাংলাদেশে ফ্যসিবাদ আরো প্রকট ও রাজনৈতিকভাবে আরো হিংস্র রূপ নিয়ে হাজির হবার সম্ভাবনা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সংবিধান ও বিচার বিভাগকে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করবার জন্য যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা একটি আগাম ইঙ্গিত মাত্র”। (ফ্যসিবাদ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য)

কথাগুলো গত বছর (২০১২) ফেব্রুয়ারিতে ‘ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ’ নামে প্রকাশিত বইয়ের ভূমিকা হিশাবে লেখা হয়েছিল। ফ্যসিবাদ এখন পূর্ণ রূপ নিয়ে বাংলাদেশে হাজির হয়েছে এবং দেশের মানুষকে স্পষ্ট দুই ভাগে ভাগ করে ফ (আরো পড়ূন)

উত্তম কুমার বড়ুয়াকে চাই

রামুতে যারা পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা করেছেন তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। হাইকোর্ট রিট জারি করেছে যেকোনো ধর্মীয় উপসানালয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মানে এটা প্রমাণ হল যে বাংলাদেশে মুসলিম ভিন্ন অন্য ধর্মের মানুষরা নিরাপদ নয়। প্রথম আলো সহ প্রায় সব সংবাদ মাধ্যম মিছিলে সমাবেশে লীগ নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা আর ইসলামী জঙ্গিদের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছেন। একে সাম্প্রদায়িক হামলার পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম আলো সব চেয়ে অগ্রগণি ভূমিকা পালন করেছে। যা একটা বিশাল প্রভাব ফেলেছে নাগরিকদের ভেতর। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ করতেও দেখা গেছে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। এতে আরো সহজ হয়েছে সুশীল সমাজ কে খুশি রেখে নিরাপরাধ মানুষদের গ্রেফতার করা।

বিশ্ব (আরো পড়ূন)

বৌদ্ধ মন্দির ও জনপদের আগুনে বাংলাদেশও ছাই হয়ে যেতে পারে

যে সকল দুর্বৃত্ত বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ জনপদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে তারা সজ্ঞানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্তিত্বের গোড়ায় আগুন দিয়েছে। পুড়ে যাওয়া ভগবান বুদ্ধের মূর্তি তথাগতের নয়, বাংলাদেশের নিজেরই ছবি। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবি চোখে লেগে আছে। ছাই হয়ে যাওয়া উপাসনাস্থল, প্রায় ভস্ম হয়ে যাওয়া নানান জিনিসপত্রের পাশে পুড়ে যাওয়া টিনের স্তুপ। ঐসবের মধ্য দিয়ে তথাগতের মূর্তি – দূর থেকে মুর্তির গায়ে আগুনে পুড়ে যাবার চিহ্ন, অথচ ওর মধ্যেও দূরে মাথা উঁচু করে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে সুপারি গাছের সারি। ভস্মস্তুপ থেকে নতুন ভাবে উপাসনা গৃহ হয়তো আবার বানানো অসম্ভব নয়। পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরগুলোও হয়ত আবার বানানো সম্ভব হবে। কিন্তু যে জায়গাটুকু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়ে বা (আরো পড়ূন)

মুখ দেখে যায় কি চেনা? - ২

রাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, পর্দা ও আধুনিক আকিদা

(গত কিস্তির পর)

নারীরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল। স্বয়ংসপূর্ণ না। সেহেতু তারা পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্বের যোগ্য না। ইচ্ছার স্বাধীনতা তত্ত্বের মহাপ্রচারক রুশোর চিন্তার ধরন ছিল একই। দুর্বল নারীদের রাজনীতিতে আসার দরকার নাই। তারা বরং অন্দর মহলেই থাকুক। নারীবাদীরা স্বভাবতই রুশোর ওপর খাপ্পা। কিন্তু সুখ্যাত ফরাসি নারী ইতিহাস বিশেষজ্ঞ মোনা ওযফ মনে করেন, নারী-পুরুষের এই বিভেদ আসলে সমতা বিরোধী না, বরং বিমূর্ত সমতা ভাবের অন্তর্গত। নারী-পুরুষের বিভেদকে দূর করতে না পারলেও তাকে ঢেকে ফেলে। কাজেই ব (আরো পড়ূন)

মুখ দেখে যায় কি চেনা? - ১

পোষাক ও পর্দা: ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্র

ধরা যাক এমন একটা পরিস্থিতি। ল্যাংটা অবস্থায় হঠাৎ একজন দেখল, অন্যকেউ তাকে দেখে ফেলেছে। তবে ল্যাংটা নিজেই তার চোখ ঢেকে ফেলে। ভাবখানা এমন; যাক বাবা বাঁচা গেল! আমার উদাম শরীর কেউ দেখল কি না--সেটা অন্তত নিজের চোখে আর দেখতে হচ্ছে না। কিন্তু না, বিষয়টা এখানেই শেষ না। এভাবে নিজের চোখ ঢেকে আর কতক্ষণ! মুখোমুখি যে দেখছে তারও যদি একই হাল হয়, তবেই না স্বস্তি আসে। ক্রমশ ল্যাংটা রাজ্য কায়েম (আরো পড়ূন)