কোথা আছে রে সেই দীন দরদী সাঁই।
চেতগুরুর সঙ্গ ধর লয়ে[১] খবর কর ভাই।।
চক্ষু আঁধার দেলের ধুকায়
কেশের আড়ে পাহাড় লুকায়
কী রঙ্গ সাঁই দেখছে সদাই
বসে নিগুম ঠাঁই।।
এখানে না দেখি যারে
চিনব তারে কেমন করে
ভাগ্যগতি আখেরে তারে
দেখতে যদি পাই।।
সুমঝে ভজন সাধন কর
নিকটে ধন পেতে পার
লালন কয় নিজ মোকাম ধোঁড়
ভহু দূরে নাই।।
এদেশেতে এই সুখ হোল
আবার কোথায় যাই না জানি
পেয়েছি এক ভাঙ্গা তরনী[১]
জনম গেল ছেঁচতে পানি।।
কার বা আমি কেবা আমার
প্রাপ্ত বস্তু ঠিক নাহি তার
বৈতিক মেঘে ঘোর অন্ধকার
উদয় হয়না দিনমনি।।
আর কি রে এই পাপীর ভাগ্যে
দয়াল চাঁদের দয়া হবে
কতদিন দিন এই হালে যাবে
বাইয়ে পাপের তরনী।।
কার দোষ দিব এই ভুবনে
হীন হয়েছে ভজন গুনে
লালন বলে কত দিনে
পাব সাঁইর চরন দুখানি।।
এস হে প্রভু নিরঞ্জন
এ ভব তরঙ্গ দেখে
আতঙ্কেতে যায় জীবন।।
তুমি ভক্তি তুমি মুক্তি
অনাদির হো আদ্যাশক্তি
দাওহে আমায় ভক্তির শক্তি
তৃপ্তি হয় (যেন) ভবজীবন।।
ধ্যান যোগে তোমায় দেখি
তুমি সখা আমি সখী
মম হুদায় মন্দিরে থাকি
ঐরূপ দাও দরশন।।
ত্রিগুনে শুনি সংসার
লীলা দেখে কয় লালন শাহ্
ছাদরাতুল মন তাহার উপর
নুর তাজেল্লার হয় আসন।।
(আরো পড়ূন)
কে আমারে পাঠালে এহি ভব নগরে
মনের আন্ধারহরা চাঁদ সেই যে দয়াল চাঁদ
আর কতো দিনে দেখবো তারে।।
কে দিবে রে উপসনা
করি রে আজ কি সাধনা
কাশীতে যাই কি কাননে থাকি
আমি কোথা গেলে পাবো সে চাঁদেরে।।
মনো ফুলে পুজিব কি
নাম ব্রহ্ম রসনায় জপি
কি সে দয়া তার হবে পাপীর পর
অধীন লালন বলে তাইতো প’লাম ফেরে।।
(আরো পড়ূন)
ক্ষম ক্ষম অপরাধ
দাসের পানে একবার চাও হে দয়াময়।
বড় সংকটে[১] পড়িয়ে দয়াল বারেবার ডাকি তোমায়
ক্ষম ক্ষম অপরাধ।।
তোমারি ক্ষমতায় আমি
যা ইচ্ছা তাই করো তুমি
রাখো মারো সে নাম নামী
তোমারই এই জগৎময়।।
পাপী অধ্ম তরাইতে সাঁই
(তোমার) পতিত পাবন নাম শুনতে পাই
সত্য মিথ্যা জানবো হেথায়
তরাইলে আজ আমায়।।
কসুর পেয়ে মার যারে
আবার দয়া হয় গো তারে
লালন বলে এ সংসারে
আমি কি তোর কেহই নয়।।
এসো দয়াল, পার কর ভবের ঘাটে
ভবনদীর তুফান দেখে
ভয়ে প্রান কেঁদে ওঠে।।
পাপ ও পূন্য যতই করি
ভরসা কেবল তোমারি
তুমি যার হও কাণ্ডারী
ভব ভয় তার যায় ছুটে।।
সাধনের বল যাদের ছিল
তারাই কূল- কিনারা পেল
আমার দিন অকাজেই গেল
কি জানি হয় ললাটে।।
পুরানে শুনেছি খবর [১]
পতিত পাবন নামটি তোমার
লালন বলে আমি পামর
তাইতে দোহাই দেই বটে।।
কোথায় হে দয়াল কাণ্ডারী
এ ভবতরঙ্গে এসে (আমার) কিনারায় লাগাও তরী।।
তুমি হে করুনা সিন্ধু
অধ্ম জনার বন্ধু
দাও হে আমায় পদারবিন্দ
যাতে তুফান তরিতে পারি।।
পাপী যদি না তরাবে
অধ্মতারন [১] নাম কে লবে
জীবের দ্বারে এহি ভবে [২]
নামের ভ্রম রবে[৩] তোমারি।।
ডুবাও ভাসাও হাতটি তোমার
এ ভবে আর কেউ নাই আমার
ফকির লালন বলে দোহাই তোমার
আমায় চরনের ঠাঁই দাও হে, তরি [৪]
(এসো) পার করহে দয়াল চাঁদ আমারে
ক্ষম হে অপরাদ আমার
এ ভব কারাগারে।।
পাপী অধ্ম জীব হে তোমার
তুমি যদি না কর পার
দয়া প্রকাশ করে;
পতিতপাবন পতিতনাশন
কে বলবে আজ তোমারে।।
না হইলে তোমার কৃপা
সাধন সিদ্ধ কোথায়ই বা
কে করতে পারে
আমি পাপি তাইতে ডাকি
ভক্তি দাও মোর অন্ত্ররে।।
জলে স্তলে সর্ব জায়গায়
তোমারই সব কীর্তিময়
ত্রিবিধ সংসারে;
তাই না বুঝেয়ে অবোধ লালন
প’ল বিষ্ম ঘোরতরে।।
পারে লয়ে যাও আমায়
আমি অপার হয়ে বসে আছি
ওহে দয়াময়।।
আমি একা রইলাম ঘাটে
ভানু সে বসিল পাটে
তোমা বিনে ঘোর সংকটে
না দেখি উপায়।।
নাই আমার ভজন সাধন
চিরদিন কুপথে গমন
নাম শুনেছি পতিত পাবন
তাইতো দোহাই দিই তোমায়।।
অগতির না দিলে গতি
ওই নামে রবে অখ্যাতি[১]
লালন কয় অকূলের পতি
কে বলবে তোমায়।।
(আরো পড়ূন)