মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত: 'ব্যবহারিক সম্বন্ধ' পর্যালোচনার একটি ভূমিকা
মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত: 'ব্যবহারিক সম্বন্ধ' পর্যালোচনার একটি ভূমিক ।। ফরহাদ মজহার।। প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা।। পৃষ্ঠা ২০৮ মূল্য: ৪০০।।
তরুণ মার্কসের রাজনৈতিক-দার্শনিক লেখালিখি আশ্রয় করেই লেখাগুলো আবর্তিত হয়েছে। আবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু তরুণ মার্কসের 'ব্যবহারিক সম্বন্ধ' নামক ধারণার পর্যালোচনা এবং মার্কসকে নতুন ভাবে পাঠ ও আত্মস্থ করবার সম্ভাবনা বিচার। ল্যুদভিগ ফয়েরবাখ (১৮৭৪-১৮৭২) সহ সকল বস্তুবাদের পর্যালোচনা করতে গিয়ে কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) বস্তুবাদের প্রধান দোষ হিসাবে ‘ব্যবহারিক সম্বন্ধ' ধারণাটির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ফয়েরবাখসহ সকল বস্তুবাদের প্রধান দোষ হচ্ছে তারা ইন্দ্রিয়পরায়ণতাকে 'ব্যবহারিক, ইন্দ্রিয়পরায়ণ মানুষের তৎপরতা' বা সংক্ষেপে মানুষের সঙ্গে জগতের 'ব্যবহারিক সম্বন্ধ' হিশাবে ধরতে, বুঝতে কিম্বা ব্যাখ্যা করতে পারে না। বস্তুবাদের প্রধান দোষ পর্যালোচনার মধ্য দিয়েই মার্কস দর্শনের পরিমণ্ডলের বাইরে এসে মানুষ ও জগতের ব্যবহারিক সম্বন্ধ পর্যালোচনার তাগিদ বোধ করলেন এবং তারই ফল মার্কসের অর্থশাস্ত্র। বইটি দর্শন থেকে অর্থশাস্ত্রে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা এবং দার্শনিক পর্যালোচনা। মার্কসের পরে অর্থশাস্ত্র, অর্থাৎ মানুষ বৈষয়িক জীবনের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের মধ্য দিয়ে কিভাবে 'বর্তমান' কিম্বা 'জাগতিক' হয় তারই যুক্তি ফরহাদ মজহার পেশ করেছেন। জাগতিক হওয়ার অর্থ পারলৌকিকতার বিপরীতে ইহলৌকিকতা কিম্বা ইহলোক বাদ দিয়ে মানুষের পারলৌকিক অস্তিত্ব যাপন নয়। ইহলোকেই মানুষ পরলোকের কথা ভাবে। অতএব পারলৌকিকতা মানুষের ইহলৌকিক কিম্বা জাগতিক অস্তিত্বেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইহলোক/পরলোকের প্রথাগত বাইনারি ভেঙে দিয়ে এই বই 'রুহানিয়াত' নিয়ে আলোচনার নতুন দার্শনিক ক্ষেত্র যেমন তৈরি করে, একই ভাবে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর 'রাজনৈতিক রুহানিয়াত' (political Spirituality) নিয়ে আলোচনার সদর দরজাও উন্মোচন করে। ইরান বিপ্লবের মধ্যে ফুকো 'রাজনৈতিক রুহানিয়াত'-এর সক্রিয় ও বৈপ্লবিক ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেছেন। ইরানের বিপ্লব তাঁর চিন্তাকে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করেছে। 'ব্যবহারিক সম্বন্ধ' ও 'রুহানিয়াত' দর্শন এবং রাজনীতির জন্য কতো গভীর ও সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে এই বই সেই নির্দেশ অনুসরণে আগ্রহী। ধর্মের পর্যালোচনা, দর্শন এবং বিপ্লবী রাজনৈতিক সংকল্পে যারা সমভাবে উদ্বুব্ধ এই বই তাদের অবশ্যই পাঠ্য।
বইটি চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত। নীচে সূচিপত্র দেওয়া হোল।
সূচিপত্র
প্রবেশিকা।। ৯
১. তরুণ মার্কস পাঠ।। ২৩
তরুণ মার্কস কিভাবে পড়ব?।। ২৫
মার্কস-এঙ্গেলস বনাম মার্কস এবং এঙ্গেলস।।৩৮
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।। ৪৩
এঙ্গেলসের সরলীকরণ।। ৪৭
‘জর্মান ভাবাদর্শ’: খসড়া পাণ্ডুলিপির রাজনৈতিক ইতিহাস।। ৫৭
খসড়া পাণ্ডুলিপির রাজনীতি।। ৬১
চিন্তার ভূত ও জর্মান ভাবাদর্শ।। ৬৮
প্রকৃতি বিজ্ঞান,এঙ্গেলস ও মাকর্স।। ৭৩
এখনকার পড়া ও এখনকার কাজ।।৭৮
মার্কসের ‘দর্শন’ থেকে প্রস্থান।। ৮২
কথাটা রটল কেন?।। ৮৮
দর্শন চর্চার মানে বদলে দেওয়া।। ৯০
২. ব্যবহারিক সম্বন্ধ ও অর্থশাস্ত্র।। ৯৫
‘ব্যবহারিক, ইন্দিয়পরায়ণ তৎপরতা’।। ৯৭
মার্কসের ফয়েরবাখ সংক্রান্ত থিসিস।। ১২০
ব্যবহারিক সম্বন্ধ ও বৈষয়িক উৎপাদন।। ১০৯
মার্কস পরবর্তী প্রাসঙ্গিক পাশ্চাত্য চিন্তাধারা।। ১১৭
ব্যক্তি, কর্তা ইত্যাদি।। ১১৮
ইতিহাস,পর্যায়,প্যাটার্ন ইত্যাদি।। ১২৪
ভাষা এবং অর্থ।। ১২৬
কয়েকটি অভিযোগ পর্যালোচনা।। ১৩০
৩. ব্যবহারিক সম্বন্ধ ও রাজনৈতিক রুহানিয়াত।। ১৩৯
ব্যবহারিক সম্বন্ধ ও রুহানিয়াত।। ১৪১
প্রক্রিয়া ও কর্তা।। ১৫৪
রুহানিয়াতমানুষ যখন জীব মাত্র নয়।। ১৬৪
রুহানিয়াত সম্পর্কে আরো কথা।। ১৭০
৪ রাজনৈতিক রুহানিয়াত ও মিশেল ফুকো।। ১৭৭
ফুকোর রুহানিয়াত।। ১৭৯
ফুকোর ‘ক্ষমতা’।।১৮২
রুহানিয়াতের জিজ্ঞাসা।। ১৯০
ফুকোর অভাব।। ১৯২
বেদনাদায় অভিজ্ঞতা।। ১৯৪
বিপ্লবে ধর্মের ভূমিকা।। ১৯৬
দর্শন ও রুহানিয়াত।। ২০২
পরিশিষ্ট।। ২০৫
বইয়ের হদিস।। ২০৭