পিরোজপুরে ৩ বোরকা পরিহিত মহিলাকে হেনস্তা: ধর্মনিরপেক্ষতার দেউলিয়াপনা

সমপ্রতি পিরোজপুরে জেএমবি সন্দেহে তিন বোরকা পরিহিত মহিলাকে আটক করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে তাদেরকে আটক করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে খোদ পুলিশও কোন ধরনের নেতিবাচক তথ্য প্রমান করতে পারেনি। মহিলাদের বিরুদ্ধে পুলিশের এ ধরনের আচরন সভ্য সমাজে মোটেও সমর্থন যোগ্য নয়। পশ্চিমা দেশগুলো পর্যন্ত মহিলাদেরকে থানায় বা হাজতে নেয়ার ব্যপারে অনেক সতর্ক থাকে। অথচ আমাদের দেশে খুব অবলীলায় এই অপকর্মটি সংঘটিত হলো। অভিযোগ যখন প্রমানিত হলো না, তখন তাদের ছেড়ে দেয়াটাই ছিল বাঞ্ছনীয়। তা না করে স্থানীয় পুলিশ, তথাকথিত উপরের নির্দেশের আলোকে তাদেরকে হেনস্তা করা চালিয়ে যেতে থাকলো। দিন কয়েক থানায় আটকে রেখে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তাদেরকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। অভিযুক্তদের আইনজীবিরা এ রিমান্ডের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। কেননা ৫৪ আইনে গ্রেফতার করে কাউকে রিমান্ডে নেয়া যায় না। কিন্তু আদালত সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে পুলিশ তিন মহিলাকে নির্দোষ হিসেবে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গতকাল (বুধবার) তারা মুক্তি পেয়েছেন। গোটা ঘটনাটি আমার কাছে খুবই অরুচিকর এবং অসমর্থনযোগ্য মনে হয়েছে। জেএমবি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। তাদের কোন কাজ বা চিন্তা-চেতনাকে যদি কেউ প্রকৃত ইসলাম বলে বিবেচনা করে, তাহলে বিরাট ভুল করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে জেএমবি বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোয় সরকার তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে নিরীহ কাইকে অন্যায়ভাবে এ সুযোগে ঘায়েল করার কৌশল কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ইসলামের নাম নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান বা সংঘঠন দাড়িয়ে গেলেই তারা প্রকৃত ইসলামের চর্চা করে তা মনে করার কোন কারন নেই। ইসলাম হলো শান্তি আর নিরাপত্তার ধর্ম। ইসলামী অনুশাসন মেনে জীবনের চলার পথের সব সমস্যার সমাধান কার যায় বলে ইসলাম নিছক ধর্মীয় পরিচিতির বাইরে একটি পূর্নাংগ জীবন বিধান হিসেবেও স্বীকৃত। রোরকা বা হিজাব করা, নামাজ পড়া বা কুরআন শরীফ পড়া ইসলামের নিয়মিত আচরনাদির অংশ। বোরকা, টুপি, দাড়ি, কিংবা মহাগ্রন্থ আল কুরআন কোন দল বা গোষ্ঠীর নিজস্ব সম্পত্তি নয়। অথচ আমাদের দেশে এগুলো পালন করলে তাকে দলবাজি করে একঘরে করার চেষ্টা করা হয়। কয়েক মাস আগে চ্যানেল ওয়ানে এক টকশোতে সাবেক সচিব আসাফ উদদৌলা বলেছিলেন, যে, ‍গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যদের বাড়ী তল্লাশীর সময় যখন কুরআন শরীফ পাওয়া যায়, তখন আমাদের মিডিয়ার ক্যামেরাগুলো সেটাকেই বার বার জুম করে দেখাতে থাকে। ভাবটা এমন কুরআন শরীফ বা ইসলামী বই পুস্তক পড়াটা যেন খুবই ঝূকিপূর্ন ব্যপার। আসাফ উদদৌলা সাহেব তখন প্রশ্ন রেখেছিলেন, মুসলমানদের বাসায় কুরআন শরীফ থাকবে না তো কি থাকবে? কুরআন বা হিজাবের বিরুদ্ধে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারনার উদ্দেশ্য কি? মানুষ যেন ভয়ে কুরআনের অধ্যায়ন বন্ধ করে দেয় কিংবা হিজাব পড়ে নারীরা যাতে সম্মানের সাথে চলতে না পারে, এটা নিশ্চিত করাই কি এই ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্য? যারা ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা করেন বা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তাদের যুক্তি হলো, যে, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয়। ফলে যে কেউ তার নিজের ধর্ম যথাযথভাবে পালন করতে পারে। অথচ শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসন মেনে হিজাব করার কারনেই পিরোজপুরের এই ৩ মহিলাকে আজ থানায় আর আদালতে বেপর্দা হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পিরোজপুরের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনের দেউলিয়াত্ব আর এর পতাকাবাহী লোকদের হীন মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। এই ঘটনা আরো প্রমান করেছে, যে, ধর্ম নিরপেক্ষতা আসলে ইসলামের বিরোধীতারই একটি কৌশল। তাই ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে থাকতে যারা ক্রমাগত ধর্মহীন হয়ে পড়ছেন, তাদের হাতে ইসলামও নিরাপদ নয়।


নিজের সম্পর্কে লেখক

I am a ordinary person. A peaceful world is my dream



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।