বরফ-জনম

আমরা দু’জন আজ এক প্রাণ আমাদের এই বরফ-জনমে
আমাদের এই পরিমিত মনে জন্মায় দ্বিধা নানান প্রকার,
আমাদের এই সহবাস কেন, মিলন না কেন! কেন দাঁতে দাঁত!
এ বরফ-যুগে সুন্দর করে ঘষা-মাজা-সাজা ছেলেমেয়েগুলো,
কেন খোঁজে বলো প্রেম-মাধুর্য? এই হিমযুগে প্রেম! কেন প্রেম কেন!
হায় কী তোহফা পেলাম আমরা! বিশ্ব উষ্ণ— তাই প্রেম হিম।

আমি ছিলাম যে বিনাশী আগুন, পুড়িয়েছিলাম তোমার বরফ
তুমি গলেছিলে, কিন্তু তোমার বরফায়নের দামামায় আমি
গলিয়েছি যত, পুড়িয়েছি যত, তারচেয়ে বেশি তাপ খুইয়েছি
তারচেয়ে বেশি বরফ হয়েছি, ঝরে ঝরে গেছি মেঘজাত শিলা!
আমার ধারণা তার নিচে কোনো তরল ছিল না, তোমার বরফ
ফঙ্গবেনে না গলল না তাই, প্লুত হলই না চারপাশ শেষে।

কুপিয়েছি আমি, গর্ত খুঁড়েছি পানি পাই নাই, চৈত্র ছিল না।
ঘুটঘুটে কালো তার মাঝে আমি ছুটেছি চাকর, পেয়েছিলাম কী?
সিমেন্ট বালির মিশেল শাপলা। পেয়েছিলাম কী? পঙ্গু দোয়েল।
আমি ঘুঁটে খুঁজি অথচ গরুই পাওয়া গেল না! জ্বালাব বৃক্ষ
বন আর বন! কাটো আরো কাটো! ইটভাঁটা জ্বালি আমাদের মনে,
যেহেতু আগুন জ্বলতেই হবে, পুড়তেই হবে, পোড়াতেই হবে।

আমি চাইতাম রোষানল গতি, চারপাশে আমি তা দেখেছিলাম,
কী করে ছুটছে সকল বিদেশ, ধোঁয়া ছেড়ে ছেড়ে, আমি চাইতাম
সেই গতি হোক আমার আপন, সেই গতি পেতে পুচ্ছ খুলেছি,
আমি না বুঝেই মাছরাঙা-নীল মুছেছি যতনে; গতির সঙ্গী
রক মিউজিক আমি কানে-তালা— বধির হয়েছি মূক হয়ে গেছি।
কেরাঞ্চি আঁকা মিউজিয়ামের দেয়ালে দেয়ালে বাইরে শকট।

কী ক্ষতি হত হে! যদি থাকতাম লেপটে ঊষায়, যদি থাকতাম
তোমার খামারে; আমাদের ক্ষেতে ফলনে ফসলে যবের হাসিতে!
ধানের ক্ষেতের অল্প পানিতে মাছ হয়ে যদি ভাসতাম! তাতে
কী অভাব ছিল? বৃষ্টি হত না? গাছের পাতা কি দুলত না প্রিয়?
পুকুর শুকালে তার শাদ্বলে শুয়ে থাকতাম জড়াজড়ি করে,
বৃষ্টি ঝরত ... আহা যদি হত! এমন সবুজ! এমন জনম!

ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেল আমার আগুন; হিমবাহ হল, কেননা জামানা
আমার জন্য উপায় রাখেনি, সোনাদানা-মোহ আমাকে ছাড়েনি।
আমরা ক্রমেই দূরে সরে যাই দুই হিমগিরি দূরে আরো দূরে...
ধীরে ধীরে, সেই হাবল-সূত্রে, হেন দাবদাহে বরফের এই
সংসার যেন সিল-চিৎকার, তারা-ভরা রাতে দুই মেরুবাসী।
সবুজ ঘরেতে খালি ঘাম নয়— রাশি রাশি হিম জমে আজকাল।

২৮/০৪/২০১২


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবি, কবিতা ভালবাসি...



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।