- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
সংবাদকর্মীর চোখে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস
সরকার সম্প্রতি বেআইনিভাবে বন্ধ করে দিয়েছে দৈনিক আমার দেশের প্রকাশনা। সেই সাথে পত্রিকাটির ঢাকার কাওরান বাজারের অফিসে মধ্যরাতে সশস্ত্র পুলিশ হানা দিয়ে ভাংচুর আর সাংবাদিকদের নির্যাতন করে ধরে নিয়ে গেছে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। কোনো গ্রেফতারী পরোয়ানা দেখাতে পারেনি আইনশৃংখলা বাহিনী। কারো বিরূদ্ধে অভিযোগ থাকলে বা কেউ মামলা দায়ের করলেই মধ্যরাতে কর্মরত অবস্থায় নাগরিকদের মানবিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে গ্রেফতার করতে পারে কি পুলিশ? সংবাদপত্র অফিসে সশস্ত্র পুলিশের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বলপ্রয়োগের শিকার শতাধিক সংবাদকর্মীর একজন খোমেনী ইহসান। তিনি লিখছেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কবলিত সেই রাতের কথা।...সম্পাদনা বিভাগ।
সপ্তাহে আমার ছুটির-দিন হল মঙ্গলবার। সাধারণত বাইরে যাই না, সপ্তাহে একটা দিন ছুটি, একটু অলস সময় কাটাই। ফলে জুনের এক তারিখেও বাসা থেকে বার হওয়ার কথা ছিলো না। দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়েছিলাম। পৌনে তিনটার দিকে বন্ধু রাকিব--দৈনিক ডেসটিনির কূটনৈতিক প্রতিবেদক বন্ধু রাকিব-উন-নবী ফোন দিয়া বললো, কী রে তোদের পত্রিকা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে? তারপর ও নিশ্চিত করেই বললো যে, এটা হবে আজই। ওকে কী আর বলবো? বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কই এমন আভাস ইঙ্গিতও তো পাই নাই, গতকালও!
মানিক ভাইকে ফোন দিলাম--আহমদ হোসেন মানিক, আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি বললেন--ফোনে কথা বলা যাবে না। তার কথায় বুঝলাম--ঘটনা তাহলে ঘটে যাচ্ছেই। বাসা থেকে দৌড়ে বের হলাম। বাসে চেপে কাওরান বাজার, অফিসে।
ঘড়িতে তখন বিকাল সাড়ে চারটা। অফিসে ঢুকেই জানলাম, পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীকে সকাল ৯টায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। তার কাছ থেকে দুইটা সাদা কাগজে সই রেখে দুপুর দুইটার দিকে ছেড়ে দিছে। কিন্তু তাকে বাসায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে বিষাদ ও ক্ষোভের ছায়া। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানালেন। সহকর্মীরা সবাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, আজই দৈনিক আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাহমুদ ভাইও গ্রেফতার হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনের খবর জোগাড় করতে নানা সংবাদমাধ্যমের প্রচুর সাংবাদিকরা আসলেন। অনেক পরিচিত মুখ। বন্ধু কিম্বা বড় ভাই, ছোটো ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের আমার সিনিয়র জুবেরী ভাই--ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সিনিয়র রিপোর্টার, তিনিও এসেছেন। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ও ক্ষোভের ছাপ। সংবাদকর্মী হিশাবে অন্য একটা সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর জোগাড় করতে আসা নিশ্চয় কোনো সুখের ব্যাপার না। বিষণ্ণ সবাই। কেউ কেউ আমাদের সান্ত্বনা দিলেন। গায়ের জোরের ওপর এই সরকারের নির্ভরতার কথা বললেন, যাচ্ছেতাই করে যাওয়ার মানসিকতার কথা বললেন। টের পেয়েছি, শিড়দাঁড়া বেয়ে একটি গোপন দীর্ঘশ্বাস নামছে। নীচে, অনেক নীচে, অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ ভাই কী বললেন, প্রচণ্ড ভীড়-ভাট্টায় তার পুরাটা কানে ঢুকল না, অনেক পেছনে ছিলাম আমি। শুধু কানে বাজলো--‘সরকার গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ দিনের মধ্যে আমার দেশ বন্ধ করে দেবে ও আমাকে গ্রেফতার করবে। তাদের হুকুমে এনএসআই-ডিজিএফআই’র মতো গোয়েন্দাসংস্থাগুলো আজ মাঠে নেমেছে।
সময় গড়াতে থাকলো। পুরা আমার দেশ নিরবতার কুণ্ডলিতে চলে যেতে থাকলো। ধীরে ধীরে ভীড় বাড়তে শুরু করলো শুভাকাঙ্ক্ষীদের। আমাকে অবাক করে দিয়ে রাত ১০ টার দিকে ছোটো ভাই মুনতাসির ও মারুফ আসলো, ব্যাগে করে কাপড়-চোপড় নিয়ে। ওরা শুনেছে আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ওদের দেখে মনটা আরো বিষণ্ণ হয়ে গেল। যতোই বলি কিছুই হবে না, ওরা দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে পারে না। ওদের ধারণা মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমার দেশ থেকে সব সাংবাদিককেই পুলিশ গ্রেফতার করবে।
১১টা বেজে গেল। শুনলাম পুলিশ ওপররে দিকে আসছে । কিছুক্ষণের মধ্যে এসেই গেল। উর্দি পরা ও সাদা পোষাকধারী। উর্দিপরাদের বেশিরভাগ দাঙ্গা পুলিশ। আর্মড পুলিশ ও ব্যাটালিয়নও আছে। লিফট বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। আমরা দরজায় দাঁড়িয়ে গেলাম। রিপোর্টার মাহাবুবুর রহমান, সহ-সম্পাদক আরীফ মুহাম্মদ, সহ-সম্পাদক এমদাদ, রিসার্চ সেলের শহিদুল, পিয়ন সাইফুল ও রাজা প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে গেল। আমরা সাফ জানিয়ে দিলাম--এভাবে জোর করে মাহমুদুর রহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সিনিয়র সাংবাদিকরা সহ সবাই দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম মানব দেয়াল হয়ে। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের প্রতিবাদে মুহুর্মুহু শ্লোগান দিতে থাকলাম সবাই, কলম বন্ধ, ভাবছিলাম আবার এই কলমের বাঁধ খুলতে কতো শ্লোগান দিতে হবে রাজপথে কে জানে!
পুলিশ বারবার জোর করে ভেতরে ধেয়ে আসতে চাইলেও আমাদের বাধার কারণে ব্যর্থ হচ্ছিলো। ওদিকে মাঝরাত পার হয়ে যাচ্ছে। ক্যালেন্ডারের হিসাবে ২ জুন রাত ১টা বাজে তখন। ক্ষুধায় সবাই কাহিল। পুলিশ নীচে থেকে কাউকে উঠতে দিচ্ছে না, নামতেও না। খাবার নিয়া আসার কোনো উপায় নাই। পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ফিল্টার জার কয়েকটাতে যা পানি ছিলো তা থেকেই একটু একটু করে খাচ্ছিলো সবাই। আমাদের হাউসের লোকজন ছাড়াও অন্যান্য হাউস থেকে নিউজ কাভার করতে আসা প্রায় অর্ধশতের বেশি সাংবাদিকও ছিলেন। সবাই খিদা আর পিপাসায় কাতর।
টিকতে না পেরে তাই একজন পিয়নকে পাঠানো হলো নিচ থেকে খাবার ও পানি আনার জন্য। পিয়ন খাবার ও পানি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করতে থাকল। কিন্তু তাকে উপরে ওঠতে দেয়া হচ্ছে না। সে উপরের সবার অবস্থা জেনে বেশ করে কাকুতি-মিনতি করল। কাজের কাজ হল না। উল্টা খাবার কেড়ে নিয়ে তাকে আচ্ছা মতো পেটানো হল। এক সময় আমার দেশ-এর টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো। ওদিকে বারবার তার প্রবেশ পথে হামলে পড়ছে পুলিশ। বুট-হেলমেট ও বন্দুক সমৃদ্ধ পুলিশের শক্তির সামনে যেন আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের দেয়ালটা একটু একুট করে ভেঙ্গে পড়ছে।
রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। একদিকে নিরস্ত্র সংবাদকর্মী। আরেক দিকে সশস্ত্র পুলিশ। ফারাকটা যেন শুধু অস্ত্রের, মাঝখানে রাষ্ট্র-সংবিধান-আইন বলে কিছু নাই। সংবাদকর্মীদের রক্ষাকবচ সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ও আইনের দোহাই। পুলিশের হাতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংঘটনের মারণাস্ত্র। উপরের নির্দেশে পুলিশের দল জ্বি স্যার, জ্বি স্যার করতে করতে ভেঙ্গে পড়ছে। কিন্তু তিনটায়, চারঘণ্টায় অসংখ্যবার হামলা করেও তারা প্রতিরোধের দেয়াল টপকাতে পারছে না। একটা পর্যায় পরিস্থিতি এমন হলো মারমুখী পুলিশের চোখে-মুখে হিংস্রতার দাগগুলো গাঢ় হয়ে গেল। আমরা সংবাদকর্মীরাও প্রবেশ পথে আরো গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। শ্লোগান চলছে। শ্লোগান জুড়ে রক্ত দেয়ার, জান দেয়ার ঘোষণা ধ্বনি।
গুজব বাড়ছে। গুঞ্জন বাড়ছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ও ওয়াকিটকির ব্যস্ততা বাড়ছে। প্রচন্ড আবেগ আমাদের হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে। আমার দেশ, আমাদের কর্মস্থল না। নিছকই একটা সংবাদপত্র মনে করা যায় না আমার দেশকে। এ যে আমাদের ভালোবাসা। প্রেম। না, আমার বুকের ছাতি ফুলে ওঠলো। ইতিহাসের যতো নিষ্ঠুরতম ঘটনাই ঘটুকনা কেন প্রতিরোধ চলবে। চরম আবেগে আমরা কেঁপে গেলাম। শ্লোগান বন্ধ। সবাই গেয়ে ওঠলাম জাতীয় সংগীত ও রণ সঙ্গীত। আবারো শুরু হলো শ্লোগান। শ্লোগানে আমার দেশ-এর ছাদ কেঁপে কেঁপে ওঠছে। জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ সব সংবাদকর্মীই দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুললাম। এই শ্লোগানের তোড়ে একসময় সব পুলিশ আমাদের অভ্যর্থনা চত্বর থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে চলে গেল। আমার দেশ যেহেতু আগুনে নিজের প্রাণশক্তিকে বাংলাদেশে মূর্ত করে তুলেছে, সেহেতু আমরা পিশাচের কৌশল ও শঠতার সঙ্গেও পরিচিত ছিলাম। সবাই বুঝে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করবে।
সময় ৩ টা ১৭। নিষ্ঠুরতার রাতে চূড়ান্ত আঘাতটি পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই শতাধিক দাঙ্গা পুলিশ-আর্মড পুলিশ হামলে পড়লো প্রবেশ পথে। আমরা সবাই প্রাণপণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করলাম। দরজার এপাশ ধরে আমরা, ওপাশ ধরে ওরা। বড় জোর ৫-৭ মিনিট। এরপর আর আমরা পারি নাই। আমরা ক্ষুধার্ত একদল মানুষ আর কতক্ষণ পারি! সামনে ছিলেন যারা তাদের--মাহবুব ভাই, আরীফ, এমদাদ ও সাইফুলকে টেনে হেচড়ে নিয়ে গেল সশস্ত্র উর্দিওয়ালারা। দরজার ওপাশে নিয়েই লাঠির আঘাত, বুটের লাথি আর অশ্রাব্য গালি। আঘাতে জর্জরিত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন ওরা। দেখলাম টেনে হিচড়ে তাদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর সামনে থেকে লাঠি-বন্দুক উচিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো শতাধিক পুলিশ। সামনে যাকেই পেল, তাকেই মারতে মারতে এগোলো--উপ-সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নগর সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী ও আলাউদ্দিন আরিফ ভাই মার খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন।
চোখের সামনে দেখলাম, উর্দি ছাড়া ক’জন গুন্ডামতো লোক পিস্তল বাগিয়ে সামনে চলে আসছে। তারা উর্দিওয়ালা পুলিশদের নির্দেশ দিচ্ছে লাঠিচার্জ করতে। ওরা আমাদের বসার চেয়ারগুলো আমাদের গায়ের উপর ছুঁড়ে মারতে লাগলো। সামনে যা কিছু পেল সব চুরমার করেই ওরা ভেতরে ঢুকে ডান দিকে মাহমুদ ভাই’-র রুমের দিকে ধেয়ে গেলো। পেছন থেকে আমরা চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকলাম। ততক্ষণে প্রবেশ পথের লাইট নিভিয়ে দিয়েছে ওরা। পুরো আমার দেশ কার্যালয় জুড়ে ভীতির ছাপ। পুলিশ লাঠি-বন্দুক তাক করে আমাদের ঘেরাও করে রেখেছে। মাহমুদ ভাইয়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না। সেখানে তার সঙ্গে পুলিশের কী কথা হলো, না হলো কিছুই জানতে পারছি না।
দীর্ঘক্ষণ পর দেখলাম ভোর চারটার দিকে মাহমুদ ভাইকে ঘিরে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র উর্দিওয়ালারা। মাহমুদ ভাই হাত উচিয়ে আমাদের বিদায় জানাতে জানাতে বেরোলেন হাসিমুখে। স্লোগানের বদলে তখন আমাদের চোখে পানি। ডাকাতের মতো রাতদুপুরে সশস্ত্র পুলিশ আর সাদা পোশাকধারী ভয়ংকর মানুষগুলা আমাদের ওপর হামলে পড়ছিলো সন্ধ্যা থেকে--কিন্তু আমরা তো হতাশ হই নাই তখন! এই কান্না আসলে অপমানের নয়, একজন সম্পাদকের সাহস আর আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া দেখে।
তিনি যেভাবে যাচ্ছিলেন তাতে মনে হতে লাগলো তিনি প্রচন্ড নির্বোধ কোন মানুষকে সততা ও সাহসের মাধ্যমে জব্দ করতে যাচ্ছেন। তিনি আবারও আমাদের মাঝে ফিরবেন। আবারও আমার দেশ প্রকাশিত হবে। পুলিশি রাষ্ট্রের এই ডাকাতের গ্রামে যেই রাত্রি আমাদের ওপর চেপে বসেছিল- সেই রাত্রির আঁধারবিস্তারী অপশাসনের বিরুদ্ধে আবারো লড়বে আমার দেশ।
Available tags : আমার দেশ, খোমেনী ইহসান, গণমাধ্যম
Fascism1
Friday 04 June 10
Nazmus Sakib Nirjhor
2
সরকারের মিথ্যা, গায়ের জোড়ের বক্তব্যের উল্টোদিকে বাস্তব নমুনা হচ্ছে এমন। আমার দেশ বন্ধ করার পুরো আওয়ামী লীগীও প্রক্রিয়া দল হিসাবে এর ধারাবাহিক অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়ে আচরণ ও কাজকেই আরো ষ্পষ্ট ও জোড়ালো করল।
Saturday 05 June 10
????
3
Saturday 05 June 10
???? ???????? ?????
4
Tuesday 08 June 10
???????? ????
দৈনিক আমার দেশ এবং আজকের কাগজ বন্ধ হওয়া5
আজমাল হোসেন মামুন
দৈনিক আজকের কাগজের 'নারী', এনজিওদের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত ফিচার পাতা
'অগ্রগতী',সম্পাদকীয় পাতায় পত্রিকাটি বন্ধ হওয়ার দেড় বছর আগে থেকে নিয়মিত ফিচার
লিখতাম। নারী পাতার বিভাগীয় সম্পাদক তাহেরা ববি (ওনি পরবর্তীতে বিসিএস প্রশাসন
ক্যাডারে যোগযান করেছেন), 'অগ্রগতী' পাতার বিভাগীয় সম্পাদক মুজিবুল হক মনির এবং
সহকারী সম্পাদক সালাম সালেহ (বর্তমানে যাযাদিনে কর্মরত) এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ
ছিলো। তাহেরা ববি আপু এবং মুজিবুল হক মনির ভাই নিয়মিত লেখা চাইতো। লেখা দিলেই
প্রকাশ করতো। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) এর নির্বাহী পরিচালক
আবদুস সাত্তার দুলাল 'ডিজএ্যাবল্ড পিপলস্ ইন্টারন্যাশনালের (ডিপিআই) গ্লোবাল
সেক্রেটারী নির্বাচিত হওয়ায় ওনার ওপর একটি ফিচার মুজিবুল হকের কাছে ইমেইলে
পাঠালাম। ওনি বলল: আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে।
যেদিন প্রকাশিত হওয়ার কথা। তার আগের দিন দৈনিক আজকের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে
যায়।
ঠিক একই ভাবে আমার বন্ধু ফাইজুল ইসলাম (বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়
সহকারী) দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করার মাধ্যমে 'আয়না',
'নারী' এবং অন্যান্য ফিচার পাতায় লেখালেখি শুরু করি। প্রথম দিকে পত্রিকাটি
ফ্রিল্যান্স লেখকদের ভালোই সম্মানী প্রদান করতো। এখানে অনেকের সাথে পরিচয়
থাকলেও পত্রিকাটির 'নারী' পাতার সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক বিশিষ্ট নারী সাংবাদিক
রেহানা পারভীন রুমা আপুর সাথে ছোটভাই এবং বড় বোনের মতে সম্পর্ক ছিলো। ফোন করে
লেখা দিলেই প্রকাশ করতেন ওনি। মাঝখানে অনেকে 'নারী' পাতায় লেখালেখি বন্ধ করে
সম্মানী না পাওয়ায়। আমি বন্ধ করি নি। কারণ, আমি প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার নিয়ে
বেশি লেখালেখি করতাম। মাসখানেক আগে রুমা আপু দৈনিক আমার দেশ ছেড়ে দৈনিক সকালের
খবরে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছেন। রুমা আপু যাওয়ার আগে ২০০৯ সালে
প্রকাশিত লেখা সমূহের বিল করে দিয়েছিলেন। তাই মার্চ মাসের ২৩ তারিখে দৈনিক আমার
দেশ অফিস থেকে বিল পেয়েছি। নতুন যিনি 'নারী' পাতার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি হচ্ছে
ইশারা আপা। সরাসরি সাক্ষাৎ না ঘটলেও নামে ওনাকে চিনি। ওনিও আমাকে চিনে। গত ৩১
মে ইশারা আপা আমাকে ফোন করে বলেন যে, আজমাল ভাই আপনার দু"টি লেখা পেয়েছি। ছবি
দেন। আমি বললাম আপা ছবিতো নেই। দেখেন কোথাও পাওয়া যায় কি না। ১ জুন ২০১০ তারিখে
হাশেম নামের এক সাংবাদিক বলেন, যে দুটি ফিচার পাঠিয়েছেন তা ইমেইলে পাঠালে
কম্পোজ করার ঝামেলা থেকে বাচবো। তাই আমি ১০ মিনিটের মধ্যেই আরো একটি ফিচার যোগ
করে ৩টি ফিচার পাঠালাম। যার একটি ৩ জুন 'নারী' পাতায় প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু দৈনিক আজকের কাগজের মতোই ২ দিন আগেই বর্তমান সরকার বন্ধ করে দিলো দৈনিক
আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা। দৈনিক আজকের কাগজ বন্ধ হওয়ার সময় যেমন কষ্ট অনুভব
করেছিলাম। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ হওয়ার সময়ও একই কষ্ট অনুভব করলাম।
নিজে হয়ত: একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। পত্রিকার সম্মানী না পেলে কিছু
হবে না। কিন্তু যে সমস্ত সাংবাদিকরা জীবিকা নির্বাহ করতো পত্রিকার বেতন থেকে
তাদের কি হবে? নিঃসন্দেহে তারা আর্থিক সংকটে পড়বে। তাদের ছেলে-মেয়েদের
পড়া-লেখার ক্ষতি হবে। কিন্তু তারাতো সকলেই অপরাধী নয়। তারা নিরপরাধ। কিন্তু
তাদের অপরাধের কথা বলতে হয়, কালকেতু উপখ্যান এর ভাষায়,
'কেন হেন জন্মবিধি কৈলা পাপ বংশে
হরিণা জগতে বৈরি আপনা মাংশে।'
উপরোক্ত চরণ অনুযায়ী বলতে বাধ্য হচ্ছি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রত্যেক
সরকারের আমলে সাংবাদিকরা তাদের মহৎ পেশার ফল পেয়েছে অর্থাৎ পত্রিকা বন্ধ হয়ে
আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তবে একটি কথা বলতে চাই। সাংবাদিকরা না খেয়ে মারা যাবে না।
একটি ব্যবস্থা হবেই। তবে তাদের আর্থিক সংকটে ফেলা জাগ্রত বিবেকের কাম্য হতে
পারে না।
আজমাল হোসেন মামুন
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
Monday 28 June 10
????? ????? ?????