হিলারির সফর ও বাংলাদেশের ‘কৌশলগত’ তাৎপর্য


যতোদূর জানা যায়, হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে আসেন নি, অর্থাৎ যে সময় শেখ হাসিনা তাকে চেয়েছেন সেই সময় নয়, ডক্টর ইউনুস নিয়ে টানাপড়েন একটা কারন ছিল। এমন কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই তাঁকে বাংলাদেশে আনবার চেষ্টা চলছিল। এই বছর মে মাসে চিন থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লী যাবার পথে মাঝখানে ছুটির দিনে বাংলাদেশ সফরে আসার দিনক্ষণ হিলারি নিজেই নির্ধারণ করেছেন। আসার পর  তিনি প্লেন থেকে নেমেছেন দেরি করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি তার জন্য যে নৈশভোজের আনজাম করেছিলেন, হিলারি তাতে শামিল হন নি। অনেকে ধরে নিয়েছেন তিনি সরকারের কাছ থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। গুম, হত্যা ও মানবাধিকার নিয়ে তিনি উদ্বেগ দেখিয়েছেন, শাসনরীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতও তার ভাল লাগে নি, সেটাও বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। এটা তো বলতেই হবে, কারন বাজার ব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে হলে আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। কিন্তু এহ বাহ্য – এগুলো বাইরের দিক। শেখ হাসিনা বিরক্তির কারন হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের নির্ভরযোগ্য মিত্র। গুম ও গুম খুনের আতংক যখন চারদিকে এবং রাজনীতির তাপ যখন টগবগ করছে তখন তার এই সফর শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি সমর্থন অবশ্যই। অন্যদিকে বিএনপিও আন্দোলনের মাঠ থেকে পিছু হঠেছে। শুধু পিছুই হঠেনি , বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায় তারা পালিয়ে থেকেছেন। হিলারি ক্লিনটনকে খুশি করার জন্য বিএনপি দেখাতে চেয়েছে তাদের ও তাদের অন্তর্ভুক্ত জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা অন্যায় মামলা তারা জনগণকে নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করবেন না, করবেন আইনী ভাবে। আমরা আইন মেনে চলি -- হিলারি ক্লিনটনের কাছে এই ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন তারা। আদালত দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে, এই অভিযোগ তাদের। অথচ এই দলীয় আদালতের কাছেই জামিন ভিক্ষা করছেন এখন। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিক থেকে দেখলে বিরোধী দলের এই রূপ দেখবার সুযোগও করে দিয়েছেন হিলারি। এগুলো ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নগদ ফল। মেঘ না চাইতেই জল।


‘কৌশলগত’ কথাটির মানে এই কালে শুধু সামরিক অর্থে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের  প্রাচীন ধারণা দিয়ে বুঝলে হবে না।  দুই শিবিরে বিভক্ত দুনিয়ার জায়গায় এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটেছে। প্রতিটি দেশই দুনিয়াজোড়া বিস্তৃত একই পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনস্থ। অতএব প্রতিটি দেশকেই নিজ নিজ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা এই বিশ্বব্যবস্থার অধীনে থেকেই সন্ধান করতে হচ্ছে। তার বাইরে গিয়ে নয়।


এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয় শুধু নগদ জিনিস শেখ হাসিনার হাতে ধরিয়ে দিতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। কিম্বা শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি এক ধরণের শীতলতা দেখেও মনে হওয়ার কারন নাই যে তিনি বাংলাদেশেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অবশ্যই দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকারের ওপর বা আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে শেখ হাসিনার শাসনে তিনি সন্তুষ্ট নাও থাকতে পারেন, সেটা হতেই পারে, কিন্তু বাংলাদেশকে তিনি গুরুত্ব দিতে  বাধ্য। সেটা অবশ্য বাংলাদেশে হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য থেকেই আমরা বুঝতে পারি। তিনি নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশ স্ট্রাটেজিক বা ‘কৌশলগত’ দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই কথা তিনি বাংলাদেশের পিঠ চাপড়িয়ে দেবার জন্য বলেন নি। তার এই কথার মর্ম আমাদের ভাল ভাবে বোঝা দরকার।

 ‘কৌশলগত’ কথাটির মানে এই কালে শুধু সামরিক অর্থে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের  প্রাচীন ধারণা দিয়ে বুঝলে হবে না। কিম্বা দুনিয়া যখন সমাজতান্ত্রিক আর পুঁজিতান্ত্রিক শিবির নামে দুই শিবিরে বিভক্ত ছিল, যাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বা লেনদেন ছিলনা বললেই চলে -- তখনকার স্নায়ুযুদ্ধের মোটা দাগের বিবেচনা দিয়েও বোঝা যাবে না।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু নয়, কোন রাষ্ট্রেরই প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কৌশলের মর্ম আমরা এখন সাদাকালো কায়দায় দাগ টেনে,  সরল ভাবে ভূখণ্ডগত বিভাজন, কিম্বা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের পরিচিত শত্রুতা মাথায় রেখে বুঝতে পারবো না। স্ফীতি ও পুঞ্জিভবনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুঁজির বিপুল গোলকায়ন ঘটেছে। তাতে দুই শিবিরে বিভক্ত দুনিয়ার জায়গায় এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটেছে। প্রতিটি দেশই দুনিয়াজোড়া বিস্তৃত একই পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনস্থ। অতএব প্রতিটি দেশকেই নিজ নিজ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা এই বিশ্বব্যবস্থার অধীনে থেকেই সন্ধান করতে হবে। তার বাইরে গিয়ে নয়।

এই কারনেই হিলারি ক্লিনটনের সফর নিয়ে আমার এর আগের লেখায় আমি বলেছি, “তাঁর বাংলাদেশ সফরকে দিল্লী-ঢাকা-ওয়াশিংটন মিলে চিনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলার সফর হিশাবে যদি আমরা দেখি তাহলে সেটা খুবই সরল ভাবে দেখা হবে। বাংলাদেশ ভারতের সমরনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনস্থ একটি দেশ। সেই ক্ষেত্রে দিল্লীর সঙ্গে ওয়াতশিংটনের সম্পর্কই তো যথেষ্ট। তার বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ‘রাজনৈতিক-সামরিক নিরাপত্তা’ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন ঘটল কেন? কী দরকার প্রতিবছর নিয়মিত সরকার ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে নিরাপত্তাসহ সকল বিষয় নিয়ে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা এবং সেই সংলাপকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার চেষ্টা?  হিলারির সফরের গুরুত্ব এই পশ্নের উত্তরের মধ্যে নিহিত।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা মার্কিন নীতি নির্ধারকরা নতুন ভাবছেন এমন নয়। বাংলাদেশ, শ্রী লংকা, মালদ্বীপ ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রচনা মার্কিন স্বার্থের অনুকুল এই চিন্তা সম্প্রতি দানা বেঁধেছে। তা নিয়ে গত কয়েক বছরে আলাপ আলোচনাও চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তা বস্তবায়ন করতে চাইছে। এই দেশগুলোর মধ্যে তিনটি দেশই সামুদ্রিক দেশ বা সমুদ্র-সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র। ভারত মহাসাগর দিয়ে দুনিয়ার সমুদ্রগামী জাহাজের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ ভাগ চলাচল করে, পণ্য ও জ্বালানি বোঝাই জাহাজগুলো চলাচল করে ৭০ ভাগ।  সেই দিক থেকে সমুদ্রের ওপর আধিপত্য ও দখলদারি বহাল রাখার ওপর শক্তিশালী দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নির্ভর করে। বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা যত তীব্র হচ্ছে ততোই একটি দেশের পক্ষে একা ও একচ্ছত্র ভাবে দখলদারি ও আধিপত্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় সমুদ্র সংশ্লিষ্ট ছোটদেশগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে।

সমুদ্রের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে যুক্ত এই বছরের জুনে বারাক ওবামার ঘোষিত নতুন সমরনীতি। এই সমরনীতি ঘোষনার জন্য ওবামা এই বছরটা বেছে নিয়েছেন কারন এটা নির্বাচনের বছর। তিনি বিপুল ভাবে মার্কিন সামরিক বাজেট কাটছাঁট করেছেন। এই নতুন সমরনীতির প্রথম কথা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনোযোগ দেবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। দুই, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী মার্কিন উপস্থিতি থাকবে, কিন্তু ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ করবার জন্য বিপুল সংখ্যায় যে-সেনাবাহিনী দেখা গিয়েছিল অতো সেনাবাহিনী থাকবে না। মার্কিন সেনাবাহিনী হবে ছোট এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা  নির্ভর করবে সমুদ্রে ও আকাশে আধিপত্য নিশ্চিত করবার মধ্য দিয়ে। বিশেষত হরমুজ প্রণালি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিন ও ইরানকে প্রতিহত করবার ক্ষেত্রে প্রস্তুত থেকে। পেণ্টাগনে ওবামা যখন তার নতুন সমরনীতি ঘোষণা করছিলেন তখন বলছিলেন “এক দশকের যুদ্ধের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসের পাতা আজ আমি উল্টালাম...এ হচ্ছে পালাবদলের এক মুহূর্ত”।  মার্কিন সেনাবাহিনী এখন ছোট হবে – এটাই তার সিদ্ধান্ত। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট তিনি কেটেছেন বিপুল ভাবে।  মার্কিন অর্থনৈতিক অব্যাবস্থাপনার জঞ্জাল সাফ করা দরকার মনে করেছেন তিনি। যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণের মনোভাবকে নির্বাচনের আগে নিজের পক্ষে নেবার ক্ষেত্রে এই কাটছাঁট ও নতুন সমরনীতি কতটা কাজ করে সেটা আমরা আগামি মার্কিন নির্বাচনেই দেখব। বাংলাদেশে হিলারি ক্লিনটনের আগমন মার্কিন নির্বাচন ও নতুন মার্কিন সমরনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।

 


পুঁজিতান্ত্রিক দুনিয়া বদলে যাচ্ছে দ্রুত। নতুন দুনিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে আর একক ও একচ্ছত্র শক্তি হিসাবে টিকিয়ে রাখতে পারছে না। নিজের অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনৈতিক যজ্ঞের কেন্দ্র  হয়ে উঠছে এশিয়া। প্রতিযোগিতায় এক নম্বরে থাকা দূরে থাক, পাঁচ নম্বরে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরই গোয়েন্দা গবেষণা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রণীত হয়েছে ওবামার নতুন সমরনীতি। এশিয়াই স্থির করবে আগামি পৃথিবীর ভবিষ্যৎ...

 

 


গত বছর অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেণ্টে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময়য় একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ (Pacific nation)। এশিয়ার অভিবাসীরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গড়ে তুলেছে। বলেছেন, “এখানে আমি ভবিষ্যত দেখি, দুনিয়ার এই অঞ্চলটাই অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়ে দ্রুতবেগে বেড়ে উঠেছে, দুনিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অর্ধেকেরও বেশি এখানেই ঘটছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলই আমার সর্বাচ্চ সংকল্প বাস্তবায়নের পথ, আর সেটা হচ্ছে মার্কিন জনগণের জন্য চাকুরি ও সুযোগ সৃষ্টি করা। এখানেই দুনিয়ার অধিকাংশ পারমাণবিক শক্তি এবং এখানেই দুনিয়ার অর্ধকেরও বেশি মানুষ। এশিয়াই ঠিক করবে আগামি শতাব্দি সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত হবে, নাকি সহযোগিতার পথ গ্রহণ করবে, নিরর্থক কষ্টভোগের হবে, নাকি হবে মানব প্রগতির।“ তিনি বলেছেন প্রেসিডেণ্ট হিশাবে তিনি এই সজ্ঞান ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিশাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়াতেই শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা রাখবে।

ওবামা ঠিকই ধরেছন যে দুনিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিশাল যজ্ঞ চলছে এশিয়ায়। পুঁজি ধেয়ে আসছে এদিকে, বিশেষত চিনে। পুঁজির এই ধেয়ে আসা বা স্থানান্তর এমন নয় যে পুঁজি আবার ফিরে যাবে ইউরোপে বা আমেরিকায়। ইউরোপীয় ও মার্কিন অর্থনীতির যে দুর্দশা তাতে একদিকে ইউরোপের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অর্থনৈতিক আধিপত্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে। পৃথিবী এককেন্দ্রিক থাকছে না, সেখানে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে হবে। এইসকল বাস্তবতার আলোকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন ভাবে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়েছে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট দেশগুলোকে ভারতের সামরিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের অধীন রেখে এশিয়ায় –মার্কিন স্বার্থ বজায় রাখা সম্ভব কিনা এই দিকটি নতুন করে  ভাবতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  বাধ্য হচ্ছে। বুঝতে হবে, নিজের তাগিদেই হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছেন, সাম্রাজ্যবাদী মোড়লির জন্য যতোটা তার চেয়ে অনেক বেশি এশিয়ায় মার্কিন মোড়লির দুর্বলতায় তাপ্পি মারার জন্য। আগে যেসব দেশের কোন কৌশলগত মূল্য তাদের কাছে ছিল না, আজ তারাই হঠাৎ মূল্যবান হয়ে উঠেছে।

এই দিক থেকে বিচার করলে রাজনৈতিক-সামরিক ধারণা হিশাবে বাংলাদেশের ‘কৌশলগত’ অবস্থানের মূল্য ও ব্যাপ্তি এখন অনেক বিস্তৃত। বড় পরিসরেই তাকে বুঝতে হবে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন এশিয়ার ‘কৌশলগত’ অবস্থানে রূপান্তর ঘটিয়েছে,  এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বপুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতির মন্দা এবং যেখানে মুনাফা বেশি সেখানে পুঁজির চলে যাবার স্বভাব। পুঁজি এশিয়ার দিকে আসছে, কিন্তু প্রত্যাবর্তনের জন্য নয়, বিনিয়োগের জন্য। তার ওপর রয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তানে কার্যত মার্কিন পরাজয় এবং অর্থনৈতিক কারনে মার্কিন সেনাবাহিনীর ছোট হয়ে যাওয়া।  বেড়েছে স্থল যুদ্ধের চেয়ে সমুদ্র ও আকাশ যুদ্ধে মনোযোগ এবং তার কারণে সমুদ্র ও আকাশও এখন নিরাপত্তা বিবেচনার দিক থেকে আগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশের ‘কৌশলগত’ অবস্থানের গুরুত্ব জানেন। এই গুরুত্ব শুধু ‘ভূকৌশলগত’ (geo-strategic) নয়, ওপরের আলোচনা থেকে এটা আশা করি পরিষ্কার। এমনকি নতুন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের ভূগোলও নতুন তাৎপর্য লাভ করছে। যেমন, ভূ-কৌশলগত দিক থেকে বঙ্গোপসাগর আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এখন। এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে তীব্র হয়েছে। সামুদ্রিক সম্পদ যেমন তেল ও খনিজ পদার্থের ওপর দখলদারি বজায় রাখার দিক তো আছেই। নিরাপত্তার দিক থেকেও সমুদ্র গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগর নিয়ে সে কারনে কথা উঠেছে। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হিলারি ক্লিনটন সরাসরি উত্তর না দিয়ে তার গুরুত্বের কথা এড়িয়ে গিয়েছেন। বরং উত্তরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্সের তারিফ করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশকে কেউ প্রশিক্ষণের জন্য কিম্বা এর ভূখণ্ড বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতে পারে নি। কিন্তু বাংলাদেশ ঠিক কোন অর্থে কৌশলগত তাৎপর্য লাভ করেছে সেটা তিনি আর ব্যাখ্যা করে বলেন নি। তবুও বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক আগের মতো দেখছে না বরং বিশেষ নজরে দেখতে শুরু করেছে সেটা তার কথায় তবুও বোঝা গিয়েছে।

বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভাবে বিবেচনা করছে সেটা হিলারি আসার আগে থেকেই স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি রবার্ট ব্লেইক ঘুরে গেলেন ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে, রাজনৈতিক বিষয় দেখাশুনা করবার দফতরের আণ্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি আর শেরম্যান এলেন এপ্রিলের ৫ তারিখে। তারপর রাজনৈতিক-সামরিক বিষয় দেখাশোনা করার দফতরের এসিস্টান্ট সেক্রেটারি এন্ড্রু জে. শাপিরো হিলারি ক্লিনটন আসার মাত্র কিছুদিন আগেই ১৯ এপ্রিলে ঘুরে গেলেন। যারা এসেছেন এবং মার্কিন যে-দফতরগুলোর পক্ষে এসেছেন তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল হিলারি ক্লিনটনের এই সফরের পেছনে কৌশলগত তাৎপর্যের তাগিদ রয়েছে প্রবল।  অনুমান  করা যায় বাংলাদেশের কৌশলগত তাৎপর্য অর্জনের মানে হচ্ছে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। যে ভূমিকা ভারতের আঞ্চলিক ভূমিকা থেকে আলাদা। এখানে সেই দিকটা নিয়ে কিছু কথা বলে শেষ করব।

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে রাজনৈতিক-সামরিক অর্থে বিস্তৃত পরিসরে ‘নিরাপত্তা’ সম্পর্ক তৈরীর প্রচেষ্টা নতুন। এন্ড্রু শাপিরো যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখনই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক সামরিক দিক থেকে নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সংলাপের আরম্ভ। এই আলোচনাকেই “পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ নামে দ্বিপাক্ষিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এখন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোল মাত্র। শাপিরোর সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রথম যে সংলাপ হয়েছিল তাকে বলা হয়েছিল “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ’। এই আখ্যাই দেওয়া হয়েছিল। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের তথ্য বিভাগ বলছে, এই সংলাপ “দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ব্যাপ্তি, গভীরতা ও শক্তি এবং একই সাথে এ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের  সম্মিলিত সংকল্পের প্রতিফলন”। এর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, “যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে কর্ম পরিসরের বিস্তৃতি এবং এর সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্পর্কের উন্নয়ন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ বিস্তৃত পরিসরে রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বিস্তৃত ও শক্তিশালী করার কাজকে এগিয়ে নেবে এবং শান্তি রক্ষায় অংশীদারিত্ব, যৌথ সামরিক অনুশীলন ও বিনিময়, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে” (দেখুন, মার্কিন দূতাবাস )

বাংলাদেশের কৌশলগত তাৎপর্যের ব্যাপকতা খানিক এখান থেকে বোঝা যায়। তবে মার্কিনি স্বার্থ আরো ভালো ভাবে বোঝার জন্য গত ২৪ এপ্রিল এন্ড্রু শাপি্রো ওয়াশিংটনে কার্নেগি এনডোমেন্ট নামের একটি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে  তার ঢাকা দিল্লি সফর নিয়ে যে আলোচনা করেছেন সেখান থেকে আরও কিছু জানতে পারি আমরা। আগেই বলেছি তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের রাজনৈতিক-সামরিক স্বার্থ দেখাশোনা করেন। শাপিরো এপ্রিলে ঢাকা ও দিল্লি ঘুরে গিয়েছিলেন। তার সফরের উদ্দেশ্য ছিল দিল্লী ও ঢাকার সঙ্গে রাজনৈতিক-সামরিক আলোচনা শুরু করা, যেন দুই দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার দ্বিপাক্ষিক জায়গাগুলো চিহ্নিত করা যায় এবং মার্কিন স্বার্থে দরকারী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। খেয়াল করতে হবে ত্রিপক্ষীয় কোন সহযোগিতার কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিচ্ছে না। দুটি দেশের সঙ্গেই আলাদা আলাদা ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়তে চাইছে।  শাপিরো যখন ঢাকা সফর করছিলেন তখনই বোঝা যাচ্ছিল  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত  প্রশ্নে উচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক-সামরিক সংলাপ চালাতে আগ্রহী। এই সংলাপকে  ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ বলা হচ্ছে এখন।  দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল ক্ষেত্র নিয়ে  দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ। মার্কিন সামরিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রশ্নই এখানে প্রধান ও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।

শাপিরো তার সফরের উদ্দেশ্য ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এই সফরের মধ্যে এই সত্যও বোঝা যাবে যে আমাদের সঙ্গে অংশিদারদের জড়িত করবার জন্য আমরা ভিন্ন ভিন্ন ধরণের  নিরাপত্তা -সম্পর্ক রচনার হাতিয়ার ব্যবহার করেছি”। অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার ধরণ এক নয়, ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক আচার কিভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত হয়ে গিয়েছে তার ওপরও তিনি জোর দিয়েছেন। (দেখুন, কার্নেগি এনডোমেণ্ট) ।

ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০০৫ সালে। এরপর থেকে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিবিড় ও গভির হয়েছে। বছরে দুই দেশের সামরিক মহড়ার সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সমরাস্ত্র ও সামরিক যন্ত্রপাতির বেচাবিক্রি যেখানে শূন্য ছিল, সেটা এখন ৮ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রতিরক্ষা বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হচ্ছে।

দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র বেচাকেনা বেড়েছে। শাপিরো জানিয়েছেন ২০০৯ সালে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানান ধরনের ব্যবহারের উপযোগী সামরিক উড়োজাহাজ কিনেছে। তার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রে নজরদারি করবার জন্য আটটা পি-৮১ নামের সামরিক উড়োজাহাজ, সামরিক কাজে মাল আনানেওয়ার জন্য সি-১৩০-জে নামের ছয়টি বিমান এবং সামরিক প্রয়োজনে স্থানান্তরের উপযোগী  সি-১৭ নামের ১০টি উড়োজাহাজ। সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বেচাবিক্রির এই সম্পর্ক আরও বাড়বে।

 অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্কও শাপিরোর ভাষায় গত এক দশকের মধ্যে এক জবরদস্ত (robust)  রূপ নিয়েছে। নিরাপত্তার  দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে কি চায়? শাপিরোর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় তিনটি জিনিস চাইছে মার্কিনীরা।

এক. বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রথম যে জিনিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় সেটা হচ্ছে কাউন্টারটেররিজম বা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াকু শ্রেণি, শক্তি বা গোষ্ঠিগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লড়াই চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও কঠোর ও শক্তিশালী হোক। লড়াই সে চালিয়ে যাক। এর সঙ্গে গণমাধ্যম ও সুশীল সমজকে যুক্ত করুক। হাসিনা পক্ষ ও কালেদা পক্ষের রাজনীতি যেন এমন কোন সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে যাতে মার্কিন স্বার্থ বিরোধী শক্তি – বিশেষত মার্কিন বিরোধী ইসলাম পন্থী দল বা শক্তি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সুযোগ নিতে পারে। এই ক্ষেত্রে পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা তৎপরতার দক্ষতা ও ক্ষমতা আরও বাড়ুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই চায়।  

দুই.  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বা  দেশে দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় সেনাবাহিনী্ যেন একটি দক্ষ ভাড়াটিয়া সৈন্য হিশাবে গড়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে স্থলবাহিনীকে তার সমরনীতির নির্ধারক অবস্থানে রাখত চাইছে না বা আর্থিক সংকটের কারনে রাখতে পারছে না। শান্তিবাহিনী সেই ক্ষেত্রে কিছুটা অভাব পূরণ করবে, বাংলাদেশকে এখন সেই অভাব পূরণে আরও বেশি অবদান রাখতে হবে।

তিন. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থ নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রধান ভূমিকা পালন করুক; দুই হাজার পাঁচ সালে বাংলাদেশ ‘বিদেশি সেনাবাহিনীকে অর্থায়ন”-এর আওতায় যে সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ তা জলসীমা পাহারা দেবার জন্য জাহাজ বানাতে ব্যয় করেছে। বাংলাদেশের এই শক্তি ও দক্ষতা বাড়াতে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে সমুদ্রের নিরাপত্তা বাড়বে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজে আসবে আর যেসব এলাকায় যাওয়া কঠিন সেইসব এলাকা নজরদারির মধ্যে আনা যাবে।

চার. আরেকটি অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পুরানা সমরাস্ত্র খালাস করছে চাইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসকল সমরাস্ত্র পুরানো বা বাড়তি সেইসব অস্ত্রশস্ত্র ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা উপকরন কর্মসূচি’-র নামে বাংলাদেশে গছিয়ে দিতে চায় তারা। শাপিরো জানাচ্ছেন বাংলাদশের সেনাবাহিনী ‘আধুনিক’ হতে চায়। তারা অস্ত্রশস্ত্রের সরবরহকারীদের তত্ত্বতালাশ করছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসার একটা সুযোগও বটে।

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকার পরেও দুই দেশের সম্পর্ক নিরাপত্তার প্রশ্নে মসৃণ এটা দাবি করা যাবে না। জ্বালানি সম্পর্কের কারনে ভারতের ইরান নীতি যুক্তরাষ্ট্রের ইরান নীতি থেকে আলাদা। সিরিয়ার প্রশ্নেও দিল্লী ও ওয়াশিংটন এক সুরে কথা বলে না। চিনের প্রশ্নে অভিন্নতা থাকলেও  দিল্লীর নিজের কৌশলগত স্বার্থ আছে, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ থেকে আলাদা করে বিচার করাই সঙ্গত। ঠিক এই সকল কারনেই আমি আগের লেখায় বলেছিলাম, “চিনকে সামাল দেওয়ার একটা চিন্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইসরাইল ও ভারতের আছে। শুধু এই দিকে নজর নিবদ্ধ রাখলে মার্কিন পররাষ্ট্র সম্পর্কের নীতিগত ও কৌশলগত কোন পরিবর্তন ঘটছে কিনা সেটা আমরা ধরতে পারব না”।

হিলারি ক্লিনটনের সফরের এই তথাকথিত “পার্টনারশিপ ডায়ালগ” যদি  কোন অর্থ বহন করে তা হচ্ছে বিশ্বব্যবস্থায় নিজের একছত্র আধিপত্য হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছোট দেশগুলোর ওপর তাদের নিরাপত্তার দায় চাপিয়ে দিতে চাইছে। এই উদ্দেশ্যেই নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এর ফল কী দাঁড়ায় তা এখনি বলার সময় হয় নি। এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কৌশলগত অবস্থান ও সম্পর্ক বদলাচ্ছে এটাই এখনকার জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক।

৮ মে ২০১২। ২৫ বৈশাখ ১৪১৯। শ্যামলী।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।