বাঘ, সুন্দরবন আর রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প


 এক

দৈনিক যুগান্তর ও চিন্তার ওয়েবপাতায় ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য’ ( ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩)  প্রকাশের পর সাড়া পেয়েছি বিস্তর। এতে অবাক হয়েছি, কিছুটা। সমাজ যেভাবে বিভক্ত তাতে যে কথা বলতে চেয়েছি তা পাঠকদের কাছে পোঁছানো কঠিন ভেবেছিলাম। কিন্তু মনে হয় তাঁরা বুঝেছেন।

শাপলা/ শাহবাগ বিভাজনের রাজনৈতিক মুহূর্ত বাংলাদেশে ঘটে যাবার ফলে আমাদের প্রথাগত চিন্তার ছক খানিক নড়বড়ে হয়েছে। অনেকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরী হয়েছে, অনেকের সঙ্গে বাধ্য হয়েই দূরত্ব তৈরী করতে হয়েছে। ফেইসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যে সঙ্গ বজায় রাখার চেষ্টা করি, দেখলাম, অনেকে ইলেট্রনিক রিশতা ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন। এতে আমি নির্বান্ধব হইনি। কারন সমাজে সচেতন ও সজ্ঞান মানুষের অভাব নাই। তাঁদের কাছে পৌঁছানৌই রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

চিন্তার শক্তি অনেকের থাকে না। অনেকের থাকলেও নানা কারনে খুইয়ে ফেলে। আর অন্ধ ভাবে যখন কেউ কোন একটা পক্ষের নির্বিচার পক্ষপাতী হয়ে দাঁড়ায় তখন তাদের মস্তিষ্কের পাথর ভাঙা রীতিমতো অসম্ভব কাজ হয়ে ওঠে। প্রথাগত চিন্তার ছক নিয়ে যারা বড় হয় তারা তাদের ছকের বাইরে ভাবতে পারে না। সেটা বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদী, ইসলামপন্থী, কিম্বা বামপন্থী যাই হোক – প্রত্যকেরই নিজ নিজ নকশাকাটা ঘর রয়েছে। ছকের বাইরে যাওয়া প্রত্যেকের জন্যই কঠিন। এই মুশকিল সব সমাজেই থাকে। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম নয়। এতে নিরাশ হওয়ার কিছু নাই।

বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে নতুন করে ভাবা, চিন্তা করা ও পর্যালোচনা খুবই দরকার, একথাই আমি বারবারই বলে আসছি। শাপলা বনাম শাহবাগের বিভাজন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সমাজকে সাদা কালো বিভাজনে ভাগ করে রাজনৈতিক কর্তব্য নির্ধারণ করা যাবে না। অর্থাৎ শাহবাগের পক্ষে দাঁড়িয়ে শাপলার বিরোধিতা , কিম্বা শাপলার পক্ষে দাঁড়িয়ে শাহবাগ বিরোধিতা দিয়ে রাজনীতির যে সরল সমীকরণ আমরা দেখছি তা আমাদের আরও গহ্বরে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের ইতিহাস ও সমাজের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব এই বিভাজনে রূপ নিয়েছে কেন সেটা আমাদের ঐতিহাসিক ভাবেই বুঝতে হবে। সমাজকে সামগ্রিকভাবে তার বিভাজনসহ বোঝাই এখন সবচেয়ে বেশী দরকার। সেই জন্যই আত্ম-পরিচয়ের রাজনীতি - সেটা ‘বাঙালি’ হোক, কিম্বা হোক ‘মুসলমান’ তাকে ঐতিহাসিক ভাবে পর্যালোচনার আমি পক্ষপাতী। এগুলো কোন স্থির, প্রাকৃতিক বা চিরায়ত সংজ্ঞা নয়। গত লেখায় সেই দিক নিয়েই কিছু আলোচনা করেছি।

এই বিভাজন জনগণের বিভক্তিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিভক্তির মীমাংসা এক পক্ষের পরাজয় আর অপর পক্ষের বিজয় নয়। এখনকার কাজ রাষ্ট্রকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। তাহলে রাজনৈতিক বিভাজন হতে হবে অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শ্রেণী ও শক্তির বিরুদ্ধে সমাজের নিপীড়িত শ্রেণী ও শক্তিগুলোর গণতান্ত্রিক মৈত্রী ও ঐক্য। সেই ঐক্য যেন ভাষা ও সংস্কৃতির দোহাই, কিম্বা ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ ভাঙতে না পারে সেইদিকে নজর আকর্ষণের আমি চেষ্টা করি। বলাবাহুল্য, এই ঐক্য গড়ে তোলার মতাদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাওয়াই এখনকার গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম এবং ওর মধ্যে প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তার চর্চাসহ নাগরিক ও মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানই বর্তমান দ্বন্দ্ব মীমাংসার প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি । প্রাথমিক একারণে যে গণতন্ত্রের যে ইউরোপীয় ধারণা ও চরিত্র তার পর্যালোচনার দরকার আছে। গণতন্ত্রের ধারণায় সমষ্টির বিপরীতে ব্যক্তির অধিকারের আধিক্যের কারণে সমষ্টির স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবার বিপদ নিহিত রয়েছে। তাছাড়া একালে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের মধ্যে প্রাণ, পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রাণের শর্ত রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। রাষ্ট্রকে এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করবার ক্ষমতা দেওয়া যায় না। তার মানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ইউরোপ থেকে ধার করা কিছু হবে না, তার একটা বাংলাদেশী ছাপ থাকবে। অবশ্যই। 

দুই

‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য’ লেখাটির সূত্র ধরে আমার এক বন্ধু আমাকে লিখেছেন, গণতান্ত্রিক বিপ্লব সাময়িক বন্ধ রেখে এখন কি রামপাল সামলানো যায়? কারণ এতে ব্যাপক প্রাণবৈচিত্র নষ্ট হবে। আর, সাথে গার্মেন্টস মজুরি। আমার তৎক্ষণাৎ উত্তর ছিল, সাময়িক বন্ধ রাখার প্রস্তাবটা বিপ্লব স্থগিত রাখা কিম্বা বিপ্লব ঠেকাবার প্রস্তাব বলে মনে হতে পারে। আমি অবশ্য ঠেকানো বা স্থগিত রাখা দূরের কথা, দু্টোই বরং সমান তালে চালাতে চাই। ঠেকানো যাদের রাজনীতি তারা বিপ্লব স্থগিত রাখতে পারেন। কী আর করা!

তাঁর কথার পেছনে একটা শ্লেষ থাকতে পারে, কিন্তু যে প্রশ্ন তিনি তুলেছেন তাকে উপেক্ষা করার জো নাই। সেটা হচ্ছে অর্থনীতিবাদী বা পরিবেশবাদী আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের পার্থক্য। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী আদায় ও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের সংগ্রাম এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। এই ধরণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণকে রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করবার সুযোগ তৈরী হয়। এই দিকগুলো নিয়ে লেখালিখির প্রয়োজনীয়তা তিনি বোধ করেছেন। তাঁর আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে যে তাগিদ অনুভব করেছি আজকের লেখা তারই ফল বলা যায়। শুরুতে আমি আরও যেসব কথা তৎক্ষণাৎ বলেছি সেটা কমবেশী হুবহু তুলে ধরব। এরপর দুই একটি বিষয় ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করব।

পেটিবুর্জোয়া বা সাধারণ ভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি যখন পরিবেশ ও প্রকৃতির কথা বলে তখন সে নদি, জমি, পাহাড়, সুন্দরবন, বাঘ, ভাল্লুক, পাখি ইত্যাদি নিয়ে খুব কাতর হয়ে যায়। ব্যাপারগুলো খুবই রোমান্টিক ও রাবিন্দ্রীক ব্যাপার ধারণ করে। তারা 'প্রাণবৈচিত্র' বলে না, বলে 'জীববৈচিত্র' -- অথচ প্রাণবৈচিত্র মানে শুধু জীবজন্তুর বৈচিত্র না -- বরং বিভিন্ন জনগোষ্ঠির, সংস্কৃতি, জীবন ব্যবস্থা, খাদ্য ব্যবস্থা, প্রকৃতির সঙ্গে তাদের দৈনন্দিনের সম্পর্ক ইত্যাদি। খেয়াল করা দরকার এই শ্রেণির কাছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে গিয়েছে বাঘ – রয়েল বেঙ্গল টাইগার। গরান বনের (mangrove Forest) প্রাণ বৈচিত্র রক্ষা খুবই জটিল ব্যাপার। দুই এক প্রজাতির পশু বা পাখি রক্ষা করা না। ধরিত্রী সম্মেলনে (Earth Summit ১৯৯২) বায়োডাইর্ভাসিটি সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে ইন্ডিজেনাস এন্ড লোকাল কমিউনিটির কথাও বারবার জোর দিয়ে বলতে হয়েছে। মানুষের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে ‘জীববৈচিত্র’ পাতি বুর্জোয়া ও কর্পোরেট ধারণা। ‘জীববৈচিত্র’ আর ‘প্রাণবৈচিত্র’  ইংরাজি বায়োডাইভার্সিটিত শব্দটি অনুবাদের সমস্যা নয় – পরিবেশ আন্দোলনের রাজনৈতিক মর্ম বুঝবার অভাব। যে কারণে বাঘ রক্ষার আন্দোলন যতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেই তুলনায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি কৃষকের বীজ রক্ষার আন্দোলনকে অতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। বীজ ও খাদ্য ব্যবস্থা চোখের সামনে দুই এক দশকের মধ্যেই বহুজাতিক বীজ কোম্পানির অধীনে চলে যাওয়ার পরেও তার হুঁশ নাই। রাজনীতিতে চিন্তার এই অভাব বা খামতিগুলো বোঝার দরকার আছে।

তবু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আমি নিঃশর্ত সমর্থন করি,কারণ এটা খালি বাঘ বাঁচাবার সংগ্রাম না, এটা দিল্লি-ঢাকা অশুভ আঞ্চলিক আগ্রাসী আঁতাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। শেখ হাসিনা যখন ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে গিয়েছিলেন তখন দিল্লির সঙ্গে যে যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন রামপাল প্রকল্প তারই অন্তর্গত। এটা নিছকই বিদ্যুত উৎপাদন বা উন্নয়ন প্রকল্প নয়, দিল্লির আগ্রাসী রাজনৈতিক প্রকল্পেরই অংশ। যারা এখন রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে  আন্দোলন করছেন তাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা ক্ষমতাসীন সরকারের নীতির সমর্থক কিম্বা  ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বলয়ের অন্তর্গত, বাইরের কেউ নয় । তাই না? ফলে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট অস্বচ্ছ রাজনৈতিক অবস্থান এই আন্দোলনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মর্ম বিকাশের ক্ষেত্রে বড় একটা প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে। দিল্লির প্রশ্নে তাদের কণ্ঠ নীচু খাদে নেমে গিয়ে প্রায় নিঃশব্দ হয়ে যায়। আর প্রায় সকলেই ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী যে রাজনীতি তারও বিরোধী। এটাই বাস্তবতা। ঠিক কিনা? রাজনীতির কথা বললে শ্রেণির প্রশ্ন ছাড়াও এই সব বিবেচনাও মাথায় রাখতে হয়। জাতীয় সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে এতো বছর ধরে গড়ে তোলা আন্দোলনের পেছনে এ কারণেই পুরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় নি। কারণ শেষ তক পেটি বুর্জোয়া একে একটি বিশেষ ধারার রাজনীতি বহন করবার কাজেই খাটাচ্ছে – গণমানুষের সামষ্টিক স্বার্থ এতে গৌণ হয়ে যাবার বিপদ থেকে যায়।

মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন আমি অবশ্যই সমর্থন করি। একই ভাবে নিঃশর্তে। কিন্তু যেহেতু আমি অর্থনীতিবাদী না, রাজনৈতিক ভাবে ভাবতে চাই, তাই মজুরি বৃদ্ধির অর্থনৈতিক দাবির পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠন করবার অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক প্রশ্নটাকেই আমি প্রধান গণ্য করি। শ্রমিক তার শ্রমশক্তি বেচাবিক্রির জন্য বাজার ব্যবস্থায় দর কষাকষি করবে – এই ন্যূনতম বুর্জোয়া অধিকার আদায়ের কথা না বলে, শ্রমিক আন্দোলনকে শুধু অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার মধ্যে সংকীর্ণ রাখা মূলত গণতন্ত্র বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান। আমি তা নাকচ করি।

বন্ধুর সঙ্গে এইভাবেই তাৎক্ষনীক কথাগুলো শেষ হয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার থাকলেও দুই একটি বিষয় নিয়ে আপাতত কথা বলতে চাই। এখন তাহলে সেই কথাগুলোই পেশ করার চেষ্টা করি।

প্রথমে বলে রাখি, যে কোন আন্দোলনেরই শ্রেণীচরিত্র থাকে, এতে ন্যায্য আন্দোলন অন্যায্য হয়ে যায় না। একে গণমানুষের সংগ্রামে রূপান্তরিত করবার দরকারেই এর পর্যালোচনার দরকার। তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আন্দোলন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাংশের আন্দোলন, যারা নিজেদের প্রগতিশীল ও ধর্ম নিরপেক্ষ মনে করেন।মোটা দাগে তারা আওয়ামি-সিপিবি ধারার রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার অধীন।এই আন্দোলনের ওপর এই ধারার বিভিন্ন দলের দলীয় নিয়ন্ত্রণও রয়েছে। এরা আওয়ামি-বাম ধারার মধ্যেই আন্দোলনকে বেঁধে রাখতে চায়।দলমত নির্বিশেষে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে জনগণকে একত্রিত করার চেয়ে জাতীয় ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ব্যররথতা এই আন্দোলনের কৃতিত্ব দিয়ে তারা পূরণ করতে চায়। এখানেই এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা।

এই আন্দোলনে সক্রিয় দলও রয়েছে যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের রাজনৈতিক চিন্তা ধারণ করে । নেতৃস্থানীয় অনেকে আছেন যাদের ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ অজানা নয়। তেল গ্যাস বন্দর রক্ষার সংগঠকরা নিজেদের জাতীয় কমিটি বললেও তাঁদের জাতীয় চরিত্র নাই। অথচ তাঁরা যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছেন সেই আন্দোলনে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও শক্তির সমর্থন আছে।বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের দিক থেকে তাকালে থাকাই উচিত। কিন্তু এই আন্দোলনকে সংকীর্ণ দলীয় বা গোষ্ঠি স্বার্থে ব্যবহার করবার চেষ্টার কারণে আন্দোলন জাতীয় রূপ পরিগ্রহণ করতে পারছে না।  আন্দোলন সাধারণত তরুণদের আকৃষ্ট করে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা তাদের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের সুযোগ পায়। কিন্তু দলীয় সংকীর্ণতা এবং আওয়ামি-সিপিবি ধারার সীমার মধ্যে খাবি খেয়ে তা নষ্টও হয়ে যায়।

অস্বীকার করারা উপায় নাই যে বাংলদেশে জ্বালানি সম্পদ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকুক এবং তার সুবিধা বাংলাদেশ ভোগ করুক এই ধরণের জাতীয় চেতনা জ্বালানি সম্পদ রক্ষার আন্দোলন সমর্থন করবার পেছনে কাজ করে। মধ্যবিত্ত তরুণরা মনে করে এর মধ্য দিয়ে তারা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করছে। কারণ যে ইস্যু নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করছেন তা ‘জাতীয়’। এর সঙ্গে গরিব মেহনতি শ্রেণির সম্পর্ক সরল নয়। জাতীয় স্বার্থ মানেই গরিব মেহনতি শ্রেণির স্বার্থ ভাববার কোন কারণ নাই। তবুও বিভিন্ন সময়ে গরিব মেহনতি মানুষ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। ফুলবাড়িয়ায় এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ আমরা দেখেছি। জনগণের দিক থেকে সেটা ছিল তাদের জমি জিরাত জীবিকা রক্ষার আন্দোলন। বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদ রক্ষা আর নিজের জমি জরাত জীবিকা রক্ষার আন্দোলন সমার্থক নয়।  জাতীয় স্বার্থ ও শ্রেণি স্বার্থের তফাত মনে রাখা জরুরী। কিন্তু সে প্রশ্নে এখানে যাবো না।

যারা রাজনৈতিক ভাবে সচেতন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার তাগিদ বোধ করেন কিন্তু দলীয় রাজনীতির দ্বারা ব্যবহৃত হতে চান না তাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হয় নি, সেখানে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার স্বপ্ন দেখা আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার অন্তর্গত এই ধরণের দুর্বল, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী রাষ্ট্রে পুঁজির বিচলন ও বিনিয়োগের ওপর নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েমের কোন ব্যবস্থা নাই। বিদ্যমান গণবিরোধী রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র ক্ষমতার বিরুদ্ধের কোন কথা না তুলে বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনের অর্থ হচ্ছে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া।  যে কারণে সবার আগে গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের কর্তব্যের কথা আমি বার বার বলি।ঘোড়ার ডিম কল্পনা করা যায়, কিন্তু সেটা যে বাস্তব নয়, সেই হুঁশ আমাদের আসুক, সে প্রত্যশা করি। কেতাবি কথা বলে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটানো যায় না। আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই। যে কারণে জ্বালানি সম্পদ রক্ষার আন্দোলনকে রাজনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছ গণ্য করলেও তাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে আমি কুন্ঠা বোধ করি না। কারণ সহজ বা শর্টকাট কোন পথ নাই। এভাবেই আমরা সচেতন হয়ে উঠব।

এই দিক থেকে জাতীয় স্বার্থ কথাটাও অস্বচ্ছ ও বিভ্রান্তিমূলক। বিদ্যমান রাষ্ট্রের অধীনে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের সুবিধা ধনি ও উচ্চবিত্ত শ্রেণিই ভোগ করবে। বহুজাতিক কোম্পানির লুন্ঠন বন্ধ হলেও, আন্তর্জাতিক পুঁজিতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থা বন্ধ হবে না। আর পুঁজিতন্ত্র লুন্ঠন সর্বস্ব ঔপনিবেশিক ব্যবাস্থা নয়। বর্তমানে বহাল আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় জাতীয় সম্পদ রক্ষার সুবিধা গরিব মজলুম মেহনতি মানুষ পাবে না, সেটা নিশ্চিত। অর্থাৎ তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আন্দোলন ধনি আর উচ্চবিত্তের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনই করছে। অন্যদিকে তারা জনগণকে জাতীয় সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ করবার চেষ্টা না চালিয়ে সমাজের বিদ্যমান মতাদর্শিক বিভাজনের একটি পক্ষ হয়েই আন্দোলন করছে।

তবু বলব, আমি আন্দোলনের পর্যালোচনা করতে চাই, কিন্তু সমালোচনা বা বিরোধিতা নয়।  সীমাবদ্ধতার মধ্যে দোষ খোঁজাই কাজ হতে পারে না, এটাই বাস্তব। সমাজের বিভাজন আন্দোলনের মধ্যে ছাপ ফেলছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদ কার জন্য রক্ষা করছি আন্দোলনের শক্তির দিক সেই প্রশ্নে নিহিত নয়। বরং ক্ষমতাসীন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রশক্তির বাইরে জনগণের ক্ষমতা নির্মাণের দিক – অর্থাৎ আন্দোলনের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গণশক্তি গঠনের যে সীমিত চেষ্টা এই আন্দোলনে লক্ষ্য করা যায় তার গুরুত্ব অনেক। আন্দোলনের এই রাজনৈতিক মর্মই গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে আওয়ামি-সিপিবি ধারার রাজনীতির বিরোধী হলেও আমাদের উচিত এই আন্দোলনকে সমর্থন করা। আওয়ামি-সিপিবি মার্কা যে রাজনৈতিক ধারা এই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করছে আন্দোলনের কর্মীদের উচিত সেই শৃংখল থেকে বেরিয়ে আসা এবং জনগণকে আরো বিপুল ভাবে সম্পৃক্ত করবার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যে কারণে বিএনপি ও তাদের সমর্থক রাজনৈতিক ধারাকে এই আন্দোলনের বাইরে রাখা হয়েছে, ঠিক একই কারণে আওয়ামি-সিপিবি ধারাকে আন্দোলনের স্বার্থে বাইরে রাখা দরকার। মূল ইস্যু হচ্ছে বিদ্যমান গণবিরোধী ক্ষমতার বিপরীতে জনগণের পালটা ক্ষমতা তৈরী। আর জনগণ অর্থ শুধু সুনির্দিষ্ট একটি শ্রেণি নয়, কিম্বা সুনির্দিষ্ট মতাদর্শের ধারক নয়। জনগণ নানান শ্রেণি্তে বিভক্ত এবং তাদের মধ্যে নানান মতাদর্শ বিরাজ করাটাই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক বিপ্লবে মতাদর্শিক বিভাজনের মানদণ্ড  বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কারা লড়ছে, আর কারা একে টিকিয়ে রাখতে চাইছে সেই পার্থক্য চিহ্নিত করা। এই আলোকে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপরীতে বিভিন্ন শ্রেণি ও মতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গণশক্তি বিকশিত করবার পথ। যেন জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন একই সঙ্গে বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের অভিমুখ ধারণা করতে পারে।

ন্যায্য আন্দোলনকেও সফল করতে হলে তার পেছনে জনগণের বিভিন্ন অংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।আন্দোলন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বলয় অতিক্রম করে যেতে সক্ষম হলে আন্দোলনের মধ্য থেকে নতুন গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা তৈরী হয়। নইলে মধ্যবিত্তের গণ্ডির মধ্যেই সেটা খাবি খেতে থাকে। চেষ্টা করতে হবে যেন সাধারণ মানুষ আন্দোলনে আগ্রহী হয় ও অংশ গ্রহণ করতে পারে। কিভাবে তা করা যায় তার সূত্রগুলো অন্বেষণ করবার জন্য ন্যায্য দাবি ও আন্দোলনেরও আত্ম-পর্যালোচনা জরুরী।

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সুন্দরবন রক্ষাসহ জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবিতে ঢাকা থেকে সুন্দরবন অভিমুখে লংমার্চ কেন তা ব্যাখ্যা করে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, রামপাল কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে এবং এই প্রকল্প ‘জাতীয় স্বার্থ বিরোধী’। যদিও গত কয়েক যুগের উন্নয়ন নীতি – বিশেষত চিংড়ি রপ্তানির কারণে সুন্দরবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর বর্ধিত অংশ চকোরিয়ার অনেক আগেই বিলীন হয়েছে। এখন বাঘ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক তোড়জোড় প্রবল।

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এই প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করবার দাবি করছেন।কিন্তু বর্তমান উন্নয়ন নীতি না বদলালে এই ধরণের প্রকল্প না থাকলেও সুন্দরবন ধ্বংস হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান কি করে করা যায় তার প্রস্তাবও জাতীয় কমিটি করেছেন।পুস্তিকার মূল শ্লোগান হচ্ছে ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নাই’। জাতীয় কমিটি যে যুক্তি দিয়েছেন তার বিপরীতে সরকার পক্ষও তাদের যুক্তি দিচ্ছে। সরকার পক্ষের যুক্তির কোন বৈজ্ঞানিক দিশা বা ভিত্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও জাতীয় কমিটি যে তথ্য ও বিশ্লেষণ হাজির করেছে তার সঙ্গে আমি একমত। বাংলাদেশের জনগণের জ্বালানি চাহিদা মেটাবার দিক থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তোলেন অনেকে। জাতীয় কমিটি সেই বিবেচনায় বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছেন।

রামপাল প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনের নতুন বৈশিষ্ট হচ্ছে এই প্রথম জাতীয় কমিটি তাদের আন্দোলনকে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন বলছেন। এতোদিন তাঁরা জীবাশ্ম জ্বালানি রক্ষার আন্দোলন করছিলেন। সেই দিক থেকে তাঁরা শিল্পসভ্যতার পক্ষের আন্দোলনই করছিলেন। সেটা ছিল আসলে পরিবেশ বিরোধী আন্দোলন, শিল্প সভ্যতার আদর্শ পরিবেশ রক্ষা করতে সক্ষম সমাজের আদর্শ হতে পারে না। পরিবেশ আন্দোলনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মর্ম জীবাশ্মভিত্তিক সংস্কৃতি, সভ্যতা ও জীবনযাপনের বিরোধিতা করা এবং দেখানো যে প্রকৃতির ক্ষতি সাধন না করে জীবন যাপন সম্ভব। জাতীয় কমিটির দলিলে জীবাশ্মভিত্তিক সংস্কৃতি, সভ্যতা ও জীবনযাপনের কোন বিরোধিতা আগেও দেখি নি, এখনও দেখলাম না। তাঁরা শিল্পসভ্যতার আদর্শকে প্রশ্ন করেন নি, বিদ্যুৎ তারাও চাইছেন। ফারাক হচ্ছে প্রকল্পটি সুন্দরবনে নয়, অন্যত্র করলেও করা যেতে পারে।

জাতীয় কমিটির দাবিনামার মধ্যে রয়েছে গ্যাস ও কয়লা সম্পদে ‘জাতীয় মালিকানা’ নিশ্চিত করা। পুরানা ও প্রাচীন আওয়ামি-সিপিবি মার্কা পেটিবুর্জোয়া সমাজতান্ত্রিক ধারণার প্রতিধ্বনি রয়েছে এই দাবিতে। সেই দিক বাদ দিলেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ক্ষমতার বিকাশ ও কায়েম ছাড়া কিভাবে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে ‘জাতীয় মালিকানা’ সম্ভব সেটা খুবই অস্পষ্ট ও অপরিচ্ছন্ন। ‘জাতীয় সম্পদের উপর জাতীয় কর্তৃত্ব” কায়েমও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম ছাড়া অসম্ভব ও অবাস্তব আকাশকুসুম কল্পনা। বিদ্যুৎকে ‘গণ-পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করবার চিন্তাও হাস্যকর। ‘পণ্য’ মানেই যা পুঁজিতান্ত্রিক বাজারব্যবস্থার মধ্যে উৎপাদিত ও বাজার ব্যবস্থার মধ্যেই বিতরিত হয়। ‘গণপণ্য’ একটি সোনার পাথরবাটির মতো ধারণা। যদি এতে বোঝানো হয় যে গণ মানুষের মৌলিক জীবনের চাহিদা রাষ্ট্রকে মেটাতে হবে তাহলেও এমন একটা রাষ্ট্র কায়েম থাকা দরকার যে রাষ্ট্রের পক্ষে বাজার ব্যবস্থার বাইরে সামাজিক চাহিদা মেটাবার ক্ষমতা থাকে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে এই অনুমান যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমস্যা হচ্ছে তার ফ্যাসিবাদী রূপান্তর নয়, বরং অন্যান্য রাষ্ট্র ও বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে ‘অস্বচ্ছ চুক্তি’ বা ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন চুক্তি বা গোপন সমঝোতা’। জাতীয় কমিটি দাবি করছে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর না ঘটিয়ে এই সকল অস্বচ্ছ জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল করলে এবং তার সাথে তাদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই নাকি “গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট অচিরেই কাটবে, খনিজ সম্পদের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে, আমাদের জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের পথও প্রশস্ত হবে। সকল নাগরিকের জন্য এবং সকল খাতে অনেক কম দামে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাওয়াও তখন সম্ভব হবে। উন্নয়ন হবে প্রকৃতই টেকসই ও জনগণের জন্য”। বলাবাহুল্য পুঁজিতন্ত্র নিছকই ‘অস্বচ্ছ চুক্তি কিম্বা গোপন সমঝোতা’ নয়। পুঁজি, পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র  সম্পর্কে পেটিবুর্জোয়া চিন্তার এইসব নমুনা সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তার স্তর, সীমা ও মাত্রা সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা দিতে পারে। কিন্তু এতে হতাশ ও নিরাশ না হয়ে এই আন্দোলনকে সমর্থন করা দরকার। কারণ এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনকে নিঃশর্ত সমর্থন কিন্তু একই সঙ্গে আন্দোলনের মতাদর্শের পর্যালোচনাই জনগণকে রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করবার পথ।

বাঘ আর সুন্দরবন রক্ষার রোমান্টিক আকুতির মধ্য দিয়ে আন্দোলন এগিয়ে যাক। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই পরিবেশ আন্দোলনের তাৎপর্য ও রাজনীতি স্পষ্ট হবে। এই আশা করি।

যিনি বা যারা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রশ্ন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের রাজনীতি আপাতত স্থগিত রেখে বাঘ আর সুন্দরবন রক্ষার কথা বলছেন তাঁদের কাছে, আশা করি, আমার অবস্থান পরিচ্ছন্ন করতে পেরেছি।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১৩ আশ্বিন ১৪২০।

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।