ক্ল্যাপারের প্রতিবেদন ও হোলি আর্টিসান
মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপার এ বছর ফেব্রুয়ারির নয় তারিখে ইউএস আর্মড সার্ভিসেস কমিটি ও সিনেট সিলেক্ট কমিটির কাছে একটি লিখিত প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন। এ ধরনের প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘Statement for the Record’। অনেকটা ভবিষ্যতে রেফারেন্সের জন্য নথি করে রাখার মতো ব্যাপার। হোলি আর্টিসানের রক্তপাতের পরে এখন তা রেফারেন্স হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর লিখিত মন্তব্য ছিল ছোট এবং খুবই সংক্ষিপ্ত। পুরাটাই এখানে তুলে দিচ্ছি:
“Prime Minister Sheikh Hasina’s continuing efforts to undermine the political opposition in Bangladesh will probably provide openings for transnational terrorist groups to expand their presence in the country. Hasina and other government officials have insisted publicly that the killings of foreigners are the work of the Bangladesh Nationalist Party and the Bangladesh Jamaat-e Islami political parties and are intended to discredit the government. However, ISIL claimed responsibility for 11 high-profile attacks on foreigners and religious minorities. Other extremists in Bangladesh—including Ansarullah Bangla Team and Al-Qa’ida in the Indian Subcontinent (AQIS)—have claimed responsibility for killing at least 11 progressive writers and bloggers in Bangladesh since 2013”. (দেখুন, Statement for the Record Worldwide Threat Assessment of the U.S. Intelligence Community) ।
জেমস ক্ল্যাপারের মূল কথা হচ্ছে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যেভাবে ক্রমাগত দমনপীড়ন করছেন সম্ভবত সেটাই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর উপস্থিতি বাংলাদেশে সম্প্রসারিত করবে। শেখ হাসিনা এবং তার সরকারী কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে জোর দিয়ে বলছে বাংলাদেশে বিদেশীদের হত্যা করার যেসকল ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে সেটা ক্ষমতাসীন সরকারকে বিব্রত করবার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামীর কাণ্ড। আইএসআইএল এই সকল হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করছে অথচ শেখ হাসিনা এবং তার কর্মকর্তারা দোষ চাপাচ্ছেন বিরোধী দলের ওপর। সারমর্মে বলা হোল, একদিকে দমন পীড়ন অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষারোপ -- এই দুটি কারণই বাংলাদেশে আইসিসের মতো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির উপস্থিতি ও বিস্তৃতির কারন ঘটাবে।
হোলি আর্টিসানের রক্তক্ষয়ী ঘটনা প্রমাণ করছে বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দাদের মূল্যায়ন কমবেশী সঠিক। কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। সেটা হোল মার্কিন গোয়েন্দাদের সঠিক পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএস-এর হোলি আর্টিসানে সরব উপস্থিতি জানান দেবার ঘটনা রোধ করবার ক্ষেত্রে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিল না কিম্বা নিতে পারলনা কেন? তারা আদৌ রোধ করতে পারত কিনা তার আলাদা মূল্যায়ন হতে পারে। কারন সেটা সব সময় ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। তবে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের ক্ষয়, ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘন এবং বিরোধী দলের ওপর দমন পীড়ন বন্ধ করবার ক্ষেত্রে দুই একটি মৌখিক কূটনৈতিক উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া সন্ত্রাস ও সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশে দৃশ্যমান মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতা নাই বললেই চলে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পাবার যে আশংকা মার্কিন গোয়েন্দারা করেছে তার রাজনৈতিক কারণ রয়েই গিয়েছে। বৈধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতাসীনরা বহাল তবিয়তেই আছে এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন শেখ হাসিনা অব্যাহত রেখেছেন। পরিণতি হলি আর্টিসানের রক্তপাত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার কারণ কি?
এর উত্তর আমরা উন্নাসিক ভাবে দিতে পারি। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটাই তো করে, একনায়কী ও ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গেই তো তাদের সখ্যতা। কিন্তু ব্যাপারটা এতো সরল নয়। অতএব উন্নাসিক না হয়ে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এশিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিনকে মোকাবিলা করা , সমুদ্রে সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা, বাণিজ্যের সুবিধা গ্রহণ করা, সর্বোপরী চিন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অগ্রগামী থাকা ইত্যাদি। সেই ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশেষ ভূ-কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণকে আইসিস, জেএম বি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জাতীয় রাজনৈতিক আদর্শ ও সামরিক তৎপরতার দিকে ঠেলে দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার বিচার উন্নাসিক কায়দায় দিলে চলছে না।
ব্যর্থতার প্রধান কারণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে আমেরিকার বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িত হবার কারণে অর্থনৈতিক সংকট, ইত্যাদি। সাধারণ ভাবে বলা যায় নিজের টাঁকশালে ডলার ছাপিয়ে বিশ্ব মূদ্রা ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ কৌশল এখন আর প্রশ্নাতীত নয়। তদুপরি ওয়াল স্ট্রিট ও সমরাস্ত্র শিল্পের আঁতাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টার ক্ষেত্রেও ফাটল দেখা যাচ্ছে। চিন ও ভারতের উত্থান বুঝিয়ে দিচ্ছে আমেরিকা যথেষ্ট ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমেরিকা ভারতকে তোলা তোলা করে তোয়াজ করে চলবে তাতে অবাক হবার কিছু নাই। তোয়াজ করে চলার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে চিনকে ঠেকানো। সে কারনে বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লীর নীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে ওয়াশিংটন স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত অথবা অক্ষম। ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দিল্লীর নীতির বাইরে আর কোন ভূমিকা রাখতে আমরা ওয়াশিংটনকে হলি আর্টিসানের ঘটনা ঘটা পর্যন্ত দেখি নি। কিম্বা দেখা যায় নি। ভবিষ্যতে কি ঘটবে আমরা জানি না।
দিল্লী শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের নীতি আর দিল্লীর নীতি অভিন্ন। সেটা হোল শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকুক এবং তা দীর্ঘায়িত করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করুক। এই অবস্থায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি বদলাতে চাইলে বাংলাদেশের প্রতি দিল্লীর নীতি বদলানোর কাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হবে আগে। মূল অক্ষমতাটা এখানে। এই সত্য এখন আগের চেয়ে স্পষ্ট যে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সাউথ ব্লকের আমলারা বাংলাদেশের প্রতি দিল্লীর নীতি নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এর বাইরে – অর্থাৎ সাউথ ব্লকের রিসার্চ এন্ড এনালিসিস উইং-এর নির্দেশিত পথ ভিন্ন মোদির দিল্লী কোন নতুন পথরেখার উদ্ভব ঘটাতে পারে নি। ‘সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন’ –নরেন্দ্র মোদীর বুলি নিছকই কথার কথা মাত্র, অকেজো। শেখ হাসিনাকে নির্বিচারে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার বাইরে ভিন্ন বিশ্ব পরিস্থিতিতে দিল্লী তার নিজের স্বার্থ নিয়ে নতুন করে ভাবতে অপারগতাই দেখিয়েছে। যার অর্থ প্রকারান্তরে বাংলাদেশে আইএস-এর উপস্থিতি নিশ্চিত করবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি টিকিয়ে রাখা, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মনোভাব ও রাজনীতির শর্ত তৈরি করে যাওয়া। ভারতের জন্য সেটা তেমন সুখের না হলেও শেষ পর্যন্ত ভারত তাই করে চলেছে। এটা জানবার বুঝবার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল্লীর ভূমিকা বদলানোর আদৌ কোন প্রচেষ্টা নিয়েছে তার কোন প্রমাণ দেখা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মঞ্চে পেছনের বেঞ্চে তার গোয়েন্দা ও বিশ্লেষণের দলিল দস্তাবেজ নিয়ে বসে থেকেছে কেবল।
দিল্লীর নীতিকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত না করার পেছনে দ্বিতীয় আরেকটি কারণ থাকতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভূকৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে বেশ ছাড় বাংলাদেশ থেকে এই অবস্থাতেও পাচ্ছে। জ্বালানি উত্তোলনের জন্য ব্লক পাওয়া, ব্লু ওয়াটারের ওপর আধিপত্য কায়েমের প্রক্রিয়া হিসাবে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, মনসান্তো-সিঞ্জেন্টার স্বার্থে বাংলাদেশের কৃষিতে বিকৃত বীজ বা জিএমও প্রবর্তন, ইত্যাদি। এ সকল কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার সুবিধার দিকটাকেও বিবেচনার মধ্যে রেখে থাকতে পারে।
দুই
বলাবাহুল্য জেমস ক্ল্যাপারের প্রতিবেদন ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ভালভাবে নেয় নি। তার প্রমান সাউথ এশিয়া এনালিসিস গ্রুপে প্রকাশিত ভাস্কর রায়ের লেখা থেকেই স্পষ্ট। এই ওয়েব সাইটটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওয়েবসাইট হিসাবে পরিচিত।
ক্ল্যাপারের প্রতিবেদন ছাপা হবার এক সপ্তাহের মধ্যেই ১৬ জুলাই তারিখে ভাস্কর রায় লিখলেন, বাংলাদেশ সংক্রান্ত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ‘প্রশ্নাত্মক’, কোশ্চেনেবল। কেন? তাঁর উদ্ধৃতি:
During this period when the BNP-JEI alliance ran the country, Indian insurgent groups like the ULFA, NSCN(I/M) and others were given sanctuary in Bangladesh and actively assisted in procuring arms, ammunition and communication equipment which were smuggled into India’s North-East for waging war against the state. Bangladeshi intelligence organizations like the DGFI and NSI were assisting them. In fact, ULFA commander Paresh Barua and his family lived openly in Dhaka. ( দেখুন, Bangladesh Politics & US Intel’s Questionable Position)
পুরানা যুক্তি। বিএনপি-জামাত আঁতাতের সরকারের সময় উলফা, এনএসসিএন সহ অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপ বাংলাদেশে নির্ভয়ে বসবাসের সুযোগ পেয়েছিল। তারা বাংলাদেশের ডিজিএফআই এবং এনএস আই-এর সহযোগিতায় বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে নিয়ে আসতে পেরেছিলো। ইত্যাদি। অতএব শেখ হাসিনাকেই সমর্থন করে যেতে হবে। বলাবাহুল্য তার মানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে তার দমন পীড়নের নীতিকেও সমর্থন করা। যদি বিএনপি জামাত এতো অপরাধ করে থাকে তাহলে তাদের দমন করাই দিল্লীর নীতি। সেই ক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দারা বাংলাদেশের ভেতরে অপারেট করতেও দ্বিধা করেনি। গুম হয়ে যাওয়া বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দীন আহমেদকে সীমান্তের ওপারে ভারতে পাওয়া ভারতীয় গোয়েন্দাদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্কান্ডাল হয়ে আছে।
কিন্তু বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিপরীতে তোলা অভিযোগ পুরানা। এগুলো পুরানা তথ্য। ধরা যাক এই তথ্যগুলো ঠিক; তাহলে কুকর্মের শাস্তি জামায়াত-বিএনপি পেয়েছে, তারা ক্ষমতায় নাই। তাহলে ভারতের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উচিত হচ্ছে সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভাবা। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্ন বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা্র সঙ্গে বিচার করা। কিন্তু দিল্লী ও ভারতীয় গোয়েন্দারা শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি যে নির্বিচার সমর্থন দিয়ে এসেছে সেটা ভারতের স্বার্থের দিক থেকেও আত্মঘাতী নীতি বলা যায়। এর ফল হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে দিল্লীর বিরোধিতা তীব্র করা। দিল্লী সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণকে ভারতের বিরোধী করে তুলেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার বদল ঘটেছে, ইতোমধ্যে বিশ্ব পরিস্থিতিও বদলে গিয়েছে। আল কায়েদার পরে আইসিস এসেছে। যুদ্ধের চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট আরও দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা পুরানা কাসুন্দি ঘেঁটে নতুন বাস্তবতা ও সমস্যাকে আড়াল করেছে বারবার। যার মূল্য হলি আর্টিসানে দিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কি ঘটতে যাচ্ছে আমরা জানি না। বাংলাদেশের শিক্ষিত এলিট শ্রেণির ছেলেরা সিরিয়ায় গিয়ে আইসিসে যোগ দিচ্ছে। তারা গুলশানে ডিপ্লোমেটিক জোনের গহিনে হলি আর্টিসানে সফল অপারেশান চালিয়ে গর্বের সঙ্গে ভিডিও প্রচার করছে। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাকে নির্মূল করে এবং গণতন্ত্রের ছিঁটেফোঁটার কোন অস্তিত্ব না রেখে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত দমন পীড়ন চালিয়ে গেলে যে নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হয়, সেই শূন্যতার মধ্যে যা হবার তাই হয়েছে।
নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হবার প্রধান কারণ শেখ হাসিনার গণ-বিচ্ছিন্নতা। যেমন, এককথায় বললে, জনগণ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা রেখেই আইএস পরিস্থিতি মোকাবিলা দেখতে চায় কীনা। এ নিয়ে জনগণ ঠিক কি ভাবছে তা নিয়ে ভাবার দরকার আছে। এ নিয়েও সন্দেহ করা যায়। জনগণ কী আস্থা রাখে যে হাসিনা বর্তমান বিপজ্জনক পরিস্থিতি আন্তরিকভাবে ভাবে সামাল দিতে পারবেন? এর জবাব হল, না। আর্টিজানে হামলার সময় থেকে প্রতিটা ঘটনা জনগণ সন্দেহ করছে, মনে করেছে সরকার বুঝি কিছু লুকাচ্ছে, হয়তোবা এর পেছনে সরকারেই হাত রয়েছে। প্রকৃত অপরাধীকে পরিচ্ছন্ন তদন্তে সনাক্ত করার চেয়ে চোখ বন্ধ করে বিএনপি-জামাত এটা করেছে বলা ছিল চরম দায়ত্বহীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ঘটনার হোতাদের ধরার কর্তব্যকে সরকার গৌণ করে ফেলেছে।আর্টিজানের ঘটনাকে নিজের ক্ষমতা টিকানোর পক্ষে ব্যবহার করায় সরকারের প্রতি সন্দেহ আরও বৃদ্ধি করেছে। জনগণের এই প্রবল সন্দেহ শেখ হাসিনার পক্ষে মোকাবিলা করা এখন প্রায় অসম্ভব। তাঁকে সামনে রেখে পরিস্থিত মোকাবিলার নীতি ও কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলাও কঠিন। অথচ এসময় দরকার ছিল জনগণের উৎকন্ঠা ও উদ্বেগকে যথাযথ মূল্য দিয়ে জনগণকে নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা।
তবে ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উৎকন্ঠার জায়গাগুলো বোঝা কঠিন নয়। যা একই ভাবে, বলা বাহুল্য দিল্লীরও উৎকন্ঠা বটে। বাংলাদেশকে তা আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশ তা আমলে নিয়েছেও বটে। অভিযোগ মূলত ভারতের বিদ্রোহী দলগুলোর বিরুদ্ধে। ভারতের ইনসারজেন্সির সমস্যা ভারতের নিজের আভ্যন্তরীন সংকট, কিন্তু তার মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতের বিরুদ্ধে কোন সশস্ত্র হামলা পরিচালিত হয়েছে তার কোন প্রমাণ আজ অবধি দিল্লী দিতে পারে নি। প্রমাণের দরকারে বিভিন্ন সময় কথিত উলফার ঘাঁটি আবিষ্কার করতে হয়েছে তাদের। সেখানে অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গিয়েছে দাবি করা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতর থেকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে তার কোন প্রমাণ নাই। তার মানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিধি বিধান লংঘন করেছে সেই প্রকার কোন অভিযোগ দিল্লী আন্তর্জাতিক কোন মঞ্চে হাজির করতে পারে নি কিম্বা হাজির করেছে বলে জানা নাই।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়ে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে। তাহলে কাশ্মিরসহ ভারতের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের দুর্বলতা এবং সমর্থন থাকা অন্যায় কিছু নয়। যার কারণে স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে থেকেছে। তারা বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়েছে। অথচ ভারত তার আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের রাজনৈতিক সমাধানে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশকে ক্রমাগত দোষারোপ করেছে, যা মেনে নেবার কোন যুক্তি নাই।
তবে এই বিতর্কগুলো আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে আপাতত এখন দূরবর্তী প্রসঙ্গ। এটা মিটে গিয়েছে বলা যাবে না, তবে কিভাবে আগামি দিনে প্রত্যাবর্তন করবে তা আমরা জানি না। ভাস্কর রায় ও ভারতের অপরাপর নিরাপত্তা বিশ্লেষকের লেখা পড়লে স্পষ্টই বোঝা যায় ভারতীয় গোয়েন্দাদের দূরদৃষ্টির অভাব খুবই প্রকট। ভাস্কর রায় তার লেখার কোথাও জেমস ক্ল্যাপারের বিশ্লেষণ নাকচ করেন নি। কিম্বা বাংলাদেশে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্পর্কে ভবিষ্যৎ দূরদৃষ্টির পরতিপ্রেক্ষিতে কিছুই বলতে পারলেন না। ক্ল্যাপারের মূল যুক্তি ছিল খুবই সোজা। শেখ হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দল –অর্থাৎ তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি দমন পীড়ন অব্যাহত রাখে তাহলে আন্তর্জাতিক টেররিস্টগ্রুপগুলো বাংলাদেশে হাজির হয়ে যাবে। তাদের উপস্থিতির বিস্তৃত ঘটবে। সেটা কেন ঠিক না ভাস্কর রায় তার পক্সে কোন যুক্তি দিতে পারলেন না।
ভাস্কর রায়ের বক্তব্য শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও দলীয় কর্মকর্তাদের মতোই। আইএস মানে বাংলাদেশে জে এম বি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আর এদের মদদ দাতা বিএনপি-জামাত – অতএব সন্ত্রাস দমন করতে হলে বিএনপি-জামাত দমন করতে হবে। ভারতে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দাদের চিন্তার দৌড় সম্পর্কে এখান থেকে আমরা কিছুটা ধারণা করতে পারি।
তিন
কিন্তু, আবারো বলি, গুলশানের ঘটনা মার্কিন গোয়েন্দাদের অনুমানই সত্য প্রমাণ করেছে এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দাদের পরিণত করেছে বেকুবে। কিন্তু ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দাদের বেকুব ভাববার কোন কারন নাই, কিম্বা মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের মহা বুদ্ধিমান গণ্য করাও অর্থহীন। ক্ল্যাপার যা বলেছেন তা একদমই কাণ্ডজ্ঞান থেকে বলা, তার বক্তব্যের পক্ষে কোন কংক্রিট তথ্য প্রমাণ তিনি দেন নি। এই ধরণের রিপোর্টে সেটা থাকবার কথা নয়। এতে অবশ্য আমাদের লাভ ক্ষতির কিছুই নাই। তবে প্রশ্ন হোল দিল্লী আন্তর্জাতিক টেররিস্ট গ্রুপের অস্তিত্ব এতদিন অস্বীকার করে এসেছে কেন? আর সে কারনে শেখ হাসিনাও। [১]
বিভিন্ন দিক থেকে বিষয়টির বিবেচনা দরকার। তবে এটা বোঝা যায়, বাংলাদেশে আইএস, আল্ কায়েদার উপস্থিতি স্বীকার করার অর্থ আদতে দক্ষণ এশিয়ায় আইএস, আল কায়েদা বা এই ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি স্বীকার করে নেওয়া। সমস্যার আন্তর্জাতিক চরিত্র স্বীকার করে নিলে এটা শুধু কোন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করা কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক নজরদারী স্বীকার করে নিলে শেখ হাসিনা পক্ষে প্রতিটি সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য বিএনপি জামাতকে দোষারোপ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক ভূমিকার কথা ওঠে। দিল্লী সেটা চায় না। বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমনের বিষয়টি দিল্লী তার নিজের অধীনস্থ বিষয় হিসাবেই মীমাংসা করতে চায়। আন্তর্জাতিক সমস্যাকে দিল্লী বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসাবে সংকীর্ণ করে রাখার সুবিধা বাংলাদেশের পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা কার্যক্রম সব কিছুর ওপর দিল্লীর আধিপত্য বহাল রাখা। দিল্লী বাংলাদেশকে তার একটি উপনিবেশের অধিক কিছু গণ্য করে না। বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান দিল্লীরই এখতিয়ার। এই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের হস্তক্ষেপ দিল্লী চায় না।
মুশকিল হচ্ছে দিল্লী মোটেও সমস্যার সমাধান নয়, সমস্যার কারণ। দ্বিতীয়ত সীমান্তে হত্যা, পানি না দেওয়া, জবরদস্তি করিডোর আদায় করে নেওয়া এবং শেখ হাসিনাকে নিঃশর্তে সমর্থন করে যাওয়া ইত্যাদি নানান কারণে বাংলাদেশে একটি প্রবল দিল্লী বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে, দিল্লীর পক্ষে যার মোকাবেলা এখন অসম্ভবই বলতে হবে। এর পাশাপাশি প্রবল হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান ও মোদীর ক্ষমতারোহন বাংলাদেশের জনগণের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। শেখ হাসিনার দমন পীড়ন দিয়ে জনগণের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার নিরসন এখন একদমই অসম্ভব। হলি আর্টিসানের ঘটনা বিপুল সংখ্যক তরুণকে রাজনৈতিক পথ ও পন্থায় উজ্জীবিত করবে তা মোকাবিলার ক্ষমতা ও বিচক্ষণতা দিল্লীর রয়েছে এটা বিশ্বাস করা এখন কঠিন। দিল্লীর বাংলাদেশ নীতির কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক প্রান্তে এসে ঠেকেছে। এর মূল্য দিল্লীকেও আজ হোক কি কাল হোক, দিতে হবে।
অবস্থা এখনই এমন হয়েছে যে হাসিনার প্রবল আগ্রহ ভারতের সামরিক-গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও কর্মকর্তাদের ঘাড়ে ভর করেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দায় পালন, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজটা করা। আর ভারত একবার লোভে পড়ে প্রায় রাজি হয়ে যাচ্ছিল বটে, তবে আবার পরক্ষণেই হুঁশ হওয়ায় মনে পড়ে যাচ্ছে যে বাংলাদেশ ভুখণ্ডে জঙ্গীদের টার্গেট হয়ে যাওয়ার বিপদ অনেক গভীর। এই দোনামোনার প্রকাশ আমরা দেখেছি ভারতীয় বোমা বিশেষজ্ঞ আসা না আসার খবরে। খবরটা এসেই আপনার মিলিয়ে গেল।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজন, সহিংসতা্র বিস্তৃতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার পেছনে দিল্লীর মদদ, সমর্থন ও সক্রিয় অবস্থানই বাংলাদেশের বর্তমান সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রধান কারন। নিরাপত্তা পরিস্থিতির সংকট আন্তর্জাতিক রূপ পরিগ্রহণ করবার ক্ষেত্রে এটাই মূল কারণ। বাংলাদেশ ও ভারতের শান্তিপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক জনগণকে এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে। আল কায়েদা, আইসিস ও অন্যান্য সংগঠনের জন্য বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ভারতের জনগণকে এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে বুঝতে হবে নিজেদের ভূমিকা পর্যালোচনা না করে ক্রমাগত ইসলাম ও বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের চর্চা আগুনে ঘি দেওয়ার অধিক কিছু করবে না। এই সময় দরকার চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও দূরদৃষ্টি। দরকার পরস্পরকে বোঝা ও জনগণের পর্যায়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করা।
যদি ক্ল্যাপারের যুক্তি মানি তাহলে দিল্লীর ভূমিকাই প্রকারান্তরে বাংলাদেশে আল কায়েদা, আইএস জাতীয় সংগঠনের উপস্থিতি ও সক্রিয়তা অনিবার্য করে তুলেছে। দিল্লী বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে তার নিজের স্বার্থে আরও জটিল করে তুলবে নাকি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র ও শান্তির স্বার্থে বিচক্ষণ ভূমিকা গ্রহণ করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এতোটুকুই শুধু বলা যায় প্রতিবেশীর চালে আগুন লাগলে নিজের ঘরের চালে আগুন ধরা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু দিল্লীকে কে বোঝাবে?
৬ জুলাই ২০১৬। ২২ আষাঢ় ১৪২৩। বুধবার। শ্যামলী।
... ... ...
[১]
সম্প্রতি আনন্দবাজারের পত্রিকায় প্রকাশিত অগ্নি রায়ের একটি লেখায় মনে হচ্ছে দিল্লী হোলি আর্টিসানের ঘটনার পর নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। অগ্নি রায় জানাচ্ছেন:
"সাউথ ব্লকের ধারণা, গুলশনের ঘটনার পিছনে আইএস বা আল কায়দার মতো শক্তিশালী কোনও সংগঠনের মস্তিষ্কই কাজ করেছে। পাশাপাশি এই নাশকতা যে ভবিষ্যতে উপমহাদেশ তথা ভারতে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে, সে আশঙ্কাও ক্রমশই গভীর হয়ে দানা বাঁধছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সামনে"।
"বাংলাদেশের জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সরকারি সূত্রের খবর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই হামলা শুধু জেএমবি-র কাজ বলে ভাবলে ভুল হবে। তাদের পিছনে ক্ষুরধার কোনও জঙ্গি সংগঠনের মস্তিষ্ক এবং সাহায্য দুই-ই আছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর, কূটনীতিকদের বাড়ি-অফিস সমৃদ্ধ গুলশনের মতো একটি হাই প্রোফাইল জোন-এ হামলা হলে গোটা বিশ্বের নজর কাড়া যাবে। জেএমবি এর আগে অনেক হামলা চালালেও সেখানে এ ভাবে নজর কাড়ার ছাপ দেখা যায়নি। সে কারণেই গুলশনের ঘটনার পিছনে আইএস বা আল কায়দা-যোগের ছায়া দেখছেন গোয়েন্দারা"।
অগ্নি রায় বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। এই কর্তা বলছেন:
“কয়েক দিন আগেই ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল বাংলাদেশকে। এ ব্যাপারে একটি ‘ডসিয়ার’ও দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হাত মিলিয়ে বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। ডসিয়ারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ভিতরে কিছু জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর ভিত তৈরি করতে সক্রিয় সহযোগিতা করছে।’’
এগুলো হয়তো বা দিল্লীর টনক নড়ার নমুনা। তবে তা আদৌ দুই একজন কর্তার উপলব্ধি নাকি দিল্লীর নীতিগত অবস্থানে বদল এখনও তা স্পষ্ট নয়। সেটা আমরা সম্ভবত অচিরেই দেখব।