সীমান্ত হত্যাঃ রাষ্ট্রের দায়
প্রেক্ষাপট
ভারত এবং মিয়ানমার বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি ভারতের সঙ্গেই বাংলাদশের প্রধান সীমান্ত যার দৈর্ঘ ৪০০০ কিলোমিটারের অধিক। এর মধ্যে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয় এবং পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের যথাক্রমে ২৬২, ৮৫৬, ১৮০, ৪৪৩ এবং ২২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যবর্তী সীমান্তের দৈর্ঘ বিশ্বে পঞ্চম দীর্ঘতম। অপরদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ২৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। দুই দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ ২০৮ কিলোমিটার। অবশিষ্ট ৬৪ কিলোমিটার সীমান্ত নাফ নদী বরাবর দুই দেশকে পৃথক করেছে।
সীমান্তে পাহারা দেয়ার কাজে বাংলাদেশের যে বাহিনী দায়িত্বপ্রাপ্ত তাকে সাম্প্রতিক সময়ে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) নামকরণ করা হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত এই বাহিনীর নাম ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস্ যা বিডিআর নামেই অধিক পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিডিআর গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক নাম বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলবর্তী নাগরিকবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় বিএসএফ-এর আগ্রাসনের নির্মম শিকার হয়ে নিপীড়িত হচ্ছে। বিএসএফ আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একাধিক বাংলাদেশী নাগরিককে গুলি অথবা নির্যাতন করে হত্যায় রীতিমতো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার নাগরিককে সুরক্ষা দিতে অব্যাহত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে নিয়মিত পতাকা বৈঠক, শীর্ষ বৈঠক ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশী নাগরিক হত্যায় কোন বিরাম নেই। এই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা একই সঙ্গে আতংকিত হই এবং অপমানিত বোধ করি যখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেই বাংলাদেশী হত্যার পক্ষে এক ধরনের ন্যায্যতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতি রাষ্ট্রের এই দূর্বল অবস্থান মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তেও আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক নাগরিক মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে গুলিতে নিহত হয়েছেন। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এ নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, বর্ডার গার্ড ফোর্সেস, সে দেশের প্যারা-মিলিশিয়া নাসাকা এবং বাংলাদেশের বিজিবিও এই ঘটনায় অভিযুক্তের তালিকায় আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েন চললেও, গুলি করে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সীমান্তে সংঘটিত অব্যাহত বাংলাদেশী হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন উঠবে যে, আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা কী তাহলে নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানে সমর্থ হচ্ছে না? যদি রাষ্ট্রের দায় কিংবা ব্যর্থতা প্রমানিত হয়, সে ক্ষেত্রে নাগরিকের দায়িত্ব কি? আমরা কি অসহায়ত্ব মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করবো, নাকি রাষ্ট্রকে নতুন করে নির্মাণের আন্দোলন করবো?
রাষ্ট্র ও তার দায়ঃ
বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা সম্পর্কে বিশদ আলোচনার আগে রাষ্ট্র গঠন ও তার দায়-দায়িত্ব নিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কে সেই গ্রীক সভ্যতার কাল থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন মনীষি নানারকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বিচার বিশ্লেষন করেছেন। আমি এই প্রবন্ধে কেবল Social Contract Theory বা সামাজিক চুক্তি তত্ত্বের মধ্যে আলোচনা সীমিত রাখব। এই চুক্তি অনুযায়ী, Individuals or citizens have consented, either explicitly or tacitly, to surrender some of their freedoms and submit to the authority, in exchange for protection of their remaining rights.
(ব্যক্তি অথবা নাগরিক হয় আনুষ্ঠানিকভাবে কিংবা ইঙ্গিতে তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা রাষ্ট্রের কাছে গচ্ছিত রাখতে সম্মত হয়েছে তাদের অন্যান্য অধিকারের সুরক্ষার বিনিময়ে)।
প্রাচীন কাল থেকেই এই তত্ত্ব সুপ্রচলিত হলেও ফরাসী মনীষি রুশো (Jean Jacques Rousseau) ১৭৬২ সালে তার লিখিত বইতে সামাজিক চুক্তি তত্ত্বের আধুনিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং সামাজিক চুক্তি অথবা Social Contract কথাটি ব্যবহার করেন। রুশোর আগে এবং পরে অন্যান্য রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশেষত টমাস হবস (১৬৫১), জন লক (১৬৮৯) এবং ইমানুয়েল কান্ট (১৭৯৭) রাষ্ট্র্রের এই সামাজিক তত্ত্বের সমর্থক এবং প্রচারক।
আমরা যে সকল মৌলিক অধিকার সুরক্ষার বিনিময়ে রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তি স্বাধীনতা গচ্ছিত রাখি তার মধ্যে প্রাণের সুরক্ষা (the right to life) এবং নির্যাতন থেকে সুরক্ষা (freedom from torture) অন্যতম। প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যখন আমাদের নাগরিকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করে এবং তাদের হত্যা করে তখন সেই সকল নাগরিকদের প্রধান মৌলিক অধিকার হরণ করা হয় এবং রাষ্ট্র যদি সেই নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে রাষ্ট্রগঠনের নৈতিক ও আইনগত উভয় ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। কেবল বায়বীয় চেতনা দিয়ে সেই রাষ্ট্রকে আর রক্ষা করা সম্ভব হয় না। দূর্ভাগ্যের বিষয় হোল ফ্যাসিবাদী শাসন কবলিত বাংলাদেশে কেবল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীই নয়, রাষ্ট্রের নিজস্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও প্রতিদিন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করে চলেছে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, এবং গুম এমনভাবে এ দেশে বিস্তার লাভ করেছে যে এ সকল ঘটনা আজ আর সংবাদ-মাধ্যমেও প্রকাশিত হওয়ার মত গুরুত্ব পায় না। বাংলাদেশের নাগরিক আজ আভ্যন্তরীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বহি:শত্রু উভয় দিক থেকে ভয়াবহ নির্যাতন ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার। এ দেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন ইস্যুতে সুয়ো মোটো রুল জারি করলেও নাগরিকের প্রধান দুই মৌলিক অধিকার, the right to life এবং freedom from torture রক্ষার বিষয়ে দৃশ্যত: নিস্পৃহ থাকছেন। সব মিলে রাষ্ট্রের দায় বৃদ্ধি পেতে পেতে হিমালয় সমান হয়ে উঠেছে।
আমাদের স্মরনে রাখা উচিৎ যে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর থেকে যে Proclamation of Independence জারি করা হয়েছিল সেখানে স্বাধীনতা ঘোষনার ন্যায্যতা দিতে নিরস্ত্র বাংলাদেশী জনগণের উপর পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা এবং নির্যাতনের উল্লেখ ছিল। আমি Proclamation of Independence থেকে প্রাসঙ্গিক অংশটি উদ্ধৃত করছিঃ ÔWhereas in the conduct of a ruthless and savage war the Pakistani authorities committed and are still continuously committing numerous acts of genocide and unprecedented tortures, amongst others on the civilian and unarmed people of Bangladesh.”
কিশোরী ফেলানীসহ যে হাজার হাজার অসহায় বাংলাদেশীদের ভারতীয় বিএসএফ হত্যা করেছে তারাও কী নিরস্ত্র এবং বেসামরিক ব্যক্তি নন? স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ সেই সব দরিদ্র, অসহায় নাগরিকদের সুরক্ষায় কোন কার্যকর ব্যবস্থা কী গ্রহন করেছে? ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, আমাদের শাসক গোষ্ঠীর কন্ঠে কোন প্রতিবাদ ধ্বনিও আমরা শুনতে পাইনা।
ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণির অভিমত অনুসারে ভারত বাংলাদেশের সর্বোত্তম বন্ধুরাষ্ট্র। সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে সহযোগীতা করেছে তার ঋণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরেও আমরা পরিশোধ করে উঠতে পারব না। সেই কারণেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বিনা শুল্কে ভারতকে করিডোর ব্যবহার করতে দিতে হবে। সেই করিডোরে প্রয়োজনীয় রাস্তা ও রেল অবকাঠামো আমরা বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে নির্মান করবো। ঋণের বোঝাও অবশ্যই বাংলাদেশের জনগনের ঘাড়েই চাপবে। এতদসত্ত্বেও করিডোর ব্যবহারের জন্য শুল্ক চাওয়া আমাদের জন্যে নাকি ‘অসভ্যতা’ বলে পরিগণিত হবে। এই তোষণ-নীতির বিনিময়ে জনগণের ভাগ্যে অশ্বডিম্ব জুটলেও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে দিল্লির সমর্থনে বিনা নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখা জায়েয করা হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অপমৃত্যুতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী পশ্চিমা শক্তি অস্বস্তি বোধ করলে সেই অস্বস্তি নিরসনের ব্যবস্থাও দিল্লিই করে দেবে। এমন বন্ধু খুঁজে পাওয়া প্রকৃতই কঠিন!
বিস্ময়ের ব্যপার হলো ভারত এ দেশে ক্ষমতাসীন মহলের সর্বোত্তম বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ভারতের অন্য কোন সীমান্তেই বাংলাদেশীদের মতো এতো মানুষ হত্যা হয় না। পাকিস্তান ভারতের চিরশত্রু রাষ্ট্র রূপে বিবেচিত। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রতিদিন গোলাগুলি চলছে, একে অপরের প্রতি কামান দাগছে দুই বৈরী দেশের সেনাবাহিনী। অথচ সীমান্তে নিহতের সংখ্যা বাংলাদেশীদের তুলনায় এক তৃতীয়াংশেরও নীচে। যে সকল পাকিস্তানী নাগরিক ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলাগুলিতে নিহত হচ্ছে তাদের মধ্যে নব্বই শতাংশই আবার সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য। বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা সেখানে নগন্য। তাছাড়া ওই সীমান্তে ইটের বদলে পাটকেল চলছে। অর্থাৎ ভারতীয় পক্ষে নিহতের সংখ্যা পাকিস্তানীদের তুলনায় কম তো নয়ই বরঞ্চ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশি। অথচ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিহতদের প্রায় সকলেই বাংলাদেশের বেসামরিক,নিরস্ত্র নাগরিক। বিএসএফ যেন বাংলাদেশীদের হত্যা করে সৈনিকদের হাতের নিশানা পাকা করছে।
চীনের সঙ্গেও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ভারতের দীর্ঘকালের বৈরিতা রয়েছে। বিশেষত: দুই দেশের সীমান্ত সীমা নির্দেশক ম্যাকমোহন লাইনকে চীন কখনই মেনে নেয়নি। তারা ভারতের অরণাচল প্রদেশের একটি অংশকে নিজেদের বলে দাবী করে। ১৯১৪ সালে বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকার এবং তিব্বতের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির প্রেক্ষিতে বিরোধপূর্ন অংশটি ভারতভূক্ত হয়। অরুণাচল রাজ্যের সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ১৯৬২ সালে ভারত এবং চীনের মধ্যে এক দফা যুদ্ধও হয়ে গেছে। সেই যুদ্ধে ভারতের অমর্যাদাকর পরাজয় হয়েছিল। এমন বিরোধপূর্ন সীমান্তেও কোন চীনা বেসামরিক নাগরিককে গুলি করে হত্যা করার কথা কল্পনা করতেও সম্ভবত: বিএসএফ সক্ষম হবে না। কারণ তারা জানে এমন হঠকারী ঘটনার পরিনাম ভারতের জন্য আদৌ সুখকর হবে না।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বছর সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, গত দশ বছরে বিএসএফ ৫৯১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে। তিনি সংসদে আশ্বাস দিয়ে তখন বলেছিলেন বিএসএফ প্রধান নাকি হত্যাকাণ্ডকে শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি তাকে দিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশের অন্যতম মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবল ২০১৬ সালেই বিএসএফ ৩১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের অপর মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের জানুয়ারী, ২০১৭ এর প্রতিবেদনে বিএসএফ কর্তৃক দুই জন বাংলাদেশী হত্যা, ৩ জন আহত, ৫ জনকে অপহরণের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। এই ফেব্রুয়ারী মাসেও বিএসএফ এর হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে দেয়া বিএসএফ প্রধানের প্রতিশ্রুতি শূন্যেই ভাসমান থেকে গেছে। সেটি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ ভারতীয় পক্ষ কখনই গ্রহন করেনি। যে বিএসএফ প্রকাশ্যে দাবী করে যে, বাংলাদেশীরা অপরাধী এবং সেই কারনেই গুলি করে মারা হয়, তাদের প্রতিশ্রুতিতে একমাত্র দিল্লির দালাল শ্রেণির ব্যক্তিরাই আস্থা স্থাপন করতে পারে। নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া মহাদেশের নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড এডামস মন্তব্য করেছেন, ÔRoutinely shooting poor, unarmed villagers is not how the world’s largest democracy should behave.’ (নিয়মিতভাবে দরিদ্র, নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না)।
এ দেশের নাগরিকদের জন্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণির দিল্লির লেজুড় বৃত্তি। সীমান্ত হত্যা বিষয়ে বিজিবি- বিএসএফ এর মধ্যকার যে কোন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পরই অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের দায়ী করার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। সকল বিএসএফ প্রধান সরাসরি বলেন যে নিহতরা সব ক্রিমিনাল। গত সপ্তাহে ঢাকায় শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফ প্রধান দাবী করেছেন যে এখন বিএসএফ সদস্যরাই নাকি সীমান্তে সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তার এই উদ্ভট দাবীর পেছনে কোন তথ্য-প্রমান অবশ্য তিনি হাজির করেননি। অপরদিকে বিজিবি প্রধানরা খানিকটা রাখ-ঢাক করার পর প্রকারান্তরে বাংলাদেশেীদের ওপরই দায় চাপান। তারা গরু চোরাচালানের তত্ত্ব দিয়ে বিএসএফকে দায়মুক্তি দিতে চান। অথচ সকল তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে বিগত এক দশক ধরে গরু চোরাচালান লক্ষনীয়ভাবে হ্রাস পেলেও নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা একই ধারায় চলছে।
বিএসএফ এর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পশ্চিম বঙ্গের বিবেক সম্পন্ন নাগরিক এবং মানবাধিকার সংগঠন সমূহ সোচ্চার হয়েছেন। বহুল আলেচিত কিশোরী ফেলানীকে হত্যার অভিযোগ থেকে বিএসএফ জওয়ান অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়া হলে পশ্চিম বঙ্গের সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)’র প্রধান কিরীটি রায় বিবিসিকে বলেছিলেন ফেলানীর পরিবারের উচিৎ ভারতের সুপ্রীম কোর্টে বিচার চাওয়া। ‘মাসুম’ এর ভাষ্যমতে কিরীটি রায় এবং অপর আর একজন মানবাধিকার কর্মী (সিকিম আদালতের সাবেক বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত) ফেলানি হত্যা মামলা চলাকালীন তার পরিবারকে সহায়তার উপায় খুঁজতে বাংলাদেশে আসার জন্যে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস থেকে ভিসা পাননি। কিরীটি রায় অভিযোগ করেছেন, এক সপ্তাহে ছয় দফায় তিনি উপ-দূতাবাসে ভিসার জন্য গিয়েছেন। প্রতিবার তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি রাষ্ট্র যখন এমন লজ্জাজনক নতজানু পররাষ্ট্র নীতি গ্রহন করে তখন সেই রাষ্ট্রের নাগরিকরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন সেটাই প্রত্যাশিত।
২০১০ সালে নিউইয়র্ক ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের ওপর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার শিরোনাম ছিল Ò Trigger Happy.” । সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশী নাগরিক মতিউর রহমানকে ভয়ংকরভাবে নির্যাতনের কাহিনী বর্নিত হয়েছে। আমি প্রতিবেদন থেকে উদ্বৃত করছি,
'They blind folded me and took me to the BSF camp. I thought that BSF were going to kill me. After reaching the camp, the BSF personal removed the blindfold and tied me to a tree.--- I was beaten severely with a bamboo stick on my back and feet by the same soldier who brought me the food. I was kicked several times and as a result started bleeding from my penis. Another soldier started beating me on my head with a bamboo stick.
This went for at least 45 minutes. The BSF men jumped on my chest, and kicked me on my head and face with their boots.’
হাবিবুর রহমান নামের অপর এক দরিদ্র, নিরস্ত্র, অসহায় বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে বিএসএফ এর ১০৫ নম্বর ব্যটালিয়নের সৈনিকেরা বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। নির্যাতন চলাকালে সৈনিকেরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ-ফূর্তি করছিল। এই নির্যাতনের ছবি ওই ব্যাটালিয়নেরই অপর এক সৈনিক ইউটিউবে পোষ্ট করলে বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে ব্যপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু, বাংলাদেশের সরকার নির্বিকারই থাকে। এ দেশের বর্তমান সরকার ভারতকে যতই বাংলাদেশের জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু রূপে প্রচার করুক না কেন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরীহ, নিরস্ত্র, বাংলাদেশী গ্রামীন জনগণের রক্তের বহমান নদী প্রতিনিয়ত সেই বন্ধুত্বের মুখোস উম্মেচিত করছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত
বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ নাগরিকদের নিপীড়ন প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত অং সাং সূচির দেশ মিয়ানমার যে নির্মমতার সঙ্গে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে সেটি অং সাং সূচির জন্য অবমাননাকর এবং তার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসা নীতির সঙ্গেও মিয়ানমারে মুসলিম নিধন সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ার ফলে নিরাশ্রয় রোহিঙ্গা মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বিপুল সংখ্যায় এই দেশে ছুটে আসছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ন রাষ্ট্র। তার ওপর উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ফলে আমাদের সাধ্য সীমিত। এমতাবস্থায় লাখ লাখ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সাধ্যাতীত। এই মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। দূর্ভাগ্যবশত: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত শুধু উদ্বেগ জানানোর মধ্যেই তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রেখেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কিছু দিন আগে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে গেলেও জাতিসংঘের তরফ থেকে এ পর্যন্ত তেমন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। মিয়ানমারে পরিস্কারভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযান চললেও অজ্ঞাত কারনে কফি আনান তার সফর কালে সেই কথা স্বীকার করেননি। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সংগঠন ওআইসি জন্মাবধি অভ্যন্তরীন দূর্বলতা এবং কোন্দলে বিপর্যস্ত। সংগঠনটি বিশ্বে কোথাও মুসলমানদের বিপর্যয়ে কোন ইতিবাচক ভূমিকা আজ পর্যন্ত রাখতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও তাদের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পেয়েছি।
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কর্তব্য কী? রোহিঙ্গারা অবশ্যই মিয়ানমারের নাগরিক। ভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের কোন দায়িত্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু, পার্শ্ববর্তী দেশের নির্যাতনের শিকার হয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আশ্রয়ের সন্ধানে এদেশে এলে তাদেরকে অবধারিত মৃত্যু ও জুলুমের দিকে ঠেলে দেওয়া অমানবিক। তদুপরি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সংঙ্গে আমরা ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ। সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হত্যা, ধর্ষনসহ নানাবিধ জুলুমের শিকার রোহিঙ্গাদের এদেশে প্রবেশে বাধা দেওয়ার যে নীতি গ্রহন করেছে তার সঙ্গে কোন বিবেকবান মানুষ সহমত পোষণ করতে পারে না। বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক (John Mckissik) রোহিঙ্গাদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বিবিসিকে বলেছেন, 'Soldiers are killing men, slaughtering children, raping women.’
একই পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালে আমরা ভারতে আশ্রয় গ্রহন করেছিলাম এবং সেদেশে আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আজ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে দেয়া হলে জালিমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের নৈতিক অবস্থান দূর্বল হয়ে পড়বে। বিশ্বের অন্যত্র যে কোন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর জুলুম হলে আমাদের নিপীড়িত মানবতাকে সমর্থন করাই কর্তব্য। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও আমরা অভিন্ন আদর্শিক অবস্থান ধরে রাখতে চাই। কক্সবাজার অঞ্চলের সাধারণ বাংলাদেশী নাগরিক তাদের সাধ্যমতো রোহিঙ্গা উদ্বাস্তÍদের সহায়তা দিচ্ছেন। অত্যাচারিত, আহত, রুগ্ন নারী-পুরুষ-শিশুর জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে চিকিৎসার দাযিত্ব গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য এই সমস্ত ব্যক্তি উদ্যোগকে যথাসম্ভব সহায়তা প্রদান করা। দূর্ভাগ্যবশত:এই সমস্ত উদ্যোগকে সহায়তার পরিবর্তে বাধাগ্রস্ত করার উদ্বেগজনক সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই এই সমস্ত সংবাদ তথ্যভিত্তিক নয়। এর আগে মিয়ানমারের পুলিশ কর্তৃক একজন বাংলাদেশী নিহত হলে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমার দূতাবাসে কুটনৈতিক নোট পাঠিয়ে তার প্রতিবাদ করেছিল। বিএসএফ এর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন প্রতিবাদ জানানোর মতো সাহস সঞ্চয় করতে না পারলেও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে সেই সাহসটুক দেখানোয় দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী মাত্রই উৎসাহিত বোধ করবেন। রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে এবং শরনার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে পূনর্বাসন করতে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের কাছে আহবান জানাতে পারে।
লক্ষ্য করার বিষয় যে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের বিষয়ে ভারত সরকার এবং তাবেদার সুশীল সমাজের আপত্তি রয়েছে। দিল্লিভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (ACHR) রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার নীতির সমালোচনা করেছে। সংগঠনটির পরিচালক পরিতোষ চাকমা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, পরিতোষ চাকমা ভুলে গেছেন যে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বিদ্রোহীরা সত্তরের দশক থেকে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ভারতে শুধু অবস্থানই করেনি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সহায়তা ক্রমে চাকমা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধ চালিয়ে এ দেশের হাজার হাজার বাঙালী ও পাহাড়ীকে হত্যা করেছে। তাদের বাড়ি-ঘড় জ্বালিয়ে দিয়েছে, সম্পত্তি লুট করেছে। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও আছেন। অথচ পরিতোষ চাকমা আজ দাবী জানাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া চলবে না। দিল্লি থেকে এই প্রকার চাপের ফলেই হয়তো বাংলাদেশ সরকার নিরাশ্রয় রোহিঙ্গাদের অমানবিকভাবে পুশ ব্যাকের নীতি গ্রহণ করেছে। আমাদের অবস্থান পরিস্কার করে বলা উচিৎ নিপীড়িতকে আশ্রয় প্রদান মানবিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। কোন চাপের মুখেই আমরা অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না।
উপসংহার
রাষ্ট্রের কাঠামো উদ্ভাবনের মধ্যেই রাষ্ট্রচিন্তকরা নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষাকে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব রূপে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঘরে এবং বাইরে নাগরিক তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশী নাগরিক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর নির্যাতন ও হত্যার শিকারে পরিণত হচ্ছে। দেশের ভেতরেও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং গুম এদেশকে ক্রমেই অরওয়েলিয়ান (Orwellian) রাষ্ট্রে পরিণত করছে। বাংলাদেশের নাগরিকের প্রাণের অধিকার, নির্যাতন থেকে সুরক্ষার অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে অন্তহির্ত হয়েছে। রুশো এবং অন্যান্য মনীষীরা রাষ্ট্র গঠনের সামাজিক চুক্তি তত্ত্বে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে যে দেয়া-নেয়ার কথা বলেছিলেন সেটি বাংলাদেশে অনুপস্থিত। এদেশে রাষ্ট্র একতরফাভাবে ব্যক্তির সকল অধিকার হরণ করে তাদের দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে। জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে সেই শৃঙ্খল মোচনের পন্থা নিয়ে সর্বত্র আজ বিতর্কের আয়োজন আবশ্যক। ব্যক্তির সকল অধিকার হরণ করে কোন রাষ্ট্রশক্তি যাতে দানবের ভূমিকায় অবতীর্ন না হয় তারই লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। আজকের সেমিনারে উপস্থিত সকল নাগরিকের প্রতি এই অহবান রেখে আমার প্রবন্ধে সমাপ্তি টানছি।