কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নারীর সংগ্রাম


কিছু বিষয় আছে যা মেয়েদের খুব গভীরে আহত করে, যা মেয়ে না হলে বোঝা কঠিন।

সালেহা বেগম, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের মা। তিনি ঢাকায় ছুটে এসেছেন ছেলের ওপর আক্রমণ এবং তাকে রিমান্ডে নেয়া থেকে মুক্তি দিতে। ছেলের জীবন বাঁচাবার জন্যে কতখানি অসহায় হলে, হাত জোড় করে একজন মা বলতে পারেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। শুধু মুক্তি দাও। ও আর চাকরী চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও। আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত পেতে তিনি সন্তান ভিক্ষা চাইছেন। যে আন্দোলন সারা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে আজ সে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থির মায়ের ক্ষমা চাইবার ভাষা সব মায়ের মাথা নুইয়ে দিয়েছে। এই লজ্জা কার?

মা বুঝতে পারছেন সন্তানের প্রাণ রক্ষার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি, অধিকার ও ব্যবস্থাগুলো বাংলাদেশে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন ভিক্ষা ছাড়া জননীর পক্ষে সন্তানের প্রাণ রক্ষার আর কোন উপায় নাই। প্রাণ ভিক্ষার এই কাতরতা অন্যদের বুকে যত বেজেছে তার চেয়ে শতগুণ বেজেছে মেয়েদের বুকে।

রাশেদের মা ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন এবং দিন-রাত ধর্ণা দিচ্ছেন রাজধানীর ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্টে। রাশেদকে দুই মামলায় দুই-দফা রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ছেলেকে রিমান্ডে নিচ্ছে এই কষ্ট তিনি সইতে পারছেন না। তিনি রাশেদকে মুক্ত করার আর্জি জানাচ্ছেন।

সবাই জানে রাশেদ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত। নিজেদের জন্য শুধু নয়, সকল শিক্ষার্থিদের পক্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে নুরুল হক নুরু, ফারুক হাসান, মাসুদ রানা ও অন্যান্যদের সাথে আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাশেদ এসে পড়েছেন। তাদের ডাকে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। অথচ আজ তরুণদের আত্মত্যাগের ওপর গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশে রাশেদদের ওপর নিপীড়ন নেমে এসেছে। অসহায় মাকে বলতে হচ্ছে “ও আর চাকরী চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও”।

রাশেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তৈরি ছাত্রদের মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। একজন মেধাবী শিক্ষার্থি, সরকারি চাকুরিতে কোটার কারণে সৃষ্ট বৈষম্য দুর হলে যার চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তার মা আজ রিমান্ডের নির্যাতনের ভয়ে বলছেন, ‘আমার মনির আর চাকরির দরকার নাই। আমার মনি দেশে গিয়ে ভ্যান চালায় খাবে। আমার মনিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্ত করে। "

তার মা অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন এবং বাবা রাজমিস্ত্রি; ছেলে মেধাবী বলে ছোট বেলা থেকে বৃত্তি পেয়ে এতোদুর এসেছে। সাথে মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ। খেয়ে না খেয়ে ছেলের পড়ার খরচ চালিয়েছেন। রাশেদ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি পেলে তাদের দুঃখ লাঘব হবে। রাশেদ শুধু একা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা কষ্ট করে পড়াশোনা করছে, কিন্তু চাকুরি পেতে গিয়ে কোটার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই তারা রাস্তায় নেমেছে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্যে। তারা ১৫ টাকা সিটভাড়া দেয় আর ৩৮ টাকার খাবার খায় -প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলে তাদের তিরস্কার করেছেন। কিন্তু এই টাকা জনগণের অর্থাৎ রাশেদ-নুরুর বাবারও দেয়া টাকা। তাই তাদের দায়িত্ব আছে যেন এই টাকায় লেখা-পড়া করে দেশের জনগণের সেবা করতে পারে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরি পেলে তারা সেই কাজ করতে পারবেন। কোটার মাধ্যমে চাকুরি নিয়ম হয়ে গেলে মেধা ও যোগ্যতার কোন মূল্য থাকে না। যোগ্য ও মেধাবিদের তখন চাকুরি পাওয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এখন রাশেদের মায়ের যদি বলতে হয় ‘ও আর চাকুরি চাবে না গো’ ও ভ্যান চালাবে, তাহলে এতো লেখাপড়ারই আর দরকার ছিল না। এই ছেলেকে লেখা পড়া করাবার জন্যে তার অবদান তো কোন অংশে কম নয়। কিন্তু ছেলের চাকুরির চেয়ে ছেলের জীবন তাঁর কাছে বেশি। মনে হচ্ছে সারাদেশ জিম্মি হয়ে হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা চাইছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে যখন ছাত্রলীগ পিটিয়ে মারছিল তখন একটি মেয়ে এগিয়ে এসেছিল, তার নাম মরিয়ম মান্নান ফারাহ। মরিয়ম তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রী। কোটা আন্দোলনে যুক্ত হবার ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ফারুক হাসানের ওপর হামলা দেখে থাকতে না পেরে প্রতিবাদ জানায়। এবং সেটা করতে গিয়ে নিজে লাঞ্ছিত হয়েছে। আক্রমণকারীরা তাকে সিএনজিতে তুলে থানায় নিয়ে যাবার সময় শারীরিক নির্যাতন করেছে, তার ভাষায় এটা ছিল প্রথম জাহান্নাম, এবং পরে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আর একবার মরিয়মকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে, যা তার ভাষায় ছিল দ্বিতীয় জাহান্নাম। পুলিশ তাকে 'বেশ্যা' বলে আখ্যায়িত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে ইয়াবা আসক্তির মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করতে হলে এর চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কী হতে পারে! একটি মেয়েকে বেশ্যা বলে তাকে ছোট করার এটা পুরানা কায়দা। অথচ থানায় পুলিশই তার সাথে অ-সৌজন্যমুলক আচরণ করেছে, তাকে লাঞ্ছিত করেছে। এখন মরিয়ম বাংলাদেশের সংগ্রামী মেয়েদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। চারটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে।

এক. সংবাদ সম্মেলনে মরিয়ম 'ভিকটিম' বা অসহায় নারীর নতমুখ নিয়ে দাঁড়ান নি, তিনি দাঁড়িয়েছেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত হিশাবে। বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি লড়াকু মেয়ে। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মরিয়ম নতুন জেনারেশানের প্রতিনিধি। সম্ভবত বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের গুরুত্বপুর্ণ গুণগত রূপান্তরের নির্দেশনা আমরা দেখছি। সবচেয়ে বেশী সকলকে আকৃষ্ট করেছে সেখানে উপস্থিত সকল মেয়েদের শক্তিশালী ঐক্য, সংবেদনা এবং একাত্মতা। এই সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশে নারীদের ঐক্য ও সংহতির বিরল উদাহরণ। মরিয়মের সংবাদ সম্মেলন বোনদের মধ্যে সংহতি নির্মানের উজ্জ্বল ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।

দুই. মরিয়ম বুঝিয়ে দিয়েছেন বেশ্যাবুশ্যা গালি দিয়ে পুরানা পুরুষতান্ত্রিক কৌশলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা বাংলাদেশে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। সেই কাল দ্রুতই এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত হচ্ছে। এর আগে অনেক সংগ্রামী মেয়েদের এভাবে দমনের কিম্বা সামাজিক ভাবে হেয় করবার চেষ্টা হয়েছে। কাজ হয়নি।

তিন. এই আন্দোলন সকল শিক্ষার্থীর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। যদিও নেতৃত্বে আমরা ছাত্রদের দেখতে পাই, কিন্তু যখনই প্রয়োজন হয়েছে নারী শিক্ষার্থীরা সামনে এসে গেছে। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেয়েরা ভেতরে ও বাইরে আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। মাঝ রাতে তারা মিছিলে এসে যোগ দিয়েছেন, যা দেখে প্রধানমন্ত্রী 'টেনশন' করেছেন। কিন্তু সেই মিছিলে কোন সমস্যা হয়েছে বলে আমরা শুনিনি। অথচ দিনে দুপুরে মরিয়মের ওপর চড়াও হয়েছে, একজনকে বাঁচাতে চেয়েছে বলে। কোটা আন্দোলনে মেয়েদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণকে খাটো করে বলা হচ্ছে, “মেয়েদের ব্যবহার” করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বক্তব্য নারী অধিকার অস্বীকার করার শামিল। বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণ আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন – কোন আন্দোলনেই নারীরা পিছিয়ে থাকে নি। এসব কথা প্রধানমন্ত্রী জানেন, জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও। তাদের হঠাৎ মেয়েদের নিয়ে চিন্তা হয়ে গেল কেন? অথচ মেয়েরা নির্যাতিত হলে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না!

চার. এর মধ্যে 'বোনদের মধ্যে দৃঢ় সংহতির' শক্তি দানা বেঁধেছে। সব মেয়েদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির শক্তি আমরা দেখছি। এর মর্ম যদি বুঝে থাকি, তাহলে সামাজিক-রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আন্দোলনে সক্রিয় ভাইদের প্রতি বোনদের সংহতির অর্থও বুঝব। মরিয়ম যে ভাইকে নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে দুঃসাহসী হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তাকে তিনি চেনেন না। অথচ তিনি সংগ্রামের মাঠে 'ভাই'। তাঁর মুখে 'ভাই' কথাটা মেয়ে হিশাবে আমার নিজের মধ্যেও গভীর ভাবে বাজল। মরিয়মের সংবাদ সম্মেলন এই দিকগুলো বুঝতে আমাদের খুবই সহায়ক হয়েছে। তিনি অনেক কিছুই খোলাসা করে বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। সবাই যতোটা শিউরে উঠেছেন, ততটাই আশাবাদীও হয়ে উঠেছেন। কারণ আসলেই আমরা আমাদের সামনে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এক পাল তরুণ নেতৃত্বের আবির্ভাব দেখছি আগামি দিনে বাংলাদেশকে সকল জুলুম ও নিপীড়নের শৃংখল থেকে মুক্ত করবার ক্ষেত্রে যারা নির্ধারক ভূমিকা রাখবে।

পুলিশের আচরন মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এক পর্যায়ে; মরিয়ম বলেছেন ‘এ দেশ আমার নয়”। কিন্তু এটা সত্য নয়। এই দেশ অবশ্যই আমাদের। তারা এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম, এবং ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করার জন্যই তাঁরা তৈরি হচ্ছেন। আজ তারা তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্যে যখন আন্দোলন করছেন তখন তাদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং চরিত্র হনন করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে ভয় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মরিয়মের কথার মধ্যে ভয়াবহ আর্তনাদ ছিল, সন্দেহ নাই, কিন্তু মরিয়ম নিজেই বরং সাহসী হয়ে সবার সামনে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে হাজির হয়েছেন। অতএব এই দেশ অবশ্যই মরিয়মদের।

লাকি আখতার, যাঁকে বিভিন্ন সংগ্রামে আমরা দেখি, তিনিও হামলার শিকার হচ্ছেন। তাঁর আপরাধ তিনি কোটা সংস্কারের অন্যতম নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র এ পি এম সুহেলকে তার বাসায় থাকতে দিয়েছিলেন। সুহেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। সম্প্রতি তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার শিকারও হয়েছিলেন। তাঁকে ১২ জুলাই ভোররাতে লাকি আখতারের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এখানেই শেষ নয়, লাকীর ওপর নানাভাবে, অশ্লীল ভাষায়, আক্রমণ চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি। খুশির কথা লাকী জানিয়েছেন তিনি ভীত নন।

একদিকে মা হিশেবে সালেহা বেগম, অন্যদিকে শিক্ষার্থী মরিয়ম, কোটা আন্দোলনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছে্ন, যারা ছাত্র লীগের পৈশাচিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন, হাতুড়ির আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন -- তাদের কথা মিডিয়াতে খুব একটা আসছে না। তবুও যতোটুকু আসছে তাতে দেখা যায় নারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে মুখপাত্রের কাজ করছেন। এই নারীরা নিজেদের স্রেফ ভিক্টিম হিসেবে নয়, প্রতিরোধের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ও কর্তা হিসাবে আন্দোলন-সংগ্রামে হাজির হয়েছেন। সেভাবেই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাঁরা তাদের কথা না বললে আজ সমাজ জানতো না। সালেহা বেগম আপাত দৃষ্টিতে ক্ষমা চাইছেন, কিন্তু তাঁর কথা দিয়ে তিনি সমগ্র প্রশাসনকে ও রাষ্ট্রকে প্রশ্নবোধক করে দিয়েছেন। যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অপরাধে একজন মাকে এভাবে কাতর হয়ে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইতে হয়, সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি বড়ই দুর্বল। কোটা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’, জংগী বা বেশ্যা আখ্যায়িত করে সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত করাবার সুবিধাও কমে যাচ্ছে।

এখন আমাদের কাজ হচ্ছে সালেহা বেগম, মরিয়ম মান্নানসহ সকল নির্যাতিত ও নিপীড়িত ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানো। তাঁরাই আমাদের ভবিষ্যত এবং তাঁদের দাবী ন্যায্য। সালেহা বেগম বাংলাদেশের জনগণকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন, আমাদের সন্তানদের আমরা আর রক্ষা করতে পারছি না। কিন্তু পারতে হবে। এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে। মরিয়ম এবং তাঁর মতো হাজার হাজার মেয়ের নেতৃতের ভূমিকাকে আমাদের স্বাগত ও অভিনন্দন জানাতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যে নেতৃত্বের স্ফুরণ ঘটেছে তাকে আরও বিকশিত করতে হবে।

মেয়েদের যা গভীর ভাবে আহত করে তা একই ভাবে শক্তিও জোগায়। উজ্জ্বল বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন আমাদের আরও বাড়ছে। সমাজে চিন্তা, মতাদর্শ, স্বপ্ন, আকাংখার পার্থক্য থাকবে, কিন্তু নারীদের পক্ষেরই সম্ভব পারস্পরিক ভিন্নতার মধ্যে ঐক্যের ক্ষেত্রটি চেনা এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।  ঐক্যবদ্ধ হবার এখনই সময়। তাহলে বাংলাদেশ স্বপ্ন হয়ে থাকবে না। বাস্তব হয়ে উঠবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।