১০. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ


“আমরা সারাবছর সংকট এবং জরুরি অবস্থার মধ্যে বাস করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি যে এখন আর খেয়ালই করতে পারি না যে জীবন স্রেফ একটি বিশুদ্ধ জৈবিক পদার্থে পর্যবসিত। এই অবস্থায় আমরা রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন -- এমনকি মানবিক ও আবেগের জায়গাগুলিও হারিয়ে ফেলেছি। একটি সমাজ যখন সার্বক্ষণিক জরুরি অবস্থার মধ্যে থাকে তাকে আর মুক্ত বলা যায় না। বাস্তবিকই আমরা তথাকথিত ‘নিরাপত্তা’র চিন্তা করতে গিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে কোরবানি দিয়ে দিয়েছি, নিজেদের সেই গজবে নিক্ষেপ করেছি যেখানে সারাক্ষণ ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আমাদের বাঁচতে হয়”।

“এ কেমন সমাজ স্রেফ বাঁচা ছাড়া যার আর কোন মূল্য নাই”
--জর্জিও আগামবেন
..............................................................................

ইটালির দার্শনিক জর্জিও আগামবেন তাঁর বিতর্কিত নিবন্ধটি লেখেন ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে। তাঁর লেখার শিরোনাম হচ্ছে ‘একটি মহামারি আবিষ্কার (L’invenzione di un’epidemia )। এর ইংরেজি অনুবাদ নেটে আছে: The Invention of an Epidemic। উস্কানিমূলক শিরোনাম সন্দেহ নাই।

কোভিড-১৯ সম্পর্কে জর্জিওর কাছে তথ্যের ভিত্তি ছিল ‘ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের’ ঘোষণা। সেখানে বলা হয়েছে, “ইটালিতে কোন SARS-CoV2 (অর্থাৎ কোভিড-২) মহামারী নাই...আজ অবধি পাওয়া সকল খবর এবং হাজার হাজার আক্রান্তদের তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, এই সংক্রমণ ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে একধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হালকা থেকে মাঝারি ধরনের উপসর্গ তৈরি করে। দশ থেকে পনেরো শতাংশ ক্ষেত্রে সেটা হয়তো নিউমোনিয়ায় রূপ নিতে পারে, কিন্তু বিশাল অংশের ক্ষেত্রে তা সদয়, অর্থাৎ মারাত্মক কিছু নয়। আনুমানিক হিশাব হচ্ছে শতকরা মাত্র চারজনের জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ লাগতে পারে”।

ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী ‘এটাই যদি বাস্তব পরিস্থিতি হয়’ তাহলে জর্জিও যথার্থই প্রশ্ন করছেন, “কেন গণমাধ্যম এবং কর্তৃপক্ষ প্রাণপণ আতংক ছড়াচ্ছে? এই মতলবে যেন আসলেই একটি ‘জরুরি অবস্থা’ (authentic state of exception) ঘোষণা করা যায়, যাতে পুরা এলাকা জুড়ে মানুষের চলাফেরা সংকুচিত এবং দৈনন্দিন জীবন যাত্রা স্থগিত করে ফেলা যায়?”।

জর্জিও আগামবেনের এই লেখায় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই ক্ষোভ ছিল প্রবল। এই ক্ষোভ অমূলক নয়। তিনি যখন লিখছিলেন তখন কোভিড-১৯ এমন কোন বিপজ্জনক কিছু নয় এই ধারণাটাই প্রবল ছিল। ভাইরাসটি নতুন, এটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও জানাশোনাও ছিল কম। তাই ‘উন্মত্ত, অযৌক্তিক এবং একদমই ভিত্তিহীন জায়গায় দাঁড়িয়ে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার’ নামে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি আরোপ করে মানুষের যা কিছু স্বাধীনতা অবশিষ্ট আছে তা হরণ করে নেবার তোড়জোড় দেখে জর্জিও আগামবেন আশংকিত হয়েছেন। আমি তাঁর লেখাটি প্রকাশের পরপরই পড়েছিলাম। তখন কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতা সম্বন্ধে ধারণা বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট স্পষ্ট ছিল না। ভাইরাসটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জানাশোনা সংক্রমণ শুরু হবার পর ধীরে ধীরে বেড়েছে। বাড়ছে।

মানবেতিহাসে মহামারি মোকাবিলা নতুন কিছু নয়। মারী ও মড়কে মানুষ আতংকে ঘর ছেড়েছে সেই ইতিহাসও আছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য যে সাজ সাজ রব উঠেছে তা অবিশ্বাস্যই বলতে হবে। রীতিমতো বৈশ্বিক যুদ্ধ হিসাবে হাজির করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ নিয়ে শুধু ইটালিতে নয় বিশ্বব্যাপী যে আতংক উৎপাদন ও ছড়ানো হয়েছে তার কোন নজির অতীতে নাই। এতে কোভিড-১৯ ভয় পেয়ে পালাবে না। আগামবেন তাই ঠিকই বলেছেন। শুধু ইটালিতে নয়, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলার সঠিকপথ ও পন্থা নিয়ে আলাপ আলোচনার চেয়েও আতংক উৎপাদন ও আতংক ছড়ানোর প্রতিযোগিতা চলেছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে হবে, কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু আতংকবাদী রাজনীতির যে রূপ আমরা দেখছি তাতে পরিষ্কার কোভিড-১৯ কেন্দ্র করে দেশে দেশে কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ গড়ে উঠবে। অন্যদিকে গোলকায়িত পুঁজির পরিমণ্ডলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং মুনাফা প্রতিযোগিতাও তীব্র হবে। অর্থনৈতিক মন্দা বা ধস তাকে ত্বরান্বিত করবে। যদি আতঙ্কের রাজনীতিকে আমরা শুরু থেকে চ্যালেঞ্জ না করি তাহলে সম্ভাব্য বিশ্বব্যাপী ভাঙন এমন কিছুরই জন্ম দেবে না, যা আমাদের মতো গরিব ও দুর্বল দেশের উপকারে আসবে। বরং আরও কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির কঠিন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভুলে গেলে চলবে না, শেষবধি আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতার ‘বর্জ্য’ মাত্র।

ঠিক। শুরুতে ইটালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের তথ্য অপ্রতুল। এখন কি অবস্থা জানি না। কোভিড-১৯ সম্পর্কে তাদের দাবির ভিত্তিতে জর্জিও আগামবেন যে আশংকা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার সঙ্গে আমি একশ ভাগ একমত। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমরা নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের বিষয় মাত্র। করোনার অজুহাতে রাষ্ট্র ক্ষমতার আরও কেন্দ্রীভবন, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। মানুষের রাজনৈতিক ও আইনী সুরক্ষার ব্যবস্থাগুলোকে অস্বীকার করে ও বদলিয়ে মানুষকে স্রেফ জীবজন্তুর স্তরে পর্যবসিত করে কার্যত খোঁয়াড়ে রাখা হচ্ছে। আমরা এখন রাষ্ট্র নামক যে খোঁয়াড়ে বাস করি, সেই খোঁয়াড় আগামিতে আরও ইতর ও জঘন্য রূপ নেবে।

পাশ্চাত্যের আধুনিক রাষ্ট্র মানুষকে স্রেফ জীব বা জন্তুতে যেভাবে পর্যবসিত করেছে আগামবেন তার একটি সুমধুর দার্শনিক নাম দিয়েছেন, ‘বেয়ার লাইফ’ (bare life)। এই রাষ্ট্র হাওয়ায়া গড়ে ওঠনি, এর ভিত্তি আছে আধুনিক রাষ্ট্র চিন্তায়। বাংলা ভাষায় আমরা 'বেয়ার লাইফ'কে আদর করে অনুবাদ করতে পারি পারি ‘ল্যাংটা’ জীব। যে জীবের জীবন আধুনিক রাজনীতি – অর্থাৎ শুধু বল প্রয়োগ নয়, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অধীন। (‘বেয়ার লাইফ’-এর অনুবাদ ল্যাংটা ভোলানাথ বলা যেত, কিন্তু শিব মৃত্যু আর জীবনের সন্ধিবিন্দুতে থাকেন, তিনি আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীন নন। )।

আধুনিক রাষ্ট্রের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের কারিগরি নিয়ে গুরু মিশেল ফুকোর পথ অনুসরণ করে আগামবেন অনেক দিন ধরেই লেখালিখি করছেন। বিশেষত এক এগারোর পরে সারা দুনিয়ায় ইসলামি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খেয়ে না খেয়ে প্রবল আতংক তৈরি এবং তার মধ্য দিয়ে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আগের চেয়েও নিখুঁত করা হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের তোড়জোড়ের পরিপ্রেক্ষিতে আগামবেনের হোমো সাসের (Homo Sacer) সিরিজ এবং ‘ব্যতিক্রমি পরিস্থিতি’ (State of Exception) আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা ও রাষ্ট্র, আইন এবং শাসন ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বুঝতে আমাদের কাজে লেগেছে।

‘ব্যতিক্রমি পরিস্থিতি’ ধারনাটি আগামবেন প্রথম হাজির করেন তাঁর ‘হোমো সাসের’ সিরিজে। ‘স্টেইট অব একসেপশান’ বইতে সেই ধারণাটাই আরও বিস্তৃত ভাবে হাজির করেন। বাংলায় অনেকে ‘স্টেইট অব একসেপশান’-এর অনুবাদ করেছেন ‘স্বাভাবিক জরুরী অবস্থা’। এই অনুবাদে চটকদারি আছে, কিন্তু এতে আগামবেনের চিন্তাকে সামগ্রিক ভাবে বোঝার জন্য বাধা তৈরি হয়। আগামবেনের কাছে ধারণাটি শুধু সংবিধানের ভেতরে থেকে সংবিধানসহ সকল আইনী অধিকার স্থগিত করার ক্ষমতা নয়, বরং একালে এটাই শাসন ব্যবস্থার পারাডাইম বা চিন্তাসূত্র। শুধু বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪১ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনক প্রতীয়মান হলে সংবিধানের ক্ষমতাবলে জরুরী অবস্থা ঘোষণাই ‘স্টেইট অব একসেপশান’ না। আমরা যেন ‘স্টেইট অব একসেপপশান’ কিম্বা ‘জরুরি অবস্থা’কে সংকীর্ণ অর্থে না বুঝি তার জন্য The State of Exception as a Paradigm of Government শিরোনামে শুরুতেই ব্যখ্যা করা হয়েছে।

দুটো বিষয় আমাদের আলোচনার জন্য মনে রাখলে আপাতত যথেষ্ট। প্রথম বিষয় হোল, আগামবেনের আগে আইন ও রাজনীতির সম্পর্ক বিচারের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হোত আইন বুঝি রাজনীতি থেকে স্বাধীন পরিমণ্ডল বজায় রাখতে সক্ষম। কিন্তু আগামবেন দেখালেন, আধুনিক অর্থে রাজনীতি কথাটার মানেই হচ্ছে এমন এক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা যা সসময়ই জরুরী অবস্থা জারি করে স্থগিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা ধারণ করে। দ্বিতীয়ত আগামবেন চেয়েছেন মার্কসবাদী এবং নৈরাজ্যবাদী উভয়ের রাষ্ট্রচিন্তার যে গুরুতর সীমাবদ্ধতা তা কাটিয়ে ওঠা। যাতে রাষ্ট্র, রাজনীতি, বলপ্রয়োগ, আইন ইত্যাদি প্রথাগত পরিমণ্ডলের বাইরে আমরা জীবনের নতুন রূপ কিম্বা নতুন ধরণের ‘রাজনীতি’ নিয়ে ভাবতে ও সক্রিয় হতে পারি। এই দিকগুলো স্পষ্ট না হলে 'জন পরিসর', 'জন আকাঙ্ক্ষা' ইত্যাদি পুরানা চিন্তা ও বাতিল রাজনীতির চর্বত চর্বন ছাড়া আর কিছু হবে না। বাম এবং নৈরাজ্যবাদী রাজনীতি যারা করেন তাদের জন্য খবর হচ্ছে স্টেইট অব এক্সেপশান বা জরুরি অবস্থা পর্যালোচনার উদ্দেশ্য প্রথাগত মার্কসবাদ বা নৈরাজ্যবাদের আইন, সার্বভৌম ক্ষমতা, শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ভুল ও অস্পষ্টতা কাটিয়ে ওঠা। এইটুকু বলতে হচ্ছে যেন কোভিড-১৯ কেন্দ্র করে আগামবেনের অতি সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতটুকু আমরা বুঝি। এবং যারা বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির কথা ভাবছেন তাঁদের সঙ্গে আমামদের সম্পর্ক রচনা ও আলাপ আলোচনার পথ প্রশস্ত হয়।

‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ কিম্বা জরুরি অবস্থার ছুতায় ক্ষমতাবানরা শাসন ব্যবস্থায়, সংবিধানে, আইনে ফৌজদারি বিধিবিধান ইত্যাদিকে বদলায়, নাগরিক ও মানবিক অধিকার সংকুচিত করে। সবচেয়ে দৃশ্যমান যে কুকর্মটি করে সেটা হোল ‘জরুরি অবস্থা’র নামে মানুষের সকল রাজনৈতিক, নাগরিক ও মানবিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। আইন দিয়ে মানুষকে আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত করা, তার আইনী সুরক্ষার পোশাক খুলে নিয়ে মানুষকে জন্তুর মতো ল্যাংটা করে ছেড়ে দেয়া।

জর্জিও আগামবেনের লেখালিখির প্রধান বিষয় এই আধুনিক ল্যাংটা জীবের কেচ্ছা। যে নিজেও জানে না, তাকে ল্যাংটা করার এই আধুনিক পরিস্থিতি, আজকের নয়, গ্রিক চিন্তার মধ্য থেকে মধ্যযুগ হয়ে আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভবের ইতিহাসের মধ্যে নিহিত। আধুনিক রাষ্ট্র একালে মানুষকে খাঁচার পুরে রাখা জীবের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ছাড়া শাসন করতে জানে না। েটা তার চিন্তার মধ্যে, কিম্বা তার চিন্তার ইতিহাসে নাই। তাই তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা দূরের কথা, ভেঙে ফেলা ছাড়া আমাদের, সাধারণ মানুষদের আর কোন পথ নাই। নতুন ভাবে সমাজ কিভাবে গড়ে তোলা যায় শত ব্যর্থতার পরও সেই স্বপ্ন কবর থেকে তুলে আনতে হবে। ল্যাংটা জীব হয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারি না।

আগামবেনের অনেক সমালোচনা সম্ভব, কিন্তু তাঁর নিজস্ব তাত্ত্বিক জায়গা থেকে তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলার আতংকবাদি প্রপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছুই ভুল করেন নি। তবে কোভিড-১৯ সম্পর্কে তিনি যে তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন সেটা পুরাপুরি সঠিক এবং বাস্তব সম্মত ছিল না। সেখানে কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতা বোঝার ঘাটতি তাঁর থাকতে পারে, কিন্তু তাঁর মূল যুক্তি অকাট্য। আমাদের এই সিরিজ লেখার প্রধান একটি বিষয় জীবজন্তুর মতো আমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাকে বোঝা ও প্রতিরোধ করা। অতএব কোভিড-১৯ নিয়ে জর্জিও আগামবেনের লেখা নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে যে বিতর্ক চলছে তা আমরা অনুসরণ করব। আমাদেরও নতুন রাজনীতির পথ অন্বেষণের কর্তব্য রয়েছে।

সামগ্রিক ভাবে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের সর্বনাশী ক্ষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ জাতীয় ভাইরাস কি ধরণের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে সেটা শুধু চিকিৎসা শাস্ত্র এবং রোগতত্ত্ব বিস্তার বিদ্যা (Epidemiology) দিয়ে বোঝা যায় না। হতে পারে বাস্তব পরিস্থিতি বিচারের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আগামবেনের ‘ব্যতিক্রম পরিস্থিতি’ (State of Exception) সংক্রান্ত তত্ত্ব এবং মিশেল ফুকোর চিন্তার দ্বারা অনুপ্রাণিত ‘বায়োপলিটিক্স’ ধারনা এবং তার প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সুদূর বাংলাদেশে বসে আমারও সেটা টের পেতে অসুবিধা হয় নি। কিন্তু তাঁকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক চলছে তা আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। অন্যান্য চিন্তকদের চিন্তার সঙ্গেও এই সুযোগে আমার পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবার চেষ্টা করব।

আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন মার্চের ৩০ তারিখ। ইটালিতে এখন ভোর তিনটা। ইটালির শেষ খবর হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭,৬৮৯ মারা গিয়েছেন ১০,৭৭৯ এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩,০৩০। এই তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেছি। জর্জিও আগামবেন ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের যে তথ্য দিয়েছেন, সেটা শুরুর দিকের হিশাব। ইটালি প্রবল ভাবে কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত। বোঝা গেল, দর্শনেরও সময় আসে, যখন তাকে বাস্তবের মাটিতে নেমে নিজের তত্ত্ব নতুন করে পর্যালোচনা করতে হয়।

তাঁর পোস্টের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পরে একটি ব্যাখ্যা যুক্ত করেছেন। ওপরের উদ্ধৃতি সেই ব্যাখ্যা থেকে দিয়েছি। কিন্তু জর্জিও আগামবেন তাঁর অবস্থান বদলান নি। ফলে কোভিড-১৯ নিয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দরকারি তর্কবিতর্কের বাইরে আরও গোড়ার নীতিগত ও দার্শনিক তর্ক খুবই জরুরি বাহাস। এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। আগামি কয়েক কিস্তিতে আমরা এই বিষয় নিয়েই লিখব।

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।