১২. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ
বয়ান চলতেছে।
আপনাদের আর কোন আবেগ থাকতে পারবে না। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। কেন আপনারা মসজিদে যেতে চান? আপনারা কি জানেন না এতে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াবে?
না জানি না।
যারা এই সব বড় বড় কথা এখন বলছে তাদের হাতে দীর্ঘ সময় ছিল, তারা সাধারণ মানুষকে এই বিশাল কোভিড-১৯ বিপর্যয় সম্পর্কে জানাতে পারত। মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ছোঁয়াচে রোগে ছোঁয়াছুঁয়ির ভয়ংকর বিপদ বোঝাতে পারত। তাদের সংগঠিত করতে পারত। মুসল্লিদের দিয়েই মসজিদের নেতৃত্বে পাড়ায় পাড়ায় সঙ্গরোধ কমিটি করতে পারত। কিন্তু হাতে বিস্তর সময় থাকা সত্ত্বেও তারা জনগণকে একদমই সচেতন করে নি। মহামারী বিপর্যয়ে মানুষ সহায়তা পাবে তার জন্যও নিজেরা কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করে নি। এখন মানুষকে দোষারোপ করে বলছে মানুষ আবেগী, মানুষ ধর্মান্ধ, মানুষ সেন্টিমেন্টাল, মানুষ খারাপ। কেন? কারন তারা মসজিদে জামাতে নামাজ পড়তে চায়। কিন্তু দোষ কার?
একটু ভাবুন, আমি কি বলছি। মানুষের জীবন বাঁচানো আবেগী কাজ। নিজের জীবন বিপন্ন করেও মানুষ বিপর্যয়ের সময় অন্যকে বাঁচায়। আবেগ ছাড়া কোন নৈতিকতা সম্ভব না। আপন পর ভেদ একমাত্র অপরের জন্য গভীর আবেগ দ্বারাই মোচন সম্ভব। আবেগ আছে বলেই মানুষ মানুষকে ভালবাসে। কোভিড-১৯-এর মতো ছোঁয়াচে মহামারী থেকে নিজের পরিবার পড়শী ও অন্যদের বাঁচতে হলে ছোঁয়াছুঁয়ি বন্ধ করতে হবে, সেটা শুধু বিজ্ঞান দিয়ে আমরা বুঝি না। আবেগ দিয়ে বুঝি এবং নৈতিক কর্তব্য নির্ণয় করি। আবেগ আছে বলেই বুঝি এখন এই কোভিড-১৯-এর হামলার মুখে আমাদের ঘরবন্দী থাকতে হবে। যদি কোন এলাকা লকড ডাউন করতে হয়, আবেগ আছে বলেই, আমরা বুঝি মানুষের প্রাণ বাঁচাবার জন্যই নিজ নিজ এলাকায় আমাদের সাময়িক বন্দী জীবন পালন করতে হবে। নইলে আমরা মহামারীতে উজাড় হয়ে যাব। কিন্তু যারা আজ আবেগ আবেগ আবেগ বলে আবেগের বিরুদ্ধে গলদ্ঘর্ম হচ্ছে তারা সেটা চায় না। জনগন তাদের কাছে পিঁপড়ার মতো। তাদেরকে ডান্ডা দিয়ে পিটিয়ে পুলিশ মিলিটারি নামিয়ে ঘরবন্দী করাটাই তারা পছন্দ করে। তারা এই সুযোগে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও নিখুঁত করতে চায়। যার কমাণ্ডে থাকবে শুধু তারা।
অথচ মানুষ মাত্রই আবেগী। আবেগ আছে বলেই সমাজ সম্ভব। এই আবেগকেই আমরা মানুষ বাঁচাবার কাজে নিয়োজিত করতে পারতাম। বলতে পারতাম, যদি আমি ছোঁয়াছুঁয়ি বন্ধ না করি, তাহলে আমার ভালবাসার মানুষও সংক্রমিত হতে পারে। আমি দায়িত্বহীন হলে আমার ষাটোর্ধ বাবা, চাচা, নানা, দাদাদের আমরা হারাবো। যারা ডায়াবেটিক, হার্টের রোগী কিম্বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আমরা হারিয়ে ফেলব। যদি আমরা আবেগকে কাজে লাগাতাম, আজ পুলিশ আর সামরিক বাহিনী দিয়ে আমাদের ঘরবন্দী করার দরকার হোত না। আমরা স্বেচ্ছায় নিজেরাই সেটা করতাম।
আবেগকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করাই আসল কথা, আবেগের বিরোধিতা নয়।
কিন্তু যারা এখন আবেগের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে তাদের টার্গেট মসজিদ। তাদের ধারণা বাংলাদেশের সব লোক ধর্মান্ধ, কেবল তারাই ধর্ম থেকে মুক্ত। কারণ তারা আবেগী না।
মানুষের জীবন বাঁচাবার কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। ক্রমাগত সত্য লুকানো হয়েছে। অসহায় মানুষ হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মরেছে। মরছে। মাস্ক নাই। টেস্ট কীট নাই। পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নাই। কিন্তু এদের কোনই আবেগ নাই। উল্টা তারা নির্বিকার বলে যাচ্ছে আবেগী হবেন না। আসন্ন মৃত্যুর মিছিল আসছে জেনেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় নি। মানুষের মৃত্যুতে তাদের প্রাণ গলে না।
এই অবস্থায় মানুষের আল্লার শরণপন্ন না হয়ে কি করবে? কিন্তূ সেটাও করা যাবে না। কোভিড-১৯ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। ধর্মপ্রাণ হওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি ইনফেকশান ছড়াবার বাহক মাত্র। যাদের আবেগ নাইতারা দোষী না, আপনি ধর্মপ্রাণ ও আবেগী অতএব আপনি দোষী।
আবেগ নিয়া বড় বড় কথা শুনছি। টেলিভিশানে বিরাট বিরাট ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে। এদের আমরা চিনি। অবাক হবার কিছু নাই, তাদের টার্গেট মসজিদ। মসজিদে নামাজ পড়া সাধারণ মানুষের গভীর আবেগের বিষয়। আসলে তাদের টার্গেট যথারীতি ইসলাম।
এইসব ভণ্ডদের যুক্তি হচ্ছে যাদের আবেগ আছে, তাদের কোন বাস্তবতাবোধ নাই। মহামারী থেকে বাঁচতে হলে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে আবেগ থাকলে সেই বোধবুদ্ধি লোপ পায়। এরা মিথ্যুক।
বরং এখন সবচেয়ে বেশী দরকার আবেগ। মানুষ মরবে, মানুষকে বাঁচাতে হবে, এটা আবেগ দিয়ে আগে বুঝতে হবে, কেবল তারপরই বুঝব এখন দরকার বিজ্ঞান ও মহামারি ব্যবস্থাপনা।
কোভিড-১৯ মোকাবিলার নামে মসজিদকে টার্গেট করা, মানুষের সহজ ও স্বাভাবিক ধর্মপ্রাণতাকে নিন্দা করার নিন্দা জানাই।