জায়নবাদ, আত্মপরিচয় ও ইতিহাস পাঠ
এ বছর ৮ জুলাই থেকে ২৬ অগাস্ট (২০১৪) গাজার হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা জরুরী হয়ে পড়েছে। খুবই গোড়ার প্রশ্ন: জায়নবাদ (Zionism) আসলে কী? ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এই বর্গটির দরকার কেন? ইজরায়েল আরবদের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে এটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি, একে বিশ্লেষণ বা বোঝার জন্য ধারণা হিসাবে জায়নবাদ কি কাজে লাগে? ইত্যাদি। বলাবাহুল্য জায়নবাদ বুঝলে জায়নবাদি কথাটাও বোঝা হয়। অনুমান করা যায় কেউ জন্মসূত্রে ইহুদি কিম্বা ইহুদি ধর্মে বিশ্বাসী হলেই ‘জায়নবাদি’ হবে তার কোন কারন নাই। কারন ‘জায়নবাদ’ একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ। ইহুদি ধর্ম এবং ইহুদি ধর্মগ্রন্থের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে বটে, কিন্ত জায়নবাদ আর ইহুদি ধর্ম এক কথা নয়। জন্মসূত্রে বা ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে নিজেকে ইহুদি গণ্য করা আর জায়নবাদি হওয়া এক কথা নয়।
‘জায়নবাদ’ পরিচিতি
বাংলায় ‘জায়নবাদ’-কে অনেক সময় সহজে বোঝাবার জন্য আমরা ‘ইহুদিবাদ’ অনুবাদ করি। কিন্তু এর সমস্যা রয়েছে। এতে মনে হয় জায়নবাদের সঙ্গে ইহুদি ধর্মের মিল আন্তরিক। এমনকি উভয়ে বুঝি সমার্থক। এই অনুবাদ সমার্থক গণ্য করবার শর্ত তৈরি করে। জায়নবাদ আধুনিক জাতিবাদী ধারণা যার নির্মাণে ইহুদি ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থের নানান মিথ বা কল্পকথার ভূমিকা আছে। ‘জায়ন’ নামক পাহাড়কে এই মতাদর্শের প্রতীকী উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রাচীন ইহুদি ধর্মগ্রন্থকে আধুনিক জাতিবাদী প্রকল্পে পরিণত করবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ইহুদি ধর্ম ও জায়নবাদ এক নয়। যে কারণে আমরা ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে যারা অর্থডক্স, প্রাচীন বা ঐতিহ্যবাদি তাঁদের বড় একটা অংশ ইজরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকার করেন না এবং জায়নবাদের বিরোধিতা করেন।
জায়নিজম হল একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন যা ১৯ শতকের শেষের দিকে আরবদের ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল। “জায়নবাদ” শব্দটি জেরুজালেমের একটি পাহাড় “জিওন” থেকে এসেছে যা ইহুদি ঐতিহ্যে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলনটি ২০ শতকের গোড়ার দিকে গতি লাভ করে, যার ফলে ১৯৪৮ সালে শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য আরব ভূখণ্ডে ইজরায়েল নামক একটি রাষ্ট্র ঔপনিবেশিক ইউরোপ ও সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়। ইজরায়েল রাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্ব আরব ইহুদিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নয়, যা অনেকেই ভুল করেন। আরব ইহুদিরা হাজার হাজার বছর ধরে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সঙ্গে বাস করে আসছেন। এই দ্বন্দ্ব মূলত ইউরোপ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইহুদিদের জন্য বানানো আধুনিক জাতিবাদী রাষ্ট্র ইজরায়েলের সঙ্গে স্থানীয় আরব জনগণের লড়াই। জায়নিস্ট উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আরব জনগণের উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রাম। যার মধ্যে ইহুদি, খ্রিস্টিয় ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরাও রয়েছেন।
জায়নবাদের আদর্শিক দাবি দাওয়া
জায়নবাদ কিভাবে ঐতিহাসিক ভাবে বিশেষ জাতিবাদী মতাদর্শ হিশাবে দানা বাঁধল তার দীর্ঘ ইতিহাস ও টানাপড়েন রয়েছে। তবে জায়নবাদকে বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে তার আদর্শ বা দাবিদাওয়া গুলোর দিকে নজর দেওয়া:
ধর্মীয় জাতিবাদ: ভাষা, সংস্কৃতি বা বর্তমান অবস্থা যাই হোক, কিম্বা ইহুদি ধর্ম বিশ্বাসীরা যে যেখানেই থাকুক তারা ধর্মসূত্রে একটি ‘জাতি’। এই ধর্মীয় জাতিচেতনা জায়নবাদিরা আধুনিক জাতিবাদী ধারণা তৈরি করতে ব্যবহার করে। যেহেতু প্রতিটি জাতির নিজস্ব আবাসভূমি আছে অতএব আধুনিক জাতিবাদী ইহুদিদের দাবি তাদেরও একটি ‘আবাসভূমি’ লাভের অধিকার আছে। এই অধিকারের আইনী ভিত্তি হচ্ছে তাদের ধর্মগ্রন্থ তৌরাত কিম্বা আদি বাইবেল। ধর্মগ্রন্থকে তারা আল্লার সঙ্গে চুক্তি করা দলিল মনে করে অতএব তা সকল ইহলৌকিক আইনের উর্ধে। অনেকটা এরকম যে আল্লাহ বুঝি ইহুদিদের সঙ্গে রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হিশাবে একটি জমির চুক্তি করেছেন। এখন সারা বিশ্বকে সেটা মানতে হবে। ইন্টারেস্টিং দিক হোল ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আল্লাহর সঙ্গে চুক্তি করা ইহুদিদের আইনকে ইহলৌকিক আইনের উর্ধে মান্যতা দিচ্ছে এবং জায়নিস্টদের জাতিবাদী দাবি মানছে। জায়নবাদিদের দাবি মেনে নিয়েই ইজরায়েলের পক্ষাবলম্বন করে। এই দিকটি খেয়ালে রাখলে আমরা তথাকথিত ‘আধুনিকতার’ গোড়ার চেহারা ও স্ববিরোধিতা সহজে ধরতে পারি।
স্বদেশে প্রত্যাবর্তন: ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ইহুদিদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন আধুনিক জাতিবাদী ধারণা হিশাবে জায়নবাদের প্রধান রাজনৈতিক দাবি। তৌরাত ও বাইবেলে বর্ণিত কাহিনী অনুযায়ী ইহুদি জনগণকে তাদের পূর্বপুরুষের মাতৃভূমি ইরেৎজ ইজরায়েল (ইজরায়েলের ভূমি)-এ প্রত্যাবর্তন তাই শুধু জাতিবাদী যুক্তির দ্বারা নয়, ধর্মীয় ব্যাখ্যার দ্বারা সমর্থন করা হয়। এর দ্বারাই জায়নবাদিরা আরব ভূখণ্ডে বর্তমান ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইহুদিদের আবাসভূমি হিশাবে দখল করেছে।
ইহুদি সার্বভৌমত্ব: আধুনিক জাতিবাদী রাষ্ট্রের মতো জায়নিজমও একটি সার্বভৌম ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখতে চায়, যেখানে ইহুদিরা স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে এবং তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারে। ফলে এ রাষ্ট্রে ইহুদিরা ছাড়া অন্যেরা জাতিবাদী বৈষম্য বা বর্ণবাদের (Apartheid) শিকার হয়।
জাতীয় মুক্তি: ‘জায়নবাদ’কে প্রায়ই জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের একটি রূপ হিসাবে দাবি করা হয়, যার দ্বারা ‘জায়নবাদ’-কে আধুনিক জাতিবাদ এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সমান্তরালে হাজির করবার চেষ্টা চলে। ইউরোপে ইহুদিদের ওপর ঐতিহাসিক নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া হিশাবে এই বিশেষ প্রকার ধর্মীয় মতাদর্শ দানা বেঁধেছে। এর জন্য ইউরোপের ইহুদি নিধন যজ্ঞ বা ‘হোলোকস্ট’-কে ইহুদি জাতিবাদ নির্মাণের শক্তিশালী উপায় হিশাবে সততই ব্যবহার করা হয়। এর দ্বারা জাতি হিশাবে ইহুদিদের একটি আবাসভূমি এবং আরবদের ভূখণ্ডে ইহুদিদের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ন্যায্যতা দেবার চেষ্টা চলে।
সাংস্কৃতিক এবং জাতীয় পরিচয়: একটি শক্তিশালী ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বহাল রাখার জন্য জায়নবাদ ইহুদি সংস্কৃতি, ভাষা এবং পরিচয় সংরক্ষণ এবং পুনরুজ্জীবনের উপর বিশেষ ভাবে জোর দেয়। জায়নবাদ বিশেষ ভাবে জোর দেয়।
জন্মসূত্রে কিম্বা ধর্ম বিশ্বাসের সূত্রে ইহুদি হওয়া একান্তই একটি ধর্মীয় পরিচয়। সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরিতে ধর্ম নানান ভাবে ভূমিকা রাখে। কিন্তু জায়নবাদ একটি রাজনৈতিক এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিশাবে খোদ ধর্মকেই জাতিবাদী পরিচয়ের প্রধান মানদণ্ডে পরিণত করে। কিন্তু বিস্ময়কর দিক হোল আধুনিক পাশ্চাত্য নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ দাবি করলেও ঔপনিবেশিক ইউরোপ ও সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই জায়নবাদি রাষ্ট্র ইজরায়েলকে টিকিয়ে রেখেছে।
যে কোন ধর্মের মতোই ইহুদি ধর্ম একাট্টা কোন ধর্ম নয়। ইহুদি পরিচয় বৈচিত্র্যময় এবং বিভিন্ন বিশ্বাস, অনুশীলন এবং সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে ইহুদি ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জাতিবাদের মানদণ্ড হিশাবে গ্রহণ করাই জায়নবাদে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাই জায়নবাদি বিশ্বাস ও আদর্শের মধ্যেও বিভিন্নতা এবং বিভিন্ন ধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এমনই ধর্মনিরপেক্ষ বা সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। কিন্তু সর্বোপরি ধর্মীয় পরিচয়ই জায়নিজমের ক্ষেত্রে জাতিবাদী পরিচয়ের প্রধান মানদণ্ড।
ধর্মের যেমন মতাদর্শিক দিক আছে তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ধর্ম চর্চার দিক থেকে আচার-অনুষ্ঠান সামাজিক প্রথা আইন বিধিবিধান ইত্যাদিকেও আমরা ‘ধর্ম’ বলে গণ্য করি। ইতিহাসে ধর্ম-ধারণার বিবর্তন ঘটেছে, আধুনিক রাষ্ট্র বা আইন গড়ে ওঠার ফলে প্রাক-আধুনিক বিশ্বাস, প্রথা, আইন, বিধিবিধান, ন্যায়-অন্যায় ধারণা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নানান ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। সেটা নিরন্তরই ঘটে চলেছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধর্ম-ধারণার যেমন রূপান্তর ঘটেছে, তেমনি আধুনিক জাতিবাদী মতাদর্শের বিশেষ রূপ হিশাবে ‘জায়নবাদ’-ও রাজনৈতিক-মতাদর্শিক আদর্শ হিশাবে গড়ে উঠেছে। ফলে যে কোন ধর্মের ইতিহাস বিচার কিম্বা তার অন্তর্নিহিত মর্মের একটা পর্যালোচনা হতেই পারে, সেই হিসাবে বিভিন্ন বিশ্বাসের সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা এবং তার পর্যালোচনা, ইত্যাদি হওয়া জরুরি।
ধর্মে বিশ্বাস নাই বলে কেউ অন্য কিছুতে বিশ্বাস করে না ব্যাপারটা এতো সরল না। তর্ক করা যায় নাস্তিকতাও একটি ‘বিশ্বাস’। তার সবচেয়ে বিকশিত রূপের চরিত্রেও রয়েছে প্রত্যক্ষকেই পরমার্থ জ্ঞান করার নির্বিচার বিশ্বাস যে জগতের সত্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণ সম্ভব। কিম্বা মানুষের অন্য সকল মানবিক বৃত্তির মধ্যে বুদ্ধি বা যুক্তিই সত্য নির্ণয়ের একমাত্র মাপকাঠি, ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিপুল তর্কবিতর্ক আছে। সারকথা হচ্ছে, ধর্ম এবং ধর্মের ধারণার যেমন ইতিহাস আছে তেমনি ধর্মে অবিশ্বাসেরও ইতিহাস আছে। যুক্তি বলি কিম্বা ইতিহাস বলি — ধর্ম, ধর্মহীনতা, নাস্তিকতা, বা প্রাতিষ্ঠানিক আচার অনুষ্ঠান সংস্কৃতি ইত্যাদি সহ যে কোন বিশ্বাস বা অবিশ্বাস সকল কিছুরই পর্যালোচনা হতে পারে। সেইদিক থেকে ইহুদি ধর্ম সহ অন্য সকল ধর্ম বা ধর্ম পরিচয়েরও বিচার জরুরি। সেই দীর্ঘ ও বিস্তৃত পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে রেখে আমরা আমাদের আলোচনা একটা সহজ জায়গায় নিষ্পত্তি করতে পারি। সেটা হোল ‘জায়নবাদ’ প্রাচীন কোন ধর্ম বিশ্বাস নয়, বরং আধুনিকতা বা আধুনিক সময়ের একটি শক্তিশালী মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যাকে মোটা দাগে আমরা জাতিবাদ বা জাতীয়তাবাদ বলি। আধুনিক ইউরোপে আধুনিক জাতি এবং জাতিরাষ্ট্রের ধারণা দানা বাঁধবার মধ্য দিয়েই ‘জায়নবাদ’ একটি জাতিবাদী মতাদর্শ হিশাবে শক্তিশালী হয়েছে। আধুনিক জাতিবাদ এবং জাতিরাষ্ট্রের অনুমান ও ইতিহাসের আলোকেই আমরা জায়নবাদের পর্যালোচনার পক্ষপাতী। ওপরে জায়নবাদের আলোচনা সেই পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই পেশ করা হয়েছে।
পর্যালোচনার অভাব ঘটলে সমাজে মোটা দাগে দুই ধরণের মতান্ধতা তৈরি হয়। এক পক্ষ মনে করে মানুষ অতীতে যা ভেবেছে, করেছে অর্থাৎ আধুনিকতার আগে মানুষের চিন্তা, অভিজ্ঞতা বা ইতিহাসের কোন মূল্য নাই, শিক্ষণীয় নাই, কিম্বা অতীতের উপলব্ধিকে জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় আরও বিকশিত করে নেবার দায় নাই, ইত্যাদি। যা অতীত তা বাতিল। এর ফলে প্রগতি একটি কালনির্ভর বা কালিক ধারণায় পর্যবসিত হয়। মানুষের চিন্তা ও অপরাপর বৃত্তির বিকাশ হিশাবে গণ্য হয় না। অতীতকে বাতিল গণ্য না করা প্রতিক্রিয়াশীলতা হিশাবে চিহ্নিত করা হয়। প্রগতি/প্রতিক্রিয়াশীলতার বাইনারির মধ্যে মানুষ খাবি খেতে থাকে। দ্বিতীয় মতান্ধতা তৈরি হয় মানুষের চিন্তা, বুদ্ধি কিম্বা প্রজ্ঞার বিকাশের মোকাবিলায় অক্ষম হয়ে অতীতকে নির্বিচারে প্রাণান্ত আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা। ধর্ম তখন স্রেফ নির্বিচার বিশ্বাস কিম্বা মর্মহীন অন্তঃসারশূন্য আত্মপরিচয়ের বয়ান হয়ে ওঠে। যে সত্যের সার কথা সবসময়েই ‘অপর’ বা অন্য ধর্মালম্বিদের বিপরীতে নিজের ধর্মীয় পরিচয়কে প্রধান সত্য হিশাবে হাজির বা প্রমাণের চেষ্টায় পর্যবসিত হয়। যা অনিবার্য ভাবেই সাম্প্রদায়িক বিরোধ ও সংঘর্ষের রূপ পরিগ্রহণ করে। ইউরোপের জাতিবাদ ও জাতিরাষ্ট্রের মধ্যে ‘জায়নবাদ’ তেমনি ইহুদি হিশাবে নিজের পরিচয়কে অনন্য জাতিসত্তা হিশাবে উপলব্ধি ও হাজির করবার মতাদর্শ এবং তা বাস্তবায়নের রাজনীতি হিশাবে গড়ে উঠেছে। ইউরোপে ইহুদিদের প্রতি যে নির্মম অত্যাচার চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তা হোলোকস্ট বা ইহুদি নিধন যজ্ঞে রূপ নেয়। ইউরোপের বাস্তবতায় জায়নবাদ একটি শক্তিশালী ইহুদি জাতীবাদী ধারার রূপ নেয় যেখানে ধর্ম হয়ে ওঠে নিজেদের ‘জাতি’ হিশাবে দাবি করার মানদণ্ড বা ভিত্তি।
‘এন্টি-সেমিটিজম’ বা ইহুদি বিদ্বেষ
জায়নবাদ (Zionism), জায়নবাদি (Zionist) ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আসলে কী, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন ধারণা বাংলাদেশে নাই। এ বিষয়ে খুব একটা আলোচনা কিম্বা তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ চোখে পড়ে না। সে কারণে রাষ্ট্র হিসাবে ইজরায়েলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী কি হবে, জায়নবাদের সঙ্গে ইহুদিদের সম্পর্ক কি, ইজরায়েলের বিরোধিতা করার অর্থ আসলে ইহুদিদের বিরোধিতা কিনা -- ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রশ্ন বাংলাদেশে খুবই অপরিচ্ছন্ন জায়গায় পড়ে রয়েছে।
জায়নবাদি বা জায়নিস্টের সঙ্গে হজরত মূসার (আ) অনুসারী ইহুদির কোন সম্পর্ক নাই এটা বোঝা কঠিন কিছু না। অতএব জন্মসূত্রে কেউ ইহুদি হলেই তিনি জায়নাবাদী হবেন এমন কোন কথা নাই। বরং জায়নবাদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের তিনি ঘোরতর বিরোধী হতে পারেন। নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন, নোয়াম চমস্কি সহ জন্মসূত্রে বিস্তর ইহুদি রয়েছেন যারা ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রাম শুধু নয়, দুনিয়ার সকল মজলুমের পরীক্ষিত মিত্র। এমনকি গোঁড়া ইহুদিও অনেকে আছেন যারা ঘোরতর ভাবে জায়নবাদ বিরোধী। ফলে জায়নবাদ বা জায়নবাদি রাষ্ট্র ইসরাইয়েলের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমরা ইহুদি বিরোধী বা ইহুদি বিদ্বেষী হয়ে গেলাম কিনা খামাখা সেই ভদ্রলোকী দুশ্চিন্তায় পড়বার কোন কারন নাই। সেটা সামাল দিতে গিয়ে বিশ্বাস ও মতাদর্শের দিক থেকে যারা ইহুদি মতাবলম্বী তারা কিভাবে তাদের মতকে একালে হাজির করছেন তাকে বিচারের বাইরে রেখে দেওয়াও সমীচিন নয়। সেটা শুধু ইহুদি ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে নয় – যে কোন ধর্মতত্ত্ব বা মতাদর্শ সম্পর্কেই সত্য।
ইহুদি বিদ্বেষ বা ঘৃণাকে ‘এন্টি-সেমিটিজম’ বলে গণ্য করা হয়। কেউ যদি নিজের ‘ইহুদি’ পরিচয় নির্মান করতে গিয়ে মনে করে সেমিটিক ভাষা ও সংস্কৃতিতে তাদেরই একমাত্র অধিকার, আরবের অন্য কোন জাতি বা ভাষা গোষ্ঠির সেই অধিকার নাই তাহলে এই ইহুদিপন্নতাও জায়নিজমের আরেকটি রূপ। একই ভাবে আরবি ভাষা শুধু মুসলমানদের ভাষা এই দাবিও সমস্যার। কারণ ইহুদি, খ্রিস্টানসহ আরবের আরও অনেক লৌকিক ধর্মে বিশ্বাসীরাও আরবি বলেন। যারা ইসলাম গ্রহণ করে নি।
তবে শুধু ইহুদিরাই সেমিটিক এই দাবি নতুন জটিলতা তৈরি করে। কারণ শুধু ইহুদিরাই নৃতাত্ত্বিক কিম্বা ভাষাগত ভাবে সেমিটিক জাতি নয়। সেমিটিক জাতি বলতে সেই সমস্ত জাতি বা জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যারা সেমিটিক ভাষা পরিবারের ভাষাভাষী। সেমিটিক ভাষা পরিবারের মধ্যে রয়েছে আরবি, হিব্রু, অ্যামহারিক, অ্যারামি এবং আরও অন্যান্য ভাষা।
সেমিটিক জাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে হাজির রয়েছে আরব। যারা মূলত উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসী। আরবদের ভাষা আরবি। ইহুদিরাও মূলত মধ্যপ্রাচ্যের যারা সাধারণত হিব্রু ভাষায় কথা বলে। অ্যামহারিক ইথিওপিয়ায় এবং ইরিত্রিয়া থেকে আসা মানুষ অ্যামহারিক ভাষায় কথা বলেন। অ্যারামিক হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা মানুষ, যারা অ্যারামি ভাষায় কথা বলে। সেমিটিক জাতিগুলির মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল যে তারা সাধারণত একই ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত। আরবরা বেশির ভাগই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, হিব্রুরা বেশির ভাগই ইহুদি এবং অ্যামহারিকরা বেশিরভাগই খ্রিস্টান। সেমিটিক জাতিগুলির মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে। যেমন, আরবরা বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলে, হিব্রুরা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং অ্যামহারিকরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত। সেমিটিক জাতিগুলির একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। তারা মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পৃথিবীর তিনটি প্রধান ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে সেমিটিকদের মধ্যে।
মুশকিল হচ্ছে ইহুদি পরিচয় শুধু ধর্মীয় পরিচয় নয়, এর সঙ্গে জাতিগত পরিচয় বা বংশলতিকার দাবি নিহিত রয়েছে। এন্টি-সেমিটিক শব্দটি এসেছে গ্রিক ‘এন্টি’ থেকে যা বিরোধিতা বোঝায়। এন্টি-সেমিটিজম অর্থ সেমিটিক জাতি বা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্য বা শত্রুতা। এন্টি-সেমিটিজম নানান রূপে প্রকাশ পায়, যেমন, কোন বক্তৃতা কিম্বা লিখিত ভাষায় সেমিটিক জাতি বা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বৈষম্য ছড়ানো। সেমিটিক জাতি বা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আইন বা নীতি প্রবর্তন এন্টি-সেমিটিজমের আরেকটি কঠোর রূপ। এন্টি-সেমিটিজমের আরও হিংস্র রূপ হচ্ছে সেমিটিক জাতি বা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শারীরিক বা মানসিক সহিংসতা, যা ইউরোপে হোলকস্ট বা ইহুদিদের চুল্লিতে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে। সে কারণে ‘এন্টি-সেমিটিজম’ কথাটা সাধারণত ইহুদি বিদ্বেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস জুড়ে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং নির্যাতনের কারণে এন্টি-সেমিটিজম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ধারণা হিশাবে পাশ্চাত্যে গড়ে উঠেছে। মধ্যযুগে ইহুদিদের উপর দাসত্ব এবং নির্যাতনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, নাৎসিরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়, যাতে প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়। ইহুদিরা সেমিটিক জাতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে এন্টি-সেমিটিজম কথাটা ঐতিহাসিক কারণে শুধু ইহুদি বিদ্বেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার পর এন্টি-সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষ কথাটা বর্ণবৈষম্যবাদী জায়নবাদি সেটলার কলোনিয়াল স্টেইট ইজরায়েল রক্ষার অস্ত্র হিশাবে আজকাল ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ইজরায়েল রাষ্ট্রের এপারথেইড চরিত্রের সমালোচনা, গাজা অবরুদ্ধ করে রাখা এবং নির্বিচার হত্যার সমালোচনার মুখ খামোশ করে দেবার জন্য ‘এন্টি-সেমিটিজম’ দাগা ব্যবহার করা হয়। এন্টি-সেমিটিজম দাগা দিয়ে ইজরায়েলপন্থিরা মত প্রকাশের অধিকার হরণ করে চলেছে যা নতুন বিপদ সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে “এন্টি-সেমিটিজম” শব্দটির ব্যবহার জায়নিস্ট সেটলার কলোনিয়াল রাষ্ট্র ইজরায়েলের সমালোচনাকে রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা এন্টি-সেমিটিজম সংজ্ঞার বিকৃতি এবং জায়নিস্টদের সমালোচনা দমন করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। জায়নিস্ট সেটলার কলোনিয়াল রাষ্ট্র ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলা এন্টি-সেমিটিজম না। এটি একটি রাজনৈতিক অবস্থান যা বর্ণবাদ, ধর্মীয় জাতিবাদ, ধর্মগ্রন্থকে পার্থিব জমির দলিল হিশাবে ব্যবহার, ফিলিস্তিনী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হরণ, গাজাকে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ বানানো এবং সর্বোপরি ইজরায়েলের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ আড়াল করবার জন্য ব্যবহার করা হয়।
রাণী ও বাঁদির বংশ ও বংশ লতিকা
আরব দেশে বংশ, গোত্র ও জাতির তর্ক ও রক্তাক্ত বিরোধের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, তিক্ত ও সহিংস। এমন কি গোড়ায় কে রাণীর আর কে বাঁদির গর্ভ থেকে জন্ম সেই তর্কের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী যুক্ত। কারা হজরত ইব্রাহিমের প্রথম স্ত্রী সারা’র বংশলতিকা বহন করছে আর কে সারা’র বাঁদি হাজেরার – এই সকল আদি ধর্মতাত্ত্বিক তর্ক বাদ দিলে একেশ্বরবাদী ধর্মাবলম্বিদের মধ্যে বিরোধের গোড়ার জায়গাগুলো আমরা ধরতে পারবো না। অভিজাতদের বিরুদ্ধে বাঁদির বংশের দীর্ঘ লড়াইকে কোন আধুনিক মানবতাবাদী বয়ান দিয়েও মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এটা ইতিহাস কিম্বা ইতিহাস অর্থে ঐতিহ্য। ধর্মতত্ত্ব নয়। এর সমাধানের হদিস ইতিহাস জানা, বোঝা ও বিচারের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে ইসলামের ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে এই গোড়ার বর্ণবাদী ও জাতিবৈষম্যবাদী তর্কগুলোকে নতুন করে আমাদের বোঝা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশ্চাত্যের চোখে ইসলাম বাঁদির বংশধরদের দাবি, যারা ঔদ্ধতের সঙ্গে তাদের বংশেও নবী এসেছেন বলে দাবি করে।
রাণীর সন্তান আর বাঁদির বাচ্চাদের এই ঐতিহাসিক বিরোধের ক্ষেত্র আজও অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিরোধের এই বিশেষ ক্ষেত্রটি নানা কারণে নজরের বাইরে থেকে যায়। বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত থাকার এটা একটা বড় কারণ। জাত, পাত, উচ্চশ্রেণি ও অভিজাততন্ত্রের পক্ষপাতী রাণীর সন্তানদের বিরুদ্ধে মজলুম বাঁদির বাচ্চাদের লড়াই একালেও পুরামাত্রায় বহাল আছে। শুধু ধর্মতত্ত্ব দিয়ে সেটা বোঝা যাবে না। জায়নবাদ একই সঙ্গে অভিজাততন্ত্র, গোত্রবাদ, রক্তবাদ, বর্ণবাদের সঙ্গে যুক্ত। বিপরীতে বর্ণবাদ, জাতিবাদী অহংকার, রক্তের আভিজাত্যসহ গোত্রবাদ গোষ্ঠবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াই একালের দাবি।
আরবদেশে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর মধ্যে সকলের শেষে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে। এর আবির্ভাবের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট নানান দিক থেকে পর্যালোচনা জরুরি। তবে ইসলাম কেন সকল প্রকার অভিজাততন্ত্র, গোত্রবাদ, রক্ত, বর্ণসহ সকল প্রকার জাতিবাদ, গোষ্ঠবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ হিসাবে উদিত হোল তার মর্ম ঘূণাক্ষরেও আমরা ধরতে পারব না যদি আমরা রাণীর বংশধর আর বাঁদির বংশধরদের আদি বিরোধ মনে না রাখি। সম্ভবত বাস্তব ইতিহাসের মধ্যে প্রবেশ করবার এটাই সদর রাস্তা। ইতিহাসের সেই মর্ম ভুলে গিয়ে মুসলমানরা জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইকে এখন নিছকই ইহুদি-নাসারার বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’-এ পর্যবসিত করেছে। যদি সেই ইতিহাসের মর্মে প্রবেশ করা না যায় তাহলে ইহুদি-নাসারার ঘৃণা চর্চার মধ্য দিয়ে ইসলামের যে করুণ ও সাম্প্রদায়িক অধঃপতন ঘটেছে তার কিছুই আমরা ধরতে পারব না। জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগে ফিরে গিয়ে খোদ ইসলামকেই বিপন্ন করে তোলার এই ইতিহাসের সূত্র চিহ্নিত করতে পারা জরুরি।
ইতিহাস-বিচ্ছিন্ন তত্ত্ব ও ধর্মীয় আত্মপরিচয় নতুন জটিলতা তৈরী করে। অথচ ইসলামই নিঃসংকোচে ও নিঃশর্ত ভাবে অন্য সকল ধর্মের নবি রসুল তো বটেই এমনকি বিভিন্ন জাতির পথ প্রদর্শকদের মেনে নিতে বিন্দু মাত্র কুন্ঠা বোধ করে নি। কারন প্রত্যককেই আল্লার তরফেই মানুষকে সুপথে আনার জন্য স্বয়ং আল্লাই পাঠিয়েছেন। হজরত ঈসা (সাঃ) আর হজরত মুসা (সাঃ) উভয়েই আল্লার রসুল, রাসুলুল্লাহ। একজন ‘কলিমুল্লাহ’, অন্যজন ‘রুহুল্লাহ’। এঁদের নবী ও রসুল হিশাবে না মানলে মুসলমান হওয়া যায় না। ইসলাম সাক্ষী — একই ভাবে নিপীড়িত, মজলুম এবং বাঁদির বাচ্চা বলে ইতিহাসে যাদের সবসময় বর্জ্য হিসাবে সমাজের তলানি বা প্রান্ত সীমায় নিক্ষেপ করা হয় তাদের পক্ষে জিহাদ ছাড়া নিজেকে মোমিন দাবি করারও কোন হক নাই।
এই উপমহাদেশেও আমরা দেখি জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই ইসলাম এসেছে, নিছক ধর্ম বা ধর্মতত্ত্ব আকারে আসে নাই। এসেছে অজাতের কিম্বা শূদ্রের মুক্তির বাণী হিসাবে। সেই ইতিহাস আমরা ভুলে গিয়েছি বলে এই উপমহাদেশ থেকে জাতপাতের বর্বর অত্যাচার উৎখাত করা যায় নি। মুসলমানরা তাদের ধর্মের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ভুলে গিয়ে একে নিছকই ধর্মতত্ত্ব এবং নির্বিচার বিশ্বাসে পরিণত করেছে। ইসলাম শুধু পারলৌকিক মুক্তির জন্য আসে নি, বরং ইহলৌকিক জীবন সুন্দর করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাজির হয়েছে। এখানে ইসলামের সঙ্গে তার আগের সেমিটিক ধর্মগুলোর প্রধান পার্থক্য। কিন্তু রক্তবাদ, গোষ্ঠবাদ, গোত্রবাদ, পরিচয়বাদ, জাতিবাদ সহ সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতনের অবসানের কথা ভুলে গিয়ে ইসলাম একটি পরিচয়-সর্বস্ব পরকালীন ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছে প্রায়। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যেমন জায়নিস্ট সেটলার কলোনিয়াল রাষ্ট্র ইজরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিক তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রাহ্মণ্যবাদ নতুন শক্তি হিসাবে পুনর্গঠিত হতে পেরেছে। হিন্দুত্ববাদ জায়নবাদেরই উপমহাদেশীয় সংস্করণ। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের ধারাবাহিকতায় হিন্দুত্ববাদ উপমহাদেশে কায়েম হচ্ছে। এখন উপমহাদেশের নিপীড়িত নির্যাতীত জনগণকে নরেন্দ্র মোদির ‘হিন্দুত্ববাদ’ মোকাবিলা করতে হলে ইসলামকে ধর্মীয় জাতিবাদী মতাদর্শে পর্যবসিত করলে চলবে না। ধর্ম, জাতিবাদ এবং ইতিহাসের পর্যালোচনা ছাড়া এক হাতে কোরান আর এক হাতে তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে মোকাবিলা অসম্ভব — কামিয়াব তো দূরের কথা। সেটা আগাম বলে রাখা যায়।
চাই সংকীর্ণ আত্মপরিচয়ের ফাঁদ থেকে মুক্তি
তাহলে জন্মসূত্রে কেউ ইহুদি, খ্রিস্টান বা মুসলমান দাবি করে শান্তি ও সহযোগিতার চর্চাতে সফলতা পাবার সম্ভাবনা নাই। গোড়ার সমস্যায় অর্থাৎ ইতিহাসের যে আদিকথনগুলো আমরা ভুলে বসে আছি সে সকল গোড়ায় তর্কে ফিরতে হবে। অন্তঃসারশূন্য ধর্মীয় আত্মপরিচয় বিস্তর জটিলতা তৈরি করে। ধর্ম যখন স্রেফ আত্মপরিচয়ে পর্যবসিত হয় তখন তা সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিবাদে রূপ নেয়। সবাই থাকুক নিজ নিজ ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে আর আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির সানাই বাজাই – ব্যাপারটা এতো সরল বা সহজ নয়। নিজের আত্মপরিচয় নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজের ইতিহাস কে কিভাবে পড়েছে, জেনেছে ও আমলে নিয়েছে তার হদিস নেবার প্রশ্ন থেকে যায়। এটা সেকুলারিজম বনাম রিলিজিয়নের তর্কও নয়; অনৈতিহাসিক জায়গা থেকে ধর্মকে নিছকই ধর্মতত্ত্ব হিসাবে মেনে নেওয়ার অর্থ ইতিহাসের অভিমুখ নির্ণয়ে অক্ষম হয়ে পড়া এবং মানবেতিহাসের আদি তর্ক ও জিজ্ঞাসা অস্পষ্ট করে তোলা। কী অর্থে নিজের পরিচয় প্রদান, ইতিহাসের কী পাঠ নিয়ে ধর্মের দাবি — ইত্যাদি জিজ্ঞাসার হদিস নেওয়া তাই যারপরনাই দরকার হয়ে পড়ে।
ইসলামে জন্মসূত্রে মুসলমান হবার কোন সুযোগ নাই। শুধু কলমা পড়লেই চলে না – যিনি ইসলাম গ্রহণ করতে চান তাকে ‘সাক্ষ্য’ দিতে হয়। অর্থাৎ তিনি কি গ্রহণ করলেন, কি বর্জন করলেন তা তিনি ঠিক উপলব্ধি করেছেন কিনা সেই সাক্ষ্য। আখেরি নবীকে রসুল বলে মেনে নিলেই চলছে না, তাঁর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যে বিশেষ মূহূর্ত হাজির হয়েছিল তার অর্থ উপলব্ধি করতে ব্যাক্তি সক্ষম কিনা সেই পরীক্ষা দেবার প্রয়োজন হয়ে পড়ে — সাক্ষী দেওয়ার অর্থ সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকা, তার ঐতিহাসিক অর্থ কবুল করা। জাতিবাদের ধর্মীয় ও সেকুলার উভয় কালপর্ব দ্রুত অতিক্রম করে যাবার অর্থ ধর্মোপলব্ধির ঐতিহাসিক মূহূর্তের সাক্ষী হতে পারা।
ইতিহাসের সঙ্গে কোন সম্পর্ক এবং যার যার ধর্মের অন্তর্নিহত তাৎপর্য অনুধাবনের চেষ্টা ছাড়া শুধু ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের দাবি বা ধর্মীয় জাতিবাদ সাম্প্রদায়িকতা, হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহের জন্ম দেয়। সে কারণে ধর্ম বা ধর্মতত্ত্বকে ঐতিহাসিক ভাবে পাঠ এবং ধর্মের অন্তর্নিহিত সারার্থ হৃদয়ঙ্গমের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যালোচনার গুরুত্ব একালে প্রায় সকলেই স্বীকার করেন। সেই ঐতিহাসিক কর্তব্য পাশ কাটিয়ে মানবেতিহাসের পক্ষে সামনে পা বাড়ানো অসম্ভবই বটে। যে কারণে আমরা দেখছি সেমিটিক ধর্মগুলোর ইতিহাস, মর্ম, জায়নবাদ সহ সকল ধর্মীয় জাতিবাদের পর্যালোচনা ছাড়া আমরা আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থাকেও ভাল করে বুঝতে পার না। আপাতত এইটুকু আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইহুদি আর জায়নবাদি এক কথা নয়। যেন আমরা বুঝতে পারি লড়াইটা ইহুদি-নাসারার বিরুদ্ধে নয়, মূলত আধুনিক জাতিবাদ, ঔপনিবেশিকতা এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ত মুসলমান, হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করলেই কেউ সাম্প্রদায়িক হন না, কিম্বা ধর্মীয় জাতিবাদীতে পরিণত হন না, বরং আমরা কে কিভাবে আমাদের ইতিহাস, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিকে উপলব্ধি ও বিচার করছে তার সঙ্গে অপরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ধরণ নির্ভর করে। সেটা আমাদের যার যার সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চায় ধরা পড়ে।
জায়নবাদিরা মনে করে ফিলিস্তিনের ভূখন্ড দখল করে একটি সার্বভৌম ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করা একটি ভাল চিন্তা। এই রাষ্ট্রই আইন করে ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানের চর্চার মাধ্যমে ইহুদিদের জন্যই একটি হোমল্যাণ্ড কায়েম করবে; পিতৃভূমি বা মাতৃভূমি সেটা যাই হোক। এটাই ইউরোপে ইহুদিরা যে বিদ্বেষ, ঘৃণা ও নির্যাতন সহ্য করেছে তা মোচনের একমাত্র উপায়। একটি দেশের অধিবাসীদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত করে তাদের ভূখণ্ড দখল করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহায়তায় সেখানে জায়নবাদী রাষ্ট্র কায়েম করা – এটাই ইউরোপের পাপ ক্ষালন এবং ইহুদি সমস্যার সমাধান – এটাই জায়নবাদের সার কথা। শুধু তাই নয় সেই দেশে ইহুদিরা স্থানীয় অন্য ধর্ম বিশ্বাসী অধিবাসীদের কাছ থেকে আলাদা থাকবে। এই চিন্তা বাস্তবায়নের জন্যই আরবদের দেশ ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের ভূমি ও রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে – জায়নবাদের এটাই যুক্তি।
এই যুক্তির পক্ষে ন্যায্যতা কি? ন্যায্যতা হোল আল্লাহর সঙ্গে ইহুদিদের চুক্তি হয়েছে, সেটা বাইবেলে ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে। অতএব জেরুজালেম ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ইহুদিদের – এটা এখন আমাদের সবাইকে মানতে হবে।
অথচ জায়নবাদিদের নেতাদের মধ্যে অনেকেই ছিল সেকুলার, ধর্ম নিরপেক্ষ এবং নাস্তিক। জায়নবাদের সঙ্গে এই দিক থেকে ধর্মবিশ্বাসী ইহুদির বড়সড় পার্থক্য আছে। সেকুলার বা নাস্তিক ইহুদিরা দাবি করে ইহুদিরা একটি নির্যাতীত জাতি। অতএব তাদের এই সংগ্রাম নির্যাতীত জাতির মুক্তি সংগ্রাম। কিন্তু এই যুক্তিও ধোপে টেঁকে না। কারণ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ বা জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ঐতিহাসিক ভাবে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে একটি ভূখণ্ডের নির্যাতীত স্থানীয় জনগোষ্ঠির মুক্তি সংগ্রাম। পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সেটা কখনই অন্য জনগোষ্ঠির ভূখণ্ড জোর করে দখল করে সেটলার কলোনিয়াল স্টেইট প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।
ইজরায়েল ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে একটি ভূখণ্ডের নির্যাতীত স্থানীয় জনগোষ্ঠির মুক্তি সংগ্রামের ফল না। সেই যুদ্ধ দূরে থাকুক, জায়নবাদ তার ঠিক উল্টাটা করেছে তারা সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় একটি ভূখণ্ডের স্থানীয় অধিবাসীদের উৎখাত, হত্যা কিম্বা বসতবাটি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ দখল করে নিয়েছে। সেখানেই বসতি স্থাপন করেছে। বিতাড়িত স্থানীয় অধিবাসীদের স্থান হয়েছে শরনার্থী শিবিরে। এই সকল কারণে ইউরোপে ইহুদিদের নির্যাতনের বিরোধিতা আর নির্যাতনের সমাধান হিসাবে জায়নবাদ ও ইসরাইয়েল রাষ্ট্র কায়েম এক কথা নয়। জায়নবাদ একটি সেটলার কলোনিয়াল রাষ্ট্রের মতাদর্শ।
জুয়িশ ন্যাশনাল ফাণ্ড (Jewish National Fund) গঠিত হয় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য জমি দখল করবার দরকারে। তারা তাদের প্রথম দিককার মেমোরেন্ডামে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলছে: : “to purchase, take on lease or in exchange, or otherwise acquire any lands, forests, rights of possession and other rights...for the purpose of settling Jews on such lands.” জমি হোক বনভূমি হোক ইহুদিদের জন্য তা কেনা হবে, লিজ বা অন্য যে কোন প্রকারে জমির অধিকার কায়েম করা হবে। সেটা বিনিময় হতে পারে কিম্বা ‘অন্য কোন ভাবে’ – অর্থাৎ বল প্রয়োগের মাধ্যমে। ইজরায়েল আসলে এ কারনেই একটি ‘সেটলার কলোনিয়াল’ রাষ্ট্র। স্থানীয় অধিবাসীদের বিতাড়িত করে সেখানে বাইরে থেকে লোক এনে বসতি গেঁড়ে বসা।
জায়নবাদ ও সেটলার কলনিয়াল রাষ্ট্রের মতাদর্শ যখন দানা বাঁধছে তখন ইংলণ্ড ও আমেরিকা নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন ঐক্য গঠন করতে গিয়ে চুক্তি করেছিল কেউ আর অন্য দেশ দখল বা উপনিবেশ স্থাপন করবে না। সে প্রতিশ্রুতি রুজভেল্ট ও চার্চিলের স্বাক্ষরিত আটলান্টিক চার্টার নামে পরিচিত। উপনিবেশ স্থাপনের যুগ অস্ত গেলেও সাম্রাজ্যবাদ নতুন ভাবে সেটলার কলোনিয়াল রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করে। ইজরায়েলকে অতএব সাম্রাজ্যবাদ থেকে আলাদা করে বিচার করা যাবে না।
জায়নবাদি ও ইহুদি সমার্থক নয় এটা পরিষ্কার। জায়নবাদ বিরোধিতার অর্থ ইহুদি বিরোধিতা নয়। কিন্তু ইহুদি, মুসলমান, হিন্দু, জৈন কিম্বা খ্রিস্টান কেউই ইতিহাসের বাইরে নয়। এমনকি আল্লাহর কি কুদরত নাস্তিক বা ধর্ম বিরোধিরাও নয়!! প্রগিতিশীল কি প্রতিক্রিয়াশীল প্রত্যেকেই ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতেই নিজেদের স্বরূপ প্রদর্শন করে। মতাদর্শের বিচারও যথেষ্ট নয়, একটি মতাদর্শ ঐতিহাসিক ভাবে কি রূপ ধারণ করেছে বা করে তার দ্বারা তাকে বিচার করা সঙ্গত।
গাজায় জায়নবাদি রাষ্ট্র যখন মানুষ হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছে সেই রক্তের শামিয়ানার নীচে আমরা মজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়ে কে কিভাবে ইতিহাস পাঠ করি তার দ্বারাই আমাদের চেনা যাবে। আমাদের ভবিষ্যতও তার দ্বারাই নির্ধারিত হবে।
এটা নিশ্চিত বলা যায়। অবশ্যই।
২৫ জুলাই ২০১৪, শ্যামলী, ঢাকা
[ এ লেখাটি ২৬ জুলাই ২০১৪ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। চিন্তার জন্য কিছুটা সম্পাদনা, পরিমার্জনা ও পরিবর্ধন করা হয়েছ। ২০১৪ সালে গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের যুদ্ধ (৮ জুলাই থেকে ২৬ অগাস্ট) সাধারণত ‘গাজার যুদ্ধ’ নামে পরিচত। তবে সামরিক অভিযান হিশাবে তার নাম ছিল (Operation Protective Edge)। এই যুদ্ধ ১ মাস ২ সপ্তাহ ১০ দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়। উভয় পক্ষই যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করে। ইজরায়েলের মতে, হামাস মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তারা নিজেদের ঘোষিত কোন লক্ষ্য বা দাবিও পূরণ করতে পারে নি। অন্যদিকে হামাসের দাবি করেছে ইজরায়েলকে হামাস গাজা থেকে বিতাড়িত করতে পেরেছে। সেই সময় হামাস, জায়ববাদ এবং প্যালস্টাইনের জনগণের মুক্তি সংগ্রাম নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি লেখা লিখি। এই লেখাটি তারই একটি।
ইজরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর ইমাম আহমেদ ইয়াসিনের হাতে ১৯৮৭ সালে হামাস গঠিত হয়। হামাস ইসলামিক ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনি ইমাম ও কর্মী আহমেদ ইয়াসিন দ্বারা হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে যুক্ত। ১৯৭৩ সালে মুজামা আল-ইসলামিয়া ইসলামী দাতব্য সংস্থার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে হামাস পরিগঠিত হয়। থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। 2006 সালে, হামাস ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে হামাস সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রচারণা চালিয়ে ফিলিস্তিনি আইনসভার নির্বাচনে জয়লাভ করে, ২০০৭ সালে, হামাস প্রতিদ্বন্দ্বী আল ফাতাহের কাছ থেকে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি থেকে পৃথক ও স্বাধীন ভাবে গাজা শাসন করছে।]