তুমি ছাড়া আর কোন্ শালারে আমি কেয়ার করি?


Thursday 28 June 18

তুমি ছাড়া আর কোন্ শালারে আমি কেয়ার করি? ফরহাদ মজহার; প্রথম প্রকাশ ফাল্গুন ১৪২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। আগামী প্রকাশনী, ঢাকা। পৃষ্ঠা: ৪৭; মূল্য: ১৫০/=

কবিতায় ফরহাদ মজহার এমন এক স্বতন্ত্র স্বর যা তাঁর সমকালে, অসময়ের উল্টো স্রোত বেয়ে প্রেম, প্রজ্ঞা ও প্রতিবাদের ভাষা, প্রতীক ইশারায় নতুন অর্থোৎপাদনের কাব্যিক সুষমা বিস্তার করে। এখন সেই অভিনিবেশের কাল, যা কবিতায় ইস্পাতের ঠোঁট নিয়ে আঘাত ও অন্তর্ঘাত মোকাবিলা করে। এই ত্রস্ত, নিস্তব্ধ গুমাতক্মের ভিতরে, কবিকে প্রহরীর মতো জেগে থাকতে হয়, স্বপ্ন ও সাহস নিয়ে। সেই স্বাক্ষর এ কাব্যে রেখেছেন ফরহাদ মজহার। কবি থোড়াই কেয়ার করে চোখ রাঙানি শাসানি। প্রতিকূল সময়ে বয়ে নিয়ে চলেছেন সংক্ষুব্ধ তরণী।

সূচিপত্র

ইস্পাতের ঠোঁট।
ভাদ্রে মোহাম্মেদপুরে বৃষ্টি।
হপ্তার গান।
মাছ বিষয়ে দুইটি কবিতা।
কেন তোমার মাছ কাটা দেখি।
সরল হয়ে যাও পদ্য।
নিহেতু ধর্মঘট: প্রেমের কবিতা।
বাইশে শ্রাবণ।
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে।
যদি মরে যাই।
বিদ্যাঘর।
এরোপ্লেনের জন্য উৎকণ্ঠা।
ডিম।
শারদীয় পূর্ণিমা।
শরতে সাগুফতা।
শীতের সকাল।
কমলা।
বৃহস্পতিবারে: একজন কিশোর কবিকে…।
চাষা।
ডানপিয়ন।
রে মালিনী।
সাগুফতা।
ক্রোধ।
পাখী।
মামা।

এই বই থেকে এক'টি কবিতা এখানে দেওয়া হলো:

সাগুফতা:

যে মেয়েটির কাছে আমার কাব্যসূত্রে ঋণ
তাকে এবার নাম দিয়েছি সাগুফতা ইয়াসমিন
সে কিছুটা বেঁটে এবং শরীরটা থলথলে
ততোটুকুই মধুর প্রেমে ঠিক যতোটা চলে।

গ্রীবাটা রাজহাঁসের তার চলন কিন্তু সিধা
রাজার মতোই হাঁটে মেয়ে বিন্দুমাত্র দ্বিধা
পদক্ষেপে কথায় কাজে বিন্দুমাত্র নাই
রাজার এই কন্যাটিকেই রক্তেমাংসে চাই।

যখন তাকে ভাবি আমি তখনই তার কায়া
আমার পাশে হাঁটে চলে; কর্মদৃপ্ত ছায়া
ঘামে শ্রমে বাড়ে কমে। ফেরেশতারা তাকে
ছায়ার মতো সঙ্গ দিয়ে রক্ষা করতে থাকে।

মীরপুর গোলচক্কর থেকে ফার্মগেটের বাস যাবে
তেমন একটি ভাঙা বাসে সাগুফতাকে পাবে
কোলের ওপর ক্যামেরা তার শক্ত হাতে ধরা
ছবি তোলাই নেশা খানিক পদ্যও তার পড়া।

মীরপুর গোলচক্কর থেকে ফার্মগেটের বাস
ভাঙাভুঙা টিনের বাক্স চলছে বারো মাস
জং ধরা সব বাসের চেয়ার তারই মধ্যে দেখা
রাজার মেয়ে চলছে ঢাকায় বাসের মধ্যে একা।

কোলের ওপর ক্যামেরা তার শক্ত হাতে ধরা
ছবি তোলাই নেশা খানিক পদ্যও তার পড়া।
গদ্য সে খুব পাঠ করে না ফটোগাফি জেনে
প্রবন্ধ বেশ লিখতে পারে ছবির তত্ত্ব মেনে

চোখ দিয়ে সে বিশ্ব দেখে চোখ দিয়ে সে আঁকে
চোখ দিয়ে সে ফটোগ্রাফি চোখেই ধরে রাখে
চোখ দিয়ে চোখ দেখাদেখি বিঁধল সে অন্তরে
ক্লিকে ক্লিকে শরীর সুদ্ধ শাটার শব্দ করে।

আমি ফটোগ্রাফি হবো ছাপাখানার সীসা
কে আর ঘাঁটে যদি চাপে ছবি তোলার নেশা
এই শহরের ছবি তুলব এই শহরেই আছি
সাগুফতা ও আমি দুয়ের খুবই কাছাকাছি

এই মেয়েকে নিয়েই আমি ফুচকা খেতে যাবো
ভাঙা টুলে আড্ডা দিয়ে জীবন্ত পস্তাবো
ফুচকা ভাঙলে শাটারে ক্লিক যে জানে সে জানে
ফটোপাগল মেয়ের সঙ্গে আড্ডা দেবার মানে।

কেউ চেনে না সাগুফতাকে কেবল চিনি আমি
এবং সম্ভবত চেনেন আমার অন্তর্যামী।


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।