গণআন্দোলন ও নতুন সরকার
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিত নিয়ে কমবেশী সবাই চিন্তিত, চলমান সংকটের অনিশ্চয়তা থেকে থেকে বেরুবার পথ স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট নয় এই অর্থে যে, একেবারে প্রাথমিক উপায় হিসাবে সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাই, কিম্বা দেখা যাচ্ছেনা। রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যে আকার ধারণ করেছে, তাতে করে একটি নির্বাচন মোটেও কোনো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন ঘটাবেনা। যদি ধরেও নেয়া হয়, অন্তত জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনীতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে আশু সমাধান নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা। তাও একমাত্র পূরণ হতে পারে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বাধ্য হলে কিম্বা বিদায় নিলে।
কিন্তু কখন একটা সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী মেনে নিতে অথবা চলে যেতে বাধ্য হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে সহজেই যে কেউ বলবেন, জনগণের আন্দোলনের মুখে। জনবিক্ষোভ এবং গণবিদ্রোহে সরকারের পতন ঘটে এবং ফলশ্রুতিতে জনগণ নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। আপ্ত বাক্যের মত এই কথা উচ্চারণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে, আদতে এটা বলতে আসলে কি বুঝায়, এবং বাস্তবে কখন এরকম ঘটনা ঘটে অনেকের কাছেই তা পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশে ঠিক এই জায়গাটিই অনুপস্থিত, এটা বিরোধীদলের আন্দোলনে ক্রমশ প্রকট হয়ে ধরা দিচ্ছে। জনগণ কখন নতুন সরকার চায় এবং তার জন্য বিক্ষোভে ফেটে পড়ে? জীবন দিয়ে লড়ে? জনগণ এবং সরকার, তথা জনগণের সরকার— আধুনিক রাজনীতির এই দুটি মৌলিক ধারণা কিভাবে এবং কেন তৈরি হল এক নজর দেখে নেয়া যাক।
জনগণ এবং সরকার
‘জনগণ’ নামক ধারণাটি আধুনিক রাজনীতির বিকাশে একটা বৈশিষ্ট্যসূচক মাত্রা নিয়ে হাজির হয় ফরাসি বিপ্লব থেকে। যাকে বলা হয় মাল্টিচুড বা মাসেস। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবার আগে, যখন বা যেখানেই মানুষের অসন্তোষ দানা বেধে বিক্ষোভ বা বিদ্রোহের রূপ নিয়েছে, বলা হয় তা ছিল প্রতিকার চাইবার জন্য। যখন কোন শাসক অন্যায় ও অবিচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যেত, নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করত তখন কোন একটা সম্প্রদায় বা পুরো একটা গোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, সময়ে সময়ে বিদ্রোহ করে বসেছে। আর সেই বিদ্রোহের লক্ষ্য হতো নিপীড়ন থেকে পরিত্রাণ এবং অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়া। এই চাওয়াটা থাকত, রাজা বা সম্রাটের কাছে। অন্যায়ের অবসান চাওয়ার বা পাওয়ার জায়গাটিও তখন পর্যন্ত ছিল খোদ রাজা, বা যিনি শাসন করছেন তার কাছে। ধর্মীয় বিশ্বাস বা প্রথাগত ন্যায়-নীতির যে ধারণা সে সমাজে প্রচলিত তার আলোকেই বিদ্যমান শাসকের কাছে, সেই শাসনব্যস্থার অধীনে প্রতিকার প্রত্যাশা করা হত। দাবী নিয়ে দরবারে হাজির হত। একারণে, যদি কখনো কোথাও বিদ্রোহ সরাসরি রাজার বিরুদ্ধেও পরিচালিত হত, তার লক্ষ্য ছিল ন্যায়ানুগ হতে দাবী জানানো কিম্বা একজন ন্যায়বান রাজাকে ক্ষমতায় আসীন করা, খোদ রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন নয়। অর্থাৎ বিদ্রোহ শাসকের পরিবর্তন চাইলেও সরকার বা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন ইস্যু হয়ে উঠেনি। শাসকের পরিবর্তন ছাড়িয়ে সরকার পরিবর্তনের প্রশ্নে উপনীত হওয়ার এই জায়গা থেকেই আধুনিক রাজনীতির সূচনা। এটা যুগান্তকারী, তথা এটা নতুন যুগের আরম্ভ। জনগণ এখন আর কেবল বিদ্রোহ বা বিক্ষোভ সংগঠনকারী নয়, বরং সরকার প্রতিষ্ঠা করার কর্তা।
নিজেদের সরকার নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করার এই মুহূর্তকেই পশ্চিমে তথা আধুনিক রাজনীতির ইতিহাসে বিপ্লব বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এটা একই সাথে, যেহেতু, রাজা ও রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাসহ জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বাইরে থেকে তৈরি বা বহাল যাবতীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পদ্ধিতির অবসান, তাই নতুন রূপ ও কাঠামোরও প্রস্তাবনা। এখানে বিপ্লবী পরিবর্তন মানে, জনগণের নিজের সরকার—যা সে নিজে গঠন করে এবং যার বৈধতা তাকে প্রতিনিধিত্ব করার মধ্য থেকেই কেবল উৎসারিত। অর্থাৎ যতক্ষণ তা জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার ততক্ষণ তার বৈধতা স্বীকৃত, প্রতিন্ধিত্ব না থাকলে সেই সরকার বৈধ নয়। সরকারের রূপ এবং কাঠামো কি হবে, তার বৈধতা প্রায়োগিকভাবে কি প্রক্রিয়ায় হাসেল করতে হবে তা নির্ধারণের নীতিগত বন্দোবস্ত থেকেই গঠনতন্ত্র বা ‘সাংবিধানিকতার’ উদ্ভব।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিপ্লব বলতে আমরা আজকাল যে অর্থ বুঝি অথবা একটা বিশেষ ধরনের রাজনীতিকেই বিপ্লবের সাথে একাকার করে ফেলি, এখানে মোটেই তা বুঝানো হচ্ছেনা, অন্তত এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থটা মোটেই তা ছিলনা। বরং আমরা পরিষ্কার তফাত দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এখানে আরো লক্ষণীয় বিষয় হল বিপ্লবের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য সরাসরি ‘আধুনিক রাষ্ট্র’ বা নতুন একটি রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটানোও ছিলনা। না ফরাসি বিপ্লব না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধ— যাকে আধুনিক রাষ্ট্র বা বিপ্লবের প্রথম দুটি উদাহরণ ধরা হয়— কোনোটির বেলায়ই তা বলা যাবেনা। বরং আমরা দেখি যার পরিণতিতে এই দুটি রাষ্ট্র নতুন করে, নতুন ধরনের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠীত হয়েছে তার সূচনায় ছিল শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা—যখন জনগণ নিজেরাই, নিজেদের অংশগ্রহণে নির্ধারণ করতে চেয়েছে কি ধরনের সরকার ব্যবস্থা তারা চায়।
পাশ্চাত্যে যেসব ইতিহাস 'বিপ্লব' বলে প্রতিষ্ঠিত নতুন সরকার গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন ধরণের রাষ্ট্র গঠনের পরিণতি লাভ করেছে।
এটা আগের মত আর কোনোভাবেই, রাষ্ট্র বা শাসকের সদাচরণ, নীতি-নিষ্ঠা এমনকি ন্যায়ানুগ থেকে শাসনকার্য পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। বঞ্চনা, অত্যাচার-অবিচার ক্ষোভ-বিক্ষোভের কারণ হিসাবে অবশ্যই বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটিয়েছে, কিন্তু তার অবসান কল্পে ভিন্নতর যে সমাধান বেছে নেয়া হয়েছে, সেখানেই গুণগত পার্থক্য। এর পর থেকে কেন্দ্রীয় বিবেচ্য বিষয় আর ন্যায়-অন্যায়ের অনুসরণ অথবা প্রথাগত বা স্বীকৃত আইনি অধিকার ভোগ করতে পারা না পারার প্রশ্ন থাকেনি। বরং এসমস্ত কিছুকে নিশ্চিত করার আবশ্যিক শর্ত বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে, জনগণের নিজের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
মনে রাখতে হবে, অধিকার বা মৌলিক অধিকারের ধারণা সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল, এবং এর প্রায় সবই একটি রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও ভোগ করা যেতে পারে, যেত। উদাহরণত বলা যায়, ব্রিটিশ আইনশাস্ত্রবিদ ব্ল্যাকস্টোন মৌলিক অধিকার বলে যে তিনটিকে চিহ্নিত করেছেন: জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তি’র অধিকার এবং এই তিনটি অধিকার থেকে জাত বা এগুলোকে পরিপূরণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় অপরাপর অধিকারের স্বীকৃতি ব্রিটেনের রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও ছিল; অথবা, ইসলামী আইনের উদ্দশ্য হিসাবে ইমাম গাজজালী যে পাচটি বিষয় (দ্বীন, জীবন, মেধা/চিন্তা, পরিবার এবং সম্পত্তি) সুরক্ষিত করাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন তাও সুলতানী শাসন কাঠামো কিংবা রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও যথেষ্ট পরিমাণে পালিত হতে পারে, হয়েছে।
তাহলে, আমরা দেখতে পাচ্ছি একেবারে নতুন ধারণাটি হচ্ছে, জনগণের সরকার তথা সরকারের রূপটি কেমন হবে তা নির্ধারণ এবং গ্রহণ করবার এখতিয়ার। এই এখতিয়ার আর সমস্ত অধিকার ভোগ এবং রক্ষণাবেক্ষণের উপায় মাত্র গণ্য করা যাবেনা। এটা একটি স্বতন্ত্র এবং স্বয়ংসম্পন্ন এখতিয়ার যা থেকে রাজনৈতিক সত্তার উন্মেষ ঘটে; এবং নিজেদের সামষ্টিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চরিত্র, রূপ কিম্বা কাঠামো নিরূপনের বৈধতা নিষ্পন্ন নয়। যখন তা আর থাকে না বা তার হানি ঘটে, তখন একটা-দুটো অধিকারের হানি ঘটেনা। খোদ রাজনৈতিকতার বিলয় ঘটে। যেকারণে রাজনৈতিকতা মাত্রই আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা, এই আত্মনিয়ন্ত্রণ মানে নিজস্ব-সরকার তৈরি করতে পারা। সেল্ফ গভার্নমেন্ট-এর এই ধারণাগত প্রত্যয় থেকেই আন্তর্জাতিক আইনে আত্মনিয়তন্ত্রণাধিকার বা সেল্ফ ডিটারমিনেশন যুক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিকতা কোনো বিশেষাধিকার বা অপরাপর নাগরিক অধিকার ভোগের উপায় নয়। আজকাল আমরা যেমন শুনছি, ভোটের অধিকার আছে কি নাই। বিষয়টাকে যখন ভোটাভুটির দাবিতে আটকে সংকীর্ণ করে ফেলা হয়, তখন বিতর্কটাও মামুলি ভোটাধিকারের মামলায় পর্যবসিত হয়। শেষমেষ, বাংলাদেশে এখন যেমন এক পক্ষের কাছে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন আর মেয়াদ পূরণের যুদ্ধে গড়িয়েছে। অপর পক্ষের কাছে, ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ আর পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানানোর দুর্বল আন্দোলনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু কেন এটা দুর্বল থেকে যাচ্ছে, কেন এ দাবি থেকে বৃহত্তর আবেদন তৈরি হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি হচ্ছেনা? এটা কি শাসক দলের হিংস্রতা, বোপরোয়া বলপ্রয়োগ ও আতঙ্কগ্রস্থ করে রাখতে পারার ফল? অস্বীকার করার উপায় নাই, এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন এবং এই পরিমানের রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগের রাস্তা অন্যকোন সরকার গ্রহণ করে নাই। প্রকাশ্যে বুকে গুলি করার হুশিয়ারি, উসকানির মুখোমুখি দাড়িয়ে আন্দোলন করার বাস্তবতা এর আগে তৈরি হয়নি।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন কি জনগণ নিজের জীবন দিবে কেবল ভোটাধিকারের জন্য? বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কি আদৌ জনগণের সরকার নির্ধারণ ও গ্রহণ করবার যে আকাঙ্ক্ষা তার পরিপূরক? আমরা শুরুতে প্রশ্ন করেছিলাম, কখন জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে নিজের আকাঙ্ক্ষার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য? এই যে আধুনিক রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা, যার ভিত্তি জনগণের রাজনৈতিক সত্তার উপলব্ধি, পরস্পর একত্রিত হয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়া। যা থেকে রাজনৈতিকতার শুরু এবং একই সাথে যা নিজেদের সম্মতিতে সরকার গ্রহণ করবার সূচনা বা চর্চার সমার্থক। জনগণের এই রাজনৈতিকতার সুরক্ষায়, এবং নিজেদের সরকার গঠন করবার গৃহীত ব্যবস্থাটি যখন ক্ষুন্ন হয় বা হয়েছে, তখনই গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। নিজেরা রাজনৈতিকভাবে গঠিত হওয়া এবং একই সাথে নিজেদের সরকার গঠন করার যুগপৎ প্রক্রিয়াটিকেই বলা হয় গাঠনিক ক্ষমতার(কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার) প্রয়োগ। এটা কখনোই নির্বাচন দিয়ে ঘটেনা, একমাত্র গঠিত হয়ে যাবার পর সেই সুনির্দিষ্ট রূপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে, যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচন জনগণের সরকার গ্রহণের চর্চাকে কার্যকর করতে পারে। কিন্তু যখন এটা ব্যর্থ হয়, ন্যূনতম সম্ভাবনাটুকুও তিরোহিত হয়, তখন অবশ্যম্ভাবীভাবেই গাঠনিক ক্ষমতাকেই আবার পুনরায় বিশুদ্ধ এখতিয়ার হিসাবে প্রয়োগ করতে হয়। এটা গণআন্দোলনের মাধ্যমেই সাধিত হয়।
প্রশ্ন হল, বাংলাদেশে সুস্পষ্টভাবে এই প্রয়োজন দেখা দিলেও রাজনৈতিকভাবে তা সেই অভিমুখে অগ্রসর হতে দেখা যাচ্ছেনা, কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বুঝা দরকার কেন এটা রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারছেনা। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ভঙ্গুর এবং বিপর্যস্ত বিরোধী দল হবার কারণেই তা ঘটছে বলে আমরা মনে করিনা। কারণ আমাদের প্রশ্নটির উত্তর সাংগঠনিক শক্তি, দক্ষ নেতৃত্ব বা নিপুণ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে পাল্টা বলপ্রয়োগ করে টিকে থাকার উপর নির্ভর করছেনা। এটা মূলত আন্দোলনের চরিত্র অর্থাৎ কখন একটা দাবি গণআকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জনবিদ্রোহের সূচনা ঘটায়? সুনির্দিষ্ট করে বললে, কখন কোন দাবি গণবিস্ফোরণের সূত্রপাত করে, ফলত শাসকের পতন ঘটিয়ে জনগণ নতুন সরকার চায়?
গণক্ষমতা ও নিজস্ব-সরকার
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আধুনিক রাজনীতির সূচনা বিন্দুতে ‘জনগণ’ নামক একটি সামষ্টিক কর্তাসত্তার উদ্বোধন ঘটেছে। এই সামষ্টিকতার অন্তর্গত একটা দিক হল কর্তৃত্ব, ক্ষমতা এবং আইনের নতুন বৈধতা নির্মাণ, আপরটি হল সমবায়িক জীবনের রূপটি কি হবে তা নিজেরা সম্মিলিতভাবে ঠিক করা—যার অভিব্যক্তি ঘটে স্বেচ্ছা-রূপান্তরের ঘটনায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এর ভেতর দিয়ে একই সাথে আমরা দেখব রাষ্ট্রের ধারণাগত পরিবর্তন এসেছে। ফলত চরিত্রকেও বদলিয়ে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আগে শাসকের বা রাজার যে সর্বময় ক্ষমতা ছিল, যা নিরঙ্কুশ, নিরবিচ্ছিন্ন এবং নিজ সত্তার অন্তর্গত(ঐশ্বরিক উৎস হতে ন্যস্ত) তা এখন সমগ্রের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে, এক থেকে বহুতে বিস্তৃত হয়েছে। এতে রাজতান্ত্রিক কাঠামোর বদল ঘটেছে, রাজা উচ্ছেদ হয়েছে কিন্তু নিরঙ্কুশ এবং সর্বময় কর্তৃত্বের ভিত্তিটি বলবৎ আছে। যার মৌলিক অনুমানটি ‘সার্বভৌমত্ব’র ধারণায় নিহিত। যাকে ‘নির্দেশ প্রদানের সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জা বদিঁ (১৫৩০ -১৫৯৬) হয়ে পরবর্তীতে এটাই পশ্চিমে আধুনিক আইন ও রাষ্ট্র তত্ত্বের প্রধান প্রস্তাবনা হিসাবে থেকে গেছে। এটা রাষ্ট্র কেন্দ্রিক, অন্তর্গতভাবে একক ও অবিভাজ্য আর বাইরে অন্য সকলের উপরে চূড়ান্ত কর্তৃত্বকারী, নিদের্শ প্রদান এবং বাস্তবায়নে বলপ্রয়োগের আশ্রয় নেয়, স্তরভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এখান থেকে, আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠতে থাকে সামাজিক পরিসরকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অধীনে নিয়ে আসা, জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রকে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত করা। সেল্ফ গভার্নমেন্টের ধারণা থেকে এই যে পরবর্তীতে সমষ্টির জীবনের সমগ্র পরিসরটাই রাষ্ট্রীয় বিধি-ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিচালিত হতে শুরু করেছে, অর্থাৎ গভার্নমেন্টালিটিতে গিয়ে উপনীত হয়েছে, সেই প্রসঙ্গটি একটা আলাদা আলোচনার বিষয়। এখানে আমরা নজর ফেরাই উপরোক্ত দুটি বৈশিষ্ট্যের দিকে।
গাঠনিক ক্ষমতা, যাকে আমরা চিহ্নত করছি সমষ্টির রাজনৈতিকতায় অভিষিক্ত গণক্ষমতা তার চরিত্রটি একেবারেই আলাদা। ল্যাটিন, কন্সটিটিউরে শব্দ হতে ইংরেজিতে যাকে কন্সটিটিউয়েন্ট বা ‘টু কন্সটিটিউট’ বলা হয় তা এসেছে। এর অর্থ হলো কারো সাথে বা সহযোগে কোনো কিছু গড়া, তোলা, নির্মাণ, স্থাপন, তৈরি বা প্রতিষ্ঠা—অর্থাৎ এইসব অর্থে, কোনো কিছুর উপস্থিতির কারণ হওয়া। রোমান রিপাবলিকেও এই ধারণাটি ব্যবহার করা হত যখন মৌলিক কোন আইনের প্রতিষ্ঠা বা বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানকে পাল্টে ফেলার কোন কাজকে নির্দেশ করা হত। মোদ্দা কথা, অন্যের সহযোগে, সংগঠিতভাবে পরস্পরে মিলে পাবলিকলি তথা রাজনৈতিক পরিসরে যখন কোন কিছু নির্মাণ বা প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন সে ঘটনায় নতুন কিছুর প্রবর্তন বা পুনপ্রবর্তন ঘটে যাতে প্রতিষ্ঠান পাল্টে যায়। পরিবর্তন ও প্রবর্তনের এই ক্ষমতা, যা জনগণের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব তা একই সাথে সরকার প্রতিষ্ঠা ও বিলুপ্ত করা কিম্বা শাসকের অপসারণ ক্ষমতা। এই ক্ষমতা সমষ্টির সংঘবদ্ধতা থেকে তৈরি, যা জন্ম দেয় নতুন সরকার, সরকারের রূপ ও নিয়োগের ধরণ এবং পরিচালনার পদ্ধতি। জনগণ এর বৈধতার নির্ধারক এবং নিরুপক। একটি মুক্ত, শান্তিপূর্ণ এবং জীবনের সুষম বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা থেকে জাত সরকার ব্যবস্থা।
জনগণের এই যে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের কথা বলছি, তার একটা দিক হল ধারণাগত বা দার্শনিক। এই ধারণার বিস্তার ঘটেছে, বা এর কর্তাসত্তার স্বীকৃতি মিলেছে সরাসরি লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান এবং বিপ্লবে—প্রতিরোধের বৈধতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে, সশস্ত্র বলপ্রয়োগের ন্যায্যতা থেকে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বৈধ এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের অপসারণে বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত: জনগণের নিজস্ব অধিকারের এই প্রস্তাবনা শাসনকার্য পরিচালনায় কাউকে নিয়োগ ও তাকে মান্য করার পুরানো গণ্ডি অতিক্রম করে গণক্ষমতাকেই গাঠনিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু করে তোলে। এটা একই সাথে এখন, সমষ্টির রাজনৈতিক জীবনধারা, তার জন্য যথাযথ রূপের সরকার নির্ধারণ এবং সরকারের নিয়োগ ও অপসারনের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ধারন করে। অপসারনের এই অধিকার সবসময়ই স্বৈরাচার ও নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত গণক্ষমতা যা তার পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে, সরকার মাত্রই সীমিত এবং শর্তসাপেক্ষ ভাবে অনুমোদিত ক্ষমতা যা সদস্যরা মান্য করে চলবে। এটা অবারিত, অবধারিত বা স্থায়ীভাবে নির্ধারিত কোন ব্যবস্থা নয়। যা সমষ্টির সমবায়িক প্রয়াস থেকে উত্থিত, ফলত: ঐতিহাসিকভাবে নির্মিত যার পরিবর্তন, রূপান্তর এমনকি বিলোপ সাধনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে যদি তা উদ্দেশ্য ও জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান করে। নানা কারণে জনবিরোধী অবস্থান তৈরি হতে পারে। তখন জনগণের ক্ষমতা শাসক বা এক সময়ের নির্বাচিত সরকার কুক্ষিগত করে রাখতে চেষ্টা করে এবং দলন ও দমনের মাধ্যমে টিকে থাকে। জনগণের ক্ষমতা যখনই কোন শাসক বা সরকার হরণ করে তা পুনরুদ্ধারের পথ হল: প্রতিরোধ, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা নিজেদের অধিকারে ফিরিয়ে নেয়া। ফরাসি মনার্কম্যাকস (যারা রাজার বিরুদ্ধ লড়ে), যাদের হাত ধরে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে বৈধ বিদ্রোহের ধারণাটি ব্যাপকতা লাভ করতে থাকে, তারা মনে করত জনগণের ক্ষমতায় গঠিত কিম্বা নিয়োজিত যেকোনো শাসক স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এমনকি অপশাসককে হত্য করার অধিকারও জনগণের আছে। এরই ধারবাহিকতায় ইংলিশ সিভিল ওয়ার(১৬৪২-১৬৫১) এবং গ্লরিয়াস রেভ্যুলিউশন(১৬৮৮) সংগঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণায়(১৭৭৬) প্রধান উদ্দেশ্যই ব্যক্ত করা হয় জনগণের অধিকার আদায় এবং সেই অধিকার বলে স্বাধীনভাবে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা: যখন কোনো সরকার জীবন, স্বাধীনতা ও সুখী হবার চেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তখন জনগণের অধিকার হলো সেই ধরনের সরকারকে পাল্টানো এবং তার বিলোপ সাধন। সে সমস্ত মৌলনীতির উপর দাড়িয়ে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা, এর ক্ষমতাকে এমন একটি সঙ্গতিপরায়ন রূপ দেয়া যাতে করে তা সুরক্ষিত হতে পারে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দিক থেকে পরবর্তীতে যে প্রশ্নটি দেখা দিল, তা হোল, জনগণের নিজস্ব এই কর্তৃত্ব যখন গাঠনিক ক্ষমতা(কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার) প্রয়োগ করে সরকার বদলিয়ে নতুন একটি গঠিত ব্যবস্থা (কন্সটিটিউটেড ওর্ডার) প্রবর্তন করে তখন তা কি আইনি বা সাংবিধানিক কাঠামোর আকার নেয় নাকি তা এর বাইরে থেকে যায়। সাংবিধানিক বা সংসদীয় সুপ্রিমেসির যে তর্ক কমবেশি আমরা বাংলাদেশেও শুনি এটা তারই অংশ। এতে দাবি করা হয়, গঠিত প্রতিষ্ঠানই এখন চূড়ান্ত কর্তৃত্বকারী সত্তা, জনগণের কাছে সেই ক্ষমতা আছে বলে স্বীকার করা বা তা প্রয়োগের সাধারণ বৈধতা থাকা রাষ্ট্রের জন্য বিপদজ্জনক। এই তর্কের আরো যে সমস্ত বাক নিয়েছে সেই দিকে যাওয়া আমাদের জন্য এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু এতটুকু বলা যায়, জন লক বা জর্জ লওসন, এ ব্যাপারে একমত ছিল যে, জনগণ যেহেতু প্রতিষ্ঠান তৈরির পূর্বেই অস্তিত্বমান থাকে এবং প্রতিষ্ঠানের বিলয়ের সাথে সাথে জনগণ বিলুপ্ত হয় না, সুতরাং এটা সাংবিধানিক বা আইন অতিরিক্ত ক্ষমতা হিসাবে বর্তমান থাকতে পারে। এটা রাষ্ট্র বা সংবিধানের মধ্যে নি:শেষ হয়ে যায় না।
কেমন সরকার চাই?
সরকার বিরোধী আন্দোলন বা সরকার পরিবর্তনের যে কোন আন্দোলনে, আমরা বাংলাদেশে উপরোক্ত আইনি রক্ষণশীলতা দেখতে পাই। উল্টো করে বললে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে যাতে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে তা ধাবিত না হয় সেই যুক্তির আমদানী দেখি। যেটা আদতে জনগণের অন্তর্নিহিত গাঠনিক ক্ষমতাকে গোড়াতেই অস্বীকার করে বসে। এটা ঠিক আন্দোলনের সাফল্য বা স্বক্ষমতায় উপনীত হতে পারা না পারার মামলা নয়। এটা মনে করে আন্দোলন হল শুধুমাত্র একটি সরকারের জায়গায় আরেকটি সরকারকে আনয়ন, নিয়োগ বা নির্বাচন করা। ফলে সবসময়ই তা নির্বাচিত সরকার মূলক দাবির মধ্যে আটকে থাকে। কেমন সরকার চাই সেই প্রশ্নে বা সেই সরকারের রূপরেখা কেমন হওয়া দরকার তা নির্ধারণ করার দিকে অগ্রসর হয় না। প্রশ্নটি জনগণ কেমন সরকার চায়, অর্থাৎ কেমন সরকার হলে পরে তাদের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষার রূপায়ন হতে পারে?
এই প্রশ্নটা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য মুখ্য বিষয়।কেমন সরকার আমরা চাই তার দ্বারা নির্ধারিত হয় কি কি অধিকারের বঞ্চনা আমরা বোধ করছি;এবং কি কি অধিকার নিশ্চিত করতে চাচ্ছি।সেটা কি রূপের মধ্য দিয়ে করবো তার সাথে সরকারের রূপটা নির্ভর করে।একারণে,আধুনিক রাজনীতির বিকাশ বা উদ্ভবকালে কেন্দ্রীয় বিবেচ্য বিষয় ছিল সরকার।যার তাৎপর্যপূর্ণ অভিব্যক্তি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।সেখানে পরিষ্কার ঘোষণা আছে যে,মানুষের একটি শাশ্বত প্রাকৃতিক অধিকার আছে,কেমন সরকার সে চায় তা নির্ধারণ করার।ফলে কেমন সরকার তারা চান তার দাবির মধ্যে দিয়ে এ বিদ্রোহটা সংঘটিত হয়েছিল।প্রশ্নটা ছিল ফর্ম অব গভর্নমেন্ট।কি প্রকৃতির সরকার হলে বা সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকলে পরে এই এই অধিকারগুলো—এই এই নীতিগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে।বাংলাদেশেও আমরা এখন ‘কেমন সরকার চাই’ এই প্রশ্নে আছি।কিন্তু আমরা দেখছি এই কেমন সরকার চাওয়ার দাবিটার পেছনে যে নীতিগত দিক আছে,তা নিয়ে বিরোধী শিবিরের কাছে কোন বক্তব্য নাই।‘কেমন সরকার আমরা চাই’ -এই প্রশ্নটার উত্তর বা আমরা এমন একটা সরকার করব যার ফলশ্রুতিতে এই যে একটা বৃত্তের মধ্যে আমরা আবর্তিত হচ্ছি এখান থেকে আমরা বের হতে পারব।এটা এখন বাংলাদেশের রাজনীতির মুখ্য বিষয়।যারা এটা সামনে নিয়ে আসতে পারবেন এবং এটাকে কেন্দ্র করে যারা সংগঠিত হবেন,আমরা মনে করি তাদের জন্য খুব দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে না।
বিরোধী শিবিরের সংকট শুধু সাংগঠনিক নয়,তার সাথে আদর্শিক সংকটও আছে।দুই দলের স্বার্থের জায়গা বা অন্যান্য বিষয়গুলোতে খুব বেশি ফারাক নাই।যদিও আওয়ামী লীগের একটা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রকল্প আছে,কিন্তু বিপক্ষ শিবির এই দিক থেকে প্রায় দিশাহীন।তারা কি চায়, কি করবে, এটা কাউকে বুঝাতে পারছে না। তারা নির্বাচন চাচ্ছে,তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছে, এর পরে আর কি চাচ্ছে? এ বক্তব্য তাদের কাছে নাই।ফলে আমরা মনে করি বর্তমান বিরোধী শিবিরের যে ব্যর্থতা,এটা যতটা না সাংগঠনিক তার চাইতেও বেশি রাজনৈতিক।এখানকার বাস্তবতায় বাংলাদেশে যেকোন অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত করতে প্রাথমিক প্রশ্নটিই হবে ‘কেমন সরকার চান?’ সেই উত্তর দেয়া।কেমন নির্বাচন চাই তা দিয়ে অন্তত গণআন্দোলন হবে না।গণআন্দোলন মাত্রই জনগণের রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে জাগিয়ে তোলা। রাজনৈতিকতার গোড়ায় ফিরে যাওয়া এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার বা নতুন করে প্রয়োগের প্রয়োজন দেখা দেয়া।নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করার যে আশাবাদ সামরিক শাসনামলে তৈরি হয়,নব্বইয়ের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও যার একটা আবেদন ছিল তার পরিণাম সকলের কাছে এখন স্পষ্ট।একথা এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়।নিছক নির্বাচনের দাবীদাওয়া গণআন্দোলন সৃষ্টির মত কোন আবেদন আর আদৌ তৈয়ার করতে পারছেনা,পারার কথা নয়।কেবলমাত্র, রাজনৈতিক ঐক্য রচনা,এবং ঐক্যবদ্ধ সেই মৈত্রী আগামীতে কোন কোন মূলনীতির উপর স্থাপিত হয়ে নবরূপে একটি সরকার গঠন করতে চায়,তার দ্বারাই জনগণের অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিকতা পুনরুদ্ধারে অংশীদার হবার শর্ত তৈরি করবে।