আয় হারালি অম্বুবাচী না মেনে
আয় হারালি অম্বুবাচী না মেনে
তোর হয়না সবুর একদিনে।।
অম্বুবাচী ভর
মাটি রসে সরোবর,
সাধু গুরু বৈষ্ণবে তিনে
উদায় হয় রসের সনে।।
তুইত মদনা চাষা ভাই
তোমার বুদ্ধি জ্ঞান ত নাই,
বার মাস চাষ করিয়ে
জো-র সময় চাল কেনে।।
যে জন রসিক চাষা হয়
জমির জো বুঝে হাল বায়,
লালন ফকির পায়না ফিকির
হাপুর হুপুর বীজ বোনে।।
অম্বুবাচী
‘অম্বু’র আভিধানিক অর্থ
১. যা প্রবাহিত হয়, প্রবাহিত জলে যে জীব বাস করে যেমন জলচর বা মাছ, কিম্বা যে গাছ জন্মে, যে কারণে ‘অম্বুজ’ মানে জলধারা থেকে যার জন্ম ‘হিজল’ গাছ; প্রবাহমান জলধারার মধ্যেই হিজল গাছ জন্মে।
২. বারিবর্ষণ.
২. রস, দ্রব, পঙ্ক, জলের কঠিন বা ঘন রূপ।
৩. ঋতু।
৪. রক্তের জলীয় অংশ
‘অম্বুবাচী’র আভিধানিক অর্থ তাহলে যা অম্বু বা বারিবর্ষণ সূচনা করে; বর্ষায় জলবর্ষণে বীজধারণযোগ্যা ভূমি বা রজস্বলা পৃথিবী (বন্দোপাধায়, ১৯৬৬)।
এই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়।
নক্ষত্র বা রাশি বিচারের দিক আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী ঋতুমতী হন। শেষার্ধ, আর্দ্রার পাদচতুষ্টয় এবং পুনর্বসুর পাদত্রয় মিথুন্রাশির অন্তর্গত সূর্য্য মৃগশিরা ভোগ করবার পর যখন আর্দ্রার প্রথম পদ ভোগের জন্য গমন করে সেই সময় পৃথিবী (বিশতিদণ্ডাধিক দিবসত্রয় ) ঋতুমতী হয়। এই সময় হাল দেওয়া বা বীজ বপন নিষিদ্ধ।
লোকায়তিক চর্চা অনুযায়ী অম্বুবাচীর তিন দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের মাংঙ্গলিক কাজ করা যায়না। চারদিনে পর থেকে মাঙ্গলিক কাজে কোনো বাধা থাকেনা। অম্বুবাচীর সময় হাল ধরা, গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ গণ্য করা হয়। এই সময় প্রাচীন কাল থেকেই মঠ-মন্দিরের প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকে।
এখনও গ্রামে ৭ থেকে ১১ আষাঢ় চার দিন গ্রাম-বাংলার মেয়েরা অম্বুবাচী পালন করেন। চাষ বাসের কাজ এই সময় বন্ধ থাকে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে পিঠা-পায়েস বানাবার রীতি আছে। এই অনুষ্ঠানে মেয়েরা, বিশেষত বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত পালন করেন। যারা অম্বুবাচী মানেন তাঁরা অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তিন দিন ধরে খান। তিন দিন কোন আগুন জ্বলে না, তারা গরম খাবার খান না।
এই তিন দিন কামরূপ কামাখ্যায় পূজা হয়। সমস্ত দেবী মন্দির বন্ধ থাকে। কামরূপ কামাখ্যার মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে লাল রং এর তরল বের হয়। ভক্তদের কাছে এটা জননী প্রকৃতির রজস্রাব হিসাবে গণ্য।
একে ধর্মীয় আচারের দিক থেকে দেখা আর এর প্রতীকী মানে উপলব্ধি ও বিচার, বলাবাহুল্য আলাদা। যে গর্ভ থেকে সবকিছুর উৎপত্তি তিনি গ্রহনক্ষত্রের বিশেষ যোগ বা সন্ধিক্ষণে ঋতুমতি হন। এই সৃষ্টি মূহূর্ত অন্য যে কোন মূহূর্ত থেকে আলাদা এবং আদি। ঋতু মেনে তা চক্রবৎ ফিরে আসে। এই মূহূর্ত জানা সাধকের জন্য অপরিহার্য।
সূত্র
বন্দোপাধ্যায় , হরিচরণ. (১৯৬৬). বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড). নতুন দিল্লী: সাহিত্য অকাদেমি.
ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন