অতীতের গৌরব উজ্জ্বল ঢাকা

সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে ৫০ হাজার সৈন্য সহ এক লাখ লোক নিয়ে ঢাকায় আগমন করেন্ সুবাদার ইসলাম খাঁ । সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এই নগরী । বুড়িগঙ্গায় নোঙ্গর করা "চাঁদনী" নামক বজরায় শুরু করেন বসবাস । ১৬৬৪ সালে আসেন শায়েস্তা খাঁ, যখন টাকায় মিলত আট মণ চাল । টাকার মান যখন এই , আর এ সময়েই ১৬৬৫ সালে বাদশাহ আওরঙ্গজেব কে বাংলার রাজস্ব থেকে ১১০ টি গরুরু গাড়িতে করে পাঠিয়েছিলেন ৫৫ লাখ টাকা । ১৬৬৬ সালের কথা মসলিন, সিল্ক, সুতিবস্ত্র ও ফুল ফলের কাজ করা বস্ত্র ইতালিসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে যেত । ভুটান, আসাম, শ্যামদেশে রফতানি হত প্রবাল, স্ফটিক ও শঙ্খ। এছাড়া মশলা, হাতির দাঁত, চিনি, রন্ধন দ্রব্য নানা রকম সুগন্ধি ও সাবান বিদেশে রফতানি হত । পাওয়া যেত টাকায় ২০ টির ও বেশি মোরগ কিংবা হাঁস ।
আওরঙ্গজেব পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আজম বাংলার সুবাদার হয়ে আসেন ১৬৭৮ সালে ।বুড়িগঙ্গার উত্তর পাড়ে সদরঘাট থেকে দু'দিকে সমদূরত্বে চার মাইল বিস্তৃত ছিল ঢাকা শহর । চকবাজার থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত বানানো হয় ইটের তৈরি প্রথম রাস্তা । কর্নেল ডেভিসন লিখেছেন " ঢাকার দুই মাইল দূরে একটি গ্রাম । নাম তেজগাঁ । ঢাকা থেকে তেজগাঁ জেতে হলে ঘন এক জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যেতা হয়। এ জঙ্গল দেখতে সুন্দর । তবে বিপদ ও আছে ।এতে ওত পেতে থাকে বাঘ ।
ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিশ্বের শহর গুলোর মধ্যে একটা ছিল ঢাকা। আর সেরা শহরের ক্রমানুসারে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বাদশতম।
১৮০০ সালের প্রথমদিকের কথা। তখনো চাকার প্রচলন হয়নি ঢাকায়। ১৮২৩ সালে ঢাকায় একটি ঘোড়ার গাড়ি ছিল যেটা ব্যবহার করতেন নায়েব নাজিম শামসউদ্দউলা। ১৮৪০ সালে ডেভিসন ঢাকায় পা রেখে দেখেন ১ টাকা খরচ করলে পাওয়া যায় ২৫৬ টি কমলা আর ২ টাকায় মেলে একটি বেহালা । উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ঢাকার বর্ণনা দিতে গিয়ে জেমস টেলর লিখেছেন " বর্ষাকালে বড় বড় মিনার ও অট্টালিকা শোভিত ঢাকা নগরীকে  মনে হয় ভেনিস নগরীর মত ।
ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকার বিরাট পরিবর্তন ঘটে । ঢাকা পৌরসভা ডিসট্রিক্ট বোর্ড, সরকারী স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে । খাজা আব্দুল গণি, খাজা আহসানউল্লাহর দানে ঢাকায় পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা হয় ।তেমনি ১৮৪১ সালে কলেজ, ১৮৫৮ সালে মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং ১৮৮৫ সালে ঢাকা-নারায়নগঞ্জের মধ্যে রেল সংযোগ হয় । ঢাকার নবাবরা তাঁদের বেসরকারি প্রশাসনে সংযোজন করেছিলেন পঞ্চায়েত বা সরদার প্রথা ।পঞ্চায়েত প্রধান্রা পরিচিত হতেন সরদার পদবীতে। মহল্লার প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠান, ঝগড়া-বিবাদসহ সব সমস্যার মীমাংসা করা হত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে । এছাড়া বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, রায়টের মোকদ্দমা পরিচালনা করা, গরিব বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিবাহ দেয়া, মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করত পঞ্চায়েত । তৎকালীন সময়ে ১৩২ টি পঞ্চায়েত ওয়ার্ড বা মহল্লা ছিল । খান বাহাদুর খাজা মুহম্মদ আযোমের লেখা থেকে জানা যায় তৎকালীন ভারতবর্ষে একমাত্র ঢাকা নগরীতেই এই ব্যবস্থা প্রথম চালু হয়। যাইহোক আইয়ুব খানের "মৌলিক গনতন্রের" মধ্য দিয়ে ১৯৬০ সালে সমাপ্তি ঘটে এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার। ঢাকার ইতিহাসের সাথে যেমন মোঘলরা জুড়ে আছে তেমনি একাকার হয়ে আছে নবাব পরিবার। নবাবদের দানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা । কে জানতো এই ৬০০ একর জমিই একদিন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটা মানচিত্র এনে দেবে !


নিজের সম্পর্কে লেখক



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।