- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
সক্রিয় ও সজীব চিন্তার স্বভাব ও গৌরব উপলব্ধির জন্য ধর্মের পর্যালোচনা যে কোন জনগোষ্ঠির আত্মবিকাশের জন্য জরুরী। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নিজেদের গাঠনিক ভিত্তির গোড়ার চিন্তার প্রতি সজাগ ও সতর্কতা ছাড়া কোন জনগোষ্ঠির পক্ষেই বিশ্বে শক্তিশালী ভাবে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। দর্শন চর্চা সে কারনে কোন আসমানি ব্যাপার নয়। একটি জনগোষ্ঠির মধ্যে চিন্তার বিকাশের মাত্রা ও গভীরতা দিয়ে সেই জনগোষ্ঠির সীমা ও সম্ভাবনা বোঝা যায়।
দর্শনের দিক থেকে ধর্মভাবনা মানুষের চেতনা বা চিন্তারই বিশেষ রূপ। এই বিশেষ রূপের বিচার ধর্মের আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক বিচার দিয়ে নিষ্পন্ন হয় না, তার বিষয় ও পদ্ধতি আলাদা। ধর্মের আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক বিচারের গুরুত্ব আছে বটে, কিন্তু সেটা দার্শনিক বিচার নয়। সক্রিয় ও সজীব চিন্তা ধর্মভাবনায় নিজেকে যে রূপে হাজির দেখে দর্শনের স্তরে একই রূপে হাজির না দেখলেও এই দাবি জানাতে কুন্ঠিত হয় না যে “দর্শনের বিষয় সামগ্রিক ভাবে বিচার করলে ধর্মেরই বিষয় – উভয় ক্ষেত্রে সেটা হোল, সত্য। কথাটা এই চূড়ান্ত অর্থে যে আল্লাহ এবং একমাত্র আল্লাহই হচ্ছেন সত্য। তাই উভয়েই প্রকৃতি ও মানুষের এই সীমিত জগতকে পরস্পরের সম্পর্ক এবং তাদের সত্য আল্লার সত্যে বিচার করে”। কথাটি জর্মন দার্শনিক গেঅর্গ ভিলহেল্ম হেগেলের (১৭৭০-১৮৭১)। সত্য বলতে হেগেল কি বুঝতেন এই ঘোষণায় তা আমরা আন্দাজ করতে পারি। আল্লার সত্য নির্ণয়ের আকুতির মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃতি ও মানুষের সীমিত জগতের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মানুষের সম্ভাবনা বিচার করে -- আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক, নীতি-নৈতিকতা ও রাষ্ট্র হেগেল কিভাবে বিচার করেছেন তার ইঙ্গিতও এই অল্প কথার মধ্যে আমরা টের পাই।
সত্য শুধু বিশুদ্ধ বুদ্ধির নির্ণয় নয়, বরং মানুষ তার ইন্দ্রিয়পরায়ণ তৎপরতার পরিমণ্ডলে যে সত্য 'উপলব্ধি' করে সেখানেও চিন্তা বা বুদ্ধির কারবার হাজির থাকে, তবে আত্মসচেতন চিন্তা হিসাবে নয়। সে কারণেই একে আমরা কাঁচা ইন্দ্রিয়োপলব্ধি বলি, বুদ্ধি যে কাঁচামাল থেকে জ্ঞান উৎপাদন করে। ইন্দ্রিয়োপ্লব্ধির সত্য বুদ্ধি তার নিজের স্বরূপে কিম্বা নিজের পরিমণ্ডলে কিভাবে প্রকাশ করবে হেগেলের দর্শনের সেটাই ছিল প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে সকল বৃত্তির সামষ্টিক উদ্যোগ বা প্রণোদনা থেকে মানুষ যে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, বুদ্ধি সেই সত্য নিজের স্বরূপে আদৌ ধারণ বা প্রকাশ করতে পারে কিনা সেটা দর্শনে এখনও বড়সড় তর্ক হয়ে রয়েছে। ধর্মের পর্যালোচনা সেই তর্ককে সক্রিয় ও সজীব চিন্তার নিজের সমস্যা হিসাবে বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। যে কারণে 'ধর্মের পর্যালোচনা ও বাংলাদেশে ইসলাম' নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের এই কালে ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রাবল্য মোকাবিলা করতে হলে দর্শনের দিগন্ত থেকে ইসলামের রাজনৈতিক-দার্শনিক প্রস্তাবনাকে নতুন করে বিচারের দরকার আছে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের এই কালে সামগ্রিক ভাবে চিন্তার যে সংকট তা মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলাম আদৌ কোন অবদান রাখতে সক্ষম কিনা সেটা দর্শনের নিজেরই অন্বেষণের বিষয়। সেই অনুসন্ধানের তাগিদ থেকে এই লেখা।
পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার প্রকট লড়াই জারি রয়েছে। বলাবাহুল্য, এই আলোচনা সেই বাস্তবতার বাইরে নয়। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠি, সম্প্রদায়, শ্রেণি এবং বিভিন্ন শারিরীক চিহ্নে ও শারিরীক বাসনায় বিভক্ত জগতে সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের লড়াইও নানা কারনে অনিবার্য বটে, কিন্তু ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার লড়াই আর বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় মানুষের চিন্তার সংকট মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলামের সম্ভাব্য অবদান বিচার সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য নাজিল হয় নি, ফলে তা মানুষের চিন্তার ইতিহাস ও দর্শনেরও বিষয়। এই অনুমান থেকে লেখাগুলো পাঠ করলে পাঠক উপকৃত হবেন আশা করি।
এই পাতা কবি ও কাব্য নিয়ে। এই পাতার মুখ্য দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ কবিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তাদের কবিতা প্রকাশ ও প্রচার করা।
তবে 'চিন্তা'-র বিশেষ নজরদারি থাকবে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন শ্রেণী কিভাবে কথা বলে, বলছে বা বলতে চাইছে, তার ওপর। কবির মাথার ওপর মুগুর ধরে রেখে কবিতা লেখানো যায় না, এই সহজ সত্য জেনেও কিছু বিষয়ের ওপর আমরা সতর্ক নজরদারী রাখার পক্ষপাতি। এতে কবি ও কবিতা উভয়েরই উপকার হতে পারে বলে মনে করি। তবে কবিতার পুলিশ হওয়ার বাসনা আমরা পোষণ করি না। কয়েকটি দিকের কথা বলে রাখা যাক:
১) নারী-পুরুষ নামক ভেদচিহ্ন অতি নিষ্পাপ ও সজল প্রেমের কবিতাতেও পুরুষতান্ত্রিক রূপ ধারন করে-- সেইসব দিক সম্পর্কে আমরা সতর্ক থাকতে চাই।
২) বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থায় কর্পোরেশান, হিংস্র যুদ্ধ, মারণাস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ, 'মানবাধিকার' রক্ষার উসিলায় পরদেশ দখল ইত্যাদির বিরুদ্ধে কবি ও কাব্য কতোটা শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম সেদিকটা আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে আগ্রহী। আমরা মানি এসবের বাইরেও ভাল কবিতা লেখা হয়, আমরা শুধু আমাদের আগ্রহের কথা বলে রাখছি।
৩) কবিতা শুধু ঘটে যাওয়া ঘটনা বা ইতিহাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, কবিতা নিজেও ঘটনাঘটায় এবং ইতিহাস নির্মাণে অংশগ্রহণ করে। সে ধরণের কবিতার প্রতি আমাদের দারুন আগ্রহ। 'জনগণ', 'গণমানুষ' ইত্যাদি খুব ক্লিশে শব্দ ও ধারণা। তবে পুরানা শব্দ ও ধারণাকে আবার চকচকে করে তোলে কবিতা -- লোকমুখে এ কথাই তো শুনে আসছি। কবি বা কবিতা মানুষের সম্ভাবনা বিকাশের ক্ষেত্রে কে শত্রু আর কে মিত্র তা নির্ণয়ে যে কোন সময়েই কাজে লেগে যেতে পারে। এই ধরণের কেজো কবিতা আমদের বেশ পছন্দ।
৪) আমরা কাব্য বা সাহিত্যকে আধুনিক/অনাধুনিক বা সময়ক্রম অনুযায়ী আধুনিক/মধ্যযুগীয় ইত্যাদি বিভাজনে বিভক্ত করতে চাই না। এখন--এই মুহূর্তের লড়াইয়ের কথা ভেবে এখনকার বা অতীতের সকল কবি ও কবিতাকে পড়াই আমাদের কাজ।
আসুন এ আয়োজনে সহযোগী অথবা সহযাত্রী হই।
কবিতা পাঠাবার ইমেইল :
chintaapathchokro@gmail.com
ঠিকানা:
চিন্তা (কবি ও কবিতা)
হক গার্ডেন। ১ রিং রোড, এপার্টমেন্ট - ৪এবি। ঢাকা -১২০৭।
কিভাবে যে চিহ্ন দাঁড়ায় আকাশচুম্বি
মাটির মধ্যে শেকড়বাকড় পায়ের জটা
বাতাসে প্রেমপত্র লিখছে পত্রাবলী
শব্দ ঝরছে শব্দ ঝরছে শিশির ফোঁটা !
ভাষার দর্শনের জায়গা থেকে সাহিত্যের বিচার করবার রেওয়াজ আমাদের নাই বললেই চলে। অথচ বাংলাভাষার ভাব বা দর্শনের অলিগলি চেনার জন্য ভাষা বা চিহ্নব্যবস্থা সংক্রান্ত শাস্ত্র ও দর্শনের যে বিপুল বিকাশ দুনিয়া জুড়ে ঘটেছে তাকে মাথায় রেখে বাংলা সাহিত্যকে আমরা নতুন করে পাঠ করতে পারি। এই পাতায় সেই চেষ্টা থাকবে। তবে আমরা দুই ধরনের বিপদ মাথায় রেখে কাজটি করতে চাই।
প্রথম বিপদটাকে আমরা সাধারণ ভাবে বলতে পারি ‘আঁতেলী’-র বিপদ। সন্দেহ নাই যে পাশ্চাত্য দর্শনে ভাষা, চিহ্ন ব্যবস্থা, অর্থের নিশ্চয়তা, ভাষার মধ্য দিয়ে সত্যাসত্য কায়েমের দাবি ইত্যাদি নিয়ে তুমুল তর্কাতর্কি চলছে। ফলে ফার্দিনন্দ দ্য স্যসিওর, রঁলা বার্থ, জাক দেরিদা, হুইৎঝেইনস্টাইন সহ বিস্তর ভিন-ভাষার দার্শনিক আমাদের দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। সেটা ভাল। ছহি কাজ। মন্দ দিকটা হচ্ছে বদ হজমের। আমরা কথায় কথায় নাম আউড়াতে শিখেছি, আমাদের পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং মোকাবিলা করবার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
দুই নম্বর বিপদ হচ্ছে, হীনমন্যতার অসুখ। আমাদের ধারণা, ভাষা, চিহ্নব্যবস্থা বা ভাষার দর্শন নিয়ে বাংলা ভাষায় বুঝি কোন আলোচনা নাই। একমাত্র পাশ্চাত্যেই বুঝি এইসব কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে।
এটা ঠিক না। বাংলা ভাষায় এই সকল বিষয় নিয়ে অসাধারণ লেখালিখি আছে। যাকে আমরা ফকির লালন শাহের বরাতে ‘নদিয়ার ভাব’ বলি, তার গোড়ার প্রশ্নগুলো ভাষার প্রশ্ন নিয়েই। অন্যদিকে আরব ও আরবি ভাষা বা সাধারণ ভাবে ইসলাম প্রভাবান্বিত সংস্কৃতির বড়ো একটি বিবেচনা ভাষার বিচার। এর কারণ, কিভাবে কোরান শরিফ পড়তে হবে, কিভাবে অর্থ করতে হবে এই সকল মোলিক ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্ন এই সকল সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে বারবারই গুরুতর সমস্যা হয়ে থেকেছে, এখনও আছে। যাঁরা ইমাম গাজ্জালীর ‘মেশকাতুল আনওয়ার’ পড়েছেন তাঁরা গাজ্জালির চিন্তায় বিস্মিত না হয়ে পারেন না।
আশা করি আমরা এই পাতায় এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনার অবসর পাব।
বইপত্র, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাহিত্য পত্রিকা ও ছোট কাগজ, ছবি, সিনেমা, নাটক, থিয়েটার, গান, নাচ ইত্যাদি যা কিছু ঘটছে চারদিকে -- দেশে কিম্ব বিদেশে -- তাকে পরিচিত করানোর জন্য এই পাতা। থাকবে দেশে বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার
যাঁর সাক্ষাৎকার তাঁকে কিম্বা যে-বিষয়কে পরিচিত করানো সি বিষয় পাঠককে ধরিয়ে দেবার একটা চেষ্টা থাকবে এই পাতায়। আমরা উল্লেখ করবো কেন কাজটিকে আমরা মূল্যবান মনে করি।
ফকির লালন শাহ সম্পর্কে আগ্রহ দেশে বিদেশে বাড়ছে। তবে ভাবচর্চা বা দর্শনের দিক থেকে তাঁর অবদানের বিশিষ্টতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে খুবই কম। বাংলাদেশের ভাবান্দোলন জাতপাত ও নারীপুরুষ ভেদবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন, ফকির লালন শাহ এই লড়াইয়েরই ফল। এই যুগেও এই লড়াইয়ের রাজনৈতিক তাৎপর্য সামান্য। কিন্তু তার বিচার খুব কমই হয়েছে । এখানে সেইসব দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে। লালনকে কেন্দ্র করে ছেঁঊড়িয়া বা দেশে বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। ওর মধ্যে যে সকল অনুষ্ঠানের ভাবগত ও রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে সেইসবের খবরাখবরও তুলে ধরা হবে এই পাতায়।
বাংলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাবচর্চার ইতিহাস দীর্ঘ। সেটা যেমন সাধক ও ভাবুকদের জীবনাচরণের মধ্যে আমরা দেখি তেমনি দেখি নানান পুরান, পাঁচালি, কেচ্ছাদারি, পালা, বয়ান ইত্যাদির মধ্যে। বাংলার এই সকল ভাবসম্পদ তুলে ধরবার জন্য এই পাতা। একই সঙ্গে থাকবে কবি, বয়াতি, পালাকার, কেছাদার তাঁদের জীবনীও...
- ৯. সম্পর্ক ও সম্বন্ধ
- ৮. মনোবৃত্তি বা বিষয়নিষ্ঠা
- ৭. 'চিন্তাশীল অধ্যয়ন'
- ৬. এডমুন্ড হুসার্ল (১৮৫৯ - ১৯৩৮)
- ৫. ফ্রানৎজ ব্রেনতানো (১৮১৩ - ১৯১৭)
- ৪. বিশুদ্ধ বুদ্ধির কথা
- ৩. বিজ্ঞানের বিজ্ঞান
- ২. বিষয়বিদ্যাঃ পেছনের কিছু কথা
- ১. শুরুর তিন
সক্রিয় চিন্তা ও তৎপরতাই চিন্তাকে বিকশিত করবার একমাত্র রাস্তা। আর কোন গলিঘুঁজি নাই।
বৃহস্পতিবার চিন্তা পাঠচক্রে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কখনো খণ্ড খণ্ড কিম্বা অনেক সময় ধারাবাহিক ভাবে। আলোচনাগুলো গুছিয়ে করবার উদ্যাগ নানান সময় নেওয়া হলেও সফল হওয়া যায় নি। এর কারন হচ্ছে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিয়ে নোট নেবার কষ্টটুকু স্বীকার করতে হয় এবং যিনি আলোচনা করেছেন তাঁকে দেখিয়ে নিয়ে নিয়মত পোস্ট করার দায়টুকুও। এর আগে চেষ্টা হয়েছে, দুই একবার কাজও হয়েছে, কিন্তু সফলতা আসে নি। সম্প্রতি হেইডেগার, মার্কস ও বাংলাভাষায় ভাবচর্চা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার যে প্রায়-অসম্ভব চেষ্টা শুরু হয়েছে তাকে কিছুটা এগিয়ে নেবার জন্য চিন্তার ওয়েব ঠিকানায় এই পাতাটি খোলা হোল। এই নিয়ে আমরা যতোবেশী পরস্পরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাব ততোই কাজটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
ধর্ম ও ধর্মের রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশে তুমুল বিতর্ক ও মারমুখি বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা পাঠচক্রে যে আলোচনাগুলো আমরা চালিয়ে যাচ্ছিলাম তাতে অনেক সময় ছেদ পড়ছিল এ কারণে যে অনেকে নিজেদের অনুমানগুলোকে নির্বিচারে মার্কসের বা মার্কস অনুমোদিত বক্তব্য বলে ধরে নিচ্ছিলেন এবং জ্ঞানে অজ্ঞানে সেই ভাবেই নিজেদের বয়ান হাজির করছিলেন। মার্কস পাশ্চাত্য চিন্তারই ধারাবাহিকতা, তিনি সে ইতিহাসের বাইরের কেউ নন। অতএব পাশ্চাত্য চিন্তার ইতিহাসে মার্কসের অবস্থান ঠিক কোথায় তার হদিস নেওয়া দরকার। সেই হদিস নিতে নামলেই কেবল মার্কসের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা উভয়ই বোঝা যাবে। মার্কসের অবস্থান নির্ণয় করতে হলে তার আগের জর্মন ভাবাদর্শীদের পঠনপাঠন যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী মার্কসের পরে পাশ্চাত্য চিন্তার জগতে যারা মহারথী হয়ে হাজির হয়েছেন তাদেরও। যেমন, হেইডেগার। কিম্বা তার দ্বারা প্রভাবিত বা অনুপ্রাণিত অন্যন্য শক্তিশালী চিন্তাবীর, যেমন জাক দেরিদা।
তারপরও সমস্যা থাকে। ঔপনিবেশকতা বলি, কিম্বা বলি সাম্রাজ্যবাদ --- প্রাচ্য/পাশ্চাত্যের বিভাজনের ইতিহাসের কথাই আমরা তুলি ও বলি। গোড়ার কথা হচ্ছে কিভাবে এ বিভাজনের বিচার করব? যদি বিশ্ব ইতিহাস নামে কিছু থেকে থাকে তবে এই বিভাজনের ইতিহাস একই বিশ্বঐতিহাসিক (?) প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। ইতিহাসই এই বিভাজন তৈরী ও জারি রেখেছে। সেই ইতিহাসকে অতিক্রম করে যেতে হলে পাশ্চাত্যের চিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির বিচার দরকার। দরকার বৈপ্লবিক চিন্তা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন, চিন্তা ও তৎপরতার বৈপ্লবিক পুনর্গঠন।
নাকি দরকার সহনশীলতা আর সার্বজনীনতার দোহাই থুয়ে কোন আপোষ ছাড়া পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থাই যার চরম ও পরম অর্জন? মুনাফা ছাড়া যে-ব্যবস্থা মানুষের প্রয়োজন মেটানোর অন্য কোন পন্থা স্বীকার করতে রাজি নয়, যুদ্ধ, বিগ্রহ ও ধ্বংসের তাণ্ডবকে যে-ব্যবস্থা মানবাধিকারের মলম, আইনের শাসন আর অহিংসার ধর্ম দিয়ে আড়াল করে রাখতে চায় -- অথচ যার পতন ও ধ্বংসের মধ্য দিয়েই মানুষের সত্যিকারের ইতিহাস শুরু হতে পারে। এই দাবি এ কালে অনিবার্য ভাবেই উঠেছে। এবং নানাভাবে উঠতে বাধ্য। যেমন, পুঁজির গোলামদের আল্লার বান্দা বানাবার দাবি। এই জেহাদের মুখে যারপরনাই যারা আতংকিত কিম্বা ভীত, তাদের কুৎসা, গালাগাল ও মুখের খিস্তি খেউড়ে আমোদিত বোধ করবার মুহূর্তগুলো থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখাও ঠিক নয়। এই দাবিও বিশ্ব-ঐতিহাসিক।
আমরা নির্ভয়ে আমাদের অন্বেষণ চালিয়ে যেতে থাকব।
ব্যাক্তি বন্ধুত্ব ও সাহিত্য
ব্যাক্তি বন্ধুত্ব ও সাহিত্য প্রথম প্রকাশ। এছাড়াও আরো দুটি কবিতার বই নতুন করে সংস্করণ করা হয়েছে। (১) অসময়ের নোট বই। (২) কবিতার বোনের সঙ্গে আবার। সাহিত্য ও কবিতা পাঠক প্রেমিকদের ধন্যবাদ।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশক ফরহাদ মজহারের বই প্রকাশ করেছেন। আগ্রহী পাঠকদের সুবিধার জন্য এখানে কয়েকটি বইয়ের পরিচিতি দেওয়া হোল।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সহযোগী গণমাধ্যম নিপাত যাক
সম্প্রতি ফরহাদ মজহারের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিকৃতি ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার একটি ক্ষুদ্র সাংবাদিক গোষ্ঠি মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করে ও থানায় জিডি দায়ের করে। বাক, ব্যক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য ফরহাদ মজহারের নিরাপোষ লড়াই কারোরই অজানা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে ফরহাদ মজহারকে রাষ্ট্রীয় ভাবে দমন, পীড়ন ও নির্যাতনের জন্য এই গোষ্ঠি তাদের সকল শক্তি নির্লজ্জ ভাবে নিয়োগ করেছে। এর মধ্য দিয়ে এদের সন্ত্রাস, সহিংসতা ও জিঘাংসার যে-চেহারা ফুটে উঠেছে তা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য চিরকাল কলংক হয়ে থাকবে।
এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, আইনজীবী, রাজনৈতিক কর্মীসহ সকল স্তরের পেশার মানুষ এক্ত্রিত হয়ে 'আক্রান্ত গণমাধ্যম ও সংকটের আবর্তে দেশ' শিরোনামে একটি গোলটেবিলে একত্রিত হয়। তাঁরা সাংবাদিকতার নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও সহিংসতার নিন্দা জানান। এখানে সেই প্রতিবাদ সভার কিছু ছবি ও উপস্থিত নাগরিকদের বক্তব্য হাজির করা হচ্ছে। এ সভার মূল লক্ষ ছিল মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করা এবং চিন্তার স্বাধীনতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
সংবাদ-এলবামে প্রবেশের জন্য ওপরের ছবির ওপর ক্লিক করুন; বক্তব্যের জন্য খোলা-এলবামে প্রত্যেক বক্তার ছবির ওপর ক্লিক করুন। ট্রান্সক্রিপশান সময় সাপেক্ষ বলে ধীরে ধীরে তোলা হচ্ছে। তবে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়তে হলে দয়া করে নীচের সংযোগচিহ্নে যান
আমার দেশ: গোলটেবিল বৈঠকে ফরহাদ মজহারের পাশে বিশিষ্টজনরা : প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগই সঙ্কট মোকাবিলায় একমাত্র সমাধান : আমার দেশসহ বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিন
চিন্তার সাম্প্রতিক সংখ্যা
পুরানো 'সন্ত্রাস' সংখ্যা। বছর ১৪ সংখ্যা ১, নভেম্বর ২০০৫ / অগ্রহায়ন ১৪১২। সম্পাদকীয়। দেরিদা, হাবারমাস এবং সন্ত্রাসকালে দর্শন -- জিওভান্না বোরাদরির সঙ্গে আলাপ। সন্ত্রাস, আইন ও ইনসাফ। বলপ্রয়োগ বিচার। সন্ত্রাসবাদের হকিকত। আধুনিকতায় ক্ষমতা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের পুনর্গঠন। বিশ্ববাণিজ্য চুক্তির সন্ত্রাসঃ হংকং সভা। বীজ ও নারী বিপন্ন যমজ। মান্দিদের জীবন। নাখোজাবাদ বুলেটিন। দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ৪র্থ সার্ক পিপলস ফোরাম। স্পেকট্রাম গার্মেণ্ট ও শ্রমিক হত্যাকাণ্ড।
চিন্তা পুরানা সংখ্যা
পাক্ষিক চিন্তার পুরানো কয়েকটি সংখ্যা। এর বেশ কয়েকটি এখনও পেতে পারেন। যোগাযোগ করুন, পাক্ষিক চিন্তা, ২২/১৩ খিলজি রোড, মহাম্মদপুর, ব্লক-২। শ্যামলী। ঢাকা-১২০৭।
ধর্মের পর্যালোচনা ও বাংলাদেশে ইসলাম
সক্রিয় ও সজীব চিন্তার স্বভাব ও গৌরব উপলব্ধির জন্য ধর্মের পর্যালোচনা যে কোন জনগোষ্ঠির আত্মবিকাশের জন্য জরুরী। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নিজেদের গাঠনিক ভিত্তির গোড়ার চিন্তার প্রতি সজাগ ও সতর্কতা ছাড়া কোন জনগোষ্ঠির পক্ষেই বিশ্বে শক্তিশালী ভাবে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। দর্শন চর্চা সে কারনে কোন আসমানি ব্যাপার নয়। একটি জনগোষ্ঠির মধ্যে চিন্তার বিকাশের মাত্রা ও গভীরতা দিয়ে সেই জনগোষ্ঠির সীমা ও সম্ভাবনা বোঝা যায়।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের এই কালে ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রাবল্য মোকাবিলা করতে হলে দর্শনের দিগন্ত থেকে ইসলামের রাজনৈতিক-দার্শনিক প্রস্তাবনাকে নতুন করে বিচারের দরকার আছে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের এই কালে সামগ্রিক ভাবে চিন্তার যে সংকট তা মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলাম আদৌ কোন অবদান রাখতে সক্ষম কিনা সেটা দর্শনের নিজেরই অন্বেষণের বিষয়। সেই অনুসন্ধানের তাগিদ থেকে এই লেখা।
- ১. দর্শনের ভাষা বা বুদ্ধির ভাষায় কথা বলার গুরুত্ব
- ২. পর্যালোচনা মানে সমালোচন বা বিরোধিতা নয়
- ৩. ধর্মে কি কোন চিন্তা নাই
- ৪. উপলব্ধি, বুদ্ধি ও সংবেদনা
- ৫. নফি ও এজবাত
- ৬. ধর্মবিরোধীদের কবল থেকে মার্কসকে উদ্ধার একালে জরুরী
- ৭. হজরত সোলায়মান ও ফয়েরবাখ
- ৮. দ্বান্দ্বিক চিন্তার পর্যালোচনা
- ৯. মানুষের নিজের কাছ থেকে নিজের বিযুক্তি
- ১০. ধর্মের প্রতি তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গীর সীমাবদ্ধতা
সক্রিয় ও সজীব চিন্তার স্বভাব ও গৌরব উপলব্ধির জন্য ধর্মের পর্যালোচনা যে কোন জনগোষ্ঠির আত্মবিকাশের জন্য জরুরী। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নিজেদের গাঠনিক ভিত্তির গোড়ার চিন্তার প্রতি সজাগ ও সতর্কতা ছাড়া কোন জনগোষ্ঠির পক্ষেই বিশ্বে শক্তিশালী ভাবে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। দর্শন চর্চা সে কারনে কোন আসমানি ব্যাপার নয়। একটি জনগোষ্ঠির মধ্যে চিন্তার বিকাশের মাত্রা ও গভীরতা দিয়ে সেই জনগোষ্ঠির সীমা ও সম্ভাবনা বোঝা যায়।
দর্শনের দিক থেকে ধর্মভাবনা মানুষের চেতনা বা চিন্তারই বিশেষ রূপ। এই বিশেষ রূপের বিচার ধর্মের আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক বিচার দিয়ে নিষ্পন্ন হয় না, তার বিষয় ও পদ্ধতি আলাদা। ধর্মের আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক বিচারের গুরুত্ব আছে বটে, কিন্তু সেটা দার্শনিক বিচার নয়। সক্রিয় ও সজীব চিন্তা ধর্মভাবনায় নিজেকে যে রূপে হাজির দেখে দর্শনের স্তরে একই রূপে হাজির না দেখলেও এই দাবি জানাতে কুন্ঠিত হয় না যে “দর্শনের বিষয় সামগ্রিক ভাবে বিচার করলে ধর্মেরই বিষয় – উভয় ক্ষেত্রে সেটা হোল, সত্য। কথাটা এই চূড়ান্ত অর্থে যে আল্লাহ এবং একমাত্র আল্লাহই হচ্ছেন সত্য। তাই উভয়েই প্রকৃতি ও মানুষের এই সীমিত জগতকে পরস্পরের সম্পর্ক এবং তাদের সত্য আল্লার সত্যে বিচার করে”। কথাটি জর্মন দার্শনিক গেঅর্গ ভিলহেল্ম হেগেলের (১৭৭০-১৮৭১)। সত্য বলতে হেগেল কি বুঝতেন এই ঘোষণায় তা আমরা আন্দাজ করতে পারি। আল্লার সত্য নির্ণয়ের আকুতির মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃতি ও মানুষের সীমিত জগতের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মানুষের সম্ভাবনা বিচার করে -- আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক, নীতি-নৈতিকতা ও রাষ্ট্র হেগেল কিভাবে বিচার করেছেন তার ইঙ্গিতও এই অল্প কথার মধ্যে আমরা টের পাই।
সত্য শুধু বিশুদ্ধ বুদ্ধির নির্ণয় নয়, বরং মানুষ তার ইন্দ্রিয়পরায়ণ তৎপরতার পরিমণ্ডলে যে সত্য 'উপলব্ধি' করে সেখানেও চিন্তা বা বুদ্ধির কারবার হাজির থাকে, তবে আত্মসচেতন চিন্তা হিসাবে নয়। সে কারণেই একে আমরা কাঁচা ইন্দ্রিয়োপলব্ধি বলি, বুদ্ধি যে কাঁচামাল থেকে জ্ঞান উৎপাদন করে। ইন্দ্রিয়োপ্লব্ধির সত্য বুদ্ধি তার নিজের স্বরূপে কিম্বা নিজের পরিমণ্ডলে কিভাবে প্রকাশ করবে হেগেলের দর্শনের সেটাই ছিল প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে সকল বৃত্তির সামষ্টিক উদ্যোগ বা প্রণোদনা থেকে মানুষ যে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, বুদ্ধি সেই সত্য নিজের স্বরূপে আদৌ ধারণ বা প্রকাশ করতে পারে কিনা সেটা দর্শনে এখনও বড়সড় তর্ক হয়ে রয়েছে। ধর্মের পর্যালোচনা সেই তর্ককে সক্রিয় ও সজীব চিন্তার নিজের সমস্যা হিসাবে বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। যে কারণে 'ধর্মের পর্যালোচনা ও বাংলাদেশে ইসলাম' নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের এই কালে ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রাবল্য মোকাবিলা করতে হলে দর্শনের দিগন্ত থেকে ইসলামের রাজনৈতিক-দার্শনিক প্রস্তাবনাকে নতুন করে বিচারের দরকার আছে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের এই কালে সামগ্রিক ভাবে চিন্তার যে সংকট তা মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলাম আদৌ কোন অবদান রাখতে সক্ষম কিনা সেটা দর্শনের নিজেরই অন্বেষণের বিষয়। সেই অনুসন্ধানের তাগিদ থেকে এই লেখা।
পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার প্রকট লড়াই জারি রয়েছে। বলাবাহুল্য, এই আলোচনা সেই বাস্তবতার বাইরে নয়। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠি, সম্প্রদায়, শ্রেণি এবং বিভিন্ন শারিরীক চিহ্নে ও শারিরীক বাসনায় বিভক্ত জগতে সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের লড়াইও নানা কারনে অনিবার্য বটে, কিন্তু ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার লড়াই আর বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় মানুষের চিন্তার সংকট মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলামের সম্ভাব্য অবদান বিচার সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য নাজিল হয় নি, ফলে তা মানুষের চিন্তার ইতিহাস ও দর্শনেরও বিষয়। এই অনুমান থেকে লেখাগুলো পাঠ করলে পাঠক উপকৃত হবেন আশা করি।
- See more at: http://chintaa.com/index.php/network/index/bangla#sthash.OYNrOjTu.dpuf