- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
ফয়েরবাখের সঙ্গে তরুণ মার্কস তার হিসাবনিকাশ চুকিয়ে দিতে গিয়ে ১৮৪৫ সালের বসন্তকালে ব্রাসেলসে তাঁর নিজের বোঝাবুঝির জন্য নোট খাতায় বেশ কিছু খসড়া মন্তব্যমূলক বাক্য টুকটাক লিখে রেখেছিলেন। লুদভিগ ফয়েরবাখ সম্পর্কে এঙ্গেলস তাঁর নিজের বই ‘লুদবভিগ ফয়েরবাখ ও চিরায়ত জার্মান দর্শনের অবসান’ ১৮৮৮ সালে প্রকাশের সময় মার্কসের টোকা মন্তব্যগুলোর এবং তাঁর বইয়ের সঙ্গে পরিশিষ্ট হিসাবে ছাপান।। শিরোনাম দেন ‘ফয়েরবাখ সংক্রান্ত থিসিস’, যার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৩৮ সালে।
ফয়েরবাখ কিভাবে খ্রিস্ট ধর্মের পর্যালোচনা করেছেন আমরা সে সম্পর্কে আগে কিছু ধারনা দিয়েছি। সেই থিসিসগুলোর আলোকে মার্কস কিভাবে ফয়েরবাখের পর্যালোচনা করেছেন তা নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করব। এতে বোঝা যাবে মার্কস কেন ধর্ম বা দর্শন নিয়ে কোন তত্ত্ব চর্চা করেন নি। কেন এই সকল বিষয়ে তিনি কোন বই লেখেন নি। সর্বোপরি ফয়েরবাখের চিন্তার পর্যালোচনা করেই তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গীর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি কোথায় এবং কিভাবে হুঁশিয়ার হয়ে গিয়েছিলেন।
আমরা যখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তা বা ধ্যান করি তখন জগত আমাদের বাইরে চিন্তা বা ধ্যানের বিষয় হিসাবে হাজির থাকে। চিন্তা প্রক্রিয়ার দিক থেকে এই দিকটা বিষয়গত বা অবজেকটিভ দিক। চিন্তা বা চিন্তা প্রক্রিয়ার বাইরে চিন্তার, জ্ঞানের বা ধ্যানের বিষয়ের উপস্থিতি সম্পর্কে আমরা যতোটা সজ্ঞান ও সচেতন থাকি, চিন্তার কর্তা বা সাবজেকটিভ দিক সম্পর্কে ততোটা সচেতন থাকি না। চিন্তা করা, কোন বিষয় নিয়ে ধ্যান করা, কিম্বা কোন কিছু জানার নিশ্চয়ই একজন কর্তা থাকে। চিন্তা প্রক্রিয়ার এটা হচ্ছে বিষয়ীর দিক বা বিষয়ী পক্ষ। কিভাবে বিষয়ী বা চিন্তার কর্তা কোন বিষয় উপলব্ধি করে এবং তার উপলব্ধি জ্ঞানে রূপান্তর ঘটায় সেটা একটা প্রক্রিয়া। যদি সেই প্রক্রিয়াকেও চিন্তার বিষয় হিসাবে গণ্য করি তাহলে সেটাও চিন্তার বাইরে ঘটা প্রক্রিয়া হিসাবেই হাজির হয়। সেটা তখন নৈর্ব্যক্তিক বা চিন্তার অবজেকটিভ দিক হয়ে ওঠে। চিন্তা করা এক জিনিস, আর কি করে আমরা চিন্তা করি সেই বিষয় নিয়ে ভাবনা ভিন্ন ব্যাপার। ভাত খাওয়া ও হজম করা একটি শারিরীক ব্যাপার, সেটা আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ঘটতে থাকে। কিন্তু যখন আমরা কিভাবে হজম করি তা নিয়ে ভাবি তখন তা শরীরের আভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে আর থাকে না। সেটা তখন গবেষণা ও চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে। যাকে শাস্ত্র বা বিজ্ঞান হিসাবে আমরা এনাটমি, ফিজিওলজি ইত্যাদি নানান নামে চর্চা করি। তেমনি আমরা যখন চিন্তা করি তখন সেটা চিন্তার আভ্যন্তরীণ বিষয়, চিন্তার স্বভাবের অন্তর্গত ব্যাপার। কিন্তু যখন কিভাবে চিন্তা করি সেই প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবি তখন চিন্তা প্রক্রিয়া চিন্তার বিষয়ে পরিণত হয়। চিন্তা প্রক্রিয়াকে চিন্তার বিষয় হিসাবে ভাবার অর্থ হচ্ছে তাকে অবজেকটিভ বা নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়া হিসাবে ভাবা। একেই আমরা তখন যুক্তিশাস্ত্র, লজিক, ব্যাকরণ বা সম্প্রতিকালে বিষয়বিদ্যা ইত্যাদি শাস্ত্র হিসাবে চর্চা করি।
বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের সংবেদনার দরজা হচ্ছে আমাদের ইন্দ্রিয়। ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে বাইরের জগত সম্পর্কে আমরা যে সংবেদনা লাভ করি তাকে বিশেষ কালে ও বিশেষ দেশে ‘বস্তু’ বা ‘বাস্তব সত্তা’ হিসাবে হাজির বলে আমরা উপলব্ধি করি। বস্তু বা বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের সাধারন ধারণা হচ্ছে যা কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ সেটাই বস্তু। ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের সংবেদনাকে উপলব্ধিতে এবং উপলব্ধিকে বুদ্ধির স্তরে বিচার বিশ্লেষনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা জ্ঞানের স্তরে উপনীত হই। অর্থাৎ বস্তু সম্পর্কিত ইন্দ্রিয় সংবেদনাকে জ্ঞানে পরিণত করি। এখন এরকম একটা জ্ঞানচর্চার ধারা গড়ে উঠতে পারে যেখানে দাবি করা হয় কোন কিছু ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ বস্তু বা বস্তুজাতীয় না হলে তা সত্য নয়, অবজেকটিভ বা নৈর্ব্যক্তিক নয় -- সেই দিক থেকে চিন্তা বা চিন্তা প্রক্রিয়া হচ্ছে বস্তুর বিপরীত জিনিস। সেটা ভাব। বস্তু ও ভাবের এই ফারাক বজায় রেখে জ্ঞানচর্চার ধারা সাধারণত বস্তুবাদ নামে পরিচিত। আর তার বিপরীত হচ্ছে ভাববাদ।
বস্তুবাদ অনুসারে যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ নয় তা বস্তু নয়, আর যদি তা বস্তু না হয় তাহলে তার কোন সত্যতা নাই। সেটা ভাব মাত্র। বস্তুবাদ এই প্রকার অনুমান বা আগাম ধারণার ভিত্তিতে জগতের সত্যমিথ্যা নির্ণয় করে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে চিন্তা বা চিন্তা প্রক্রিয়া কি বস্তু? নাকি ভাব? যদি ভাব হয় তাহলে তার নিজের কোন সত্যতা থাকতে পারে না। কারণ এই সত্য ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। যদি আমরা আমাদের আলোচনাকে বাংলাদেশের জন্য সরাসরি আরও প্রাসঙ্গিক করতে চাই তাহলে প্রশ্ন তুলতে পারি ‘আল্লাহ’ কি বস্তু নাকি ভাব? আল্লাহ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় নন। এতে অসুবিধা নাই। কিন্তু যদি দাবি করি যেহেতু ‘আল্লাহ’ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় নন, ভাব মাত্র, অতএব আল্লাহ সত্য নন, নিছকই চিন্তার একটি ধারণা মাত্র। তখন বস্তুবাদ নাস্তিকতা হয়ে ওঠে। আল্লাহকে নাকচ করে নাস্তিকতার পক্ষ নেয়।
সাধারণত ধর্ম প্রাণ মানুষ এতে আপত্তি জানায়। সেই আপত্তি মাঝে মধ্যে ঘোরতর সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। কিন্তু আপত্তি জানাতে গিয়ে ধর্ম প্রাণ বিশ্বাসী মানুষ বস্তুবাদী যুক্তির ফাঁদে পড়ে যায়, নিজেকে বিশ্বাসী প্রমাণ করতে গিয়ে বস্তুবাদীর যুক্তি ও অনুমান মেনে আল্লাহকেও বস্তুর মতোই ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ সত্তা হিসাবে প্রমাণ করবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু আল্লাহ তো আসলে বস্তু নন, এবং বস্তগুণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে কোন বিষয়ের সত্য মিথ্যা নির্ণিত হয় না। বিষয়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতাই শুধু প্রমাণিত হয়। আল্লাহকেও বস্তুর মতোই ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ সত্তা হিসাবে প্রমাণ করতে গিয়ে আল্লার সঙ্গে বস্তুর তুলনা তখন শেরেকির পর্যায়ে চলে যায়। অতএব কেউ বিশ্বাসী বা নিজেকে ঈমানদার ভাবলেই তিনি বস্তুবাদী নন, সেটা বলা যাবে না। কারণ বস্তুবাদীর মতো তিনিও ভাবতে অক্ষম যে আল্লার সত্যমিথ্যা নির্ণয়ের তর্ক বস্তুবাদ বনাম ভাববাদের তর্ক নয়। অর্থাৎ অত্যন্ত সৎ ও ঈমানদার মানুষও বুঝতে পারেন না আল্লাহ দেশকালের অধীন ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ বিষয় নন। বুঝতে পারেন না দেশকালের অতীত ‘আল্লাহ’ মানুষের চিন্তা বা প্রজ্ঞার বিষয় হয়ে বিরাজ করেন বলে তিনি মিথ্যা হয়ে যান না। সত্য হতে হলে তাঁকে বস্তুর গুণ ধারণ করার প্রয়োজন পড়ে না।
আমি এর আগে কয়েকবারই উল্লেখ করেছি যে ইসলাম যখন ‘আল্লাহ’ কে নিরন্তর ‘গায়েব’ কিম্বা বিশুদ্ধ অনুপস্থিতি হিসাবে দাবি করে তখন মানবেতিহাসে চিন্তার পর্যায় আরেকটি স্তরে গিয়ে পৌঁছায়। বহুদূর সামনে এগিয়ে যায় এবং দর্শনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধরণের প্রশ্ন ও নতুন ধরণের চিন্তার পদ্ধতি বা ব্যাকরণ দাবি করে। খেয়াল করতে হবে, দাবি করা হচ্ছে আল্লাহকে স্রেফ বুদ্ধির বা জ্ঞানের বিষয়ে পরিণত করাও শেরেকি। আগের লেখায় আমি এই দিকটির প্রতি বিশেষ ভাবে নজর ফেরাবার চেষ্টা করেছি।
বলা বাহুল্য, এই দিকটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা করার দরকার আছে। কিন্তু চিন্তার প্রাথমিক সিঁড়িগুলো না পেরিয়ে আমরা শূন্যে লাফ দিতে পারি না। সেই দরকারেই আলোচনার বর্তমান পর্যায় আমাদের নিষ্ঠার সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে। বুঝতে হবে আমরা এখনও প্রাক-ইসলামি যুগে পড়ে আছি। ইসলামের ভাষায় যা জাহেলি বা অজ্ঞানতার যুগ। অতি প্রাথমিক স্তরে বস্তুবাদ ও ভাববাদ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা দেখি বস্তুবাদী এবং একজন পরম বিশ্বাসীর ভাবনার পদ্ধতি বা ঈমানদারের চিন্তার ব্যাকরণ এখনও একই রয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস বা সিদ্ধান্তের দিক থেকে ভিন্ন মনে হলেও চিন্তার পদ্ধতি বা ব্যাকরণের দিক থেকে তাদের ফারাক নাই। এই অতি প্রাথমিক স্তর অতিক্রম করা না গেলে দর্শনের দিক থেকে ইসলামের বৈপ্লবিক প্রস্তাবনা ধরতে পারা দূরের কথা, শুরু করাও কঠিন।
এবার মার্কস কিভাবে ফয়েরবাখকে পর্যালোচনা করেছেন সেই প্রসঙ্গের কিছুটা ভেতরে প্রবেশ করা যাক।
ফয়েরবাখ সম্পর্কে ‘এগারো থিসিস’ নামে তরুণ মার্কসের বিখ্যাত উক্তিগুলোর এক নম্বর থিসিসে মার্কস বলছেন, তাঁর সময়কাল অবধি যে ধরনের বস্তুবাদের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি ঘটেছিল তারা সকলেই বস্তু, বাস্তবতা, ইন্দ্রিয়পরায়নতাকে ধারণা করেছে কেবল চিন্তার বাইরে হাজির ‘বিষয়’ হিসাবে। এর মধ্যে ফয়েরবাখ অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু ইন্দ্রিয়ের সংবেদনা তো একই সঙ্গে তৎপরতা, ক্রিয়া বা চর্চা। চিন্তার কর্তা হিসাবে মানুষের এই সক্রিয়তা ঘটে চিন্তার অন্তর্গত প্রক্রিয়া হিসাবে।‘আল্লাহ’ যদি ভাবই হয়ে থাকে তাহলেও সেটা চিন্তার বা চিন্তা প্রক্রিয়ারই একটি পরিণতি। কিন্তু বস্তুবাদ এই ক্রিয়াকে বুঝতে পারে না। অথচ এটাও নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়া, কিন্তু সেটা ঘটছে চিন্তার বাইরের ঘটনা হিসাবে নয়, চিন্তার নিজেরই তৎপরতা হিসাবে। এর ফলে চিন্তার নিজের অন্তর্গত নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়ার দিকটা ভাববাদের মধ্যেই বিকশিত হতে দেখা যায়। অর্থাৎ বস্তুবাদ যাকে নিন্দা করে মার্কস তাকেই সামনে নিয়ে আসছেন, তাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলছেন। তাঁর প্রথম থিসিসেই তার উল্লেখ করেছেন।
তবে মার্কসের আপত্তিও আছে। আপত্তি হচ্ছে সেই বিকাশ এমন ভাবে ঘটে যাতে মনে হয় চিন্তার প্রক্রিয়া কোন কংক্রিট বা মূর্ত ব্যাপার নয়; নিছকই একটা বিমূর্ত প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে এই ভাববাদ আবার ইন্দ্রিয়শীলতা কি জিনিশ সেটা জানে না। এখানে ইঙ্গিত হচ্ছে চিন্তা প্রক্রিয়াও একটি ইন্দ্রিয় তৎপর বা ইন্দ্রিয়শীল নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়া ভাববাদ সেটা বোঝে না। হেগেল তাঁর ‘লজিক’ বইতে সেটাই দেখাতে চেষ্টা করেছেন। রক্তমাংসের মানুষ হিসাবে আমরা কোন্ বিষয়কে কিভাবে উপলব্ধি করি সেটাও ইন্দ্রিয়শীল তৎপরতারই অংশ। মার্কস স্বীকার করেন যে ফয়েরবাখ চিন্তার বিষয় আর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের মধ্যে ফারাক করেন, এবং ভাবগত চিন্তার বিপরীতে রক্তমাংসের মানুষের ইন্দ্রিয়োপলব্ধির পার্থক্যের প্রতি মনোযোগী। কিন্তু মানুষের কর্মতৎপরতাকে নৈর্ব্যক্তিক তৎপরতা হিসাবে বুঝতে পারেন না।
এর ফলে কী হয়েছে? মার্কস বলছেন, “খ্রীস্টিয় তত্ত্বের সারকথা (Essence of Christianity) বইতে তিনি তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গিকেই মানুষের একমাত্র সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে মেনেছেন, অথচ চর্চাকে বুঝেছেন ও নির্ণয় করেছেন নোংরা ইহুদি-ধর্মাচারের অভিব্যক্তি হিসাবে। ফলে তিনি ‘বিপ্লবী’ , ‘ব্যবহারিক-পর্যালোচনা’র কায়বারের তাৎপর্য বোঝেন নাই”।
ফয়েরবাখ সম্পর্কে পর্যালোচনামূলক যে সকল মন্তব্য মার্কস করছেন তার শুরুটাই তাই আমাদের আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খোরাক হয়ে রয়েছে। ফয়েরবাখ ধরে নিয়েছেন তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গীই হচ্ছে মানুষের একমাত্র সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী। কিন্তু মানুষ বাস্তবে যা চর্চা করে, এমনকি মানুষের ইন্দ্রিয় তৎপরতা ও চিন্তার চর্চাও যে নৈর্ব্যক্তিক ও বাস্তব ফয়েরবাখ সেটা বোঝেন না। এটা ফয়েরবাখ সহ সকল বস্তুবাদেরই সমস্যা। একই কারণে বাস্তব অবস্থার বৈপ্লবিক রূপান্তর কিম্বা দৈনন্দিনের পর্যালোচনামূলক ব্যবহারিক কাজ কারবারের মধ্য দিয়ে বাস্তবের রূপান্তর কিভাবে ঘটে ফয়েরবাখ সেটা বুঝতে পারেন না। কারণ তিনি জীবন্ত তৎপরতা বা চর্চার দিকটার প্রতি মনোযোগী নন। তিনি খ্রিস্ট ধর্মের সারকথায় বুঝিয়েছেন খ্রিস্টিয় ঈশ্বর ও সংশ্লিষ্ট ধারণা সম্পর্কে মানুষের তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গী আসলে তার নিজ চরিত্র সম্পর্কে তার নিজের তত্ত্বীয় ধারণার প্রক্ষেপন মাত্র। এই প্রক্ষেপন একটা বিভ্রান্তি, ই্লিউশান কিম্বা বিচ্যুতি। ফয়েরবাখ ধরে নিয়েছিলেন তত্ত্বগত ভাবে একে শুধরে দিলেই মানুষ নিজেকে নিজে খুঁজে পাবে, নিজের অর্থ নিজে বুঝবে। ধর্মের জগত ত্যাগ করে মানুষ বাস্তব মানুষের জগতে ফিরে আসবে। এটা পরিষ্কার যে মার্কস তা মনে করতেন না। এটা শুধু ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে সত্য নয়, দর্শন কিম্বা যে কোন তত্ত্ব সম্পর্কেই সত্য। ফয়েরবাখের চিন্তার পর্যালোচনার সূত্র ধরেই তাই মার্কস বলেছিলেন, দার্শনিকেরা কেবল দুনিয়াকে ব্যাখ্যা করেছেন , বিভিন্নভাবে; কাজের কাজ আসলে একে বদলে দেওয়া। ফয়েরবাখের ধর্মের প্রতি তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গী তাই মার্কসকের টানতে পারে নি, বরং দৈনন্দিন জীবনের বৈষয়িক তৎপরতা ও চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের চিন্তা ও বাস্তব জগত কিভাবে বদলায় মার্কস সেই দিকেই আগ্রহী হয়েছিলেন।
আমাদের আলোচনার জন্য মার্কসের পর্যালোচনার প্রাসঙ্গিকতা এরকম যে মানুষ কেন ধর্ম করে, মানুষ কেন আল্লাহ বিশ্বাস করে, ধর্ম পালন করে এর একটা তত্ত্বগত ব্যাখ্যা দিতে পারলেই বুঝি ধর্মের সারপদার্থ বোঝা যায়; তখন ধর্মের তাত্ত্বিক পরিমণ্ডল ত্যাগ করে মানুষ বস্তুবাদী হয়ে ওঠে। ফয়েরবাখের সঙ্গে মার্কস এখানে একমত হন নি। বিদ্যমান বাস্তবতাই যদি ধর্ম ও ধর্ম চর্চা অপরিহার্য করে তোলে তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে বাস্তবকে বদলানো। তত্ত্বের পরিমণ্ডলে হেগেলের ভাববাদ পর্যালোচনা করতে গিয়ে ফয়েরবাখ মানুষের ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ জগতের গুরুত্ব ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন, মার্কস ফয়েরবাখের এই অর্জন অকুন্ঠ চিত্তে মানেন ও স্বীকার করেন। তবে তার সীমাবদ্ধতা ধরিয়ে দিয়েছেন এভাবে যে ফয়েরবাখ বিমূর্ত চিন্তায় সন্তুষ্ট নন বলে ইন্দ্রিয়মগ্নতা চান; কিন্তু তিনি ইন্দ্রিয়পরায়ণতাকে ব্যবহারিক নৈর্ব্যাক্তিক প্রক্রিয়া হিসাবে, অর্থাৎ মানুষেরই ইন্দ্রিয়পরায়ণ তৎপরতা হিসাবে ধরতে পারেন না।
ব্যাপকার্থে ইন্দ্রিয় তৎপরতা কিম্বা চিন্তা বা চিন্তা প্রক্রিয়াও যে বাস্তব মানুষের বাস্তব তৎপরতা ফয়েরবাখ সেটা ধরতে পারেন নি। এই দিক থেকে আগের সকল বস্তুবাদের যে ত্রুটি, সেই ত্রুটি ফয়েরবাখেও থেকে গেলো। চিন্তা, চিন্তা প্রক্রিয়া, ভাবচর্চা বা ভাববাদের বিপরীতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু জগতকে একমাত্র সত্য বললে সমস্যা মেটে না। মানুষের চিন্তা, চিন্তা প্রক্রিয়া বা ভাব বাস্তবতারই অংশ। বস্তুবাদ ও ভাববাদের এই বিভাজন অতিক্রম করে মার্কস নতুন ভাবে চিন্তা করবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই ইঙ্গিতে মানুষের বৈষয়িক জীবনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যুগপৎ দৃশ্যমান জগত ও চিন্তার জগত বোঝার প্রতি অভিমুখ তৈরি হয়েছিল মার্কসের হাতেই। এখানেই মার্কস বস্তুবাদের পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে গেলেন। বস্তুবাদ আর ভাববাদের খাপে ফেলে তাঁকে আর বিচার করা যায় না।
ফয়েরবাখের ত্রুটি ধরে মার্কস ধর্ম নিয়ে কোন তত্ত্বীয় আলোচনায় আগ্রহ বোধ করেন নি। বরং মানুষের বাস্তব জীবন ব্যাখ্যা করবার জন্যই তিনি সারা জীবন ব্যয় করেছেন, যেখানে ধর্ম অন্তর্ভূক্ত, বিচ্ছিন্ন কোন ব্যাপার নয়। মানুষকে তার বৈষয়িক বা আর্থ-সামাজিক তৎপরতার জায়গা থেকে দেখলে তত্ত্বীয় জ্ঞান হিসাবে ধর্ম কী রূপ পরিগ্রহণ করছে কিম্বা বাস্তবে কি ভূমিকা রাখছে সেটা বোঝা যাবে। বাস্তবের জীবন ও জগত থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে ধর্ম পর্যালোচনার পথ বা পদ্ধতি মার্কস গ্রহণ করেন নি। মার্কসের বড় অবদান এখানে।
মার্কস বলছেন, ফয়েরবাখ ধর্মীয় আত্ম-বিচ্যুতির বাস্তবতা থেকে শুরু করেন। ধর্ম হচ্ছে মানুষের আত্মবিচ্যুতি, নিজেকে নিজে হারিয়ে ফেলা, নিজের স্বভাবকে ঈশ্বরের স্বভাবের মধ্যে আবিষ্কার করা, ইত্যাদি। দুনিয়া একটাই, কিন্তু তাকে ফয়েরবাখ দুইটা বানিয়া ফেলেন। একটা ধর্মীয় বা নিজের স্বভাব প্রক্ষিপ্ত করা ধর্মীয় কল্পনার জগৎ আর অন্যটা প্রকৃত, বাস্তবের দুনিয়া। ফয়েরবাখ ধর্মীয় দুনিয়াকে ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির মধ্যে বা ধর্ম নিরপেক্ষ চিন্তা দিয়ে মীমাংসা করতে চান। কিন্তু এতে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তিনি খেয়াল করেন না এই কাজ শেষ করার পরও ধর্ম ও মানুষের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক বিচারের আসল কাজ বাকি থেকে যায়।
ঘটনা হলো, ধর্মকে ধর্মনিরপেক্ষতার পাটাতনে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েরবাখ খোদ ধর্ম নিরপেক্ষতার স্ববিরোধিতার মধ্যে খাবি খেতে থাকেন। মার্কস একটি উদাহরণ দিয়েছেন খ্রিস্টিয় ট্রিনিটির ধারণা পরিবারের ধারণা থেকে উদ্ভূত, ফয়েরবাখ তা মনে করেন। তাহলে খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্বের ট্রিনিটির ধারণায় রূপান্তর ঘটাতে হলে বাস্তব জগতের পরিবারের মধ্যে রূপান্তর আনতে হবে। পার্থিব পরিবারই যদি খ্রিস্টিয় পবিত্র পরিবারের গোপন রহস্য বলে উন্মোচিত হয়ে থাকে তাহলে পার্থিব পরিবারের লয় বা রূপান্তর ঘটাতে না পারলে খ্রিস্টিয় পবিত্র পরিবারের ধারণা লয় পাবে কিভাবে? বাস্তবের এই রূপান্তরের কাজটা বাস্তবেরই কাজ, তত্ত্বের নয়। এখানেই ফয়েরবাখীয় বস্তুবাদ ও নাস্তিকতার সীমাবদ্ধতা। মার্কসের দাবি, বাস্তব জীবনের ব্যবহারিক-বৈপ্লবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বাস্তবের রূপান্তর ঘটাতে হবে, কিম্বা ঘটবে। তাত্ত্বিক ভাবে খ্রিস্টিয় পরিবার তত্ত্ব ভূয়া, খ্রিস্ট ধর্ম ভূয়া – এই ধরণের ধর্ম বিরোধী তৎপরতাতে মার্কস যেমন আগ্রহী ছিলেন না, তেমনি তার একটা সেকুলার ব্যাখ্যা খাড়া করে তত্ত্বগত ভাবে তার মীমাংসার প্রতিও মার্কস আগ্রহী ছিলেন না। যে কারনে ধর্ম নিয়ে তিনি লেখালিখি করাও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন নি, বরং বৈষয়িক জীবনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে শুধু পারিবারিক সম্পর্ক নয় মানুষের সকল প্রকার বৈষয়িক সম্পর্কের রূপান্তর কিভাবে ঘটে ও ঘটছে মানবেতিহাসের রূপান্তরের সেই সকল গতি প্রকৃতি ও ইতিহাস বুঝতেই মার্কস জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।
ধর্ম বা ধর্মতাত্ত্বিক পরিমণ্ডলে মানুষের যে সারাৎসার বা তাৎপর্য, ফয়েরবাখ তাকে মানবিক করে তোলেন, তাকে এনথ্রপলজি বা মানববিদ্যার অন্তর্ভুক্ত করে মানুষ সংক্রান্ত ধর্মীয় সারাৎসারকে মানুষের মানবিক সারসত্তায় নিরসন করেন। অর্থাৎ ধর্মের মানবিক দিকটা ফয়েরবাখ দেখান। কিন্তু মানুষের সারসত্তা সম্পর্কে যে তত্ত্ব তিনি বের করে আনেন তা এমন কোন বিমূর্ত ব্যাপার নয় যে প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই তা সহজাত। আমরা বলতে পারিনা খ্রিস্ট ধর্মের পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে ফয়েরবাখ মানুষের যে সারসত্তা বের করে এনেছেন কিম্বা যে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন মানুষ ঠিক সে রকম।
মানুষ তাহলে কী? তরুণ মার্কস উত্তর দিচ্ছেন, ‘বাস্তবে মানুষ সামাজিক সম্পর্কের সম্মিলন’। সমাজে বিভিন্ন বৈষয়িক ও বাস্তবিক সম্পর্কে জড়িত মানুষ হচ্ছে সেই সকল সম্পর্কেরই সামগ্রিক ফল। ফয়েরবাখের ধর্ম ও দর্শন পর্যালোচনার সূত্র মার্কসের হাত ধরে পরে ‘সামাজিক উৎপাদন’ বা উৎপাদন সম্পর্কের ধারণায় গিয়ে পৌঁছায়। কিন্তু ফয়েরবাখ, মানুষের এই ‘প্রকৃত সারসত্তা’র পর্যালোচনা করতে সক্ষম হন নি। ফলে, মার্কস বলছেন, ফয়েরবাখ দুটো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
১. মানুষকে তার বাস্তবিক বা বৈষয়িক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ‘বিমূর্ত’ সত্তা গণ্য করা। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন এই বিমূর্ত মানুষের ধর্মীয় আবেগকে এমন ভাবে অনুমান করা বুঝি সেই আবেগ আপনাতেই আপনি হাজির হয়, বা হাজির থাকে। অর্থাৎ ধর্মকে একজন বিচ্ছিন্ন ও বিমূর্ত মানুষের সেন্টিমেন্ট বা আবেগ হিসাবে ফয়েরবাখ বিচার করেছেন। তিনি ধর্মের সামাজিক কিম্বা ঐতিহাসিক তাৎপর্য বুঝতে পারেন নি। ‘ধর্মীয় আবেগ’ নিজেই যে একটা সামাজিক ঐতিহাসিক ব্যাপার এবং দেশকালপাত্র ভেদে সেই আবগেরও যে রকমফের আছে ফয়েরবাখ তা বোঝেন নি। যে কারণে ফয়েরবাখ যে বিমূর্ত মানুষকে ব্যাখ্যা করেছেন বাস্তবে সেই মানুষটি যে বিশেষ ধরণের সমাজের অন্তর্গত সেটা ফয়েরবাখের চোখে পড়ে না।
২. মানুষের সারসত্তাকে অতএব, ফয়েরবাখ কেবল ‘প্রজাতি’র স্বভাব হিসাবেই নির্ণয় করেছেন। যেন এই সারসত্তা মানুষের অর্ন্তগত এক ধরণের নির্বোধ সামান্য বৈশিষ্ট। এই প্রজাতিগত নির্বোধ বৈশিষ্ট্যের অনুমান দিয়ে বিভিন্ন ও বিচিত্র মানুষকে ফয়েরবাখ প্রকৃতিগত ভাবে এক বা অভিন্ন ভেবেছেন।
আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা (১) ফয়েরবাখের খ্রিস্ট ধর্মের পর্যালোচনা এবং (২) কার্ল মার্কসের খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে ফয়েরবাখের পর্যালোচনার পর্যালোচনা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরলাম। খ্রিস্টিয় চিন্তার পরিমণ্ডলে ধর্ম পর্যালোচনার ইতিহাস কিভাবে সমাজ ও ইতিহাস পর্যালোচনার ধারা হিসাবে গড়ে উঠল আশা করি সে সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা আমরা এখানে দিতে পেরেছি।
১১ অক্টোবর, ২০১৫ ২৬ আশ্বিন, ১৪২২, শ্যামলী।
লেখাটি নিয়ে এখানে আলোচনা করুন -(0)