গণপ্রতিরক্ষা
গণপ্রতিরক্ষা, ফরহাদ মজহার; প্রথম প্রকাশ ফাল্গুন ১৪১২, ফেব্রুয়ারি ২০০৬। ইতিহ্য, ঢাকা। পৃষ্ঠা ১৮৩; মূল্য: ১৭৫/=
জাতিবাদী, জাত্যাভিমানী, সাম্প্রদায়িক বা ফ্যাসিস্ট না হয়েও বিশ্বসভায় স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হয়ে ওঠা, সেই আলোকে নিজেদের শক্রমিত্র নির্ধারণ ও মোকাবিলার প্রশ্নকে সামনে রেখে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে বিকাশ ও আত্মরক্ষার পথানুসন্ধান, উপায়ের অন্বেষণ এই বই। নানান দিকে আলো ফেলে তুমুল নাড়া দিতে সক্ষম। 'জাতীয় প্রতিরক্ষা' সংক্রান্ত প্রথাগত ও প্রাচীন ধারণা বাংলাদেশের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না, তার জায়গায় কেন 'গণপ্রতিরক্ষা'র ধারণার বিকাশ ও বাস্তবায়ন দরকার সেটাই এই বইতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নাগরিকতাকে সৈনিকতায় এবং সৈনিকতাকে নাগরিকতার রূপান্তর না করা গেলে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে কি? এই প্রশ্নই তোলা হয়েছে এই গ্রন্থে।
ছোট ও বিভক্ত জনগোষ্ঠী হিশাবে আমাদের বিপদ, শত্রুমিত্র নির্ধারণের প্রশ্নে নাগরিক অনৈক্য এই বইয়ের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। এটা রাষ্ট্রবাদী তত্ত্ব না, একে লেখক নেহায়েতই বিদ্যমান রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার বিষয় মনে করেন না, বরং রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ পরিগঠন ও রাজনৈতিক রূপান্তরই তাঁর কাছে মূখ্য বিষয়। যা একটি জনগোষ্ঠির আত্ম প্রতিরক্ষা, সামরিকতা বা সৈনিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
নিজেদের রাজনৈতিক বিকাশের অভাব অভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় সংগঠিত না হওয়ার সংকটের মধ্যে ধরা পড়ে। যদি সে বিকাশ হত, নিজেদের দেশের 'নাগরিক' বলেই আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দিতাম, আর নিজ নিজ বংশ, নৃগোষ্ঠী, সামাজিক, ঐতিহাসিক, ভাষাগত বা ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকতার অধীন রাখা শিখতাম। এই গণতান্ত্রিক শিক্ষা ছাড়া বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় কোন জনগোষ্ঠি টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু নিরন্তর জনগণের সামষ্টিক চিন্তার বীজ ও সম্ভাবনাকে লণ্ডভণ্ড করে আমরা বিভক্তি, বিভেদ, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ করে চলেছি। এভাবে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারে না। এটা বন্ধ করা দরকার।
একদিকে নিজেদের রাজনৈতিক করে তোলা, অন্যদিকে নাগরিকতা ও সৈনিকতার ভেদ মোচনের জন্যই গণপ্রতিরক্ষা: নাগরিক মানেই সৈনিক আর সৈনিক মানেই নাগরিক। প্রচলিত জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে না দিলে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে না। এর অতি প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে সবার জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের’ এই কালে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব। এই প্রতিরক্ষা 'গণ' প্রতিরক্ষা, প্রতিরক্ষার নামে রাষ্ট্রকে দানব করে তোলা নয়। রাষ্ট্র যখন গণভত্তি হারিয়ে ফেলে তখন সে হয়ে ওঠে এমন এক প্রতিষ্ঠান যা বাইরের আক্রমণ বা হামলা থেকে জনগণকে রক্ষা করবার হিম্মত হারায়। দেশের অভ্যন্তরে নির্মম ভাবে জনগণকে নিপীড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠাই রাষ্ট্রের অনিবার্য পরিণতি হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে অরক্ষিত। দেশের অভ্যন্তরে ক্রমাগত নানামুখী অন্তর্ঘামূলক তৎপরতা অন্যদিকে সীমান্তে নির্বিচারে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বাংলাদেশের মানুষ হত্যা। কাঁটাতার ও রক্তাক্ত সীমান্তে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে নিজেদের রক্ষা করবে সেই চিন্তাভাবনা জাগ্রত করবার জন্যই এই গ্রন্থ।
ভূমিকা
প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব
- শুধু ‘সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক’ বিচার নাকি জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি অন্বেষণ?।
- জাতীয়-প্রতিরক্ষা ও সেনাবাহিনী বিতর্ক: পাহারাদার ভূমিকা বনাম প্রতিরক্ষা ভূমিকা।
- পুঁজিতান্ত্রিক গোলোকায়ন এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা বিতর্ক।
- সৈনিকতার মর্যাদা, আমলাতন্ত্র এবং আমাদের রাজনৈতিক সংকট।
গণপ্রতিরক্ষা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
- গণপ্রতিরক্ষা ও এখনকার রাজনীতি।
- গণপ্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক মৈত্রী।
- গণপ্রতিরক্ষা: ইরাকের অভিজ্ঞতা।
- গণসৈনিকের নজরদারি বনাম সেনাপতির চোখ।
ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কে
- ভারত কি আমাদের মিত্র?।
- গণপ্রতিরক্ষা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব: ভারত-বাংলাদেশ পরিস্থিতির আলোকে।
- ভারতের সঙ্গে শিথিল গঠনের একটি কমিউনিষ্ট প্রস্তাব।
- অমানবিক ছবি নিয়ে ভারতীয় প্রপাগান্ডা এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের ক্রমাগত সামরিক আগ্রাসন।
- তেলের যুদ্ধ, সীমান্তে আগ্রাসন এবং আমাদের সন্ত্রাসী বনে যাওয়া।
- ভারত-ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপাক্ষীত আঁতাত।
- ভারতের নেতৃত্বে এবং বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা?।
ক্ষুদ্ররাষ্ট্রের নিরাপত্তা
- বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের নানা রূপ।
- প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের কূটনীতি।
- ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কোন্নয়ন উভয়ের জন্যই জরুরি।
- জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আসল প্রশ্ন।
পরিশিষ্ট
- সীমান্ত সংঘর্ষ ও উপমহাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ।