সাঁইজীর দৈন্য গান
সাঁইজীর দৈন্য গান, ফরহাদ মজহার; প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০০, দ্বিতীয় প্রকাশ ফাল্গন ১৪১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনী বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০। পৃষ্ঠা ৩০২; মূল্য:৪০০/=
আক্ষরিক অর্থে দৈন্য গান মানে জীবের দীনতা প্রকাশক গান। যাঁর শরণ নিতে চাই তাঁ কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা; নিজের পাপ বা অপরাধ স্বীকার, তাঁর দয়া, করুণা, ক্ষমা বা আশ্রয় ভিক্ষা করা, ইত্যাদি। প্রার্থনা জিকির বা যাঁকে ডাকিেছ তাঁর গুণগানও দৈন্য গানের মধ্যেই পড়ে। মানুষ বিপদে সংকটে আনন্দে খুশিতে আল্লাহ ঈশ্বর ভগবানকে ডাকে, দয়ালের জন্য মন কাতর হয়, কিম্বা আমরা বিপদে পড়লে মাকে বা প্রিয়জনকে ডাকি। দৈন্য গানের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো আল্লা, নবী, হরি, গৌর, নিতাই, দয়াল, সাঁইজী বা গুরুকে দীনহীন ভাবে ডাকা। একদিকে নিজের তুচ্চতা ও দীনতা প্রকাশ অন্যদিকে নিজের অপরাধ বা পাপের জন্য ক্ষামা ও উদ্ধার পাবার আকুতিই দৈন্য গানের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ফকির লালন শাহের গানে কাউকে ডাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। নিজের অ-ভাব, অজ্ঞানতা, ভজন-পূজন-সাধন, নামাজ কালামের বার্থতা স্বীকার করে নিয়ে আত্মসমালোচনা সাঁইজীর ভাবের বিচারে দৈন্য গানের আরো পরিণত রূপের মধ্যেই পড়ে। শুধু নিজের সমালোচনা করেই দৈন্য গান শেষ হতে পারে। কখন, কিভাবে কেমন করে, কোথায়, কার কাছে দৈন্য গান গাইতে হয় তার কিছু বিধিবিধান শ্রীচৈতন্যের আমল থেকে ফকির লালন শাহ অবধি সাধুগুরুরা এখনও টিকিয়ে রেখেছেন। এই নিয়মগুলো আঁটোসাঁটো কোন বিধি নয়। তার মধ্যে নানান রূপ ও বৈচিত্র্যে রয়েছে।
নবপ্রাণ আন্দোলনের তরফে কবি ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার এই গ্রন্থে ফকির লালন সাঁইয়ের ভাবচর্চা, গান ছাপা ও গাওয়া এবং দৈন্য গান সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। অনেকইে যেখানে লালনের গানের ‘শুদ্ধ, ও ‘প্রামাণ্য’ পাঠ নির্ণয়ের কাজে গলদঘর্ম করে চলেছেন সেখানে কবি ফরহাদ মজহার এই গ্রন্থের মাধ্যমে দেখিয়েছেন শ্রুতি ও কণ্ঠনির্ভর সংস্কৃতিতে অক্ষর ও মুদ্রণয়ন্ত্রের রীতিও কাঠামোর মাধ্যমে লালনের গান প্রকাশ করার বেশ কিছু মুশকিল ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। শুধু তাই ন য়, দৈন্য গানের আলোচনায় তিনি কবি ও সাধকের মধ্যে তুলনা করে দেখিয়েছেন বাংলার ভাবান্দোলনের ধারার সাধক মাত্রই কবি, কিন্তু কবি মাত্রই সাধক নন। এই গ্রন্থে দেখানো হয়েছে কাব্য ছাড়া সাধনা অসম্ভ। কিন্তু নাগরিক পরিম-লের কবিগণ কেন সাধনার প্রাথমিক সোপান অতিক্রম করে প্রজ্ঞার সদর দরজায় পৌঁছাতে পারেন না সেই কারুণ ইতিহাসের কথাও তিনি ব্যক্ত করতে ভুল করেননি। কবি ফরহাদ মজহার সাঁইজীর দৈন্য গান গ্রন্থটি পাঠ করার পর সকল শ্রেনীর পাঠক গায়ক নিশ্চিতভাবেই লালনের দৈন্য গানগুলো পাঠ ও গাইবার সময়ে অন্যরকম আনন্দ অনুভব করতে সক্ষম হবেন।
সূচি
- ভূমিকা
- দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা ।
- ফকির লালন শাহের ভাবচর্চা এবং গানছাপা ও গাওয়ার সমস্য।
- শ্রুতি ও স্মৃতির সংস্কৃতি এবং ছাপাখানা।
- লালনের গান সংগ্রহ ও সম্পাদনার সমস্য।
- লালনের গানের খাত।
- লালনের গান সংগ্রহ, সম্পাদনা ও সংকলন এবং নবপ্রাণ আন্দোলন।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের “লালন-গীতিকা”।
- উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের লালন গান সংগ্রহ।
- ভোলাই শা-র খাতা।
- মূহাম্মদ মনসুর উদ্দীনের “হারামণি”।
- খোন্দকার রফিউদ্দিনের ভাব-সঙ্গীত।
- ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু শাহের লালন-সঙ্গীত।
- নবপ্রাণ আন্দোলন।
- লালনের গান প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রস্তাব।
- গানের নীচে সূত্র নির্দেশ পদ্ধতি।
- বইপত্রের হদিস।
- দৈন্য গান।