আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে
আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে, ফরহাদ মজহার; প্রথম প্রকাশ, অগ্রহায়ণ ১৩৯০ নভেম্বর ১৯৮৩, দ্বিতীয় প্রকাশ পৌষ ১৩৯৩ জানুয়ারি ১৯৮৭। প্রতিপক্ষ প্রকাশনী ঢাকা ১২০৭।
আগামী প্রকাশনি; প্রথম সংস্করণ: ভাদ্র ১৪৩১ আগস্ট ২০২৪ প্রথম প্রকাশ:
পৃষ্ঠা ৫৬; মূল্য:২৫/=
সূচিপত্র:
- কবিতা ও সশস্ত্র বিপ্লব ॥ ৯
- আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে ॥ ১০
- দোদুল্যমান মুহূর্তে ॥ ১২
- মোনাফেক ॥ ১৩
- প্রাগৈতিহাসিক ॥ ১৪
- ইতিহাসের মূর্তনির্দিষ্ট লক্ষ্য ॥ ১৫
- লাশসকল প্রতিশোধ নেবে ॥ ২১
- সমরপতিদের গণতন্ত্র ॥ ২৫
- কবিতা ও রাজনীতি ॥ ২৬
- সুন্দরের মোয়াজ্জিন ॥ ২৭
- শিল্পের টেকনোলজি ॥ ২৯
- শিল্পের ভাষার মধ্যে এখন ॥ ৩০
- আবু তাহেরের কাঠের ক্রাচ ॥ ৩৩
- বৈশাখের মেঘ ॥ ৩৪
- যদি পারো ॥ ৩৫
- সাধারণের বোধগম্য কবিতা ॥ ৩৭
- অশোকতরুর ক্রোধ ॥ ৪৩
- গেরিলা ॥ ৪৪
- কর্তৃত্ব গ্রহণ করো, নারী ॥ ৪৬
- এরশাদ তোমাকে দেখা মাত্রই গুলি করবে। ৪৯
- দৃশ্যমান সশস্ত্রতা ॥ ৫৪
দুই হাজার চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের বীজ বাংলা কাব্যে বপন করা হয়েছিল কবি ও ভাবুক ফরহাদ মজহারের ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৩ কালপর্বে। তাঁর বিখ্যাত “আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে” কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তিন বছর আগে থেকে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ আমলের সূচনালগ্নে। তার আগুন আমরা এবার দেখলাম।
ফরহাদ মজহারের কবিতা যুগপৎ কবির ও বাংলাদেশের ইতিহাস। একজন কবি তাঁর যাবতীয় ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি, হতাশা ও দোদুল্যমানতাকে সঙ্গে নিয়ে কি করে বিপ্লবের স্থিরনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে যাত্রা করেন, নিজেকে নিজে প্রস্তুত করেন সেটাই এই কাব্যগ্রন্থে আমরা পাঠ করি: “মিস্তিরির মতো রাঁদায় ঘষে, করাতে কেটে, ধারালো বাটালি দিয়ে আস্তে আস্তে”, কারন “এখন তৈরি হবার সময়”। জুলাই বিপ্লবের জন্য নিজেকে নিজে তৈরির ইতিহাস ও কারিগরি আমরা পাই ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থে।
প্রস্তুতি চলতে থাকে প্রথমত স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে, কিন্তু দেশ স্বাধীন করা আর নিজেদের রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে ‘গঠন’ বা ‘রাষ্ট্র’ হিশাবে বিশ্ব ইতিহাসে বর্তমান হতে পারা এক কথা নয়। নিজেকে নিজে ‘গঠন’ করবার প্রক্রিয়া যেমন কাব্যে ঘটতে থাকে তেমনি ফরহাদ মজহারের ভাবুকতা এবং রাজনীতির মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গঠন করবার রণনীতি ও রণকৌশলও ফুটে উঠতে থাকে। যা আমরা জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করলাম। গাঠনিক মূহূর্তগুলো আমরা পরতে পরতে যেমন তাঁর কাব্যে মূর্ত হতে দেখি, তেমনি তারই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রদর্শন দেখি তাঁর দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তায়। এই সেই বৈপ্লবিক গর্ভকাল, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন বাস্তবতা, এক নতুন দুনিয়ার জন্ম দিতে চলেছে।
সকল বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ যখন রুখে দাঁড়ায়, তখন সেই দিব্যভঙ্গি আর বিদ্যমান ব্যবস্থার অন্তর্গত থাকে না; দেশকালের বাইরে তার রূপ চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। তাই শহিদ আবু সাঈদ বা মুগ্ধের মধ্যে সেই রূপ দেখে আমরা মূর্ছা যাই। এই রুখে দাঁড়ানো ও স্বেচ্ছায় শহিদ হওয়ার মধ্যে যে কর্তাকে আমরা দেখি তাকে স্রেফ বিদ্যমান ব্যবস্থার ফল বলা যায় না। বরং বিদ্যমান ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে গিয়ে জীবের জীবন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে পরমার্থিক জীবনের অংকুরোদ্গম ঘটে তারই ডাকনাম ‘মানুষ’। এই মানুষ বাংলাদেশের বটে, কিন্তু বিশ্ব-ঐতিহাসিক। সার্বজনীন মানুষ। কিন্তু সর্বোপরি ফরহাদ মজহারের ভাষায় আল্লার ‘খলিফা’, যিনি জাত, পাত, শ্রেণী ও লিঙ্গ নির্বিশেষে একই সঙ্গে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক। এই এক দিব্য কর্তাসত্তা যে দিব্যতার মর্ম গ্রিক-খ্রিস্টিয় সভ্যতা বা দর্শনে আমরা আমরা পাই না। বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষ এই আবিষ্কারের মধ্যে নিজেদের খুঁজে পায়, মানুষের মহিমা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
আসুন, জুলাই বিপ্লবের উত্তাপে নিজেদের সেঁকে নিয়ে আমরা আরেকবার ‘আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে’ পাঠ করি।