জলের তলে জলের ছায়া
‘আমি’ নিজেকে নিজের ভেতর স্পষ্ট করে পেতে চায়। স্পষ্ট করতে সে নিজেকে দুনিয়ার ময়দানে নামায়, নিজেকে দিয়েই জগতটারে বুঝতে চায়। মুশকিল হলো আমি আর জগত তো সমার্থক বিষয় না (এভাবে চিন্তা করি)- ফলে ‘আমি’ বুঝলে দুনিয়া বুঝি কেমনে? তবে সমর্থক হওয়ার আগাম কী অনুমান তার কাছে!
নিজেকে দিয়ে জগতটাকে বুঝতে চাওয়া- এটি আপ্তবাক্য হয়ে উঠার ঝুঁকি থাকে, তাই তাকে বাড়তি কাজ করতে হয়। মোটাদাগে জগতটাকে পাঠ করতে গেলে সাধারণ হিসেবে আমিকে জগতের সামনে সিনা টান টান করে দাঁড়াতে হয়। তখন সে জগতের সামনে সমান-সমান হয়ে হাজির হয়। এই সমধারনা কি গায়ে গতরে? না বুদ্ধিতে? না চিন্তাতে? নাকি অন্যকিছু? অথবা কথাটা কেন এমন?
এই প্রশ্নের নিরিখে এগুতে গেলে যে সমস্যা থাকে তাহলো আমি কি নিজেকে কখনো কোনকিছুর সমান বলে হাজির জ্ঞান করি কিনা। আরেকটু এগিয়ে গেলে বলতে হয়, আমি কিভাবে মাপজোখ-হিসেব করে। এই মাপজোখের হিসেবটা খেয়াল করলে দেখা যাবে- ‘আমি’ যে ধরনের ঘটনা ঘটায়, তা হলো ‘আমি’ নিজে কোথায় উপস্থিত। কোনো কিছুর বুঝাপড়া বা জানার শর্ত হলো, ‘আমি’র উপস্থিতিটা কোথায় এবং তাতে ‘আমি’ কীরূপে হাজির- সে মীমাংসা করা। কীরূপে কোন ঘটনায় অংশগ্রহন করি- এক অর্থে ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা আবার অন্যভাবে বস্তুজগতে পরিবর্তনের নিয়ামকরুপে জানান দেওয়া। এখন এইভাবে দেখাটাতে দুনিয়া কীরুপে হাজির। অথ্যার্ৎ ‘আমি’ কোন দুনিয়াতে এবং কীরুপে নিজেকে হাজির করে সেটা হলো মূল কথা। সেইখানে যদি নতুন নতুন বয়ান হাজির হলে ‘আমি’ নিজেকে নানান ডাইমেনশনে হাজির করে নিজের বিচার করে। কেননা, সে যদি বলে আমি দুনিয়াকে জানতে চায়- তখন নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়, কোন দুনিয়া? এরও তো রূপভেদ আছে।
বিপদ বা সুবিধা যেকোনো নামে মুশকিলটা হতে পারে ‘আমি’ নিজের জন্য তার মতো করে একটা সত্য দুনিয়ার ধারণা ফেদে বসে আছি কিনা? কারণ সেতো নিজেকে যাচাই করছে- আবার নিজেকে দিয়ে যাচাই করছে। যাচাই করছে মানে নিজের কাণ্ডজ্ঞানের ভেতর এমন দুনিয়ার মোকাবেলা করছে সে যেখানে উপস্থিত আছে। উপস্থিত থাকার সমস্যা হলো, আমিকে শুধু থাকলে হয়না- জানান দিয়ে থাকতে হয়। এখন যদি আপনলোকে ছদ্মবেশের নিরাপদ আশ্রয়কে আমি আপনজ্ঞান করে, এতে- দুনিয়াদারীর কোন সমস্যা হয় না- কিন্তু ‘আমি’ কি ওই জায়গায় স্থির থাকতে চায়? কারণ, এখনো তো সে দাবী করে নাই। তবে আমি ‘আমি’ বলছি কারে?
ঢাকা, ২০০৯
আমার লেখার খাতা: ইচ্ছেশূন্য মানুষ