আমাদের সমাজে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে কিছু আগাম অনুমান লক্ষ করা যায়। যেমন ‘ধর্ম মানেই সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল এবং বর্বর, ধর্ম বিরোধিতা মানেই প্রগতিশীলতা, ইসলাম মানেই জামাত, জামাত মোকাবিলার একমাত্র পথ নির্মুল করা, শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধিতা মানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা। বিপরীতে আছে কমিউনিস্ট মানেই নাস্তিক, নাস্তিক মানেই ধর্মবিরোধী। মানে আগে থাকতেই ধরে নেওয়া হয় বিষয়গুলি বুঝি এরম একদম খাপে খাপে ঘটে, এর ব্যতিক্রম হয় না।

আগাম অনুমান চিন্তা করতে সাহায্য করে নিশ্চয়। কিন্তু আগাম অনুমানকে আগে থেকেই সঠিক ধরে নিলে মুশকিল তৈরি হয়। এ অনুমান এক সময় বিশ্বাসে পরিণত হয়ে যায়। চিন্তা করতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, এসবের বাইরে আর কিছু থাকে বা থাকতে পারে সে ব্যাপারে বেখবর হয়ে পড়ে।

চিন্তাকে তার আগাম অনুমানকে প্রশ্ন করে আগাতে হয় সবসময়। চিন্তা যে একটা আগাম অনুমান করে চিন্তা শুরু করেছে সে ব্যাপারে তাকে হুশিয়ার থাকতে হয়। ধরে নেয়া অনুমান থেকে যে সরে আসতে হতে সে ব্যাপারেও চিন্তাকে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। কারণ চিন্তা হচ্ছে সজীব ও প্রাণবন্ত ব্যাপার।চিন্তা তার অনুমানকে অনবরত পরীক্ষা নিরিক্ষার মধ্যে রাখে।চিন্তাকে প্রশ্ন করতে হয় যে অনুমান আমি করলাম সে অনুমান কি ঠিক? আমার অনুমানের ভিত্তি কি? যে চিন্তা নিজের আগাম অনুমানের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকে না, অনুমানকে যাচাই বাচাই না করে নির্দ্বিধায় মেনে নেয় সেই চিন্তা মুখ ধুবড়ে পড়ে। আর আগাতে পারে না।

যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবি, জাতির বিবেক বলে দাবি করেন তাদের চিন্তার মধ্যে যে এসব আগাম অনুমান হাজির থাকে এইটা তাদের কথাবার্তা থেকে ঠের পাওয়া যায়। তারা যতই দার্শনিক-রাজনৈতিক পান্ডিত্যপুর্ণ কথাবার্তাই বলেন না কেন তাদের মধ্যে হাজির থাকা আগাম অনুমানকে প্রশ্ন না করার কারণে, চিন্তার দরবারে এসব অনুমানকে পেশ করে যাচাই বাচাই না করার কারণে তাদের কথাবার্তা ‘যাহা লাউ তাহাই কদু’ থেকে যায়। 


নিজের সম্পর্কে লেখক



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।