গৌর ক্ষ্যাপা
গত বছর ২০১৩ সালে জানুয়ারি ২২১ তারিখে বোলপুরের জয়দেবের মেলে থেকে ফেরার পথে গৌর ক্ষ্যাপা দুর্ঘটনায় পড়েন, আহত হন খুব। যে গাড়িতে ছিলেন সেটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারে। ড্রাইভার সেখানেই নিহত হয়। কলকাতার একটি হাসপাতালে গৌর ক্ষ্যাপার চিকিৎসা চলছিল; পাগল, ক্ষ্যাপা, ফকির ফ্যাকড়ার ক্ষেত্রে যা হয় তাঁর ক্ষেত্রেও অন্য রকম কিছু ঘটে নি। চিকিৎসার খরচ ওঠে না। চিকিৎসা কি হয়েছে বলা মুশকিল।
তো ক্ষ্যাপা শেষ তক জানুয়ারির ২৬ তারিখে সবাইকে বিদায় জানালেন। তিরোধান ঘটল তাঁর...।
এই মানুষটির প্রতি আমার ব্যাক্তিগত আগ্রহ ছিল প্রচুর। কিন্তু সাক্ষাৎ হোলনা। এই দুঃখ থেকে গেল।
তাঁকে স্মরণ করে তাঁর গাওয়া একটি গান তুলে দিচ্ছি।
না বুঝে মজনা পিরীতে
না বুঝে মজনা পিরীতে
জেনে শুনে কর পিরীতী
শেষ ভাল দাঁড়ায় যাতে ।।
ভবের পিরীতি ভূতের কীর্তন
ক্ষণেক বিচ্ছেদ ক্ষণেক মিলন
অবশেষে বিপাকে মরণ
তেমাথা পথে।।
পিরীতে যদি হয় বাসনা
সাধুর কাছে জেনে নে না
লোহা যেমন পরশে সোনা
হবে সেই মতে।।
এক পিরীতের বিভাগ চলন
কেউ স্বর্গে কেউ নরকে গমন
দেখে শুনে বলছে লালন
এই জগতে।।
এই গানটি এদিকটায় কিছুটা ভিন্ন ভাবে গাওয়া হয়। সাধকদের গানে বিশুদ্ধ বা প্রামান্য সুর বলে কিছু নাই। তার মানে সাধনার জগতে সুর বা তালের উছৃংখলতা বরদাশত করা হয় তা কিন্তু না। ভক্ত গানের ভাব বহাল রেখে তার পরিবেশনার স্বাধীনতা নিতেই পারে। কিন্তু মজার জিনিস হচ্ছে গানের সুরের মূল কাঠামো থেকে সাধক খুব একটা সরে আসেন না। সেটা বিশুদ্ধতা বজায় রাখার তাগিদ থেকে নয়, বরং সুরেরও একটি সাধনা-পরম্পরা আছে। অন্য মহাজনরা যেভাবে গেয়েছেন তাঁদের পরম্পরা মেনে গাওয়ার মধ্যেই ভক্তির ধারা সাধনার পরিমণ্ডলের সঙ্গে নিজের নাড়ির বাঁধন বাঁধেন। এই যোগটা ভক্তের দরকার। এরপর তাৎক্ষণিক সুরের সংস্কারের মধ্য দিয়ে গাইবার মুহূর্তের ভাবটি ফুটিয়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেন তাঁরা।
গৌর ক্ষ্যাপা সম্পর্কে যাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে জানেন, তাঁরা আরও জানাবেন, আশা করি।
নিজের সম্পর্কে লেখক
কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।