'আনন্দবাজারে চলরে মন' (১)

'আনন্দ বাজারে চলরে মন' । একতারা ও ডুগি তবলা নিয়ে একা একা পার্বতীর গাইবার ভঙ্গী্র মধ্যে নদিয়া ও রাঢ় অঞ্চলের একটা সন্ধি ঘটেছে মনে হয়, হয়তো ভাবেরও। ওর মধ্যে পার্বতীর নিজস্বতা। গাইবার ভঙ্গী বা গায়কী শুধু কন্ঠে না, সেটা নাচের নরম ও মসৃণ পদক্ষেপে, তালে, মুখের অভিব্যক্তিসহ সারা শরীরে। ছেঁউড়িয়া থেকে তাকালে অচেনা মনে হয় না, কিন্তু বোঝা যায় এই ধারা এই দিক থেকে – অর্থাৎ বাংলাদেশের দিক থেকে ভিন্ন। শরীরকে আমরা ভাবের বাহন করে তুলবার সাধনা কম করি। ভাবের প্রতি আমাদের নিষ্ঠারও বুঝি অভাব ঘটছে দিনে দিনে।

গাইবার ভঙ্গী বা গাইবার ধরণ-- গাইতে গিয়ে ভাষা ও শরীরের মধ্যে অভেদ নির্মাণের সাধনা এখন বিরল ঘটনা। বাংলা, আসাম বা পূর্ব ভারত থেকে সাধনার এই ধারা এখন বিলয়ের পথেই বলা যায়। বাংলাদেশে এক দুই পুরুষ আগেও যাঁদের আমরা দেখেছি এক এক করে তিরোধান করেছেন তাঁরা । অন্য কাজে...।

মনে পড়ে বহু বছর আগে আশির দশকেরমাঝামাঝি মুমূর্ষু কালীগঙ্গা নদীর পাশে অল্প কিছু মানুষ নিয়ে সাধুসঙ্গে জামগাছের তলায় ভাবে বিভোর একজনের কোমল পদক্ষেপের নাচে অভিভূত হয়েছিলাম। হাতে একতারা আর প্রেমজুড়ি। কিন্তু ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে দ্রুতই কাঙালিনী হারিয়ে গিয়েছে শহরে। তবু এখনও মনে হয় প্রেম জুড়ি আর একতারা হাতে 'আমার ঘরের চাবি/ পরেরই হাতে' -- এই গান সুফিয়া ছাড়া আর কারো পক্ষে গায়কী ও নাচের মধ্য দিয়ে অর্থোৎপাদন সম্ভব না। এই এক শব্দগানের ভাষা যা কন্ঠ নয়, শরীর দিয়ে উচ্চারণ করা ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু এই উচ্চারণ গুরুকৃপায় পেতে হয় বলে জানি। কে পায়? কারা পেয়েও হারায়!

সেই কালিগঙ্গা নাই, কাঙালিনী আছেন, কিন্তু সেই গান আর বাংলাদেশে শুনি না। বহুদিন...।

 (ফেইসবুকে এ লেখাটি নিয়ে আরো কিছু কথা চলছে। আলোচনার সুবিধার জন্য এখানে তুলে দেওয়া হোল)


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।