জিহাদকে নির্ভয়ে জিহাদ বলুন

জিহাদকে নির্ভয়ে জিহাদই বলুন, মওলানা ভাসানির রাজনীতি থেকে শিক্ষা নিন। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, জাতপাত, শ্রেণি, নারীপুরুষ ভেদসহ সকল প্রকার জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদে এক কাতারে দাঁড়ান।

হক-কথার ওয়েব-পৃষ্ঠাটি যে কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল...।

"মওলানা ভাসানি আমাদের শিখিয়েছিলেন ‘হককথা’ বলতে হবে। হককথা বলতে হবে শুধু নৈতিক কারনে নয়, রাজনৈতিক কারনে। ব্যক্তিকে সত্যবাদী বানানো নৈতিক লক্ষ্য হতে পারে, কিন্তু যে কথা গণমানুষের রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে, তাকে বিকশিত করে এবং জালিমের ক্ষমতার ভিত্তি উৎখাত করে গণমানুষের শক্তি কায়েম করে, তার জন্যই হককথা বলতে হবে।

কিন্তু কে বলবে? ভাসানি তো নাই। বলবেন আপনি, আমি, সকলে। আমারা যারা চাষাভূষার ঘরের মানুষ, যারা কাজ করছি কলেকারখানায়, যারা শ্রমিক হয়ে কাজ করছি মধ্যপ্রাচ্যে, মালয়েশিয়ায়, নিউ ইয়র্কে, রোমে – পৃথিবীর সর্বত্র। আমাদেরকেই আমাদের কথা বলতে হবে।

এই গ্রুপে কোন রাজনৈতিক দলের ওকালতি করতে আসবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো যে গণমানুষের দুষমণ সেটা আমরা গত ৪০ বছরে বুঝে গিয়েছি। তাহলে এখানে আপনি তাদের কথাই বলবেন যাদের কথা বলা হয় না, যাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে যাকে ‘রাজনীতি’ বলা হয় সেটা চোর, ডাকাত, মাস্তানদের দ্রূত টাকার পাহাড় গড়ে তুলবার দূষিত প্রক্রিয়া ছাড়া কিছু না। এরা মানবিক অধিকার মানে না, মানুষের রিজিকের অধিকার মানে না। এরা কারখানায় তালা মেরে রেখে আমাদের কিশোর-কিশোরী খেটে খাওয়া সন্তানদের পুড়িয়ে মারে, জ্যান্ত কবর দেয়, এদের সমাজ ও রাজনীতি থেকে উৎখাত না করলে গণমানুষের মুক্তির কোন সম্ভাবনা নাই।"

bhashani

মাওলানার লড়াইকে এগিয়ে নিন। তিনি 'জাতীয়তাবাদী' নেতা ছিলেন না। দুনিয়ায় জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই যতো তীব্র হবে ততোই স্পষ্ট হবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি সারা দুনিয়ার মজলুমের নেতা ছিলেন।

ইসলামের নামে যারা রাজতন্ত্র ও সামন্তবাদের পক্ষে দাঁড়ায় এই দেওবন্দী মওলানা 'জিহাদ' কথাটা তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছেন। বলেছেন ইসলাম জালিমের ধর্ম হতে পারে না। অন্যদিকে মার্কস ও বামপন্থার নামে যারা 'জিহাদ' কথাটার বিরোধিতা করে মওলানার রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে তারা বুশ-ব্লেয়ারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের স্থানীয় মার্সেনারি বা ভাড়াটে সোলজার।

মওলানা বলতেন মজলুমের জিহাদের দুই দুষমন। এক নম্বর হোল সেইসব ধর্মান্ধ গোষ্ঠি যারা মুখে বলে দুনিয়ার মালিক আল্লাহ, মানুষ তার আমানতদার মাত্র, কিন্তু ব্যক্তিগত ভোগ, দখল, সম্পত্তির অধিকার তারা ছাড়তে চায় না। তারা তাদের আমিত্বের বিরুদ্ধে জিহাদ করে না, তাই তারা জালিম হয়ে ওঠে। আল্লার এই সৃষ্টিজগতের ওপর ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অধিকার ও এখতিয়ারের দাবি উঠলে তারা আঁতকে ওঠে, এর বিরোধিতা করে, নিজেদের সয়-সম্পত্তি রক্ষার জন্য ঔপনিবেশিক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদের দালাল হয়ে ওঠে। সম্পত্তির লোভ ও ভোগ-লালসার কারনে এরা আর নবীর উম্মত থা্কতে পারে না, ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।

দুই নম্বর দুষমন হোল সেইসব কমিউনিস্ট যারা ব্যাক্তিগত সম্পত্তির উৎখাতের কথা বলে, কিন্তু পার্টি বা রাষ্ট্রের নামে নিজেরাই সব সম্পত্তি নিজেরা দখল করে নেয়। বিপ্লব, পার্টি ও রাষ্ট্রের নামে তারা নতুন এক জাহেলিয়াত কায়েম করে। যার বিরুদ্ধে লড়াই মজলুমের জন্য ফরজ।

এই সৃষ্ট জগত শুধু আদম সন্তানের জন্য আল্লা সৃষ্টি করেন নাই। এর ওপর পশু পাখি কীটপতঙ্গসহ সকল প্রাণ ও প্রাণীর হক আছে। আখেরি নবী সারা দুনিয়ার রহমত হিসাবে এসেছিলেন, শুধু মানুষের জন্য নয় -- এসেছিলেন সকল সৃষ্টির জন্য, জীব ও অজীব সবকিছুর সুরক্ষার জন্য। শুধু মানুষের জন্য যেমন নয়, তেমনি শুধু 'মুসলমান'দের জন্যও নয়। সাম্প্রদায়িকতা ইসলামের নীতি হতে পারে না।

ইসলাম 'ইসলামি রাষ্ট্র' কায়েমের জন্য রাজনীতি করে না, বরং সকল প্রকার রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলয় ত্বরান্বিত করবার রাজনীতিই করে। কেন করে? যাতে, দ্রুত নিজের রূহের আয়নায় মানুষ নিজেকে দেখতে পায়। সেখানে রহমানুর রহিম -- দয়ার দয়া সেই একজনের সুরতই বিরাজ করে, তাঁর সন্তুষ্টিই জিহাদির কাম্য। তিনি দয়াল, তিনি প্রেমের কাঙাল।

আল্লার তরফে মানুষ এই জগতের খলিফা, সৃষ্টির রক্ষাকর্তা। অতএব দরকার হুকুমতে রব্বানিয়া বা প্রতিপালকের ধর্ম, প্রতিপালনের অনুশাসন -- যে মহব্বতে আল্লা এই সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন এবং জাতি, প্রজাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে তাঁর সৃষ্টির ওপর অধিকার দান করেছেন -- সেই মহব্বতেই সমাজ ও শাসন ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে।

শুধু আইন দিয়ে বা রাষ্ট্রের বল প্রয়োগের হাতিয়ার দিয়ে শাসন পরিচালনার যে জালেমি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা উৎখাত করতে হবে। আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমখুন, জেলজুলুম, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

ভেতরে বাইরে নিরন্তর জিহাদের মধ্য দিয়ে হুকুমতে রব্বানিয়া কায়েম করাই মুক্তির পথ।

আসুন মওলানা ভাসানির শিক্ষা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেই।


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।