লুসিফুগা

আরশোলা। অনেককে এই নামে গালি দিতে চাই, কিন্তু এই নামে গৃহপালিত যে-পতঙ্গটির সঙ্গে আমাদের নিত্যদিন ঘর করতে হয়, তার কথা ভেবে আরশোলা বলে কাউকে গালি দিতে পারি না। যখন রাগ হয় তখন বলি লুসিফুগা। ব্লাটাইড (Blattidae) অর্ডারের এই পতঙ্গের সকল জাতপ্রজাতকে পুরানা আমলে নাকি বলা হোত ‘লুসিফুগা – মানে, যারা আলো থেকে দূরে থাকে, আলো দেখলেই সড়াৎ করে সরে যায়।

যে প্রাণি অন্ধকার ভালবাসে তার সঙ্গে তুলনা করবেন না। যেমন পেঁচা। আমি আলো ও অন্ধকার দুটাই ভালবাসি। আলোকিত হবার কিম্বা আলোকিত মানুষ হবার কোন বাতিক আমার নাই। কিন্তু আলো লুসিফুগা পছন্দ করে না, সেটা সে তার আচরণে সড়াৎ করে পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ করে। এখানেই সমস্যা।

অনেক লুসিফুগাকেই আমরা চিনি। আমাদের আশেপাশে নিত্যদিন এদের সঙ্গে আমাদের সমাজে দেখা সাক্ষাৎ হয়। এদের কক্ষনই আরশোলা বলবেন না। বলবেন লুসিফুগা। দেখবেন ল্যাটিন ভাষায় গালি দিতে আপনার আরাম লাগছে, ভালও লাগছে। লু সি ফু গা।

 


 

Lucifuga

লুসিফুগাদের চেনা খুব কঠিন কিছু না। তারপরও আপনার সামনে হাসিমুখে চিরবন্ধুর মতো আন্তরিক ভাবে ঘাড় ঝুঁকিয়ে যে কথা বলছে সে  লুসিফুগা হতে পারে। এই ঝুঁকি আপনার সবসময়ই বন্ধু নির্বাচনে থাকবে, দেখবেন ক্রিটিকাল সময়ে শত্রু ও বন্ধুর পার্থক্য নির্ণয়ের সেই অমোঘ আলো যখন জ্বলে উঠবে, লুসিফুগা সড়াৎ করে সরে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে সে তার নিজের রূপ ধারণ করবে। তার স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা করবার জন্য ওপরের ছবিটি দেখুন। এতে অনেক ভুল জীবনে এড়াতে পারবেন।


আমি পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র নিয়ে কাজ করি। নিরানব্বইভাগ মানুষের কাছে পরিবেশ, প্রাণ বা প্রাণবৈচিত্র্য খুবই মিহি, মধুর ও রোমান্টিক একটা ব্যাপার। তাদের পরিবেশ বিদ্যাচর্চায় জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি দেখা, আছে, লাউয়াছড়া বা কোন প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণের পণ্ডিতগিরি আছে। কিন্তু আরশোলা? এর সঙ্গে প্রাণ ও পরিবেশের কী সম্পর্ক!!

 

আরে, আরশোলা পর্যবক্ষণে পাখি দেখা কিম্বা মহাশূন্যে ভ্রমণের মতো গ্লেমার নাই, কিন্তু পরিবেশবাদীরা তাদেরকেই তাদের সত্যিকারের মিত্র গণ্য করে যারা আরশোলার মতো প্রাণির প্রতি দরদী। আর দশজন যে প্রাণিটিকে কুৎসিত ও অপছন্দের মনে করে মুখ ফিরিয়ে রাখে। আরশোলা তালিকার শীর্ষে। খুব কম লোক পাবেন যারা আরশোলা পছন্দ করে।

যারা পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন আরশোলা থেকে শুরু করতে চান, জানাবেন।। রান্নাঘরে আলো নিভিয়ে পতঙ্গ পর্বেক্ষণ দিয়ে শুরু করতে পারেন। কোন বনে বা দ্বীপে যেতে হবে না। রোমান্টিসিজম থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃতিবিদ্যার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক আদুরে ও স্যাঁতস্যাঁতে রোমান্টিকতা। কাদাজলে বনেজঙ্গলে যারা কাজ করে তারা সেটা জানেন।

শর্ত থাকে যে কাউকেই ‘আরশোলা’ বলে গালি দেবেন না। গালি দিতে চাইলে বলবেন, ‘লু সি ফু গা’।


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।