Bangladesh under constant threat of emperial power
বিপদ বাংলাদেশের পিছু ছুটছে (বাংলাদেশের পিছু ছুটছে স্রামাজবাদের ১/১১ বিপদগুলো) উপনিবেশিক সময়ে আমাদের রাজনৈতিক চেতনা, কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রমে যে লড়াইয়ের প্রণোদনা দিয়েছে তার প্রাসঙ্গিকতা এখনও যে পুরোপুরি বিদ্যমান তা বোঝা যায় নানা রকম চেতনার আর্বজনার আর্বিভাবের কারণে। যদিও ঠিক এই জায়গা থেকেই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর ভাবনা ও রাজনীতির পার্থক্য সমেত স্ববিরোধিতাকে ধরা সহজ হয়ে গিয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারীতে বাংলাদেশের রাজনীতির যে পরাজয় আমরা দেখেছি তাতে একটি বিষয় উপলব্ধি হয়েছে বটে, তাহল চেতনার রাজনীতি আর রাজনৈতিক চেতনা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবী রাখে। ১/১১র ও “চেতনা” হয়েছে এবং তাঁর উপর দাড়িয়ে রাজনীতিটা যে কতটা প্রহসন তা বোঝা যায় আমাদের ইচ্ছা আকাঙ্খার যে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অভিব্যক্তির দলিল রয়েছে তাকে সর্ম্পূণ খারিজ করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখনও “লিবারেল হিপোক্রেসির বাহিরে বেরিয়ে আসতে পারেনি”। বাংলাদেশে এর আগে শাসক ও শোষক শ্রেণীর রাজনীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি, যা ছিল সম্পূর্ণ মূল্যবোধ ও মানবতা বর্জিত “লিবারেল হিপোক্রেসি” রাজনীতি। কিন্তু বোধহয় তাদের পরে (পুরোপুরি হয়েছিল কিনা সন্দেহ) হলেও ততদিনে দেশ গণবিচ্ছিন্ন এক সরকার যা বহিঃরঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক অন্তরঙ্গে সাময়িক সরকারের দখলে। বাংলাদেশের “সংবিধান” শাসক ও শোষক শ্রেণীর কাছে ছেঁড়া তেনা বা ময়লা পরিষ্কার করার গামছাই ছিল। কিন্তু এবারই প্রথম এদেশের মানুষ দূতাবাস কেন্দ্রিক বিভিন্ন তৎপরতার ফসল হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে এক উদ্ভট সরকার পেল। তাই বিগত শতাব্দীতে কবি সুকান্তের কবিতার কিছু লাইন ঠিক এই সময় ব্যাখ্যার জন্য যথার্থ মনে হয়েছে, যা এখনও দৃশ্যমান বাস্তবতা, ‘‘পরন্তু এদেশ আজ হিংস্র শত্রু আক্রমণ করে, বিপুল মৃত্যুর স্রোত টান দেয় প্রাণের শিকড়ে নিয়ত অন্যায় হানে জরা গ্রস্থ বিদেশী শাসন ক্ষীণায়ু কোষ্ঠিতে নেই ধ্বংস- গর্ভ সংকটনাশন। সহসা অনেক রাত্রে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে দেশ প্রেমে দৃপ্ত প্রাণ রক্ত ঢালে সূর্যের সাক্ষাতে।’’ বিদেশী শাসনের নব্য স্থাপনা দূতাবাস কেন্দ্র করে সমাজের পরজীবি শ্রেণী সুশীল সমাজের এক এগারোর আয়োজনকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাবনা ও ভাষার সাথে মিলিয়ে একটি রাজনৈতিক পাঠ দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং অনিবার্য বলে মনে করি। তার আগে কিছু ঘটনার বিশ্লেষণ তুলে ধরার দরকার যাতে সমাজে “সুশীল সমাজ” নামে পরিচিত শ্রেণীর চরিত্র পরিষ্কার হয় এবং তাঁরা যাদের অধীনস্থ হয়ে কাজ করছে তাদেরও। ২০০৭ সালের এক এগারোর পূববর্তী সময়ে বাংলাদেশে রেনেটা লক দেসালিয়ান, যিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘের প্রতিনিধি, নেতৃত্বে জাতিসংঘ থেকে এক মিথ্যা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় যাতে, সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শান্তি মিশন থেকে বহিষ্কার করার হুুমকী দেওয়া হয়। এর ফলশ্রুতিতে সেনাবাহিনী তার রাষ্ট্রীয় কর্তব্য বাদ রেখে শান্তি মিশনে তার চাকুরী বাঁচাতে সংবিধান মাড়িয়ে আসা ১/১১ র সরকারকে সহায়তার ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের বোদ্ধামহলে ১/১১ এখন “দেসালিয়ান কুৎ” হিসেবে পরিচিত। এবং প্রতিষ্ঠিত সরকারও ছিল বহিঃরঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক অন্তরঙ্গে সামরিক। তারপরই শুরু হয় সুশীল সমাজসহ এক প্রকার স্বার্থাণেষী মিডিয়ার তৎপরতা। যারা এই সরকারকে সাংবিধানিক এবং গুণগত পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে মহিমান্বিত করার প্রকল্প হাতে নেয়। তাঁর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হয় সংবিধান প্রণেতা হিসেবে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড: কামাল হোসেনকে। যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কেয়ামত পর্যন্ত শাসন কার্য চালাবার সাংবিধানিক এখতিয়ার ব্যাখ্যা করেন। যেখানে বলা হয়, “নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের অধিকার বলে শাসনকার্য চালাবার সব রকম অধিকার রাখে।” কিন্তু যে ব্যাপারটি তিনি চেপে যান তাহল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল এবং নীতি নির্ধারণের এখতিয়ারের সীমাবদ্ধতা কিভাবে বর্ণিত আছে। “ দেশ গোল্লায় যাক” এই মূলনীতি বুঝতে আমাদের আর বাকী থাকে না যখন জনগণের আশা ও আকাঙক্ষার প্রতিফলনের দলিল সংবিধানকে তথাকথিত সুশীলেরা এভাবে ব্যাখ্যা করে, যা সত্যিকার অর্থে পরাশক্তির প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত [হয়ে থাকে] তারপরও কিছু কিছু গণমাধ্যম দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঠিক এই ধরনের ব্যক্তিত্বকে বাংলাদেশের বুদ্ধির আঁধার “বুদ্ধিজীবী” হিসেবে প্রমানের চেষ্টায় তাদের বাণীকে সংবাদের মূল উপজীব্য বানিয়ে রাখে। এই গণমাধ্যমগুলো কাদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত তাও আমাদের নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। কারণ সামনের দিনগুলোতেও গণমাধ্যমও তথ্য যুদ্ধের আরেকটি ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হবে, হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ফক্স টিভি আর বৃটেনের BBC Weapon of mans destruction (WMI) খবর ছড়িয়ে দিয়ে ইরাক ও আফগানিস্থানে যুদ্ধের জন্য মার্কিন ও বৃটিশ নাগরিকদের উৎসাহিত করতে পেরেছে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদেরকেও অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের তাগিদ দেওয়া এখন থেকেই এই চিহ্নিত গণমাধ্যম গুলোর উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং তা মাকি´ন স্বার্থের স্বপক্ষেই। এছাড়া কিছু বিষয় আমাদের গণ নজরদারীর মধ্যে আনা দরকার যা একান্তই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের সাথে জড়িত। কিছু দিন আগে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের পূর্বমূহুর্তে বাংলাদেশের নৌ সীমা লংঘন করে মিয়ানমার তাঁর যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে এবং সেখানে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চালায়। এছাড়াও দেশের দক্ষিণ পশ্চিম নৌ সীমায় প্রতিবেশী আরেকটি বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত তার যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে। এই ঘটনাগুলোর বিচার বিশ্লেষন আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের সাথে মিলিয়ে করতে হবে। যদিও গত নির্বাচনে গণমাধ্যম এই সংকটগুলোকে সামনে তুলে না এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালিয়েছে। এতে করে এটা সহজে অনুমেয় যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের রাজনীতি কোন মর্তাদশিক রাজনীতির অংশ নয়, নিতান্তই নিম্নরুচির পক্ষপাতিত্ব আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অধিনস্থ হয়ে থাকায় প্রয়াস। যখন বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস লুণ্ঠনের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজ আমাদের নৌ সীমায় ঢুকে পড়েছে, তখন নির্বাচনী ইশতেহারের গালগল্পে গণমাধ্যমগুলো ব্যস্ত ছিল। সন্দেহ জাগে, গণমাধ্যম কি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নকে এড়িয়ে যেতে চায়? যারা এ বিষয় গুলোর উপর নজরদারি করেছেন তারা অবশ্যই গণমাধ্যমের চরিত্রকে সহজেই বুঝতে পেরেছেন। তবে এখন এই বিষয়গুলোকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং স্রামাজ্যবাদী দেশগুলোর ইচ্ছা, অভিব্যক্তি গুলোর সাথে মিলিয়ে বোঝার দরকার আছে। গণমাধ্যমের ভূমিকা রাজনীতি বিচ্ছিন্ন কোন ব্যাপার নয়। কাজেই, গণমাধ্যমের এই বদলে যাওয়ার বিষয়গুলোকে আমরা নজরদারির বাইরে রাখতে পারি না। মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক। ১/১১ র তে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের সমর্থন ছাড়াই তত্ত্বাধায়ক সরকার গঠিত হয়। সাংবিধানিক সবরকম জটিলতামুক্ত “স্বাধীন” তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রধান উপদেষ্টা করা হয় বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন কর্মকর্তা ড: ফখরুদ্দিন আহমেদকে। যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন বিগত জোট সরকারের আমলে, জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কল্যানে বাংলাদেশের ব্যাংকে তাঁর অবস্থানও দীর্ঘায়িত হয়েছিল। এরপরই রাজনীতির অঙ্গনে সুশাসনের সুবাতাস লাগতে শুরু করে। পাইকারী হারে বিভিন্ন দলের নেতাদের দুর্নীতির কাহিনীর ফিরিস্থি প্রচার করে। তাদেরকে জেলে পুরে রাখা হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে শূণ্য রাজনীতির মাঠ দখল নিয়ে। তৎকালীন সদ্য শান্তি নোবেল প্রাপ্ত ড.ইউনুসকে দিয়ে একটি দল গঠনের প্রক্রিয়া চালানো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কিংস পার্টির ও আবির্ভাব ঘটে তখন। দেখে মনে হয়েছিল যে বাংলাদেশের রাজনীতি তো এখনও আর্থিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র তাহলে সুদখোরী এনজিওদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে গেলে খারাপ কি?! কিন্তু দেশের আপামর জনতা সুশাসনের নামে সুদখোরদেরকে প্রতিহত করে এবং পরাশক্তির অতীব পুরোনো কৌশল ব্যর্থ হয়। এখানে বলে রাখা দরকার শান্তি পুরষ্কার আসলে স্রামাজ্যবাদী দেশগুলোর দ্বারা নির্ধারিত একটি রাজনৈতিক পুরষ্কার, যা এমন ব্যক্তিত্বদেরকেই দেওয়া হয় যারা তাদের কর্মকান্ডের জন্য নিজ দেশেই অনেক বিতর্কিত। এরপর ড: ইউনুস এর রাজনীতির মঞ্চ থেকে প্রস্থান মানুষকে একটু স্বস্তি দেয়। তারপর ক্ষমতাসীন বৈধতা দেবার নিমিো শুরু হয় “সংলাপ” নামে নাটকের। যার উদ্দেশ্যে আগাগোড়াই ছিল অবৈধ এই সরকারকে বৈধতা প্রদানের চেষ্টা। এর ফলে ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন শ্রেণী, দল ও মিডিয়ার সাথে আঁতাত গড়ে তোলার প্রয়াস চালায় এবং সফলও হয় বটে। তাদের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি নিরাপদ এবং সকল অবৈধ কাজের বৈধতার নিশ্চয়তা। এখানে বড় দুটো দলের অবস্থান উল্লেখযোগ্য, যারা বিভিন্ন জোট ও মহাজোট করে “সংলাপে” অংশগ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল যে, তারা যে কোন মূল্যে এই সরকারের বৈধতা দেবে, এই সরকার তাদেরই আন্দোলনের ফসল। বিএনপি এ ব্যাপারে কোন অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়। বিভিন্ন দফা রফায় বিএনপি তার অবস্থানকে আরো জটিল করে ফেলে। “মাইনাস টু ফর্মুলা” থেকে সরকার বেরিয়ে আসে এবং তারা বিভিন্ন দলের যে শ্রেণীর সাথে সখ্যতা বজায় রেখেছিল তাদের রাজনীতি বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হয় এবং পরবর্তীতে সরকারকে বৈধতা দেবার আয়োজন করা হয়। তারপরের ঘটনা আমাদের সবার জানা। এই ছিল বিগত দু বছরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মাঝে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যার ফলে দেশ এগিয়ে গেছে না পিছিয়েছে এই সরল সমীকরনটা সবাই সহজে বুঝতে পারবে। কিন্তু ১/১১ তে বাংলাদেশ যে বিপদে পড়েছে তা থেকে এখনও সে বেরিয়ে আসতে পারে নাই। বিশেষ করে বিগত তত্ত্বাবধায়ের সরকারের বিভিন্ন চুক্তি, অধ্যাদেশ যেহেতু বর্তমানে বৈধতার মুখ দেখতে যাচ্ছে তাতে এই সন্দেহ করার অবকাশ নেই যে, চুক্তি গুলো বৈধ হলে, এরপর অন্য যে কোন শক্তি অনৈতিকভাবে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসলে তাদের বৈধতা দেওয়া ছাড়া আমাদেরও কোন গত্যন্তর নেই। বিগত দুই বছরে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে যাবে না। বিশেষ করে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা আজও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে পীড়া দেয়। আমাদের সেনাবাহিনীর শান্তি মিশনে ভূমিকা বহি: রাষ্ট্র ছাড়াও এই দেশের মাটিতে প্রশংসনীয় হলেও কিছু কিছু সময়ে তাদের ভূমিকা আজও বিতর্কিত। সেনানায়ক এরশাদের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সবচেয়ে বিতর্কিত ছিল। এটা পরিক্ষিত সত্য। বির্তকের বিষয় নয়। কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়কের সরকারের সময়ে জরুরী অবস্থা জারীর প্রতি সেনাবাহিনী অন্ধ সমর্থন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবার মতন ছিল। যে সেনাবাহিনী দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মৌলিক অধিকার রহিত করে জারীকৃত জরুরী অবস্থাকে মেনে নেয় তার কাছে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ কি আশা করতে পারে? রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে গঠিত সেনাবাহিনীকে যখন পরাশক্তিরা তাদের পাহারাদারির কাজে লাগায় তখন দেশের খেটে খাওয়া শ্রমিক কৃষক দিনমজুর চেয়ে আর বদনসীব কেউ আছে কিনা আমার জানা নেই। যে শ্রমিক কৃষকের হাত কলকারখানায় ও ক্ষেতে সারাদিন নিয়োজিত থাকে, যাদের শ্রমের দামে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পরজীবীর মত বেঁচে থাকে। এই ঘাম ঝরানো কষ্টের দামে যখন রাষ্ট্র টিকে থাকে তখন এই শ্রমিক কৃষকের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা আমাদের কারও কাম্য নয়। তাই জরুরী বিধানের পক্ষে সেনাবাহিনীর অবস্থান গ্রহণ এদেশে রেনেটা লক সেনালিয়ানদের হাতকে শক্তিশালী করেছে খেটে খাওয়া শ্রমিক কৃষকের নয়। প্রশ্ন জাগে এই জরুরী অবস্থাকে সেনাবাহিনী কেন মেনে নিল? যদি কৃষক আর শ্রমিকের হয়ে সে কথা না বলতে পারে তাহলে পাঁচতারা হোটেলে বসে ভাতের বদলে আলু খাবার সবক কি তাকে কেউ দিতে বলেছে? কিছু উচ্চাবিলাসী ক্ষমতালিপ্সু সেনা কর্মকত´ার জন্য সেনাবাহিনী বারংবার গণমানুষের বিপক্ষে দাড়াবে এটা সেনাবাহিনীর কাছে আমাদের কারও কাম্য নয়। কারণ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিকের ধর্মনীতে এই খেটে খাওয়া দিন মজুর কৃষক ও শ্রমিকের রক্ত বইছে। তাই এর বিহিত সেনাবাহিনীকে করতে হবে। সেনাবাহিনীর ভেতরকার দেশপ্রেমিক সৈনিকদের লড়াকু নজির দেখাতে হবে। দেশপ্রেমিকের সুশৃংঙ্খল শক্তির প্রতিনিধি হিসাবে সেনাবাহিনীর হুংকার গণমানুষ আশা করে। তবে পরাশক্তিরা তাদের ছেড়ে দেবে এটা আশা করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা একই কথা। বহুদিন ধরেই সুশীল সমাজ নামে পরিচিত একটি শ্রেণী সেনাবাহিনীর পিছনে রাষ্ট্রের বাজেটকে খারাপ বিনিয়োগ মনে করে আসছে। তাই সেনাবাহিনীকে নতুন করে সাজানো এবং তার রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বের অভিমুখকে পরিবর্তন করার পরিকল্পনা বহু আগে থেকে ভাবা হচ্ছিল। এই প্রসঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের ইশতেহারে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তাহল “দক্ষিণ এশিয় টাস্ককোর্স”। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সেনাবাহিনীকে কিভাবে সাজাতে হবে তার একটা পরিকল্পনাও Havard international review তে তুলে ধরেছেন। তিনি তাঁর লেখার সেনাবাহিনীকে টার্গেট করে কিছু তথ্য দিয়েছেন আমাদের সেগুলোকে বিশ্লেষনের মাধ্যমেই সেনাবাহিনীকে কোথায় নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা বুঝতে হবে। প্রথমত যে বিষয়টি জয় সেনাবাহিনীর ভেতর সমস্যা আকারে দেখেছেন তাহল বিগত জোট সরকারের আমলে সেনাবাহিনীতে মাদ্রাসা ছাত্রদের যোগদানের পরিমাণ ৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীত্ত ইসলামিজম... এর দ্বারা দূষিত হয়ে গেছে। এছাড়া সারাদেশে ইসলামিজমের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আমাদের একটি তথ্য নির্ভর পর্যালোচনা দিয়েছেন তাহল সারাদেশে ৫০০ গুন বেশী বোরখার বিক্রয়। সত্যিই উঁচুমনের পর্যালোচনা। যদিও এই কাজে তাকে সহায়তা দানকারী আর কেউনা খোদ স্রামাজ্যবাদ রক্ষায় নিয়োজিত মার্কিন সামরিক সেনাকর্মকর্তা কার্ল জে সিওভাক্কো। যিনি মার্কিনীদের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে ইরাক ও সৌদি আরবে দায়িত্ব পালন করেন। জয় ও সিওভাক্কো দুজনই কেনেডি স্কুল অফ গভরমেন্ট থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। এছাড়া ঈধৎষ ঔ. ঈরড়াধপপড় মার্কিনী দখলদারি বজায় রাখার জন্য যে মিডিয়া অ্যানালাইসিস উইং রয়েছে যা Combating terrorism center নামে পরিচিত সেখানে আল কায়েদার ব্যাপারে thesis এবং মুসলিম অধুষিত দেশগুলোতে growing islamism এর ব্যাপারে থিসিস লেখেন। দেখুন (: http:// smallwars journal. com/mag/docs-temp/67 – ciovovvo-pdf) এখন যে ভাবমূর্তি গঠন করতে পারলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে বিশেষ করে কার্ল জে লিওভাক্কো ও সজীব ওয়াজেদ জয় এর secular plan খাড়া করানো যাবে তাঁর একটি পর্যালোচনা ওয়ার্ল্ড ইভানজেলিক অ্যালায়েন্স এ এলিজাবেধ ক্যানভেল এর লেখায় আমরা পাই। এখানে ভাবমূর্তির ব্যাখ্যাটা করা দরকার আছে বলে আমি মনে করি। তার আগে সেকুলার প্লানটা কি সে ব্যাপারে জয়ের লেখায় আমরা যে ধারণা পাই তার একটা বিশ্লেষন দরকার। জয় তার লেখার শুরুতেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মাদ্রাসা ছাত্রদের যোগদানের ব্যাপারকে ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্য একটি বিশাল বাধা মনে করেছেন। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে তাহল একজন মাদ্রাসা ছাত্র এদেশেরই নাগরিক, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গঠিত সেনাবাহিনীতে তার যোগদানকে তিনি কেন সমস্যা মনে করছেন? আর বাংলাদেশে মাদ্রাসার কারিকুলামও ভিন্ন, বিশেষ করে কওমী দেওবন্দ ধারা ও আলিয়া মাদ্রাসার কারিকুলাম এ ভিন্নতা রয়েছে। এখন কি ভাবমূর্তি দাড় করিয়েছেন তিনি এই মাদ্রাসাগুলোর ব্যাপারে তার লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিলে বুঝতে পারা যাবে। তিনি লিখেছেন, “ ... While almost all funding for these institutions comes from private donors in Saudi Arabia, there is no statute against their regulation by proper national authorities." এখানে যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তাহল বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসা গুলো সৌদি আরবের নিজস্ব অর্থায়নে চলে এবং রাষ্ট্রীয় কোন নিয়মনীতি ও কৃর্তপক্ষ নেই যে এর হস্তক্ষেপ করবে। আরেক জায়গায় অবশ্য মাদ্রাসা শিক্ষার বা ধর্ম শিক্ষার অর্থহীন ও অনুৎপাদনশীল দিক ব্যাখ্যা করেছেন, “Relying on Saudi and Kuwaiti funding that dictates rote Koranic memorization is counter productive for a nation that desires growth, productivity, and a brighter future, because it limits the population’s skill – set.” এর অর্থ দাড়ায়, সৌদি ও কুয়েতের অর্থায়নের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা কোরআন মুখস্থের শিক্ষা জাতির সমৃদ্ধি, উৎপাদন শীলতা ও সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য বাধা কারণ ইহা সমগ্র জনগোষ্ঠীর কর্মদক্ষতাকে সীমিত করে দেয়।” মাদ্রাসা শিক্ষাকে সজীব ওয়াজেদ জয় শুধু Koranic memorization ই শুধু মনে করেন নি সেখানে বিজ্ঞান, গণিত ও ইতিহাস পড়ানো হয় না বলেও দাবি করেছেন। তার কাছে আমাদের প্রশ্ন থাকবে যে আসলে তিনি কোরআন বলতেই বা কি বুঝছেন? বিজ্ঞানহীন, গণিত বর্জিত ও ইতিহাস ছাড়া কোন text book। তার উদ্ধৃতিগুলো অবশ্য তাই বোঝাতে চেয়েছে। আসলে এসব ফালতু তর্ক। এর শিকড়কে আমাদের আরো গভীরে খুঁজতে হবে। তিনি মার্কিন সেনার্কমকর্তার সাথে থিসিসে অবশ্যই মাদ্রাসা শিক্ষাকে মহিমান্বিত করবেন না। তাহলে তো খোদ secular plan ই টিকবে না। মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামের গরিব পরিবারের সন্তানদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে শিক্ষাদানের যে সুযোগ দিয়েছে তাকে সজীব ওয়াজেদ জয় বলছেন যে, এরা মানুষের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে জাতিকে মৌলবাদের দিকে ধাবিত করছে। পাশ্চাত্য মাধ্যমগুলো অবশ্য তাদের কথাগুলো অবশ্য আরো খোলামেলা ভাবেই আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। জয় ও সিওভাক্কোর লেখার পর্যালোচনা করতে গিয়ে ওয়াল্ড ইভেন জেলিক এলায়েন্স এ এলিজাবেথ ক্যানভল লিখেছে, "After BNP – JI alliances was elected in 2001, independent Deobandi madrassas and terrorist training camps predominated by Arabs and central anions multiplied while religious and politically motivated violence escalated and intensified” (দেখুন:http://www.worldevangelicals.org /news/artiels.htm? id =2289 & cat = main) সত্যিকার অর্থে, মার্কিন স্রামাজ্যবাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসী তৈরীর কারখানা হিসাবে উপস্থাপন করা। জয় যা অতিকৌশলে ব্যাখ্যা করেছেন। বিশেষ করে তাঁর লেখায় প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক কলাম হিসেবে তিনি যে লেখকের কলাম বাছাই করেছেন তাদের একজন হলেন ড্যানিয়েল পাইপ। “ The blame game ” শিরোনামে তাঁর একটি কলাম আছে যেটাকে জয় তাঁর নিজ লেখার জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। আসলে বিষয়টি উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করলাম কেন তাঁর কারনটি ড্যানিয়েল পাইপের ব্যাপারে এডওয়ার্ড সাঈদের মূল্যায়নে পাওয়া যাবে। সাঈদ তাঁর “কাভারিং ইসলামে” ড্যানিয়েল পাইপের পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “সংক্ষেপে, মৌলবাদ = ইসলাম = যা কিছুর সাথে আমাদের এখনই যুদ্ধ করতে হবে তার সব, অর্থাৎ শীতল যুদ্ধের দিনে কমিউনিজমের সাথে যা করেছি। প্রকৃতপক্ষে পাইপ বলেন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরো ভয়ংকর, আরো পরিপূর্ণ ও বিপদজনক। রডম্যান ও পাইপ কেউ বাইরের লেখক নন, এরা চরমপন্থী কোন দলের উন্মত্ত সদস্য ও নন। এদের রচনা অবশ্যই মূলধারার কাজ এবং একটি বাস্তব উদ্দেশ্য নিবেদিত ; তা হলো নীতি নির্ধারকদের সিরিয়াস দৃষ্টি আকর্ষণ।” পাঠকদেরকে সাইদের কাভারিং ইসলামের ভিন্টেু সংস্করনের ভূমিকাটা পড়ে নিতে বলব। বইটি পশ্চিমা গণমাধ্যমকে বোঝার জন্য মৌলিক একটি বই। বইটিতে সাঈদ পাইপের ব্যাপারে করতে গিয়ে আরেক জায়গায় তাঁকে মুসলিম বিদ্ভেষী” বলে ভূষিত করেছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন স্রামাজ্যবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক হয়েছেন এতে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। তাই ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২৫০ জন ইয়াং গ্লোবাল লিভারের তিনি একজন হবেন এটাই স্বাভাবিক সমীকরন। বারাক ওবামার আফগানিস্থানে মার্কিন সৈন্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ার অর্থ হচ্ছে এই অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন তৎপরতা বেড়ে যাওয়া। ভারত যেহেতু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঘনিষ্ট মিত্র তাই পূর্বদিকের নজরদারি ভারতকে দিয়ে করাতে পারলে মার্কিনিদের বিশ্বাসের কোন কমতি হবে না। অক্সিলারী ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করার উদ্যোগ তো নেয়া গেছে। আমেরিকার করপোরেট ইনভেস্টমেন্টও অনেক সুরক্ষা পাবে এই অঞ্চলে। এ কারণে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে কনকো ফিলিপস নামে একটি কোম্পানীকে বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস ক্ষেত্র ইজারা দেবার কথা শুনেছি। তাছাড়া মনসেন্টো কোম্পানীর আগমনও ঘনিয়ে আসছে আসছে বলে। কনকোফিলিপস্ এর রিচার্ড লি আরমিটেজ এর ব্যাপারে আলাপ না করলেই নয়। কারণ এই কোম্পানীকেই বোঝা যাবে না যদি লোকটিকে না চিনি। বিচার্ডলি আরমিটেজ কথা পাকিস্থানের জেনারেল পারভেজ মোশারফ তার আত্মজীবনী “রহ ঃযব ষরহব ড়ভ ভরৎব” লিখেছেন। এই লোকটিই জেনারেল মোশারফকে জর্জ বুজের “সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে” অংশগ্রহণ না করলে পাকিস্থানকে “প্রস্তর যুগে” পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি প্রদান করেছিলেন। এছাড়া ভিয়েতনামি সৈন্যদের মূল্যায়ন হল, রিচার্ড লি আর মিটেজ পৃথিবীর যে প্রান্তে যুদ্ধ আছে সেখানে তিনি পতঙ্গের মত ছুটে যান। তিনি রোনাল্ড রেগানের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শ দাতা ছিলেন আশির দশকে। মনসেন্টোও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের এবং কৃষি ও জীব বৈচিত্র্য লুটপাটের সাথে জড়িত। পৃথিবীর যে প্রান্তের নিঃস্ব অসহায় কৃষকরা জেনেটিক্যালি মডিফাইড সংক্ষেপে এগঙ ও হাইব্রীডে এর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে তাদের সবার কাছে পরিচিত এক ঘাতক মনসেন্টো। সেনাবাহিনীর ভার্বমূর্তিও স্পষ্ট করা হয়ে গেছে ওংষধসরংস এর দ্বারা দূষিত হয়েছে সেও। তাই খোল এলাচে বদলে দিয়ে অন্য “রুপে” তাকে সাজানো দরকার। সে কাজটিও খুব দ্রুততার সাথে সেরে ফেলা হবে। সাম্রাজ্যবাদের আয়োজন সম্পন্ন, “সুশীল” নামে পরিচিত সমাজের প্রতিবাদহীনতা, রাষ্ট্রীয় কর্তব্যের অভিমুখ বদলে দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী বাহিনীকে নবরুপে সাজানো, মার্কিন কোম্পানী গুলোর বঙ্গোপসাগরে ও অভ্যন্তরে নোঙ্গর ফেলা, প্রতিবশেী রাষ্ট্রগুলোর শএুভাবাপন্ন মানসিকতা ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা বিপদের কারণে মহাফাপড়ে আছে বাংলাদেশ। অন্দর মহলের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে সুন্দর ভবিষ্যতের আশা ক্ষীণ। মাহাদী হাসান, “চিন্তা পাঠচক্র সদস্য”
নিজের সম্পর্কে লেখক
student