'চিন্তা পাঠচক্র'র ১ জানুয়ারির আলোচনা

‘আত্মপরিচয়ের বয়ান’ নিয়ে চিন্তা পাঠচক্রের ধারাবাহিক (১জানুয়ারি,বৃহস্পতিবার) আলোচনায় এই পর্বের বিষয়ছিল দু’টি: ‘রিলিজিয়ন,ন্যাশনস্টেট এন্ড সেকুলারজিম’ যা নিয়ে আলোচনা করেন আইমান রাহাত এবং ‘টু ইউরোপিয়ান ইমেজেস অফ ননইউরোপিয়ান রুল’ নিয়ে আলোচনা করেন খুরশিদ আলম । যথারীতি বিকাল পাঁচটায় আলোচনা শুরু হয়। 

যারা সময় এবং দুরত্বের কারণে পাঠচক্রে আসতে পারেন নি তাদের জন্য এখানে ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পাঠচক্রের গুরুত্বপুর্ণ কিছু আলোচনা তুলে দেয়া হল 

মুল আলোচনা শুরুর আগে মুসতাইন জহির ইতিহাসের সাথে ‘সময়’ সংক্রান্ত ধারণার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন।তিনি বলেন- ইতিহাসের আলোচনায় আমারা কম-বেশি সকলেই সময়ের একটা ধারণা মাথায় রেখই ব্যাখ্যা করি বা বিভিন্ন ঘটনা বুঝার চেষ্টা করি। দেখা যায়, সময়কে বিভিন্ন কালক্রমিক বা কালপর্বে ভাগ করা বলতে আমরা কোন একটি শাসনকালের সূচনা বুঝি।শাসনকালের সূচনা মানে আবার অন্যকোন শাসনের শেষও।সাধারণত এভাবেই আমারা আলোচনা করি।এ-ছাড়া অন্যভাবেও আমরা সময়কে ভাগ করি।যেমন- আধুনিকযুগ,মধ্যযুগ,তারও আগের প্রাচীনযুগ। প্রাচীনযুগেরও অনেকগুলো ভাগ। আমরাও এমন করি।যেমন ভারতের ইতিহাস নিয়ে যখন আমরা কথা বলি,তখন আমরা একদম পিছনে চলে যাই;সেই সভ্যতার গোড়াপত্তন,মানুষের বসতি স্থাপন,ইত্যাদি,ইত্যাদি। তার মানেকি? আমরা আসলে একটা সভ্যতা খুঁজি। যেকারণে আমরা হরোপ্পা মহেঞ্জাদারো পর্যন্ত যাই। এগুলো হল সিভিলাইজেশনাল ডিভিশন। তারপরে আমরা মহেঞ্জাদারোর পরে কোথায় চলে যাই?

আমাদের ইতিহাসের শুরুটা আসলে কি?বলা হয়, পিছনে ফিরে ইতিহাসের শুরুটা খুঁজলে আমরা দেখব, আমাদের সভ্যতার পত্তন ঘটেছে আর্য-অনার্যর আগমনের মধ্য দিয়ে। এর বাইরে অন্যভাবেও আমরা ইতিহাস খুঁজতে পারি। যেমন,ইভলিউশনারি হিস্ট্রির কথা ধরা যাক; ন্যাচারাল হিস্ট্রি দিয়ে একে ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় এর মধ্যে বিভিন্ন আর্কিওলজিকাল এলিমেন্টস রয়েছে। এই পদ্ধতিতে কয়েক লক্ষহাজার বছরের ভিতর দিয়ে মানুষের উদ্ভব,তার বিকাশ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের যে ‘অবশেষ’গুলো পাওয়া যায়,তাদিয়ে ইতিহাসের ব্যাখ্যা করা হয়।এধরণের হিস্ট্রির আলোচ্য বিষয় হল ‘ইভলিউশনারি হিস্ট্রি’টা ব্যাখ্যাকরা।

ইভলিউশনরি হিস্ট্রির মধ্যে মানুষ একটা প্রাকৃতিক সত্তা মাত্র।আজকে মানুষ বলে যাকে চেনাহয়,তার এইরূপটা বা মানুষের এই প্রাকৃতিক বিকাশটা কখন হয়েছে –এটাই এইপদ্ধতির আলোচনার বিষয়।প্রাকৃতিক বিবর্তনের মধ্যে যে আলোচনাটা হয়,সেটা  সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক বিবর্তন আকারে আরেকটা হিস্ট্রির আলোচনা।সেখানে আরো বিস্তৃতভাবে এই আলোচনাগুলো করা হয়।যেমন, এর একটা পার্ট ন্যাচারালসাইন্স, যা থিওরেটিকালি ফিজিক্সের মধ্যেও আলোচনা করা হয়।

তাহলে আমরা বুঝলাম, সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ এবং মানুষের উদ্ভব ও বিকাশ দুইটি আলাদা ইতিহাসের আলোচনা।মানুষ ও সভ্যতার সাথে আরেকটা ইতিহাস আছে,তা হল প্রাকৃতিক ইতিহাস। প্রাকৃতিক ইতিহাস বলতে এই বিশ্বজগতের ইতিহাস। আমাদের পৃথিবী ও এর সৌরজগত,এই পুরো বিষয়টি তখন আরেকটা ‘হিস্ট্রি’ হয়ে যায়।একজন পপুলার লেখক আছেন তার একটা বই আছেনা? ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বা সময়ের ইতিহাস। এখানে সময়ের ইতিহাস মানে আসলে কি? এর বিষয়বস্তুটা কি? এটাকে ‘সময়ের ইতিহাস’ বলে আলোচনা করা হল কেন? এ বইটা সম্পূর্ণ ফিজিক্সের থিওরি দিয়ে লেখা। তাহলে প্রশ্ন,ফিজিক্সের সাবজেক্টমেটার কি টাইম? বায়োলজি,কেমিস্ট্রি কিম্বা ভূগোল,প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের নির্দিষ্ট একটা সাবজেক্ট মেটার থাকে। যেমন-ভূগোল আলোচনা করে এ পৃথিবীর পরিগঠন, ভূ-স্তরের জিনিসগুলো। এ আলোচনা করতে গিয়ে কি ‘সময়ের’ আলোচনা করাহয়? না,হয় না। ভূগোলে সময়ের ধারাবাহিকতায় এইপরিবর্তনটা কিভাবে ঘটেছে কতটা ঘটেছে,সে আলোচনা করে। কিন্তু ‘সময়’ মানে কি এটা কি ব্যাখ্যা করে না। মোটাদাগে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি –টাইমফ্রেমের মধ্যে যেকোন একটা বিষয় যখন আলোচনা করা হয়,তখন সময়ের একটা বিশেষ ধারনাকে অলরেডি গ্রহণ করে নেয়া হয় বা ঐ ধারনা  কেন্দ্র করে অন্য একটা বিষয়কে আলোচনা করা। সময় এখানে পরিমাপক একটাবিষয়,যেটাকে আমরা বলতে পারি চিহ্নরেখা। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি,সময় খোদ জিনিসটা কি?‘সময়’ ব্যাখ্যার ডিসিপ্লিন কি ফিজিক্স?

হকিং যখন বইটা লিখলেন,তিনি আসলে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছেন বিশ্বজগতের সূচনা। তারপরে এটা ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, বিস্তৃত হচ্ছে তারপরে আজকের এইরূপ নিয়ে এই  যে মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সিটা তৈরি হয়েছে তার ব্যাখ্যা।একটা ফিজিক্যাল ইউনিভার্সের ব্যাখ্যা করছেন তিনি।তাহলে  এই যে ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডের এই পুরো ঘটনা প্রক্রিয়া এইটা একটা ‘হিস্ট্রি’;যাকে লেখক বলছেন ‘হিস্ট্রি অব টাইম’। ‘হিস্ট্রি অব ইউনিভার্স’ নাম দিলেও আলাদা কিছু হত না।একথাটা এ কারণে বললাম যে,হিস্ট্রি কথাটার মধ্যে এই রেজনেন্সটা আছে; সাবজেক্টমেটার যাই হোকনা কেন, এর সাথে আমরা একটা কমন জিনিসের সম্পর্ক দেখতে পাই।আর  তাহল টাইম।ফলে সময়ের ধারাবাহিকতায় কোনো একটা ঘটনার কিম্বা কোনো একটা বিষয়ের উপস্থিতি এবং তার পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার শাস্ত্রটা হচ্ছে হিস্ট্রি।এটাই ইতিহাসের একমাত্র ধারণা না,কিন্তু এটা সবচেয়ে কমন একটা ধারনার নাম।এখন ‘হিস্ট্রি’ ধারণার সাথে ‘সময়’ ধারণার যে সম্পর্ক; এটা কবে কখন থেকে এভাবে দেখা হচ্ছে,এবং এ দেখার ফলশ্রুতিতে যে কোন কিছুরই কোন রকমের বিকাশ বা কোন পরিবর্তন নিয়ে আমরা যখনি আলোচনা করি,সেটাকে সময়ানুক্রমিক করে দেখি।এইযে সময়ানুক্রমিক করে দেখা এবং সময়ের চলনটাও এখানে সরলরৈখিক।এই ধারনাটার সাথে আজকে আমি যার নাম দিয়ে শুরু করছিলাম তার একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে।

আধুনিক জামানায় আমাদের সময়ের হিসাব রাখার পদ্ধতিটা কি? ঈসায়ী সাল।তার আগে আর  তারপরে।একটা হল এ.ডি.আরেকটা বি.সি.।অনেকে এটাকে লেখে ‘বিফোর দ্য কমন ইরা’ এবং ‘আফটার দ্য কমন ইরা’।এখানে কমন ইরা কোনটা? খ্রিষ্টের জন্ম একটা এমন ধরনের সূচনা এমন একটা বিগেনিং যার আগে যা কিছু ছিল তারশেষ,আর যার পরে যা কিছু তার শুরু। এইধারনাটার সুগভীর তাৎপর্য আছে।আধুনিক জামানায় আমরা যত রকম যা কিছু ভাবি তার সাথে যখনই সময়ের ধারনাটার মুখোমুখি হই তখনই এইটা প্রধানত সেখানে কাজ করে।অপরাপর সংস্কৃতিতে আমরা ভিজিবলি দেখব সময়ের এইরকম সরলরৈখিক চলনের ধারনাটা অনুপস্থিত।দুইটা  উদাহরণ দেই। ইন্ডিয়ান সিভিলাইজেশনে সময় সরল রৈখিক চলছে এরকম ধারনা দেখা যায়না,নাই।এখানে সময়ের কোন সূচনাবিন্দু বলেই কোন ধারনা ছিল না।এটা ক্রমাগত আবর্তিত হত; একটা বৃত্তের যেমন সূচনা বলে কিছু নাই।আমাদের ঋতুর ধারনাও এই চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এরকম ধারনা চাইনিজ ক্যালেন্ডারের মধ্যেও আছে। সেখানে ষাট বছরে সাইকেল।প্রতি ষাট বছর পরপর আবার আরেকটা সাইকেল শুরু হয়।আমাদের যে সপ্তাহ,মাস,দিন ইত্যাদি আছে,এগুলো সবই সাইক্লিকাল টাইমের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে এটা ফিরেফিরে আসে। এখানে কোন একটা সুনির্দিষ্ট সূচনা নেই,বা তার আগ  থেকে সবকিছু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়না,কিম্বা কোন একটা কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটছে যেখানে,তা আর ফিরে আসবেনা এমন না। সুতরাং যা কিছু আগে ছিল তার সাথে যে একটা মৌলিক ছেদ এবং তার যে নতুন সূচনা এটাই হল রৈখিক ধারনা।বৃত্তাকার ধারনার মধ্যে এরকম কোন ছেদ নির্ণয় করা সম্ভবনা।

এমন চিন্তার বিকাশ হবার কারণে,আগের সভ্যতাগুলো যেভাবে তার নিজের সংস্কৃতি-জীবন-যাপনকে দেখত, যার মধ্যে আমরা একটা মিথিক ফর্ম দেখতে পাই, তা পাল্টে যেতে থাকে। হিস্ট্রিকালি প্রগ্রেসের যে ধারনা, সবকিছু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে –এটা সময়কে রৈখিক বিস্তার কেন্দ্রিক ধারণার অনুবর্তী করে দেখার ফল। সাইক্লিকাল টাইম ধারণার সাথে প্রগ্রেসিভ টাইম ধারনার সদৃশতা নেই;এখানে সময় সামনে এগিয়ে যায়না। তাই দেখা যায়,প্রগ্রেসিভ টাইমের ধারনাটাই ইতিহাসের ধারনার সাথে যুক্ত।তার মধ্যে সবসময় প্রগ্রেসিভ একটা এনলার্জমেন্ট ঘটে। এইযে এনলার্জমেন্ট,এক্সপানশান এই জিনিসটাই রিজোনেট করে যখন ফিজিকাল ইউনিভার্সের আলোচনা করছে। এই অর্থেই টাইম।তবে, এটা এর একটা দিকমাত্র, আরো গভীরতর একটা অর্থ সময়ের এই ধারণার সাথে যুক্ত, যা খ্রিস্ট্রীয় ধর্মচিন্তার কেন্দ্রীয় বিষয়, স্যালভেশন এর সাথে জড়িত;  আমরা ‘মানবমুক্তি’ বলে যে রটনার সাথে পরিচিত, এটা তার পূর্বসূত্র। আপাত এখানে এটুকু বলে রাখি। এখন এই দিকটাতে যাব না।

সুপ্রাচীনকাল থেকেই এখানে আমরা একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি।যে প্রশ্নটা গ্রিক ফিলোসফিতে আলোচনা ছিল।আপনারা জানেন,ফিলোসফির মধ্যেও একটা ভাগকরা হয়।ভাগটা হল সক্রাটিসের আগে এবং সক্রাটিসের পরে।প্রি-সক্রাটিক টাইমে যে প্রশ্নটা ছিল, সে প্রশ্নটা দুটো জিনিসকে নিয়েছিল।এদুটো জিনিস পরবর্তীতে এরিস্টটলের হাতে সিস্টেমেটাইজ হয়ে দুটো ডিসিপ্লিন হয়েছে।এরিস্টটল তখন দুটো যে মৌলিক প্রশ্ন ছিল এই দুটোকে সিস্টেমেটাইজ করেছেন তার দুটো বই এবং দুটো শব্দে।একটার নাম হল ‘ফিজিক্স’, অন্যটার নাম ‘মেটাফিজিক্স’। দর্শন চিন্তার যত রকম প্রত্যয়,যত ধারনা,যত পদ্ধতি প্রায় সবই এরিস্টটলের ‘মেটাফিজিক্স’বইয়ের আলোকে তৈরি হয়েছে;কমবেশি এখনো এটার মধ্যে ঘোরাফেরা করে।তার আরেকটা হল ফিজিক্স।যেখানে উনি ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডকে ক্লাসিফাই করে বিশ্লেষণ করার একটা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন।যেটা পরবর্তীতে আরো বিকশিত হয় ন্যাচারাল সাইন্সের মাধ্যমে।খোদ ক্লাসিফিকেশনের যে ধারনা, এটাই এরিস্টটলিয়ান মেথড।ফিজিক্স কথাটার গ্রিক মানে ফিসিস নামক যে গ্রিকশব্দ;যার অর্থ দৃশ্যমান।দৃশ্যমান কথাটার আরেকটা অর্থ ছিল বর্তমান। যেটা একজিস্ট করে সেটা একইসাথে প্রেজেন্ট।

যে দুটো প্রশ্নের কথা বলছি সেটার প্রথম প্রশ্ন ছিল এই- আমাদের সামনে যাকিছু আছে যেটা দৃশ্যমান হচ্ছে এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।সমস্যাটা হল- এত পরিবর্তন হবার পরেও কিভাবে বস্তুটি কোনো-না-কোনো আকারে বর্তমান থাকে।এই যে পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে তার নিজের কোনো একটা কিছু রূপে উপস্থিত হওয়া, এই দুইটা প্রশ্নকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছিল গ্রিক দর্শনে।পরিবর্তন জিনিসটা কি? কি পরিবর্তন হয় আর কি পরিবর্তন হয় না।সবইকি পরিবর্তন হয়? সবই যদি পরিবর্তন হয় তাইলে আবার কিছু একটা দেখি কেন।একটা কন্সটেন্ট চেঞ্জ, কিন্তু সামথিং ইজ— কন্সটেন্টলি প্রেজেন্ট। তাহলে পরিবর্তনের মধ্যেদিয়েও যা কিছু উপস্থিত থাকে এই জিনিসটা কি? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যার আলোচনা করেছেন মেটাফিজিক্সনামে।মেটাফিজিক্স কথাটার মানে হল,যেটা এপিয়ার করে তারমধ্যে যেটা বিয়ন্ড এপিয়ারেন্স।যাকে দেখছেন তার অন্তরালের যে সত্তাটা বা উপস্থিত সত্তার অন্তর্গত যা।যা পরিবর্তিত হয়েও পরিবর্তিত না।এটা এবং পরবর্তীতে যেটা আসছে ‘বিং’ এর ধারনা।সত্তা জিনিসটা কি তার সাথে দর্শনের দুইটা প্রত্যয় জড়িত একটাকে বলে ‘এসেন্স’ আরেকটাকে বলে ‘সাবস্টেন্স’। ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডের মধ্যে যা একজিস্ট করে তার সত্তাগত তার মৌলিক সত্যটা যে পদ্ধতিতে দেখা হয়,সেটাই মেটা-ফিজিক্সের আলোচনার মধ্যে ক্যাটাগোরাইজ হয়ে আসছে।আর ফিজিক্স যেটা ফিজিক্যালি এক্সিস্ট করে, তার বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ। এখন এ ধারনার মধ্যে যেটা সবসময় ছিল সেটা হল চেঞ্জের যে কনসেপ্ট। এই যে পরিবর্তনটা ঘটে পরিবর্তনের ধারনাটা যে কোনো চিন্তায় কোনো-না-কোনো ফর্মে থাকে। চেঞ্জটা যে হয়,কেন হয়? কোনো একটা কিছু এটাকে পরিবর্তন করে।তার কারণ বা হেতু কিছু একটা আছে, যা এটাকে ঘটায়। কারণের এই ধারনাকে বলে কজালিটি। আমরা দেখব যে এমনকোন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নাই যেটাতে প্রিঅকুপাইড এই জায়গাটা নাই।শেষপর্যন্ত সবাই একটা কজের ব্যাখ্যা করে।আমরা ইতিহাসের আলোচনার মধ্যেও দেখব এরমধ্যেও একটা প্রি-ডমিনেন্ট একটা কারণ হাজির আছে। আজকে আমরা যে টেক্সট আলোচনা করব তার মধ্যে অন্য অর্থে তালাল আসাদ দেখাতে চেষ্টাকরছেন যে,অ-ইউরোপিয় সমাজগুলো নিয়ে যখন আলোচনা হয়েছে একটা সময়ে এনথ্রোপলিজির যে ডিসিপ্লিনগুলো তারা সমাজের সংজ্ঞায়ন কিভাবে করেছে যে জিনিসটা বুঝতে চেয়েছে সেটা এই সমাজগুলোর পরিবর্তনটা। এবং এর পেছনে কারণটা কি।

এরপর আইমান রাহাত তালাল আসাদের ‘রিলিজিয়ন,ন্যাশন স্টেট,সেকুলারজিম’ লেখা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তালাল আসাদের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরে মূল আলোচনায় প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, এ লেখার চারটা পার্ট আছে। প্রথম পার্ট হচ্ছে ‘ইজ দ্য আইডিয়া অব  সেকুলারিজম ওর্থ সেভিং’? আমরা দেখতে পাই যে পোল্যান্ড,গ্রিস,ইংল্যান্ড এরকম অনেক ইউরোপিয়ান নেশন আছে যে নেশনগুলোর গোড়াপত্তনই হয়েছে ধর্মকে কেন্দ্র করে। এরপরে দেখা যাচ্ছে যে কন্সটিটিউশান থেকে চার্চকে আলাদা রেখেও যে আমেরিকান নেশন গঠন হয়েছে তার মধ্যে প্রোটেস্টানিজমের একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায়। আর বর্তমানে জায়নিজম আর আরব নেশন আছে এর মধ্যে আমরা ধর্মের একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। এর ফলে আধুনিকতার সাথে ধর্মের যে প্রান্তিকরণের ডক্ট্রিন-ধর্মকে প্রাইভেটাইজেশন করতে হবে এবং একে মার্জিনালাইজ করতে হবে; এটার একটা ক্রিটিক দেখা যায়। যেহেতু রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহৃত হচ্ছে,তাই এখানে ক্লাসিকাল ডক্ট্রিনের তিনটা এলিমেন্ট আছে। ধর্মকে পলিটিক্স,ইকোনমি,সাইন্স এগুলো থেকে আলাদা রাখতে হবে;ধর্মকে প্রাইভেটাইজ করতে হবে এবং ধর্মীয় যে বিশ্বাসগুলো আছে এগুলো পরিণতিতে ডিক্লাইন করতে থাকবে।

মুসতাইন জহির- আচ্ছা এই ফাঁকে আমি একটা নোক্তা দিয়ে রাখি। এই চ্যাপ্টারের আলোচনায় তালাল আসাদ প্রধানত হোসে ক্যাসানোভা নামের একজন  লেখক আছেন তার প্রস্তাবনার সমালোচনা করেছেন। হোসে ক্যাসানোভা-র একটা বই আছে ‘ পাবলিক রিলিজিয়নস ইন দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড’ নামে। তিনি দেখাতে চেষ্টা করছেন যে,সেকুলারাইজেশনের পলিটিকাল প্রস্তাবনায় সাম্প্রতিক কালে যেসমালোচনাগুলো হচ্ছে,তাসত্ত্বেও মৌলিক প্রস্তাবনাটা এখনো সঠিক আছে।

আইমান রাহাত-তিনটা এলিমেন্টস হচ্ছে সেকুলারিজমের ক্লাসিকাল ডক্ট্রিন। প্রথমটা হচ্ছে ধর্মকে পলিটিক্স, ইকোনমি,সাইন্স এগুলো থেকে আলাদা করতে হবে, দ্বিতীয়টা হচ্ছে ধর্মকে প্রাইভেটাইজ করতে হবে আর  তৃতীয়টা হচ্ছে ধর্মীয় যে বিলিভ,কালচারগুলো আছে সেগুলোকে পাবলিক পরিসরে ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে। এখানে কাসানোভা বলছেন যে প্রথমটা এবং শেষেরটা –এই দুইটা ভায়াবেল। কিন্তু তিনি মনে করেন দ্বিতীয় যেটা ধর্মকে প্রাইভেটাইজ করা- তিনি মনে করেন ধর্ম পাবলিক স্পেসে কিছু একটা অবদান রাখতে পারে। এখানে কাসানোভা বলছেন যে,ধর্মকে পাবলিক রোল পালন করেতে দিলে রাষ্ট্রের জন্য তেমন একটা ক্ষতি হবে না। তিনি দেখাচ্ছেন যে,ধর্ম যদি ইউএস এর মত লিবারেল মূল্যবোধ এবং পোল্যান্ডের মত সিভিল সোসাইটিকে প্রমোট করে,তাহলে সেই ধর্মটা সেকুলারিজমের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। আর  যদি ইজিপ্টের মত সিভিল সোসাইটি কে প্রমোট না করে,এটাকে যদি দমন করার চেষ্টা করে,তখন ধর্ম সেকুলারিজমের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। তিনি এখানে ইরানের কথা বলেছেন,যেখানে ইন্ডিভিজুয়াল লিবার্টি তেমন একটা নেই, সেরকম কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সেটা সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে।

এখানে তালাল আসাদ প্রশ্ন তুলছেন যে,তাহলে এদুটো একসাথে কিভাবে কাজ করবে। যখন ধর্মকে পাবলিক রোল পালন করতে দেয়া হবে,তখন কিভাবে সেখানে ইকোনমি চলবে এবং কিভাবে এডুকেশন চলবে, সেই প্রশ্ন আসবে। ধর্ম অবশ্যই সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবে। রাষ্ট্রে তখন একটা মডার্ন হাইব্রিড সিস্টেমের জন্ম নিবে। তালাল বলছেন,কাসানোভা প্রথম যুক্তিটা ধোপে টিকে না।

কাসানোভার তৃতীয় যুক্তির বিপরীতে তালাল দেখিয়েছেন যে,ধর্ম যখন পাবলিকলি ভূমিকা পালন করবে,তখন সে তার যে কালচারগুলো আছে সেগুলো প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে। সেখান থেকে তৃতীয় যে এলিমেন্ট সেটাও আর বজায় থাকছে না। এগুলো অনেকেই বলছে ধর্ম অবশ্যই পাবলিক রোল পালন করতে পারে। তালাল প্রশ্ন তুলছেন যে,এটা এর মধ্যে কিভাবে সম্ভব? 

সেকেন্ড পার্ট হচ্ছে শুড ন্যাশানিলিজম বি আন্ডারস্টুড এজ সেকুলারিস্ট রিলিজিয়ন। এখানে দেখা যাচ্ছে যারা রিলিজিয়াস অথরিটি তারা যখন কর্তৃত্ব আহরণ করতে চায় তখন ন্যাশানিলিজমটা একটা রিলিজন আকারে ভিত্তিপায়।

মুসতাইন জহির- আমরা যে লেখাটা পড়ছি এটা একটা বইয়ের চ্যাপ্টার। তার পিছনের কিছু কন্টেক্সট আপনাদের জানা থাকলে তর্কটার সাথে সংযোগ তৈরি হবে। এবং কেন আমরা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এই লেখাটা পড়ছি সেটাও বোঝা সহজ হবে। বলা হচ্ছে ক্লাসিকাল ডক্ট্রিন,সেকুলারিজম। এই জিনিসটা কি আসলে? হিস্টরিকালি আমরা জানি যে আধুনিক যামানার একটা বৈশিষ্ট্যসুচক দিক বলা হয় যখন আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। কোন জিনিসটাকে আধুনিক রাষ্ট্র বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটার মধ্যে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; একটা হচ্ছে মোনার্কিয়াল সিস্টেম,যা থেকে বের হয়ে এসে রিপাবলিকান ফর্ম অব স্টেট তৈরি হয়েছে। যখন রাজা-রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটেছে, তখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটার মধ্য দিয়ে ইউরোপে ও আমেরিকায় আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। যদিও ঘটনার সূচনাটা প্রথমে ঘটেছে আমেরিকাতে। কিন্তু আন্দোলনটা অনেকদিন আগে থেকে ইউরোপে চলছিল নানাভাবে। সেটা হল- আগে ইউরোপীয় ব্যবস্থার মধ্যে রাষ্ট্র বলে একটা ধারনা ছিল। তাতে চার্চের একটা কর্তৃত্ব ছিল, চার্চ বিশাল ভূমির মালিক ছিল এবং ধর্মীয় কর্তৃত্বের অধীনেই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সচল ছিল।

আধুনিকতার সূচনায় দুটো জিনিস ঘটেছে,একটা হল অথরিটি,আরেকটা হল প্রিন্সিপাল—এই দুইয়ের পুর্নবিন্যাস হয়েছে। অথরিটি মানে কর্তৃত্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে রাজনৈতিক বা সেকুলার প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়ে নেয়া। প্রিন্সিপালের পার্ট হল- রাজনৈতিক পরিসর তার ভিত্তিটা একটা সেকুলার জমিনের উপর দাঁড় করানো। ফলে দুটো বৈশিষ্ট্যসুচক পরিবর্তন দেখা গেল। একটা খোদ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে কর্তৃত্বটা চলে আসবে একটা সেলুলার প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেটার নাম হবে রাষ্ট্র। একইসাথে রাজনৈতিক যে ব্যবস্থা নীতি এগুলো আর ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল থাকবে না। এই ঘটনাটার একটা তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিলেন একজন জার্মান সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স বেভার। যেটাকে বেভারিয়ান থিসিস বলা হয়। বেভারিয়ান থিসিসটা হল তিনটা জিনিস।

বিশেষত বিজ্ঞান শিক্ষা ধর্মীয় কর্তৃত্বের বাইরে এসে স্বাধীনভাবে চর্চা করার সুযোগ পেল। আর রাষ্ট্র ধর্মের কোনো প্রতিনিধিত্ব করছে না। এখানে ব্যক্তি তার নিজের যা পছন্দ,যে বিশ্বাস,সেটা সে করবে। ফলে এটাকে প্রাইভেটাইজ করা হয়েছে। ফলে দুটো স্পেস তৈরি করা হয়েছে। একটা হল পলিটিকাল স্পেস আরেকটা হল সমাজের মধ্যে আপনি আছেন,আপনার বিশ্বাস আপনার আচরণ আপনি করবেন,রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না। বরং রাষ্ট্র সেটা প্রটেক্ট করবে,নট প্রমোট। তারপরে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি মূল্যবোধ এগুলোর একটা ডিক্লাইন হচ্ছে, হতে থাকবে। মানুষের ধর্মচর্চার যে হার তা কমে যেতে থাকবে। বেভারের কথা হচ্ছে যে ধর্ম আর আধুনিক মানুষের জীবনে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে না। ফলে মার্জিনেলাইজড হবে তার প্রাইভেটাইজেশন ঘটবে এবং ডিক্লাইন করবে। বেভারের এই তিনটা বৈশিষ্ট্য সেকুলারাইজেশনের ইফেক্ট আকারে ঘটেছে। বেভার যখন ডিস্ক্রাইব করেছে এবং থিওরাইজ করেছে তখন এইটা সামাজিক পরিবর্তন আকারে ব্যাখ্যা করেছেন। পরবর্তীতে যখন সেকুলারাইজেশন বা সেকুলারিজমকে একটা পলিটিকাল ডক্ট্রিন আকারে নেয়া হয়েছে,তখন এই তিনটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এটাকে বলা হয় নরমেটিভাইজেশন করা হয়েছে। ইউরোপের ইতিহাসে এই ঘটনাটা ঘটেছে।

এখন ঘটনাকে বর্ণনার জায়গা থেকে প্রায়োগিক জায়গায় নিয়ে গেল। বলা হল,এই তিনটা জিনিস নিশ্চিত করে এমন একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে;এটা হল সেকুলারিজমের প্রজেক্ট। ইউরোপের ঐতিহাসিক পরিবর্তনগুলার মধ্যে সেকুলারাইজেশন বলে সমাজ-তাত্ত্বিকভাবে বেভারের যে তত্ত্ব,এটা ছিল ডেস্ক্রেপ্টিভ; বেভার এটাকে নরমেটিভ থিওরি আকারে আলোচনা করেন নাই। এখন সেকুলারিজম যখন একটা পলিটিকাল ডক্ট্রিন আকারে এসেছে,তখন প্রশ্ন- আসলে আদৌ কি এইতিনটা যেগুলোকে আধুনিক সেকুলার স্টেট বলে ধরা হয়,তাতেকি বাস্তবে সম্পর্কটা এরকম? তারমানে এটা ত এম্পেরিকাল সোশোলজিকাল ইনভেস্টিগেশনের বিষয়।

আরেকটা বিষয় আপনাদের বলি,বেভেরারের থিসিসের মধ্যে ইউরোপের যে ঘটনাটা ঘটেছে, কোন উপাদানটা এর কারণ হিসেবে কাজ করেছে? জী, প্রোটেস্টানিজম। প্রোটেস্টানিজমের মধ্যে একটা সেকুলার কনসেপশন অব রিলিজিয়ন ছিল, বলে দাবি করা হয়। যেটা ক্রমাগত বিকশিত হয়ে ইউরোপের প্রধান ধারা হয়েছে। ফলে বলা হয়,সেকুলারিজম আসলে ক্রিস্টিয়ানিটিরই একটা সেলফ রিয়ালাইজেশন। অথবা ক্রিস্টিয়ানিটির মধ্য থেকেই ক্রিস্টিয়ানিটি নিজেকে সেকুলার করে তুলেছে। এবং ক্রিস্টিয়ানিটির একটা ব্রাঞ্চ সেটা এগিয়ে নিয়ে আসতে পারছে। বেভারের এই থিসিসটার বিপরীতে যেটা ছিল,তাহল ক্যাথলিসিজম। মোটাদাগে,দেখাযায়- প্রোটেস্টান যে বেল্টটা ছিল তার বাইরে ক্যাথলিক বেল্টটাতে একই অর্থে সেকুলার ট্রান্সফরমেশন, চার্চের সাথে সেপারেশনটা ঘটে নাই। এটা ব্রডলি ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন বলা হলেও তারমধ্যেও ক্রিস্টিয়ানিটির মধ্যে দিয়ে একটা সেকুলার ইন্টারপ্রিটেশন ঘটেছে। ভ্যাটিকান বা ক্যাথলিক চার্চ এটা গ্রহণকরে নাই। অনেকপরে এসে যখন ল্যাটিন আমেরিকাতে ক্যাথলিক সিভিলসোসাইটি একটা মুভমেন্ট ডেভেলপ করে,যেটা অনেক বেশি চার্চ ওরিয়েন্টেড। এটাকেই হান্টিংটন পরে থিওরাইজ করেছে থার্ড ওয়েভ অব ডেমোক্রেটাইজেশন; অন্যভাবে বললে সেকুলারাইজেশন অব ক্যাথলিকচার্চ। হোসে কাসানোভা ক্যাথলিক ডিসকোর্সকে গ্রহণ করেন। এরা যেহেতু পলিটিকাল ট্রান্সফরমেশনে রোল প্লে করেছে,ফলে ধর্মের এই যে পাবলিক রোল এবং ডেমোক্রেটাইজেশনের ক্ষেত্রে যে রোল,এই ভূমিকাকে ফ্রেমের মধ্যে ব্যাখ্যা করার অন্যতম প্রধান একজন প্রবক্তা হলেন কাসানোভা।

তার মানে,বেভারের যে থিসিসটা ছিল তারসাথে কাসানোভার থিসিস মিলছে না। কারণ,আধুনিক যামানায় এসেও বিশাল অংশের মানুষের মধ্যে ধর্মচর্চার হার বাড়ছে। এই জিনিসগুলা নিয়ে তখন যে তর্কটা আসল মোটাদাগে দুটো পার্থক্য করেন কাসানোভা। তিনি দেখাচ্ছেন যে,সেকুলারাইজেশনের এই থিসিসটা ইউরোপের ক্ষেত্রে যতটা প্রযোজ্য এর বাইরে ততটা প্রযোজ্য না। যেমন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কন্ডিশনটাও এমন ছিল না,হিস্ট্রিটাও না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র পত্তনের পিছনে এবং তার পরবর্তীতেও দেখা গেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন অনেক পলিটিকাল ডিবেটে অংশগ্রহণ করেছে,প্রভাবিত করেছে,পলিসি ফর্মুলেট করেছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হল,এন্টিস্লেভারি যে মুভমেন্টটা তা মূলত ছিল একটা রিলিজিয়াস ওরিয়েন্টেড মুভমেন্ট। এগুলোতে ধর্ম প্রগ্রেসিভ রোল প্লে করেছে। এবং রাষ্ট্রের পাবলিক স্পেসের মধ্যে রোল প্লে করেছে। বলা হয় যে,ইউরোপ রাষ্ট্রের চরিত্রের দিক থেকে যত সেকুলার,সোসাইটি তত বেশি ধার্মিক। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোসাইটাল ফর্মে অনেক সেকুলার,কিন্তু তার রাষ্ট্রের যে প্রিন্সিপাল সেটা অনেক বেশি রিলিজিয়াস। যেমন,ধর্মের বিষয়টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে খুব স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তাদের ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেসের মধ্যে সব মানুষের যে সমানাধিকার,তার রেফারেন্সটা হল- ঈশ্বরের চোখে মানুষের যে মর্যাদা সে মর্যাদা। পরবর্তীতে হানা আরেনড দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে,আমেরিকান ফাউন্ডেশনটাই একটা ইউনিক ঘটনা। এবং এটা আসলে ইউরোপের যে ঐতিহ্য এবং রিলিজিয়নের সাথে তার যে সম্পর্ক –সবগুলোই আলদা। হানা আরেনড তখন তর্কটা করছেন ইমপ্লিসিটলি। তিনি আলোচনা করেছেন,সেকুলারিজমের পলিটিকাল হিস্ট্রির স্ট্রাকচার এবং অথরিটির জায়গা থেকে। ফলে আমি দুটো কথা বলেছি একটা হল প্রিন্সিপাল আরেকটা হল অথরিটি।

আমরা এতক্ষণ অথরিটির কথা বলেছি কিন্তু যে প্রিন্সিপালগুলোর মধ্য দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে,এটা সম্পর্কে আরেক জন একটা খুব ফান্ডেমেন্টাল চ্যালেঞ্জ করেছেন। তার নাম হল কার্ল স্মিট। তার একটা বইয়ের নাম হল ‘পলিটিকাল থিওলজি’। ‘পলিটিকাল থিওলজি’তে তিনি আর্গু করলেন যে,আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারনা আছে এগুলো মূলত ধর্মতাত্ত্বিক খ্রিস্টীয় ধারনা জাত। এটা থেকে হানা আরেনড বা অন্যরা ডিফারেন্স তৈরি করতে চাইছেন। কাসানোভা ও অন্যরা যখন আলোচনা করেছেন তারা তখন দেখাচ্ছেন যে আসলে আমেরিকান কেইস আর ইউরোপের কেইসটা ডিফারেন্ট। আমেরিকার বাইরেও সেটা স্কেন্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে কিংবা ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোতে যেসব জায়গায় খ্রিষ্টান মেজরিটি এটাও আলাদা। এখানে পাবলিক স্পেয়ারে ধর্মের যে রোলটা,এই রোলটাকে কাসানোভা বলছেন পাবলিক রিলিজিয়ন ইন দ্যা মডার্ন ওয়ার্ল্ড। এটার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ফারাক আছে। তিনি পাবলিক রিলিজিয়ন বলছেন,টু ডিফারেনশিয়েট ইউথ রিগাড টু পলিটিকাল রিলিজিয়ন, হুইচ ইজ ইসলাম এস সাচ। ফলে পাবলিক রিলিজিয়ন বলতে বলছেন, ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত যে রাজনৈতিক ধারা সামাজিক সংগঠন বা সিভিল সোসাইটি,এটা মোস্টলি সিভিল সোসাইটি ওরিয়েন্টেড একটা তত্ত্ব বেসিক্যালি। এটা ক্যাথলিক সিভিলসোসাইটি এক্টিভিজমের একটা পার্ট। যে কারণে তালাল ভিগোরাসলি এটার ক্রিটিক করছেন।

অনেকগুলা ইন বিটুইন দ্যা লাইন অনেকগুলা জায়গা আছে যেগুলা যেহেতু ইন্টেলেকচুয়াল তারা এভাবে লিখবে না। কাসানোভার তত্ত্ব হইল যে, সিভিল সোসাইটিতে রোল আমেরিকাতে প্লে করেছে ল্যাটিন আমেরিকাতে করেছে এবং করবে। এবং একটা পাবলিক স্পেয়ারে মধ্যে তার এই জায়গাটা দেয়া হয় সে স্টেটকে ইনফর্ম করে ডেমোক্রেটাইজেশনের ক্ষেত্রে তার কিছু মোরাল কন্ট্রিবিউশান আছে কিন্তু এটা কখনো সেকুলারিজমের যে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ঐ দুটাকে আবার খর্ব করেনা। কাসানোভার থিসিস হল সেকুলারিজমের তত্ত্বটা এখনো ডিফেন্ডেবল। কিন্তু রিলিজনকে প্রাইভেটাইজ না করে এটাকে একটা পাবলিক রোলে নিয়ে আসতে হবে। তালাল আসাদের একটা মৌলিক প্রশ্ন হল- যে অনুমান এবং প্রস্তাবনার উপরে এই ডিস্ট্রিবিউশানটা,এটা এখনো ফান্ডেমেন্টালি এসিউম করে নেয় যে, পাবলিক এবং প্রাইভেট বলে একটা সীমারেখা টানা যায়। তালাল আসাদের মূল আপত্তির জায়গা হল- এটা বাস্তবে সম্ভব নয় এবং দেখা যায় না। ফলে আলটিমেটলি এটা রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এখন,কোনটা প্রাইভেট আর কোনটা পাবলিক,এটার যেহেতু পরিষ্কার সীমারেখা নাই, রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত রি-ডিফাইন করে, রেগুলেট করে এন্ড কন্ট্রোল করে। এটা উনি সিস্টেমেটিক্যালি অনেকদিন ধরে দেখানোর চেষ্টা করছিলেন। দুইটা কেস স্টাডিতে উনি আলোচনা করেছেন। একটা হল সালমান রুশদির ঘটনার সময় এবং সর্বশেষ হল ফরাসী দেশে যে বিতর্কটা হিজাব নিয়ে হল। এই ডিবেটের সময় তিনি ক্রিটিকালি এঙ্গেজ করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে প্রাক্টিকালি এটা একজিস্ট করেনা। আসলে ডিফাইন যেটা করা হয় এরকম কোন স্পেস ডিফাইন না যে, এ স্পেসে রাষ্ট্র কাজ করে আর এই স্পেসে ব্যক্তি তার ধর্ম নিয়ে স্বাধীন। আসলে এটা শেষ পর্যন্ত ডিফাইন করে স্টেট। স্টেট যখন ডিফাইন করে ইট ইজ এ কোশ্চেন অব পাওয়ার। এই পাওয়ারটা ফাংশন করে তার একটা অথরিটেটিভ ডিসকোর্সের মধ্যেদিয়ে। ফলে দুটো জায়গা তর্ক টা। একটা জায়গা একসেপ্টেড আফটার তালাল আসাদ দুটো তর্ক এখন হচ্ছে একটা হল মডার্ন স্টেটের এই যে ক্লেইমটা এবং সেকুলারিজমের যে ডকট্রিনটা এটা আর আগের মত রক্ষা করা যাচ্ছেনা। নাম্বার টু, ইভেন মাচ ডিপার প্রব্লেম তালাল আসাদ যেটা তৈরি করেছেন সেটা হল ইভেন দ্যা কনসেপশন অব রিলিজন ইটসেলফ ইজ এ্য প্রব্লেম। বেসিক্যালি দিস ইজ দ্যা এবসট্রাক্ট কন্সেপশন অব খ্রিস্টানিটি। এটা একটা ইউনিভার্সাল কনসেপ্ট আকারে হাজির হয়েছে। যেটা জিনিয়ালজিস অব রিলিজিয়নে যেটা করেছেন; যেটা এখন প্রবলেম তৈরি করেছে। ফলে রিলিজনের জেনারেলাইজড যে একটা ক্যাটাগরি; উনি দেখিয়েছেন কিভাবে ওটা খ্রিষ্টান ট্র্যাডিশনের মধ্য দিয়ে হয়েছে। খ্রিষ্টান ট্র্যাডিশনের মধ্য দিয়ে হয়েছে মানে কিন্তু এটানা এটা শুধুমাত্র একটা খ্রিষ্টিয়ান কনসেপ্ট। এটা একটা মডার্ন কনসেপ্ট। এই যে কন্সেপশন অব রিলিজিয়ন ছাড়া সেকুলারিজমের কনসেপ্টটা আসলে কাজ করে না। একটা পার্টিকুলার কনসেপ্ট অব রিলিজিয়নের উপর নির্ভর করেই তো সেকুলারিটির একটা ধারনা তৈরি হয়। ফলে এটা কিন্তু কন্সটেন্টলি একটা আরেকটাকে ফিড করে। তাইলে এই দুটা কনসেপ্টকে প্রবলেমেটাইজ করার মধ্যদিয়ে আসাদ আরো যে ব্রডার জায়গায় যেতে চাচ্ছেন তা হোল ডক্ট্রিনাল এসামশান এবং প্র্যাকটিসটাকে কনসেপচুয়াল ডক্ট্রিনের জায়গা থেকে না দেখে কিভাবে রাদার একটা কমপ্লেক্স ডিসকার্সিভ প্র্যাকটিস অব মডার্ন ইন্সটিটিউশন এবং পাওয়ার আকারে দেখা যায়।

 


নিজের সম্পর্কে লেখক



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।