স্বভাবগতভাবেই বাঙালিরা পুরুষতান্ত্রিক
স্বভাবগতভাবেই বাঙালিরা পুরুষতান্ত্রিক –এ কথা বেগম রোকেয়া নানাভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন; এবং সফলও হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর অনুসারীরা এ কথাটা বুঝতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
আজকাল যারা নারী অধিকারের কথা বলেন, তাদের মৌলিক দুর্বলতা হল- ধর্মকে তারা নারী আন্দোলনের পথে প্রধান বাধা মনে করেন। অথচ বেগম রোকেয়া এমন মনে করতেন না। তিনি বরং বাঙালির কিছু সংস্কৃতি বা আচার-আচরণকেই নারী বঞ্চনার প্রধান হাতিয়ার মনে করতেন।
অর্ধাঙ্গিনী প্রবন্ধে বেগম রোকেয়ার মূল প্রস্তাবনা ছিল- ‘আজ থেকে আমরা স্বামী শব্দের পরিবর্তে অর্ধাঙ্গ বলিব’।
তিনি ‘স্বামী’ শব্দটি বাদ দিতে চান; কারণ এর অর্থ প্রভু, মনিব, মালিক, অধিপতি, পণ্ডিত। বাঙালিরা এ শব্দের ব্যবহার করে নারীদের উপর নিজেদের প্রভুত্ব কায়েম করতে চান।
অন্যদিকে, স্বামী শব্দের পরিবর্তে তিনি অর্ধাঙ্গ শব্দটি ব্যবহার করার সুপারিশ করেছেন; কেননা, ইসলাম ধর্মে স্বামী এবং স্ত্রী উভয় শব্দের জন্যে ‘যাউজ’ (زوج) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার বাংলা অর্থ অর্ধাঙ্গ বা অর্ধাঙ্গিনী।
কুর’আনুল কারীমে নারীকে বলা হয়েছে পুরুষের পোশাক, আর পুরুষকে বলা হয়েছে নারীর পোশাক (সূরা বাকারা-১৮৭); কিন্তু কখনো বাঙালিদের মত পুরুষকে স্বামী বা প্রভু বলা হয়নি।
বাঙালি সংস্কৃতিতে নারীকে সব সময় ‘অবজেক্ট’ আকারে দেখা হয়, যেখানে নারীদের কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। যেমন, পুরুষের ক্ষেত্রে বাঙালিরা বলে- ‘সে বিয়ে করেছে’; কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে বলে- ‘তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে’। অথচ ইসলাম ধর্মে পুরুষ ও নারী উভয় ক্ষেত্রেই ‘নিকাহ’ (نکاح) শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ ‘বিয়ে করা’।
এভাবে আমরা আরো অনেক উদাহরণ দিতে পারি, যেখানে দেখা যায়, বাঙালি সংস্কৃতি ও আচার-আচরণ নানাভাবে নারীদের নিচু আর অসম্মান করছে।
যদি কোনো নারীনেত্রী আসলেই নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে চান, তাহলে তার উচিত, বিদ্যমান বাঙালি সংস্কৃতি ও আচার-আচরণে নারীকে যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং হেয়-জ্ঞান করা হয়েছে; তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করা। বেগম রোকেয়া এ ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হয়েছেনও বটে।
আমি জোবায়ের-এর চরিত্রে যতটুকু পুরুষতান্ত্রিক ভাব আছে, সবই বাঙালি সংস্কৃতির অবদান। এ থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদের উচিত ব্যাপকভাবে ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা করা।