সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠার মূল ভিত্তি
‘আমরা বাঙালি বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পক্ষে’, বা ‘আমরা যে কোনো ধরণের জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে’ –এ কথাগুলো বলার মধ্য দিয়ে আমরা আসলে আমাদের একটি রাজনৈতিক বিপদ ডেকে আনি।
প্রথমত, যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষের মানুষ -হোক বিএনপি বা আওয়ামী লীগ- তারা জাতীয়তাবাদকেই তাদের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি মনে করেন। ফলে স্ব-স্ব জাতীয়তার বাইরে অন্যদের দমন-পীড়ন করে ক্ষমতায় যাওয়াকে তারা যৌক্তিক বা সাংবিধানিক উপায় হিসাবে বিবেচনা করেন।
যেমন, যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী তারা ভাবেন, বাঙালি ছাড়া আর যত পাহাড়ি বা বিহারি আছে সবাই আমাদের শত্রু; এদের দমন করাই একমাত্র কাজ। অন্যদিকে যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী তারা মনে করেন, কেবল বাংলাদেশিরাই আমাদের বন্ধু, ভারতীয় বা পাকিস্তানের মানুষ আমাদের শত্রু। সুতরাং তাদেরকে দমন না করতে পারলেও অন্তত অহেতুক বিরোধিতা করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, যারা মনে করেন, আমরা সকল ধরনের জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে ওঠে একটি বিশ্বজনীন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চাই, তারাও এক অর্থে মানুষের অকল্যাণ বয়ে আনেন। তারা স্থানীয় মানুষের মূল্যবোধ, আচার-আচরণ উপেক্ষা করে এক ধরণের ত্রাস সৃষ্টি করতে চান।
যে কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠে সে দেশের আচার-আচরণের ওপর ভিত্তি করেই। কিন্তু কোনো স্থানের আচার-আচরণ বা ঐতিহ্যকে ঐ রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠার একমাত্র ভিত্তি মনে করাই দেশের জন্যে বড় বিপদ।