“ব্যক্তিগত সম্পত্তি” বিষয়ক চিন্তার পাঠচক্রের আলোচনা

ব্যক্তিগত সম্পত্তি পাঠ করলে আপনি ফিলোজফিতে সহজে ঢুকে যেতে পারবেন। যদি এটা আগে থেকে পাঠ করা থাকে তবে আপনার জন্য দর্শনের জায়গায় এটা হবে নগদ লাভ। কিন্তু আপনাকে তার জন্য ঠিক করতে হবে কিকরে আপনি আগাবেন। অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তি বুঝার জন্য দর্শনের জায়গায় তার সাবজেক্ট এবং অবজেক্ট আপনার ঠিক করে আগানোটা পূবশর্ত হিশাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সাথে জড়িত রয়েছে তাৎণিক সময়কে বুঝতে পারার শর্ত আর বর্তমানের কর্তব্য নির্ধারণের জ্ঞান। এটা বুঝতে না পারলে যেমন আপনি পলিটিক্যাললি নিরাকারের উপাসনা কী বুঝতে পারবেন না। একই সাথে আজকের পুঁজির রূপকে বুঝাটাও কঠিন হয়ে যাবে। কবি ফরহাদ মজহার গত ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবারের চিন্তার পাঠচক্রে “ব্যক্তিগত সম্পত্তি” বিষয়ক আলোচনার শুরুটা এইভাবে করলেও সেটাকে আর নির্ধারিত আলোচনার মধ্যে তিনি রাখেননি। কারণ পাঠচক্রের অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্ন আলোচনার গতিকে নানান দিকে চালিত করে। প্রসঙ্গক্রমে চলচ্চিত্রের কথা ওঠে। ফরহাদ মজহার চলচ্চিত্র দেখার উপর বিশেষ গুরুত্ব পেশ করে বলেন, আমাদেরকে তো অভিজ্ঞতাগত পাঠের মধ্য দিয়ে আগাতে হয়। আর এর জন্য চলচ্চিত্র একটা বিশেষ দিক। চলচ্চিত্রের এখন তো নানা ক্যাটাগরি তৈরী হয়েছে। সিরিয়াস ছবি। আর্ট ফিল্ম। ইত্যাদি। আমি এর মধ্যে নাই। আমি ‘সিরিয়াস’ ছবি দেখি না। আমি দেখি ছবি। যেমন বন সিরিজ দেখেছি। এই ছবি দেখার পর আপনাকে বুঝতে হবে, কেনো এই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরী হয়েছে। সেখানকার রাজনৈতিক সংকটটা কী। সিআইএ’র সংঘাতকে কেনো এখানে নিয়ে আসা হলো। বিষয়গুলোর তাৎপর্য আপনাকে তো ধরতে হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারগুলো এখানে যে বাস্তবতার মধ্য দিয়ে উঠে আসছে আপনাকে তার মধে ঢুকে যাবার সুযোগ নেয়াটা একটা বিষয়। এটা জরুরী। ইরানিয়ান ছবিও দেখতে হবে আমাদেরকে। এই ছবিগুলো দেখে আমাদের একটা মতামত নির্মাণ করাটা একটা কর্তব্য। ডেড ম্যান ওয়ার্কিং ছবিটা দেখা যেতে পারে। ক্যাপিটাল কিভাবে ফাঙ্কশন করে এটা আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন এখান থেকে। ঋত্বিককেও আমাদের পড়ার দরকার আছে। তাদের মধ্যে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মন আছে সেখানে তাদের একটা এ্যালিনিয়েশান বা একটা রোমান্টিক দিকও আছে। কারণ, এখান থেকে চলে যাবার ফলে তাদের মধ্যে একটা মোহ রয়ে গেছে। প্রসঙ্গ ধরে নেসার আহমেদ প্রশ্ন করলেন, ফরহাদ ভাই, মার্কসের মধ্যে এ্যালিনিয়েশান কী? জবাবে তিনি বললেন- মার্কসের মধ্যে এ্যালিনিয়েশান নাই। মার্কসের মধ্যে শুধু অতিক্রম করে যাবার একটা তত্ত্ব আছে। তবে এইসব প্রশ্ন... যেমন মার্কস হেগেলকে উল্টে দিয়েছে... মার্কসের ব্যাপারে এইরকমের প্রশ্নগুলো আসলে হুজুগের মতো চল হয়ে গেছে। মূলত হেগেলের মধ্যে গ্রাউন্ডিংটা গুরুত্ব মনে হয়েছে মার্কসের। এবং মার্কস তাঁর এটাকেই দার্শনিক জায়গায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে মার্কস হেগেলের মধ্যে সংকটগুলো কী- সে জিনিসগুলো সহজে সনাক্ত করতে সম হন। আসলে উল্টাউল্টির কোনো ব্যাপার নাই এখানে। আর মার্কস যেভাবে ধরে নিয়েছেন, যেভাবে এগিয়েছেন সেখানে মার্কসের মধ্যেও সমস্যা রয়েছে সেগুলো বুঝতে পারা ও ধরতে পারাটা হবে এখনকার প্রথমত সবচেয়ে জরুরী কাজ। সেদিক থেকে স্পিরিচুয়ালিটি বা রূহানী শক্তিকে বুঝাটা আমাদের কাজ হবে। আর এখান থেকেই বিচ্যুতি ঘটেছে পশ্চিমা দর্শনের। পশ্চিমা দর্শনে পোয়িটিজম ও স্পিরিচুয়ালিটি'র এই আলোচনাগুলো হয়নি। হেইডেগার এসে সেগুলো শুরু করলেন নতুন করে। কিন্তু মার্কসও এই বিচ্যুতির শিকার। এরপর মোহাম্মদ রোমেলের একটি প্রশ্ন ধরে আলোচনা অন্যদিকে বাঁক নেয়। রোমেলের প্রশ্নটি ছিলো জাতিগঠন বিষয়ক। যেখানে রোমেল বিদ্যাসাগরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। কারণ বিদ্যাসাগর ব্রা‏হ্মন হওয়া সত্ত্বেও তার জাতিগঠনের কল্পনা ছিলো অসা¤প্রদায়িক। উল্লেখ্য, জরুরী কাজে ফরহাদ মজহার চলে গেলেও এই আলোচনা চলতে থাকে যথারীতি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফরহাদ মজহার আবার আলোচনায় অংশ নেন। নতুন করে তখন আলোচনা করতে গিয়ে তিনি প্রোসেস বেইস্ড এ্যাডুকেশান'র উপর গুরুত্বারোপ করেন। মানে বাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে শিখতে পারাটা বেশী লাভজনক। একাট্রা কোনো একাডেমিক শিক্ষা প্রক্রিয়া স্থির-কাঠামোবদ্ধ হওয়ায় এখানে বিশেষ কোনো চিন্তা, বিজ্ঞান ও উৎপাদনশীলতার শর্ত তৈয়ার হয় না। ফলে এই বাস্তব ভিত্তিক শিক্ষা প্রথার গুরুত্ব বুঝে ইউরোপে এর চর্চা শুরু হয়ে গেছে আরো আগেই। আরো নানান দেশে এই প্রসেস বেইস্ড লার্নিং নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। প্রসঙ্গ পাল্টে তিনি নানান সময়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তির রূপ কিকরে কোন রূপে সমাজে হাজির হয় তা বলতে গিয়ে সমাজের সমূহ সম্পর্ক, বৈধতা ও সংস্কৃতির উৎস ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার সূত্রগুলোর ভিত্তির সাথে বা সংবিধানের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তির আকার ও সম্পর্ক বিদ্যমান আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংবিধানের ডকুমেন্টস ও তা তৈরীর প্রক্রিয়া আমাদেরকে জানতে হবে। কারণ সমাজে মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের আপ্রাইজিং ছাড়া তো সংবিধান রচনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ সংবিধান তৈরীর সাথে সাবজেক্ট বা কর্তাসত্ত্বার সম্পর্ক আছে। তাহলে সমাজে কিকরে কর্তাসত্ত্বা তৈরীর পরিস্থিতি হাজির হয়, কোন অবস্থার ভেতর দিয়ে নতুন কর্তাশক্তি বা শ্রেণী কনস্টিটিউট বা গঠিত হয় সেটা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। বুঝতে হবে। এবং একই সাথে আমাদেরকে দেখতে হবে সমাজের মধ্যে কিকরে নতুন পাওয়ার দানা বাঁধে। কোন কন্ডিশানের উপর ও কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভেতর দিয়ে নতুন এক জায়গায় একটি শক্তি একীভূত হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় সে বিষয়গুলো আমাদের উপলব্ধি করা জরুরী। এর সাথে যুক্ত রয়েছে সাংস্কৃতিক শক্তি ও আকাঙ্ক্ষা.....মানে শ্রেণী বাসনা। এই যে ধরুন, নগরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আকাঙ্ক্ষাটা কী? অর্থাৎ সংবিধান তো এমনি এমনি হয় না। নানান সম্পর্ক, বাসনা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কর্তাসত্ত্বার যে রূপ সেখানে সংবিধানকে ধরতে পারলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির রূপ ও সম্পর্ক কী সেটা যেমন বুঝা যায় তেমনি সংবিধানের ভিত্তিটাও আপনি বুঝতে পারবেন। এই কথাগুলোর মধ্যে আকাঙ্ক্ষার একটা ব্যাপার আছে যেটাকে হেইডেগার ‘আনথট’ বলেছেন। কারণ এটা তো আলাদা ব্যাপার, মানে, যেটাকে আপনি চেতনা বলছেন, আর চেতনা মাত্রই প্রকৃতি থেকে, দু:খ থেকে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা। ফলে জন্ম দান করাটা একটা পাপ। মানে সৃষ্টি করাটা। যেকারণে চেতনা হিন্দু ধর্মে দু:খের কারণ। সে চেতনা সম্পন্ন মানুষই প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে এটা শুধু দু:খেরও কারণ না, ধ্বংসেরও কারণ। হাসান বললেন, এখানে তাহলে তো প্রডাকশনিজম আছে, যেটা পশ্চিমা মডেল। আর দূর্গা, যে কিনা সভ্যতার প্রতীক হয়ে উঠতেছে। জবাবে তিনি বললেন- ব্যাপারটা যদি সভ্যতার বিষয় হয় তবে এখানে দূর্গা নয়, পার্বতীই সভ্যতার প্রতীক। চেতনা দু:খের কারণ, সেকারণে হিন্দু ধর্মে উচ্ছিষ্টের ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ মানুষ মরে যাওয়ার পর এই যে, সৎকারের বয়ান খাড়া করা, মানে, দেহের ধারণা পেশ করা সেটা তার ধর্মেরই অংশ। ফলে হিন্দু ধর্মে দেহ বিষয়ক একটা চিন্তা আছে। যেটা গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা। আসলে এখানে পশ্চিমের সাথে এর একটা ব্যাপার আছে। সেখানে “আছে” বা অস্তিত্ত্ব সম্পর্কের জ্ঞান নিশ্চিতভাবে জানাটা জরুরী। এই যে, “আমি যে জানি”- এটা নিশ্চিত কিভাবে সেটা তাকে বুঝতে হয়। ফলে সেখানে ডেকার্তে থেকে পশ্চিমের জ্ঞান সন্দেহ থেকে শুরু হয়। কিন্তু প্রাচ্যে তার জানাটা ল্য না। এখানে প্রশ্নটা বিবেকের। এই যে মানুষ দু:খ পায় কেনো- এটা তো জ্ঞানতাত্ত্বিক না। প্রশ্নটা হলো এখানে জরা আছে, মৃত্যু আছে, দু:খ আছে- তাহলে এর থেকে মুক্তির উপায় কী? ফলে এখানে দ্বীনের ধারণা আসে। দ্বীনের ধারণায় দেনার ধারণা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। তো এটা তো জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রশ্ন না। এটা এ্যাথিও-পলিটিক্যাল। খুবই বাস্তবের ঘটনা। তাহলে বুঝতে পারছেন তফাৎটা কোথায়। যেকারণে হিন্দু ধর্মেও প্রশ্নটা আসে, মানুষ প্রকৃতি থেকে- মায়ের থেকে বেরিয়ে আসতেছে। কেনো আসতেছে। এখানে এসে সে ভালো করবে যাতে আর তার জন্ম না হয় মানে, ভালো করলে সে আর ফিরে আসবে না। কিন্তু না করলে তাকে আবার আসতে হবে যেকারণে তার দেহকে ছোঁয়া যায় না। পবিত্রতার প্রশ্ন আছে এখানে। ফলে তারা দেহকে পুড়িয়ে ফেলে। তাহলে আপনাকে তার জন্মান্তরের ধারণা তার জায়গা থেকেই বুঝতে হবে। এটা দরকারী। একইভাবে বডির সাথে সাথে সেক্সেরও ধারণা আসে। কারণ এর সাথে সন্তান উৎপাদনের শর্ত রয়েছে। আছে নারীর সম্মতির প্রশ্ন। নারীকে জোর করে সেটা করা হতো আগে। হাসান বললেন- যৌন সম্পর্কের বিষয়টা তো কেবল সন্তান উৎপাদনের বিষয় না। এর সাথে আরো ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বললেন- এখানে আসলে প্রশ্নটা সন্তান উৎপাদনের। আরো এগিয়ে বললে, তাহলে কিকরে সন্তান উৎপাদন করতে হবে সেই দায়িত্ব সমাজকেই নিতে হবে। সিদ্ধান্তটা নিতে হবে সমাজকেই। কারণ এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে মানব সমাজের ধারাবাহিকতার। কিন্তু মার্কস বলেন, এই সন্তান উৎপাদন দ্বারাই কেবল মানুষের ইতিহাস হয় না। জীবিকা নির্বাহ আর উৎপাদনই নয় ইতিহাস হতে হলে আকাক্সার উৎপাদন তার জন্য পূর্বশর্ত। নতুন আকাক্সা (স্পিরিট) ও নতুন স্বপ্ন মানুষের ইতিহাসের জন্য জরুরী। কারণ এগুলো ‘কন্ডিশান অব হিস্ট্রি’ বা ইতিহাসের বাইরের শর্ত। মানে ইতিহাস হওয়ার পূর্বশর্ত। এখানেই মার্কস হেইডেগার থেকে আলাদা। কারণ মার্কসের কাছে তো এটা প্রোডাকশান না বরং ‘রিলেশান অব প্রোডাকশন’ বা উৎপাদন সম্পর্ক’র কথা। ফলে আজকে ধর্ম ও প্রোডাকশান বুঝতে গেলে আপনাকে বিবদমান কর্তৃত্বশীল বয়ানের বাইরে গিয়ে বুঝতে না পারলে সত্যিকার অর্থে বুঝবেন না। বই পড়ে, বই দেখে এটা বুঝবেন না। আর বই দেখে তো চিন্তা হয় না। জ্ঞান হয় না। প্রসঙ্গ ধরে মুসতাইন জহির বললেন- যে চিন্তা দ্বারা ইতিহাসের উল্লম্ফন হয়েছে সেটা- পড়া মেপে পড়া দ্বারা হয়েছে। জহিরের কথার সাথে যোগ করে ফরহাদ মজহার বললেন- আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন বইটি পড়বেন আর কোন বইটি পড়বেন না। সব বই তো আর পড়া যাবে না। চিন্তাকে চিন্তা আকারে বুঝতে হয় আর বইতে সেটা হাজির হয়। যেকারণে আপনাকে সেই বইগুলোই পড়তে হবে। গ্লোবাল চিন্তা যেখানেই থাকুক আপনাকে তা পাঠ করতে হবে। ধরতে হবে। ধরতে জানতে হবে। ফলে এখানে বই পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ না। চিন্তাকে ধরাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আসল কথা হোল, বই পড়ে কেউ বড়লোক হয় না। তাহলে মূল কথা হোল আপনাকে চিন্তাটা ধরতে হবে। এটা যেখানেই থাকুক। মেমন, কালি সম্পর্কিত কথা। কালি সম্পর্কিত একটা শ্লোক আছে কমলাকান্তের- “ব্র‎হ্মাণ্ড ছিলো না যখন মুণ্ডুমালা পাাইলা কোথায়”। কমলাকান্ত বললেন- আসলে কালি যদি হয় আদি তাহলে কালির গলায় মানুষের মুণ্ডু আসলো কোত্থেকে। মানে, কালি টাইম ও স্পেসের আগের। কালির আগে কিছুই ছিলো না। বিংগ ছিলো না। টাইম ছিলো না। কালির মধ্য দিয়ে আপনি সময়ের ধারণাও পাচ্ছেন। দেখুন, এই যে এক লাইনের একটা শ্লোক যেটা মার্টিন হেইডেগারের আস্ত একটা বইয়ের সমান। তাহলে কী বুঝা গেলো। চিন্তাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই চিন্তা কোরে শিখতে হয়। সেটাকে ধরতে জানার উপলব্ধি থাকতে হয়। এই যে ধারণা- কালির আগে কিছুই ছিলো না, মানে দেশ-কালের ধারণা এক লাইনের মধ্যে- যেটা এখানে প্রাচ্যে বহু আগেই চিন্তার মধ্যে নয় মেটাফোর ও সাধনার মধ্য দিয়ে ঘটে গেছে। আর পশ্চিমের তো অনেক দেরী হয়ে গেছে। মাত্র দুশ বছর আগে তাদের বলতে হয়েছে এটা। অনেক সময় লেগে গেছে। তাদের এটা চিন্তা করে বলতে হয়েছে। অথচ এখানে কালচারের মধ্যেই তা ঘটে আছে। মানে- বাংলার ভাব- মেটাফোর, প্রেম ও ভাষার মধ্যে বেড়ে ওঠে। তাহলে দেরিদার ভাষায়- ভাষা মাত্রই মেটাফোর। মানে, আপনার ভাষার মধ্যেই চিন্তা রয়ে গেছে। আর ভাষা মানে তো বই না। আরো অনেক......। সেখানে এটাকে ধরতে পারার জ্ঞান থাকতে হবে আপনার। জানতে হবে কিভাবে ধরবেন। আসলে তাহলে দেখা যাচ্ছে কালির ধারণাটা কেবল টাইমের না। প্রোডাকশনেরও। যেকারণে কার্ল স্মিথকে বলতে হয়েছে- মার্কসের ক্যাপিটাল- ডিসকোর্স অব টাইম। একইভাবে আল্লাহর কনসেপ্ট আরবের কালচার ছাড়া বোঝা যাবে না। এই কালচারের তো বিবর্তন হয়েছে- ইব্রাহীম, মুসা, ঈসা এবং হযরত মুহাম্মদ স. পর্যন্ত আপনাকে এই সময় ও ভাষাকে বুঝতে হবে। সেটা বুঝারও একটা দিক আছে। কারণ দর্শন যেমন করে পাঠ করে ধর্ম সেভাবে করে না। তাহলে আপনাকে প্রথমে আনথট রয়ে গেছে যেটা তাকে গ্রেফতার করার কাজটা করতে হবে। হেইডেগার যেমন করে বাতলে দিলেন যে, ইতোমধ্যে যে চিন্তা হাজির হয়ে গেছে দেশ-কালের মধ্যে সেটাকে অবজেক্টিভ ধরে বাইরে গিয়ে চিন্তা করা হয় যখন তখন নতুন চিন্তার প্রকাশ ঘটে। নতুন সম্ভাবনা ধরা দেয়। ফলে চিন্তা করা মানে ভাষাকে সমৃদ্ধ করা। ভাষীকেও সমৃদ্ধ করা। আর এর জন্য সাধারণ মানুষের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে আপনাকে। তাদের সাথে মিশতে হবে। কথা বলতে হবে। তাদের ভাষা ও জীবন যাপনকে বুঝতে হবে। চিন্তার মৌলিক ত্রেকেও বুঝতে হবে। অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রচুর কথা বলতে হবে। তাদেরকে আপনাকে বুঝতে হবে তাদের জায়গা থেকেই। আপনার জায়গা থেকে নয়। উল্লেখ্য এখানে ফরহাদ মজহারের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- আনিসুল হামিদ টুটুল, তানিম, মোহাম্মদ রোমেল, মুসতাইন জহির, হাসান ও তারেক। প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উবিনীগ কার্যালয়ে এমনি করে চিন্তার পাঠচক্র নানান বিষয়ের আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। পাঠচক্রটি সকলের জন্য উন্মুক্ত।


নিজের সম্পর্কে লেখক

student



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।