দ্য পলিটিকাল শারিয়াহ
চিন্তা পাঠচক্রে মাকাসিদ আশ-শারিয়াহ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার পর গত ১৯ মার্চ’১৫ ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ‘দ্য পলিটিকাল শারিয়াহ’ বইটার উপর আলোচনা করেন জোবায়ের আল মাহমুদ।
জোবায়ের আল মাহমুদ- ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর বইয়ের শুরুতে রাজনীতিতে কি কি বিষয়ে নজর রাখা উচিত সেগুলো আলোচনা করেন। আলোচনার মধ্যে তিনি তাঁর নিজের বক্তব্য খুব একটা প্রধান করেন নাই। পুরো আলোচনার মধ্যে তিনি কোর’আন হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। ট্র্যাডিশনাল বইগুলোতে আমরা দেখব, কোরান-হাদিসের রেফারেন্স দিয়েই পরস্পর ভিন্ন দুইজন আলেম কথা বলছেন, কিন্তু কোর’আন-হাদিসগুলো সাজানোর ভিত্তিতে তাঁদের একটা আলাদা আলাদা বয়ান তৈরি হচ্ছে। তাঁরা কোর’আন-হাদিসগুলোকে একটার পর একটা লিখতেন, কিন্তু এই লিখার মধ্য দিয়েই তাঁদের বয়ান ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যেত। দেখা যেত দুইজন ইমামই একটা বিষয়ের উপর কথা বলছেন, কিন্তু কোন আয়াতটার পর কোন আয়াত আনছেন, তার মধ্যে দিয়ে দুইজনের একটা পার্থক্য তৈরি হত। কোর’আন-হাদিসের রেফারেন্সগুলো সাজানোর মধ্যে দিয়ে ইবনে তাইমিয়া তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন।
প্রথমে তিনি বলেন, রাষ্ট্র বা রাজনীতিতে দুই ধরনের ব্যাপার থাকে। একটা হচ্ছে কর্তৃত্বের জায়গা; যদিও অথরেটি কিভাবে অথরেটি হয়ে উঠে তার বিস্তারিত আলোচনা আসে নি। তিনি আলোচনা করছেন, যে কোনো অথরেটির অধীনে লিডারশীপের দায়িত্বগুলো কাকে দেয়া উচিত বা কাকে দেয়া উচিত নয়। বইয়ের প্রথম অংশে এই বিষয়টা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি একটা বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন, কোন একটা কাজে যিনি উপযুক্ত তাকে দায়িত্ব দিতে হবে। কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে একজন এসে প্রশ্ন করলেন যে, একজন লোক বিশ্বস্ত আর একজন দক্ষ, এই দুইজনের মধ্যে আমি কাকে দায়িত্ব দিব। তখন ইমাম হাম্বল বললেন, যিনি দক্ষ তাকে। বিষয়টা হচ্ছে, বিশ্বস্ততা জিনিসটা দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত হবে, মানে দক্ষতার একটা উপাদান হিসাবে যুক্ত হবে কিন্তু যোগ্যতা বিশ্বস্ততার অংশ হবে না। এটার উপর ভিত্তি করে তিনি রাসূল(স) থেকে অনেকগুলো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন- খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন যুদ্ধের অনেক বড় সেনাপতি। কিন্তু তিনি যখন নামাজ পড়াতেন তখন সূরা পাঠে মাঝে মধ্যে হয়ত ভুল হয়ে যেত। তারপরে খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে উদ্দেশ্য করে একবার রাসূল(স)বললেন, ‘হে আল্লাহ, খালিদ যা কিছু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে, আমি এ ব্যাপারে অব্যাহতি চাই।’ খালিদ (রা) সম্পর্কে রাসূল (স) এমন আশংকা করা স্বত্বেও পরবর্তী যুদ্ধে আবার খালিদ (রা)কেই দায়িত্ব দিলেন। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা দেখিয়েছেন যে দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে ভালো আমলের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দক্ষতা।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া মতে, যিনি যে কাজে দক্ষ তাকে সে কাজের দায়িত্ব দিলে কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে। যেমন যাকাত তুলতে হলে যিনি যাকাত তুলতে দক্ষ তাকে ঐ দায়িত্বটা দেওয়া উচিত, তার চাইতে বেশি মুত্তাকী কেউ থাকলেও। কারণ হচ্ছে নতুবা তো যাকাতই উঠবে না। এ কারণে তিনি এ বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন।
এখানে তিনি একটা ফারাক খুব ভালভাবে করেছেন, এক হচ্ছে নেতৃত্বের অধীনে অন্যদেরকে দায়িত্ব দেওয়া এবং আরেকটা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করা। ইবনে তাইমিয়া বলছেন যে, প্রশাসনের অন্যান্য যে কাজগুলো রয়েছে, সেগুলোতে দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ দিতে হবে কিন্তু যিনি প্রধান কর্তৃত্ব গ্রহণ করবেন তিনি কোনো একটি একক নির্দিষ্ট দক্ষতার ভিত্তিতে ক্ষমতায় আসবেন না। বরং কোর’আন হাদিস দ্বারা তিনি পরিচালিত হবেন, এই প্রতিজ্ঞা করেই তাকে ক্ষমতায় আসতে হবে।
পরবর্তী অধ্যায়ে ইবনে তাইমিয়া রাষ্ট্রীয় কাজের উদ্দেশ্য ও ধরণ কি হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এখানে সব আলাদা আলাদা করে বলার দরকার হবে না। এর মধ্যে আছে যাকাত উত্তোলনের খাতসমুহ, যাকাত কিভাবে বণ্টন হবে, সরকারি আয়ের খাতসমুহ কি, ডাকাতি-চুরি-রাহাজানি কিভাবে বন্ধ করতে হবে, রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যাকারীর শাস্তি কিভাবে হবে, সাক্ষ্য কিভাবে নিতে হবে, জেনা-ব্যভিচার-মদ পানের শাস্তি কি হবে, অপরাধের শাস্তি কি হবে, এ ধরণের যেসব ল ইসলামে রয়েছে, তার বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তারপর ইমাম ইবনে তাইমিয়া অন্য একটা বিষয় আলোচনা করেছেন। তা হচ্ছে কোন কোন কারণে রাষ্ট্র প্রধানের বিরোধিতা করা যায় এবং পদ্ধতিটা কি হবে। তিনি বলছেন মুল কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার তিনটা উপায় হতে পারে। একটা হল-যেসব ব্যাপার এতক্ষণ বললাম এগুলোকে রাষ্ট্র প্রধান গুরুত্বপূর্ণ মনে করে কিন্তু এ মুহূর্তে সে এ নিয়মগুলো মেনে চলছেন না; তখন তার উপর চাপ প্রয়োগ করা যাবে কিন্তু তাকে সরিয়ে দেওয়ার বা উৎখাত করার চিন্তা করা যাবে না। আরেকটা হল- যখন রাষ্ট্র প্রধান মনে করেন যে, এ ধরনের ল থাকার দরকার নাই এবং তিনি যাচ্ছেতাই করে যাবার অধিকার রাখেন; তখন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে। আর তিন নম্বরটা হল- যারা কোর’আন হাদিস অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করেন, তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ত তারা একটি নির্দিষ্ট মাজহাবকেই অনুসরণ করেন। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রীয় প্রধানের বিরোধিতা করা যাবে না।
মুসতাইন জহির- উদাহরণ দিয়েছেন কোনো? কি অর্থে ফিকহি পার্থক্য?
জোবায়ের- না। তিনি এখানে উদাহরণ দেন নি। কিন্তু যে আলোচনাটা করছেন এটা সুস্পষ্ট একেবারে। শুধু ফিক্হি মতবিরোধের কারণে ক্ষমতার বিরোধিতা করা যাবে না।
মুসতাইন জহির- আমি যেটা বুঝেছি, ধরেই নেওয়া অন্তত ইসলামের ঐতিহ্যের মধ্যে ফিকাহ্ সরকার প্রধানের ব্যাপার না। যিনি ক্ষমতায় আছেন তিনি একটা স্কুল বা ফিকহি ধারার রুলিং আনুসরণ কোন বিষয়ে ফায়সালা করছে, আইন প্রয়োগ করছেন । তিনি যেটা বললেন, বিভিন্ন গ্রুপ বা স্কুল বিভিন্ন ব্যাখ্যা করছে। ব্যাখ্যাগুলো আছে। যে কোন সুলতানই কোন না কোন ইন্টারপ্রিটেশনকে গ্রহণ করছেন এবং সে অনুযায়ী তার শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। এখন বাকি যারা আছে তাদের তো একটা ডিফারেন্ট ইন্টারপ্রিটেশন আছে, তাদের সাথে এই রাষ্ট্রের সম্পর্ক কি হবে? এটা হল আপনি জ্ঞান-তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা বা চিন্তার চর্চা করেন কিন্তু আপনার ব্যাখ্যা অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যমান ক্ষমতার বিরুদ্ধে আইডিওলজিকালি কোন গভর্নমেন্ট ফর্ম করা কিম্বা শাসন ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন বা বিদ্রোহে রূপান্তরিত করতে পারবেন না।
তিনি বলছেন যে সোসাইটিতে ডিফারেন্ট আইডিয়াস এন্ড ইন্টারপ্রিটেশনস অফ ইসলামিক প্রিন্সিপাল আছে। কিন্তু এই ডিফারেন্ট ইন্টারপ্রিটেশনের কারণে কেউ যেন বিদ্রোহের সূচনা না করে। কারণ ধরে নেওয়া হয়েছে প্রিন্সিপাল অফ শরিয়াহ’র ক্ষেত্রে চারটা স্কুলই মৌলিক আকিদাগত জায়গায় স্থির আছে। শরিয়াহর মৌলিক আকিদাগত জায়গায় যেহেতু একটা ঐক্য আছে, ফলে তার বাইরের ভিন্নতাগুলোর জন্য বিদ্রোহ করা যাবে না। কিন্তু তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে সুলতানের বিরুদ্ধে, বিদ্যমান শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে ন্যায়সঙ্গত বলেছেন সেই ক্রাইটেরিয়াটা আমাদের বোঝা দরকার।
জোবায়ের- এই তিনটা ভাগের আলোচনা করে তিনি এরপর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করেছেন। তিনি কোর’আন-হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত কিছু আইনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আর যেগুলো কোর’আন-হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় নি, সেগুলো মাকাসিদ আশ্-শারিয়াহ্র মাধ্যমে সাব্যস্ত হবে। এরপরে যেসব ল কোর’আন-হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে, সেগুলোর কি কি শাস্তি তা বিস্তারিত বলছেন।
রাসেল- কোর’আন-সুন্নাহতে যেটা ফিক্সড আছে, সেটা কি সব সোসাইটির জন্য বাস্তবায়ন করতে হবে?
জোবায়ের- রাসূল(স)কে একবার ইহুদি গোত্রের এক লোক এসে বললেন, আপনি আমাদের কিতাব অনুযায়ী আমাকে বিচার করেন। তখন রাসূল (স) তাদের কিতাব অনুযায়ী রজমের আদেশ দেন। রাসূল (স)-এর হাদিসগুলো দেখলে দেখা যাবে যে, এখানে অমুসলিমদের জন্য কোন শাস্তির বিধান আসছে না। শুধু যেটা এখন বললাম ঐ ইহুদীর ঘটনাটা আছে।
খুরশিদ- এই হাদিসটা কি মদিনাতে যখন ইসলামি ‘রাষ্ট্র’ কায়েম হয়েছে তখনকার?
মুসতাইন জহির- মদিনাতে সবার সাথে মিলে যে সনদ করা হল, তার মধ্যে পরিষ্কার করে বলা আছে, বিভিন্ন গোত্রের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব নিয়মগুলো কোথায় কোথায় প্রযোজ্য হবে। পরবর্তীতে যতগুলা ডিসপিউট হয়েছে, বিশেষত একটা ঘটনা নিয়ে অমুসলিমরা প্রচণ্ড সমালোচনা করে। সেটা হল ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজা হত্যাকাণ্ড। অনেকেই বলেন, এটা হল সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং বর্বোরিচত ঘটনার উদাহরণ। ইসলামের সমালোচকরা এটাকে বর্বরতার উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করে। বিষয়টা মোটেই তা নয়, অন্তত এভাবে সরলীকরণ করা যায়না। খুব স্পষ্টভাবে নির্ধারিত ছিল কি আইনে বিচার হবে, কে বিচারটা করবে। মদিনা সনদের মধ্যে মুসলমানদের ব্যাপারটা নবী ঠিক করবেন, কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপারে নবী ঠিক করবেন যেহেতু এই চুক্তিটা তার সাথে হয়েছে এবং বাদ বাকিগুলোর ক্ষেত্রে গোত্রগুলোর যে প্রথা-বিধি আছে সেটা প্রযোজ্য হবে। বনু কুরাইজার ক্ষেত্রে তখন ইহুদী যে আইন ছিল তার আলোকে যে ব্যক্তিকে ঠিক করা হয়েছিল তিনি সে রায়টা দিয়েছেন। সে রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যখন নবীকে এসে প্রশ্ন করা হয়েছিল আমরা কি এটা করব। তখন বলেছেন-হ্যাঁ।
এখন একটা প্রশ্ন হতে পারে ক্ষমা এবং উদারতা প্রদর্শন করার জায়গা কতদূর এখানে চর্চা করার যেত? তাহলে প্রশ্নটা হল আইনে কি আছে তা না, এখানে এটাকে এথিকাল কোশ্চেন আকারে দেখবার দাবি। সেই আলোচনাটা আসবে, সেটা করা যেতেই পারে, কিন্তু আমরা যা বললাম তা একটা লিগাল অব্লিগেশনের জায়গা।
জোবায়ের- ইসলামে দু’টি বিষয় আছে। আদল ও ইহসান। আদল হচ্ছে জাস্টিস; যা শাস্তি তাই হবে। যেমন আপনি আমাকে অন্যায়ভাবে মারলে আপনাকেও মারাটা হবে আদল। এহসান হবে যদি আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিই। এখানে তাইমিয়া বর্ণনা করেছেন, হজরত সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া একবার মসজিদে শুয়ে আছেন। এক চোর এসে তার চাদর নিয়ে রওনা দেয়। তিনি চোরকে ধরে এনে রাসূল (স)-এর কাছে নিয়ে আসেন। রাসূল (স) চোরের হাত কাটার আদেশ দেশ। তখন সাহাবী বললেন, আমার একটি মাত্র চাদরের জন্যে চোরের হাত কাটা পড়বে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তখন রাসূল (স) বললেন, আমার কাছে উপস্থিত করার পূর্বেই তাকে ক্ষমা করনি কেনো? পরবর্তীতে সেই চোরের হাত কাটার শাস্তিই বহাল থাকল।
মুসতাইন জহির- আদল মানে হল বিচার। এখানে প্রিন্সিপালটা কি। কি করলে সেটা বিচার হবে। বিচার করার আধুনিক ধারনা আকারে আমরা বলি, ন্যায় করলে সেটা বিচার হয়, অন্যায় করলে সেটা বিচার হয় না। আর সে সময় বিচারের ধারনা হল প্রতিসাম্য। অনুরূপ জিনিসটা সমানভাবে তাকে শাস্তি আকারে বা তার কাছ থেকে নেওয়াটাকে বিচার বলা হচ্ছে। এখন সমরুপ শাস্তি কি ইনসাফ? ইসলামে ইনসাফের ধারনাটা আইনানুগ কোন একটা প্রতিকারের ধারনা বলে আমার মনে হয় না। ইনসাফ শুধু একজন বিচারক করবেন, তা না। সমাজে আপনিও ইনসাফ কায়েম করতে পারবেন। এটা তো অপরাধের ফায়সালা দেওয়া না। কোনটি ইনসাফ? এবং কোনটি সমরূপতা বা আদল? এদের ক্রাইটেরিয়াটা কি হবে? কিভাবে সেটা ঠিক হবে? কিভাবে বুঝব এটা ইনসাফ হচ্ছে কি হচ্ছে না? যেমন অনেকে হকের কথা বলেন, মানে যার যা প্রাপ্য তাকে তা দেওয়া। এখন কি অর্থে এ প্রাপ্যতা? এবং এ পাওনাটা কোত্থেকে আসবে? এটা তার হক, সে কিভাবে এটা পায়।
রাসেল-কি পায়?
জোবায়ের- দরিদ্ররা যে আমাদের ২.৫ ভাগ সম্পত্তি পায়। এটা তারা তাদের হক আকারে পায়। রাসূল(স) বলছেন, এটা হচ্ছে ওদের হক। ওরা আমাদের কাছে পাওনা পায়।
মুসতাইন জহির- কোরআনে এর সুনির্দিষ্ট অনুপাত ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে আপনি তাকে একটা অংশ দিবেন? হক বলে একটা ধারনা আছে। সে এটা পায়। তার পাবার একটা কারণ আছে। তার পাবার কারণে তাকে এ পরিমাণ দেয়া হল। আপনি একটা অনুপাত করলেন, হার ঠিক করে দিলেন। এই অনুপাত বা হারটা তো হক না। হক এমন একটা জিনিষ যাকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনাকে উপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্পত্তির বেলায় সেটা করতেগেলে এই প্রযোজ্য, খোদ এই হারটাই হক কিংবা ইনসাফ নয়, যদি হয়, তাহলে কেন এটা হক? ইনসাফের ধারনা শুধু বণ্টন বা বিচারের ধারনা থেকে পেলে চলছে না। আদালতের বাইরে সামগ্রিকভাবে ইনসাফের ধারনাটা লাগবে।
রাসেল- আল্লাহর রসুল(স) বললেন যে, চুরি করলে আগে ক্ষমা কর নি কেন। হত্যার ক্ষেত্রে বিচারের অধীনে আসার পরে যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে সমস্যা কি?
জোবায়ের- বিচারে আনার আগেই আপনি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু কারো সুপারিশের কারণে বিচারক তো অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারবেন না।
রাসেল- কিন্তু বিচারে আনার পরে ক্ষমা করা যায় না?
মুসতাইন জহির-পারা যায়।
আনোয়ার ফরহাদ- জোবায়ের ভাই যে হাদিসটার রেফারেন্স দিছেন সেখানে বলা হইছে বিধানটা প্রি-ইমপোজড। আমার সামনে আনার পর ক্ষমা করার কোন সুযোগ নাই। ক্ষমা করতে চাইলে আগে কর নি কেন। এখন আর কোন সুযোগ নাই।
মুসতাইন জহির-এখানে কি কারণে এ কথাটা বলা হচ্ছে সেটা বুঝা দরকার। আধুনিক আইন ব্যবস্থায় আপনি কিন্তু চাইলেও একজন হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে পারবেন না। কিছু কিছু অপরাধ আছে, যেগুলোকে আমরা বলি ফৌজদারি অপরাধ। এ অপরাধের শাস্তি দেওয়াটা রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব এবং এখতিয়ারের প্রশ্ন। যদিও কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হলেও বলা হয় এটা আধুনিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। যা কিছু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ সে অপরাধের ক্ষমা বা মার্জনা কেবল রাষ্ট্রই করতে পারে। যেমন হত্যাকারীকে শাস্তি দিলে রাষ্ট্রপতি তা মাফ করে দিতে পারেন; যাকে আমরা বলি ক্লেমেন্সি।
আমার কাছে হাদিসটা দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। প্রথমত, আপনি যখন কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনেন, ধরে নেওয়া হয় আপনি জানেন এ বিষয়ক আইনটা কি, এর প্রতিকার কি এবং শাস্তি কি। তা থেকে যদি আপনার মনে হয় আপনি সেরকম একটা অভিযোগ করবেন না, এটা তার প্রতি হয়ত নিষ্ঠুরতা হয়ে যেতে পারে। এই ইহসানের কথাটা, ইহসানের জায়গাটা আপনার সবসময় মনে রাখতে হবে। এ কঠোরতা প্রদর্শন করে কথাটা বলতে হল কেন? তার মানে ইহসানের জায়গাটায় আপনি যথেষ্ট পরিমাণে সজাগ না। আপনার চাদর নিয়ে গেছে, ধরে বিচার করার জন্য নিয়ে আসলেন। বিচার করতে এসে মনে হল, এই শাস্তি তো কঠিন শাস্তি। এ হাদিসের উদ্দেশ্য হল আগে থেকেই নৈতিক সংবেদনাটুকু সজাগ রাখার ব্যাপারে একটা শিক্ষা দেওয়া। এটা গেল একটা।
দ্বিতীয়ত, আপনি যখন মামলা করেন, বিচার চান; তখন তার ভূমিকাটা কি হবে? নবী তো নবীই, সবকিছুই তিনি ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু এটা তো তাঁর ক্ষমা করার প্রশ্ন না; এটা একটা সামাজিক প্রশ্ন। এটা একটা সিভিল কোর্টের বিষয়। তাঁর এখানে রোলটা কি হবে? তিনি কি নবী হিসেবে কথা বলছেন না বিচারক হিসেবে? তিনি যখন বিচারে বসছেন, বিচার তো দায়িত্ব প্রাপ্ত যে কেউ করতে পারে। যে কেউ করা আর নবী করা কি একই কথা না? ব্যাপারটা কি এই যে, নবীর কাছে আনলে তিনি একেক সময় একেক ডিসিশন দিবেন। তার মানে কোন একটা বিষয় যদি নির্ধারিত থাকে, সে নির্ধারিত বিষয়ে যখন একজন বিচার করছেন; ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সেটা পাল্টানোর কোন এখতিয়ার রাখেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোন আলোচনার মধ্যে, অন্য কোন সমঝোতার মধ্য বা অন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্যে সেটার ভিন্নতা নির্ধারিত না হয়। এ শাস্তি আছে; এটা এখন নবী করেন বা অন্য যে কেউ করেন, যতক্ষণ এটা বলবত আছে কেউ পাল্টাতে পারবে না। যেমন কোন একটা কোর্টে বিচারক কি নিজে শাস্তি দেন? বিচারক নির্ধারণ করেন যে আইন অনুযায়ী শাস্তিটা কি। এখন আপনি কোর্টে গিয়া বললেন যে, না মাফ করে দেন। পরিবার মামলা দায়ের করছে এ খুনি, তারপর হঠাৎ করে মন নরম হয়ে গেছে। এখন বলল একে মাফ করে দেন। ধরুন, দণ্ডবিধি অনুযায়ী এর শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড। বিচারক কি করবেন? এটা কি মোরাল কোশ্চেন না লিগাল?
খুরশিদ আলম- এ ক্ষেত্রে বাদী যদি মামলাটা কন্টিনিউ না করে?
মুসতাইন জহির- আপনি এখানে একটা প্রসিডিউরাল কথা বললেন। এখানে তো মামলাই আর চলছে না। যেখানে মামলা নাই সেখানে আর শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নই আসছে না। বিচারের কোন একটা জায়গায় গিয়ে কেউ যদি তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে তখন আর মামলা চলে না। কিন্তু আপনি অভিযোগ বহাল রাখলেন, মামলা চলছে; মামলার অধীনে যে শাস্তি সে শাস্তির বদলে অন্য শাস্তি দিতে বলছেন। এটা কিভাবে সম্ভব? আপনাকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে, কিন্তু আপনি বলতে পারবেন না যে, আমি তার শাস্তি মাফ করার জন্য আবেদন করছি। ইসলামের যে প্রসিডিউর সেটা হল রায় ঘোষণার আগে বিচারকালীন সময়ে তাকে অপশন দেওয়া হয়, তুমি কি এভাবে প্রতিকার চাও, নাকি ক্ষতিপূরণ চাও অথবা ক্ষেত্র বিশেষে তাকে ক্ষমা করে দিতে চাও।
দেখেন, আধুনিক আইনেও প্রথমত বিচারককে শাস্তি বদলানোর কথা বলা যায় না। নাম্বার টু হল, শাস্তি হয়ে গেলে পরে অভিযোগকারীর কিছু বলার থাকে না। তখন এটা একজিকিউশনের পার্ট। এটা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। মার্জনা তখন কে করতে পারে? রাষ্ট্রপতি। কেন রাষ্ট্রপতি? প্রধানমন্ত্রী পারে না কেন? বিচারক পারে না কেন? মার্জনা বা ক্ষমা কেন এমন একজন করতে পারে আর কেউ করতে পারে না কেন? কি বিশেষত্ব তার? জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে ফায়সালা দেওয়ার অধিকার কার আছে? যে সভরেইন তার। আধুনিক রাষ্ট্রের মধ্যে এটা তো সরাসরি এন্টি ইসলামিক। আপনি এখন ইসলামিক রাষ্ট্র বানিয়েও যদি কাউকে এই এখতিয়ার দেন যিনি জীবন এবং মৃত্যুর ফায়সালা করতে পারেন, এটা তো ইসলামিক হবে না।
এখনকার সময়ে সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন হল, কোন অপরাধের সাপেক্ষে কোন জীবন হরণ করার অধিকার বা এখতিয়ার আধুনিক প্রশাসনিক, বিচার এবং রাষ্ট্রে থাকা উচিত কিনা? এ অধিকার আসে তো একমাত্র ‘সভরেইনিটি’র নামে। যে কারণে অন্য শাস্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিধান নাই। এখন আপনি একটা ইসলামিক রাষ্ট্র বানালেও তাতে কি এটা বদলাবে? বা বদলানোর একটা আলোচনা কি আমরা করতে পারব? এ আলোচনা আমাদের করতে হবে।
আমারা গত কয়েক সপ্তাহ শরিয়াহ নিয়ে আলোচনা করছি। শরিয়াহ বলতে আইন বুঝায় না এটা আমরা কম বেশি সবাই একমত। শরিয়াহর যে অর্থ এবং তাকে বোঝার যে পদ্ধতিগত জায়গা, সেটা হল ফিকাহ। সুনির্দিষ্ট কোন ফিকাহ নাই, অন্তত সুন্নি ধারার মধ্যে চারটা স্কুল আছে। এ চারটা স্কুলে ইসলামের যে মৌলিক প্রস্তাবনাগুলো ধরে নেওয়া হয়, তা হল কোরআন এবং হাদিস। কোরআনে কিছু নির্দেশমূলক আয়াত আছে, যার ভিত্তিতে ফিকহ্ গড়ে উঠেছে। নির্দেশমূলক আয়াতগুলো কিভাবে ঠিক হয়? এগুলো কমান্ড কিনা? ইম্পারেটিভ কিনা? এগুলো নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। এ উসুলগুলো দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে যে যে সিদ্ধান্ত আসে যেগুলোকে আমরা ফতোয়া বলি তাকে আইন বা কানুন বলা হয়। এখন কিছু কিছু বিষয়ে (পাঁচটা কি সাতটা) কোরআনে অপরাধের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মর্যাদাটা কি? কিভাবে দেখতে হবে? শরিয়াহর মধ্যে তার অবস্থান কি? ফিকাহ এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছে? এর আলোকে পরবর্তীতে যে দণ্ডগুলো আছে তা বুঝতে হবে।
জোবায়ের- এটা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হয়েছে। যেমন চুরি করলে কতটুকু হাত কাটা যাবে, এ ব্যাপারে অনেক মতামত আছে। এরপরে আছে কতটুকু চুরি করলে চুরি হবে। কেউ বলছেন দশ দেরহাম, কেউ বলছেন দিনার, আবার কেউ বলছেন এর চেয়ে আরো বেশি, কেউ বলছেন কম। এভাবে হত্যার ব্যাপারেও বলা হয়েছে। ইসলামে ফিকহে হত্যা পাঁচ প্রকার।
মুসতাইন জহির- তার মানে এখানে একটা শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সে শাস্তির লিগাল ক্রাইটেরিয়া, ডেফিনেশন, প্রসিডিউর পুরাটা আপনাকে করতে হচ্ছে, এটা তো আল্লাহ করে দিয়েছেন, তা নয়। ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় ইসলামিক চিন্তা ভাবনা তার ঐতিহ্য তার ইতিহাসের মধ্যে বেস্ট নলেজ দিয়ে ফিকহ ব্যবহার করেই করতে হয়। এবং এ ফিকহ্ ব্যবহার করার মধ্যে যত রকমের শর্ত আছে সেগুলো পালন করে কয়টা হয়েছে সে বিচার আমাদের করতে হবে, করলে খুব বেশি একটা উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারপরেও যা হবে তা ইসলামের নীতি অনুযায়ী নেওয়া সিদ্ধান্ত, সে সিদ্ধান্তটা বাস্তবায়ন করবে কে? বাস্তবায়ন করবে এই যে কোর্ট, তার কি এখতিয়ার থাকবে তা বেসিক্যালি একটা হিস্টরিকাল ওয়ার্ল্ডলি পাওয়ারের আলোচনা। যে আলোচনায় গাইডটা হল ইসলাম এজ এ প্রিন্সিপাল।
ইসলাম এজ এ প্রিন্সিপাল মানে হল কোরআন এবং হাদিস থেকে আপনি যে প্রিন্সিপালটা ডিরাইব করতে পারেন। আমরা যত সহজে এগুলোকে সেটেল হিসেবে ধরে নেই, আমরা মনে করি এগুলো স্থির, নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত হয়ে গেছে। যেমন কোরআনে বলল চুরির শাস্তি হাত কাটা। আমরা এটাকে যত সিমপ্লিস্টিক জায়গায় দেখি এটা সিমপ্লিস্টিক না। কোনটাকে চুরি বলা হবে, চুরির মাত্রাটা কি, এটা আনকন্ডিশানালি দেখা হবে কিনা নাকি কন্ডিশানালি দেখা হবে। কোরআনে স্পষ্ট এ কথাটা যখন আমরা বলি আমরা অনেক সময় সজাগ থাকি না, আমরা আসলে কি বলছি। যেমন হত্যা তো হত্যাই, তাহলে আবার পাঁচ রকমের হত্যা বের করার দরকার কি? পাঁচ রকমের হত্যা বলার দরকার কি? আমরা যখন বলি কিছু কিছু বিষয় আনকন্ডিশানাল; কি অর্থে কথাটা বলি? কি অর্থে বলি যে কোরআনে এটা আছে। এই আছে কথাটাকেও আমরা যখন হাদিস, তারপরে প্র্যাকটিস, ফিকাহর পদ্ধতির মধ্যে এনে ব্যাখ্যা করি তখন আদতে একটা অথরিটেটিভ ইন্টারপ্রিটেশনকে সেটেল বলছি। এখন অথরিটেটিভ ইন্টারপ্রিটেশনটাই কোরআনের ব্যাখ্যা আকারে অথরেটিভ ব্যাখ্যা; এজ লং এজ এটা একসেপ্টেড বাই উম্মা। আমি তালাল আসাদের একটা ব্যাখ্যার জায়গা থেকে কথাটা বললাম। তিনি সরাসরি কোরআনের ব্যাখ্যা থেকে বলেন নাই, তিনি বলেছেন, যে কোন ডিসকোর্সে, যে কোন ট্র্যাডিশনের মধ্যে একটা অথরিটেটিভ ইন্টারপ্রিটেশন থাকে; এটা এনফর্সেবল হয় বলে তার একটা জায়গা থাকে।
কোরআনে বলা হয়েছে বলে আমরা যত সহজে জিনিসটাকে ডিসাইড করে ফেলি আলোচনা করে দেখা যাচ্ছে আসলে ব্যাপারটা এত ডিসাইডেড না। ডিসাইডেড ব্যাপার মনে করার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের পালটা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়; বুঝি কোরআনের বিরোধিতা করছি। বোধ হয় আমরা ইউরোপে চলে গেলাম! এর বিপরীতে একটা বিশাল অংশও এ কারণে শরিয়াহ বলতে বোঝে এই পাঁচ-সাতটা জিনিস। এই জিনিসকে এমনভাবে সেটেল মনে করে যে সারা দুনিয়ার মধ্যে সেটেল করে ফেলছে শরিয়াহ মানে হল এরকম করে শাস্তি দেয়া। চুরি করলে হাত কেটে দেওয়া হবে এটাই শরিয়াহ; এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন নাই। আমরা নিজেরাই তো এ জিনিসটাকে এভাবে প্রতিষ্ঠা করেছি।
রাসেল- শরিয়াহ মানে হাত কাটা, পাথর মারা। এ পাথর মারা নিয়ে একটা ডিবেট আছে। এটা কি জুইস ল নাকি ইসলামিক।
মুসতাইন জহির- যে কয়েকটা উদাহরণের মধ্যে একটা প্রধান উদাহরণ বলা হয়, যেখানে নবী নির্দেশ দিয়েছেন অপরাধীকে পাথর নিক্ষেপ করা হোক। কেইসটা জুইস কেইস ছিল। আরো কয়েকটা কেইস আছে, একবার একজন মহিলা নিজে এসে বলছেন, আমি তো যেনা করেছি। রাসূল তাকে তিনবার ফেরত দিয়েছেন। তারপরে যখন আসল, তখন বললেন, তোমার বাচ্চা হলে পরে এস। হওয়ার পরে আবার আসল। তিনি বললেন, যাও তোমার বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করাও; বড় হলে আসবে। তিনি এমন কোন উদাহরণ তৈরি করতে চান নাই যে, এলো আর শাস্তি দিয়ে দিলেন।
যে আয়াতের মাধ্যমে যেনার শাস্তির কথা বলা হয়েছে, এটা কি জানেন এর অর্ধেক কথাটা আপনারা সবসময় শুনেন? আরেকটা হচ্ছে-শাস্তি দেওয়ার আগে যেসব কন্ডিশনালিটিজগুলো আছে এগুলো অতিক্রম করে যাওয়াটা খুব মুশকিল। আসলে ফরনিকেশন কি চারজন দেখে? ইসলামে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে এভাবে নজর দেয়া কমপ্লিট ইমোরাল কাজ ।
জোবায়ের- কারো ঘরে সিসি ক্যামেরার মত তাকালে রাসূল বলছেন তার চোখ কানা করে দিতে।
মুসতাইন জহির- প্রিন্সিপাল হল, যদি দেখা যায় যে কোন ফরনিকেশন ঘটেছে, তখন দেখতে হবে ঐ মহিলা কেন সেটা করেছে। ধরেন আমরা দেখি অনেকেই নিজের শরীর বিক্রি করে জীবিকা উপার্জন করে। এসব ক্ষেত্রে ইসলামে স্পষ্ট বিধান আছে, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে সেইম পানিশমেন্ট শুড গো টু দ্য রুলার। যদি শাসকের কোন দায় না থাকে তারপরে যেনা কারীকে শাস্তি দিতে পারবেন।
জোবায়ের- চারজন দেখাটার ব্যাপারে বলা হয়েছে যদি কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় দেখে, তাহলেও সাক্ষী হবে না।
মুসতাইন জহির- মানে হল যেখানে আপনি সুস্পষ্টভাবে চাক্ষুষ দেখেন নাই যে দুইজন নারী-পুরুষ যৌনকর্মে লিপ্ত, সেখানে আপনি সাক্ষী হতে পারবেন না। এটা বলা হয়েছে যে যৌনকর্মের সুস্পষ্টতাকে নির্ধারণ করতে হবে। এখন কথা হচ্ছে আমরা এসব আলোচনা করছি কেন? আমরা কি এটাকে প্রমোট করতে চাই? অনেকে বলতে পারেন এভাবে কঠিন করে রাখা হয়েছে কেন? ইসলামের স্কলাররা কি এটাকে প্রমোট করতে চেয়েছেন? এটাতে আসলে কি বলা হয়েছে? এটা নিয়ে আপনারা যেন ব্যস্ত হয়ে না পড়েন। দেখেন ইসলাম তো অনেকগুলো জিনিস রেডিকালি চেঞ্জ করে নাই। নানা শর্তের মাধ্যমে এটার মোরাল সেনসিটিভিটিকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলোর ঐ প্রথাগত যে শাস্তি সে শাস্তিটাকে একেবারে খারিজ করে দেয়া হয় নাই। তখন হরহামেশা এসব অভিযোগ আসত এবং এগুলো নিয়েই লোকজন সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকত। এগুলোতে অন্যের মর্যাদা হানী করা, শাস্তি দেয়া এসব ছিল। এখানে যেটা বুঝার জায়গা তা হল, ওই সময়ের প্রথাগত শাস্তির মধ্যে কি ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে? কি ধরনের সতর্কতা নেয়া হয়েছে? একইসাথে কি রক্ষা করার চেষ্টা করছে? মেয়েদের মর্যাদাটাই তো এখানে সবচেয়ে বড় বিষয়। তাই না?
এখানে মোরাল ইমপালসটা আমদের বোঝা দরকার। এখানে বিষয়টাকে অলমোস্ট ইম্পসিবল করে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখবেন কেউ আর লিটারেল হতে চায় না। বাকি জিনিসের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। কিন্তু এখানে আক্ষরিকভাবে পালন করলে যে বিপদ! ফলে লিটারেল হয় না। আজকের যামানায় দাঁড়িয়ে আমাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল, যে সময়ে নারীদের মানুষ মনে করা হত না, সে সময়ে তাদের জন্য এরকম প্রটেকশন তৈরি করা হয়েছে। এখানে প্রধানত নারীকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এ জিনিসটা বোঝার চেষ্টা করেন। এখন আমরা উলটা কাজ করছি, ধরে ধরে মেয়েটাকেই অপদস্থ করতেছি। তাহলে কি হল? নবী যে কাজটি করেছেন, আমরা তার বিপরীত কাজ করছি। আমরা আসলে জাহেলিয়া যুগের চর্চাটাই বজায় রাখছি। আমরা জাহেলিয়াত থেকে আলাদা হলাম কিভাবে?
এরপর আরো বিভিন্ন প্রশ্ন ও আলোচনার মধ্য দিয়ে পাঠচক্র শেষ হয়।