চিন্তার পাঠচক্রের আলোচনা
গত ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিন্তার পাঠচক্রে কোনো নির্ধারিত বিষয় না থাকলেও শিয়া ধর্মতত্ত্ব, সুন্নী মতাদর্শ, ইরান-ইরাক এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সা¤প্রতিক পরিস্থিতিসহ আলোচনায় নানান বিষয় উঠে আসে। আলোচনায় কবি ফরহাদ মজহারের সঙ্গে অংশ গ্রহণ করেন মোহাম্মদ তানিম নওশাদ, আনিসুল হামিদ টুটুল, আর কে রণি ও খোমেনি ইহসানসহ আরো অনেকে। শুরুতে ধর্ম প্রসংগ আসলে তানিম প্রসংগ ধরে আলোচনার গতিকে শিয়া মতাদর্শের দিকে নিয়ে যান। তিনি শিয়া ধর্মে ‘মাহদী’ সম্পর্কিত ধারণা বিষয়ে বলে- মাহদী ধারণার সম্পর্ক খ্রিস্টতত্ত্বের ট্র্রিনিটি ধারণার সাথে। এই ধারণা শিয়া ধর্মে খুবই মৌলিক একটা বিষয়। অনেকাংশে এর উপর ভিত্তি করেই এই ধর্মের ধারাবাহিকতা এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান। অপর দিকে মাহদী তত্ত্ব আসলেই সুন্নী মতাদর্শে এতো জোরালো ছিলো না। এটি সুন্নীদের মধ্যে তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে শিয়া মতবাদের কারণে। আসল ব্যাপারটা হলো, শিয়া বিষয়টিও ইসলামে প্রথম দিকে একেবারেই গৌণ ছিলো। শিয়া বিষয়টি তখনকার খারিজী, রাফিজী ও কাদেরিয়াদের মতোই ছিলো। বরং শিয়া তখন আরো বেশী অনালোচিত ছিলো। এতো দৃশ্যমান ছিলো না। তখনো শিয়া ডকট্রিন একটা বিচ্ছিন্ন ব্যাপার ছিলো। মূলত শিয়া ডকট্রিন ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে কারবালার ঘটনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে কারবালার ঘটনা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, সংস্কার ও তত্ত্ব-গবেষণার ভেতর দিয়ে এই মতাদর্শের জনপ্রিয় অবস্থান তৈরী হয়। এইভাবে দৃশ্যমান হওয়ার মধ্য দিয়ে মাহদী সম্পর্কিত ধারণা নতুন করে শক্তি যোগায় শিয়া মতাদর্শে। কারণ মাহদী সম্পর্কিত তত্ত্ব বিশ্লেষণের পদ্ধতি ও বিন্যাস ট্রিনিটি থেকে শুরু করে জন অগাস্টিনের জন্মান্তর ধারণার সাথে সম্পর্কিত। ফলে শিয়ায়িজমের মধ্যে মাহদী ও মারজার ধারণার সাথে রক্তের ধারাবাহিকতা বা বংশের সূত্রতা বিশ্বাসগতভাবে লালন করা হয়। এই ডিসকোর্স উপস্থাপনের েেত্র ‘১২’ সংখ্যার ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক যৌক্তিকতা যেভাবে তুলে ধরা হয় তাতে এর শক্তিমত্তা আরো জোরদার হয়। এই হদিস পেশ করার েেত্র বেবিলন-মেসোপটিমিয়ার- ১২, জ্যাকবের- ১২, সোশিয়ান্তের- ১২, পেগানের- ১২ সহ নানান উৎস থেকে ‘ইসনা আশারা’ বা ১২ সংখ্যা তত্ত্বের বয়ান হাজির করে ধর্মতাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে এর বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেকারণে ইমাম মাহদীর অবস্থানও বারো। তেমনি খ্রিস্টিয়ানিটির ‘ট্রিনিটি’ তত্ত্ব থেকেও ‘মুহাম্মদ (স.) আলী ও ফাতেমা’র ট্রিনিটি কিংবা ‘আলী, হাসান ও হুসাইন’র ট্রিনিটি শিয়ায়িজমের মূল ধারণা হয়ে ওঠে। মাহদী ধারণা এই কারণে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ যে, শিয়া মতাদর্শ অনুযায়ী বারো তম ইমাম যিনি হবেন তিনিই ইমাম মাহদী এবং তিনি চৌদ্দশ বছরের পুরনো ইসলামে শিয়ায়িজমের পুরা ব্যাকরণ বা শরীআকে পরিবর্তন করে নতুন ব্যাকরণ প্রবর্তন করবেন। সেদিক থেকে ইমাম জাফর সাদেক থেকেও ইমাম খোমেনী বেশী উল্লেখযোগ্য। কারণ ইমাম খোমেনীই শিয়া ইতিহাসে ধর্মতত্ত্ব, ইজতিহাদ, শরীআ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির দিক থেকে শিয়া মতাদর্শকে নতুন বয়ানে বাস্তবায়ন করে যে সফলতা অর্জন করেন তার দ্বিতীয় নজির আর দেয়া যাবে না। যেকারণে শিয়াদের একটি ধারা এখনো মনে করেন ইমাম খোমেনীই ইমাম মাহদী। কারণ মাহদী হবার জন্য নতুন শরীয়া বা নতুন ব্যাকরণ প্রবর্তনের যে বৈশিষ্ট্য দরকার তা ইমাম খোমেনীর মধ্যে ছিলো। এবং তিনি তা সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছেন। ফলে ইমাম খোমেনী চরিত্র শিয়া ইতিহাসে এমনকি ইসলামের ঐতিহ্যের মধ্যে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। সমসা¤প্রতিক কালে শিয়া-সুন্নী সহ ইসলামের সকল ধারায় এখনো পর্যন্ত তার মতো চরিত্র দেখা যায়নি। কবি ফরহাদ মজহারের লেখাখেরি খোঁজ খবর নিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে যায় আর কে রণির এক প্রশ্নে। তার প্রশ্নটি ছিলো ফরহাদ মজহারের কাছে। রণি বললেনÑ আপনার লেখালেখিতে কী করবেন তা বুঝা যাচ্ছে না কেনো? জবাবে তিনি বললেনÑ আপনার কী মনে হয়। রণিÑ আমার যা মনে হয় সেটা হলোÑ আপনার লেখাগুলোতে আপনার যে তৎপরতা তাতে শেষ পর্যন্ত এটাকে একটা জ্ঞানগত ক্যারিয়ারের ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। কারণ এই লেখালেখি করে কোনো প্রভাব বা ফলাফল তো দেখা যায় না। ফরহাদ মজহারÑ আপনি কী মনে করেন। কেনো প্রভাব ফেলতেছে না? রণিÑ আমার মনে হয় যে, এখানে যারা বাম রাজনীতি করেন তারা এদেশের সমাজের সার্বিক পর্যালোচনা করেনি। বা করতে পারেননি। সেটা একটা দিক। যেকারণে তারা আপনার কথাকে তারা ধরতে পারতেছে না। অথবা অন্য কোনো কারণে তারা আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। ফরহাদ মজহারÑ আপনার কথায় তাহলে কোনটা জ্ঞানগত এবং কোনটা রাজনীতিগত। অথবা কাজটা কী এবং কীকরে কাজটা করতে হয়। রণিÑ আপনি যেটা করছেন সে জগৎটায় যে কাজ.........ফরহাদ মজহারÑ আসলে কথা হলোÑ আপনাদের কাছে আমার কথাগুলো ব্যাবহারিকভাবে অনূদিত হয় না। কিংবা হয়তো আবার আপনাদের কাছে এটা ব্যাবহারিকভাবে আসতেও পারে। বা আসবে। অর্থাৎÑ ধরুন যেমন একটা ঘটনা। নয়া কৃষির কৃষকদেরকে আমি বললামÑ প্রাণ কী। তারা বললোÑ বীজ হলো প্রাণ। আবার যখন বললামÑ তাহলে আপনারা প্রাণটা দেখান তো। তখন সবাই চুপ। কিছুণ পর আবার বললো- এটাকে তো ভাইয়া মাটিতে দিতে হবে। তারপরেই তো এটা প্রাণ হবে। তার মানে মাটিতেই প্রাণ। তার মানে আপনাকে করণে আসতে হবে। জ্ঞানটা যখন শুনলো, তারা সঙ্গে সঙ্গে এটাকে কাজে লাগালো। এটা তারা সহজেই করে ফেলতেছে কারণ, এটার সাথে তো মতার দ্বন্দ্ব নাই। তাহলে ব্যাবহারিকভাবে এই কাজটা সহজ হলেও এর সাথে দৃশ্যত রাজনীতি নাই। কিন্তু রাজনীতি আছে। শেষতক বিষয়টি হলো রাজনীতির সাথে এর একটা ফারাক আছে। কিন্তু এটা তো আমি এই কৃষদের দিয়ে করাতে পারবো না। এটা তারা বোঝে না। এটা করতে হবে আপনাদেরকে। সেকারণে বলছি আপনাদের কাছে আমার বক্তব্য কাজে রূপান্তরিত হয়নি। এখানে দ্বন্দ্ব আছে। আমি নিজে এটা করতে পারিনি। আমারও তো সীমাবদ্ধতা আছে। আমার সামর্থের মধ্যে যেভাবে যতোটুকু করতে হয় আমি তো করার চেষ্টা করতেছি। আমার স্ত্রী আছে, পরিবার আছে, কৃষক আছে, প্রতিষ্ঠান আছেÑ তাদের সকলের আলাদা আলাদা হক আছে আমার উপর। সেই সব তো আমাকে মেটাতে হয়। আমার যে যন্ত্রনা আছে, একটা কিছু আছে সেটা তো তারা বুঝবে না। যদিও এইসব সম্পর্কগুলোর মাঝে মাধূর্য আছে। মহব্বত আছে। এটা উপভোগ করার মতো বিষয়। এটা খুবই দরকারী। কিন্তু এইগুলোর ভেতরে সেই প্রশ্নের মীমাংসা তো নাই। এতে কিছ্ইু করার নাই। কিন্তু করতে হবে। আমি মনে করি, আমাকে আমার ভালো কাজটা করে রেখে যেতে হবে যেটা আমি করতে পারি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে উঠতেছে। সীমান্ত প্রতিরা নষ্ট হয়ে গেছে। রাষ্ট্র তার স্বভাব হারিয়ে ফেলতেছে রাজনৈতিক সংস্থাগুলোর কারণে। জাতীয় প্রতিরা বলতে আর কিছুই থাকলো না এখানে। এটা যে কতো বেদনার বলতে পারছি না। বাংলাদেশ একদিকে টিপাইমুখ সমস্যায় একই সময়ে সমুদ্রসীমা নিয়ে জটিলতায় পড়ে আছে। টিপাইমুখ সমস্যা যেমন আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে এখন মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের সম্পর্ক। এটাকে মোকাবেলা করার কোনো রাস্তা আপাতত দেখতে পাচ্ছি না। বাংলাদেশ যেকোনো সময় সমুদ্র সীমা হারিয়ে ফেলতে পারে। কারণ মায়ানমারের সাথে যুদ্ধও লেগে যেতে পারে। নভেম্বরের দিকে কিছু একটা টের পাবেন। এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশী কিছু বলতে পারছি না। টুটুলÑ আপনি এটা কীকরে বলতে পারছেনÑ পরিস্থিতিগুলো পর্যবেণ করে এবং বাংলাদেশ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব পর্যালোচনা, গবেষণা, রিপোর্টিং ও তথ্য সরবরাহ চলছে সেসব বিষয়াদি এবং নানান ঘটনা বুঝাবুঝির মধ্য দিয়ে এটা বলা যায়। আর বাকিটা বলতে পারি দরবেশী করে। এটা হতে পারে। কিছুই করার থাকবে না বাংলাদেশের। এইসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সেন্টমার্টিনও হারাবার বহু সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে বেকাপ দেবে ইন্ডিয়ানরা। এখানকার সরকার ইন্ডিয়ানদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে এইসব পরিস্থিতি টেকেল দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু কাজের কাজ কী হবে। এখানে প্রো-ইন্ডিয়ান শক্তি থাকবে। তবে হয়তো চীনের কারণে যুদ্ধটা করতে পারবে না তারা। করলেও যুদ্ধটা হবে লিমিটেড পর্যায়ে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ কতোদূর কী করতে পারবে এটা বলা মুশকিল। কারণ এখানে আর্মি তো আর আর্মি নাই। এক অদ্ভূত ব্যাপার ঘটে গেছে এখানে। আর্মির জাতীয় প্রতিরা ও জাতীয় রাজনীতির স্বভাব আর নাই। এখানকার আর্মির আর অন্য একজন চাকুরীজীবির মধ্যে পার্থক্য কী। কোনো পার্থক্য নাই। সে যেমন চাকরী করে আর্মিও তেমনি চাকরী করে। জীবন জীবিকা ও ক্যারিয়ার হয় আর কি। দেখবেন আর্মি পড়তে যায় ভার্সিটিতেÑ বিবিএ পড়তে যায়.....। তো ওতো আর্মি। বিবিএ পড়তে যায় কীকরে। এটা করে কেনো? ও প্রফেশনাল সোলজার না... তার একটা পেশা দরকার তাই সে এটা করে। তাহলে ওর সাথে আর লোকজনের ফারাকটা কোথায়। তাকে দিয়ে কী হবে। অন্যদের যেমন একটা পেশা দরকার তারও একটা পেশা একটা ক্যারিয়ার দরকার। ও ওখানে পড়াশুনা করে এরপর ব্যবসা শুরু করে দেবে। এখানে আপনি রিয়েল সোলজারের উদাহরণ আনলে বিডিআরের কথা বলতে পারে। আর কি। তাহলে কী আশা করতে পারেন। ফলে বলেন লিখে কী হবে। কিছুই হবে না। কিছুই তো হয়নি। তাহলে লিখবো কেনো। অনেক বলেছি তো। কী হয়েছে। বলেছি এই সংকট দেখা দেবে। এবং সেটা হয়েছে। বলেছি এই সম্ভাবনা আছে কিন্তু তাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। বলতেছি মরুভূমি হয়ে যাবে। এই হয়ে যাবে। এই দেখা দেবে। এখন এই করা দরকার। তাতে কী হয়েছে এই বলাবলিতে। এই পিপল তো সাড়া দিচ্ছে না। বুঝতে পারে ঘটে গেলে। ত কী করবো। আমার কী করার আছে। তাহলে লিখে কী করবে। লিখবো কেনো। চলন বিল দিয়ে আসার সময়ে এই প্রথম লু হাওয়া অনুভব করলাম। এখানে এখন চারদিক থেকে সমস্যা শুরু হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তো শুরু হয়ে গেছে। বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারবেন বড় আকার ধারণ করলে। কিন্তু তখন কী করবেন। এখন তো কিছু করার সময় চলে যাচ্ছে। এটা আর তো পাবেন না। সমস্যা কি দেখতেছেন না। দেখবেন। এই যে একদিকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারছেন না। আবার বৃষ্টি পানির দরকার। সেটা তো রাখতে পারছেন না সময় মতো। আবার অন্যদিকে শুকিয়ে যাচ্ছে। কী করবেন যখন যা দরকার তা আর পাবেন না। হবে উল্টোটা। এই যে সাগর থেকে নোনা পানি ঢুকে যাচ্ছে। মাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আজকে এর জন্য দায়ী কারা। আমরাই। প্রথমত এর জন্য দায়ী এখানকার ইসলামিকরা। তারপর বিএনপি। তারপর বুদ্ধিজীবি শ্রেণী। তাদের সকলেরই একটা বড় দায়িত্ব ছিলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটা কাজ করা। সেটা হলো গণমানুষের ভেতরে রাজনৈতিক কর্তাশক্তি বিকশিত করা। সেটা তারা করেনি। ফলে এখানে এখনো রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী তৈরী হয়নি। জাতীয়ভাবে মনোগঠন সম্পন্ন হয়নি। ’৭১’র পিপলস তো ঐ যুদ্ধটা করেছে। তার একটা ভিত্তি ছিলো। তার একটা স্পিরিট ছিলো। সেটা কী। সেটার তো কোনো ব্যাখ্যা হয়নি। এই যে বড় ঘটনাটা ঘটে গেলো তাকে নিয়ে এখন পলিটিক্স হয়। কিন্তু আসলে ঘটনটা কী। আসলে তার বয়ানটা কী। এটা সত্যিকার অর্থে করা হয়নি। এবং সেটা হলে তার ভিত্তিতে যে জাতীয় পরিচয় দাঁড়াতো, যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে কর্তাশ্রেণীর বিকাশ শুরু হতো এখানে তা হয়নি। তো এগুলোর তো আপনি ব্যাখ্যা দেননি। এগুলো না করে আপনি এ্যান্টি আওয়ামীলীগ পলিটিক্স করছেন। আসলে এ্যান্টি আওয়ামীলীগ রাজনীতি তো হয় না। এবং সেটাই তো হচ্ছে। ফলে আজকের এই অবস্থার জন্য কী করবেন। কিছুই কি করার আছে। বলতেছেন লিখার কথা। লিখে কী করবো। এই যে, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেনÑ আমরা সারা জীবন পরাধীনই ছিলাম। শুধু একাত্তরেই আমরা স্বাধীন হই। অর্থাৎ এই যে বাংলা সেখানে আমরা সারা জীবনই পরাধীন ছিলাম। আসলে মুক্তি ঘটে আমাদের একাত্তরে। তো এটার তো কেউ প্রতিবাদ করলো না। বৃটিশদের লড়াই করে এখানে ভারত ভাগ হয়ে যে পাকিস্তান আমরা প্রতিষ্ঠা করলাম তাতে কি সেই ঘটনা স্বাধীনতার ছিলো না? আরো অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু এই যে ইতিহাসকে অস্বীকার করা হচ্ছে, এই যে ইতিহাসকে বিচ্ছিন্ন করে ‘হঠাৎ আইডিয়া’ বা বিচ্ছিন্ন পরম পবিত্র কিছু একটা বলা হচ্ছে এর ভিত্তি কী। রাজনীতিটা কী, সেটাই আমাদের বুঝতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো, কেউ এর প্রতিবাদ করলো না। এটা হোত। প্রতিবাদ হোতো। সবই হোতো। কিন্তু তা হবে না। এখানে যে রাজনৈতিক কমিউনিটি নাই। কী করে তা আশা করা যায়। এই জনগোষ্ঠী তো একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে গড়ে উঠেনি। একাত্তর সালে পাকিস্তানীরা মনে করতোÑ এরা মুসলমান। বাঙ্গালী না। আর ইন্ডিয়ানরা মরে করতোÑ এরা মুসলমান কি সেটা না বরং বাঙ্গালী। এই দুইয়ের মধ্য দিয়ে এখানে একাত্তর পরবর্তী যে রাজনীতি গড়ে উঠেছে এটাই তো বড় বিপজ্জনক। একাত্তরে এখানকার জনগণ যে স্পিরিট নিয়ে লড়াই করে যে বিপ্লবটা করে ফেলেছে এর কোনো বয়ান নাই। কোনো কর্তাসত্ত্বা এর ভিত্তিতে বিকশিত হয়নি। ফলে দেখবেনÑ এখানকার যারা ভার্সিটিতে পড়ে তাদের ক’জনের আগ্রহ আছেÑ এখানে যে ১৮৫৭ সালে আজকের বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু করে বর্তমান রিং রোড পর্যন্ত হাজার হাজার সৈনিক আর স্বাধীনতাকামীদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো সেটা নিয়ে স্টাডি করার, ভাববার? নাথিং! সেই ইতিহাস তাদের কজনকে নাড়া দেবে বলা মুশকিল। আহমদ ছফাকে সেটা নাড়া দিয়েছিলো। তাই তাকে সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস লিখতে হয়েছিলো। বাঙ্গালী মুসলমানকে তার হীনমন্য মনে হয়েছিলো। সেটা বলার অন্য কারণ ছিলো। কিন্তু আরো কারণ যেটা সেটা তো এক অদ্ভূত ব্যাপার যেÑ এখানে যাদেরকে আজকে প্রগ্রেসিভ বলা হয় বা এখানে শুরুতেই যে প্রগেসিভ শ্রেণী গড়ে উঠেছিলো তারা হিন্দুদেরকে দেখে প্রগ্রেসিভ হবার চেষ্টা করতো। কারণ আপনি তো জানতেছেন না। পড়তেছেন না। ইতোমধ্যে যখন আপনি দেখলেন, আপনি দুশ বছর পার করে দিলেন ইংরেজদের বিরোধীতা করে। তো এই দুশ বছরে এই ভারত বর্ষ ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আপনি ইংরেজী শেখেননি। আপনি মনে করলেন আপনি অনেক পিছিয়ে গেছেন। অন্যদিকে আপনার রাজনীতির বাঁক অন্যদিকে ঘুরে গেলো। এরপর ইংরেজী শেখার তাগিদ অনুভব করলো এখানকার কৃষকরা। সবমিলিয়ে এটি ছিলো বাংলাদেশে আধুনিক মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উন্মেষকাল। তো তারা তো ইংরেজী জানে না। তারা মরিচ বিক্রি করছে। চাষ করছে। অন্যের বদলা দিচ্ছে। কারণ এরচেয়ে বেশী কিছু করার তার শক্তি ছিলো না। সমস্ত মতাই তো হিন্দু জমিদারদের কাছে ছিলো। মুসলমানদেরকে কোনোক্রমেই সেই সুযোগ দেয়া হতো না। তাদেরকে শিা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হোত। তাহলে কী করে তারা বেড়ে উঠবে। এরপর তারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পয়সা দিয়ে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠালো লেখাপড়া শিখতে। চাকরি পাবার জন্য। যুগের পর যুগ যাদেরকে বিচ্যুত রাখা হয়েছিলো সরকারী চাকরী থেকে। সামাজিক মর্যাদা থেকে। সচ্ছল হবার পথ থেকে। আর সেই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরে ফেলে হলো। গুলি করে হত্যা করা হলো। তখন কৃষকরা জেগে উঠলো। সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠলো। কিন্তু সেটা নিছক ভাষার প্রশ্ন ছিলো না। এই যে পীজেন্ট কাসÑ যাদেরকে সমাজের ঝোলা বলা হয়েছিলো। মুর্খ বলা হয়েছিলো। বর্বর বলা হয়েছিলো। সেই শ্রেণী এই দীর্ঘ কালের অপবাদ মুছে ফেলার জন্য, ইংরেজী না শেখার গ্লানী মোছাবার জন্য সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। আর সেই সন্তানকে হত্যা করার ফলেই তীব্র জাগরণ উঠেছিলো বায়ান্ন সালের গণমানুষের মধ্যে। তাহলে........... তো এখানে ভারতে যে রাজনীতি গড়ে উঠেছে এখানে সেভাবে গড়ে উঠেনি। তাদের কালচারাল মাইন্ডও সেরকম। জয় গোস্বমী আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলো প্রতিবেশী আকারে। আর আমি লিখেছিÑ তোকে ডাকি দিদি বলে তুই বানালি প্রতিবেশী আমার দারুণ রাগ হয়েছে মায়ের কাছে নালিশ করব সহদোরা ও বোন আমার কী করে তুই জন্মসূত্র ভুলে গিয়ে পর করেছিস নিজের আপন ছোট ভাইকে। এ্যাকচুয়াললি আওয়ামীলীগ সেসময় তখনো শিতি-সভ্য হয়ে উঠেনি। তারা বাঙলা ভালো জানতো না। লিটারেরী জায়গায় তারা দুর্বল ছিলো। বামপন্থীদের অনুপ্রবেশে আওয়ামীলীগ শিতি ও সংস্কৃতিসেবী হয়ে ওঠে। আসলে তাদেরকে শিতি করে গড়ে তোলবার জন্য সিরাজুল আলম খানের অবদান ছিলো অনেক। মূলত তখন ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামীলীগ যে অবস্থার দল ছিলো সেই অবস্থা থেকে তারা শুদ্ধ হয়ে ফিরে আসে আসাদের মৃত্যুর পর। আসাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিকভাবে নতুন প্রত্যাবর্তন ঘটে। এরপরই হিস্ট্রিক্যালি যে মোমেন্টে যেটা করা দরকার আওয়ামীলীগ সেটা করতে পেরেছে। যেকারণে আওয়ামীলীগ রাজনৈতিকভাবে টিকে গেছে।
নিজের সম্পর্কে লেখক
student